আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষমতা ও অমীমাংসিত রমণী

শুচি সৈয়দ শুচি সৈয়দ আজই পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয়েছে জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকের। এবারের সূচকে বলা হয়েছে ভারত এবং পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের নারীদের অবস্থা কিছুটা ভালো। যদিও গত কয়েক মাস ধরে আমাদের পত্রিকার সংবাদগুলোর বেশিরভাগ শিরোনামই ‘ইভটিজিং’ শব্দটি দখল করে রেখেছে। ইভটিজাররা জ্যান্ত মানুষের ওপর মোটরসাইকেল তুলে দিয়ে হত্যা করছে প্রতিবাদকারীকে। ধারালো অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে নারীদের ওপর- এরকম একটা বাস্তবতায় বসবাসের পরও জাতিসংঘের এ সূচক আমাদের আÍতুষ্ট নয় আস্থাশীল করে।

নারীদের বিরুদ্ধে আমাদের দেশে বিবিধ সন্ত্রাস জারি থাকা সত্ত্বেও তারা এগিয়েছে। তারা শুধু নিজেরাই এগোয়নি এগিয়ে নিয়ে গেছে এ দেশটিকেও। কারণ এ সূচকে অন্য যে বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের অর্জনকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- দারিদ্র্য, আয়ু, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাÑ এসবগুলো বিষয়ের পেছনেই রয়েছে এদেশের নারীদের অবদান। এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এ অর্জন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘গত শতকের আশির দশকের পর থেকে বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন সূচক প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ’ মানব উন্নয়নের এ সূচক প্রতিবেদন ১৯৯০ সাল থেকে জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউএনডিপি প্রণয়ন করে আসছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে এ প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এবং অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের এ অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। মানব উন্নয়ন সূচকের সার্বিক উন্নয়ন প্রবণতার পর্যালোচনায় দেখা গেছে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৪টি দেশের মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়া। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন প্রিয়েসনার বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য জাতীয় গর্বের উৎস হতে পারে এ অর্জন। বড় বড় বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা খুবই উল্লেখযোগ্য অর্জন। এ সূচক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রদত্ত অমর্ত্য সেনের কথাগুলোও মনোযোগ দাবি করে।

তিনি বলেছেন, ‘মানব উন্নয়ন সূচক প্রতিবেদন প্রণয়নের ২০ বছরে যা কিছু অর্জন তা অবশ্যই উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো। কিন্তু আমাদের অবশ্যই বিপন্ন মানবের কল্যাণ ও স্বাধীনতার নতুন হুমকি মোকাবিলায় সহায়তা দেয়ার পথগুলো খোলা রাখতে হবে। ’ বাংলাদেশের অবরোধবাসিনী নারী সমানের জন্য প্রাণপাত করেছিলেন এক মহিয়সী নারীÑ বেগম রোকেয়া। ঔপনিবেশিক শাসনামলে সর্বাধিক বঞ্চনার ভেতরেও এদেশের কণ্ঠহীন নারীদের মনে নারীস্থানের স্বপ্ন জাগিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আজ আমাদের সমাজে নারীদের যেটুকু অবস্থান তা এ মহিয়সী নারীর অবরোধ উšে§াচনের প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই সূচিত হয়েছিল।

পাঠক, আমার লেখার বিষয় জাতিসংঘের মানব উন্নয়নের সূচক নয়, আমার বিষয় আমাদের দেশে নারীর ক্ষমতায়ন। নারীকে ঘিরে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির ভেতর অজস্র আবেগ, অনুভূতি, তৃষ্ণা বিদ্যমান। যে কোনও পুরুষেরই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় এর সত্যতা প্রমাণ্য। প্রায়শই নারীকে কেন্দ্র করে পুরুষ রচনা করে এক দুর্জ্ঞেয় রহস্যময়তা এবং তার চারপাশেই আবর্তিত হয় সে। কবি, অকবি, দার্শনিক, ভাবুক তথা সমাজের একেবারে সাধারণ কোনও হরিপদ কেরানিও বাদ থাকেন না, বাইরে থাকেন না এ প্রক্রিয়ার-- কেননা জৈবিকভাবেই কৈশোর, তারুণ্য পার করতে হয় সব মানুষকে।

যেতে হয় এ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই- তা চাই কিংবা না চাই। আমার মনে পড়ে কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতার বই ‘কবিতা, অমীমাংসিত রমণী’ পড়ে কি ঘোরের মধ্যেই না কালযাপন করেছি। সে ছিল একটা একক প্রবণতার সময়। সেই প্রবণতাগুলোর কথা নয়, কথা হচ্ছে কবিতার বইয়ের নামটি। ‘কবিতা, অমীমাংসিত রমণী‘ তথা ‘অমীমাংসিত রমণী’ শব্দবন্ধটি নিয়ে।

সত্যিকার অর্থে, সার্বিক অর্থে রমণীরা আমাদের এ পোড়ার দেশে আজও ভীষণভাবে ‘অমীমাংসিত‘ এক নিপীড়িত সত্তা। যাকে এদেশের দার্শনিকরা শৈশবে পিতার বোঝা, কৈশোরে ভ্রাতার বোঝা, যৌবনে স্বামীর বোঝা এবং বার্ধক্যে সন্তানের বোঝারূপে চিত্রিত করে আÍপ্রসাদ লাভ করেছেন এবং করছেন আজও। কিন্তু প্রকৃত সত্য ঠিক এর উল্টো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, হাজার বছরের বাঙালি জাতির ইতিহাসে এমন একটিও আন্দোলন কিংবা সংগ্রামের হদিস পাওয়া যাবে না যেখানে নারীরা লড়েনি। মত ও পথের গত সংখ্যার লেখাটিতেই আমি মাহাথির মহম্মদের একটি উক্তি উদ্ধৃত করেছিলাম, তা হচ্ছেÑ এদেশের জনসংখ্যা বোঝা নয়, সম্পদÑ অতিরিক্ত জনসংখ্যা সাধারণত বোঝা বলেই বিবেচিত হয়, এবং তা দুর্বহ বোঝায়ও পরিণত হতে পারে যদি তাকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত করে জনসম্পদে রূপান্তরিত করা না যায়।

কিন্তু সত্যিকার অর্থে যদি স্বীকার করা হয় তবে স্বীকার করতেই হবে যে, এদেশের নারীরা কখনওই পুরুষদের বোঝা ছিল না বরং এদেশের ‘দূহিতারা’ সবসময়ই সম্পদরূপেই সমাজে সংসারে সমাদৃত ছিল। তাদের অভিধা দেয়া হয়েছে কিন্তু স্বীকৃতি দেয়া হয়নিÑ সেটা যেমন অতীতে, তেমনই এ একুশ শতকেও। কবি জীবনানন্দ দাশের জননী কবি কুসুমকুমারী দাশ অনেক দিন আগে লিখেছিলেন, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে। ’ হ্যাঁ, কাজে বড় পুরুষের অভাব আমাদের ছিল, এখনও আছে। তবে কথায় বড় চাটুকারদের কোনওই অভাব ছিল না কখনও, এখনও নেই।

কিন্তু আমাদের মেয়েরা যে কাজে খাটো ছিল না কখনও তা কিন্তু কুসুমকুমারী দাশ নিজেকে দিয়েই ভালো উপলব্ধি করতে পারতেন। কেননা এ পঙক্তি রচনা করতে করতেও এ নারীকে হাড়ি ঠেলতে হয়েছে রান্নাঘরে কিংবা বলা যায় রান্না করতে করতেই এ নারী রচনা করেছেন এ পঙক্তিমালা। আমাদের সমাজে কাজে খাটো পুরুষ আমরা কখনওই নারীদের এ কাজের স্বীকৃতি দিইনি এবং দেই না। আমরা খুব উচ্চ গলায় বলি, নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন বলতে আমরা যা বুঝি তা প্রায় পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিরই সম্প্রসারণ।

একে নারীর ক্ষমতায়ন না বলে বরং বলা চলে নারীর পুরুষায়ন। এ থেকে কোনও সত্যিকর অগ্রগতি কিংবা উন্নয়ন আসবে না। নারীর পুরুষায়নের প্রবক্তাদের কেউ কেউ পুরুষরা যা যা করে সেসব কাজ করার মধ্য দিয়ে ‘নারী মুক্তি’ অর্জন করতে চায়! পুরুষদের মতো সিগারেট টেনে, দাঁড়িয়ে প্রশ্রাব ফিরে এবং পুরুষের মতো ধর্ষণ করে রীতিমতো পৃথিবী বিখ্যাত হয়ে গেছেন কেউ কেউ। এ যেমন নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন নয় তেমনই সংসদে ৩০ সেট অলংকার করে সংরক্ষিত কোটায় নারীদের সংসদ সদস্য মনোনীত করাও নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন নয়। ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন সূচক প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বাংলাদেশে নব্বই দশকের পর মানব উন্নয়নের সূচক প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সন্দেহ নেই এ অর্জনের কারণ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর গত বিশ বছরের গণতান্ত্রিক শাসন আমাদের এ অর্জনের ভিত্তিভূমি। একথার অর্থ হচ্ছে গণতন্ত্রের একটি অন্তর্নিহিত শক্তি আছে, সে শক্তি আমাদের সমাজে নারীর অবস্থানকে সার্বিকভাবে রিকগনাইজ করেছে, সনাক্ত করেছে, সহায়তা দিচ্ছে। গণতন্ত্রের এই ইতিবাচক শক্তিকে পরিপূর্ণ করে তোলার জন্য প্রয়োজন জনগণের সরাসরি ভোটে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া। আমরা প্রায়ই বলি আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভেতরও যথাযথভাবে গণমত প্রতিফলিত হয় নাÑ একথা খুবই সত্যি কেননা সেখানে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের স্বার্থসংশ্লিষ্টতা তাকে খণ্ড-বিখণ্ড করে।

সেখানে নারীকেও একটি ‘খণ্ড‘ রূপে বিবেচনা করা হয়। এটিকে বলা যায় নারীদের জন্য নির্মিত নতুন অবরোধ। এই অবরোধ কেবল নারীর জন্য ক্ষতিকর নয়, ক্ষতিকর শেষ বিচারে যথাযথ গণতন্ত্রের জন্যেও। আমাদের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের ভেতর সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীসমাজের মতামতের যথার্থ প্রতিফলন ঘটাবার জন্য প্রয়োজন সরাসরি ভোটে নারীদের নির্বাচিত করার ব্যবস্থা। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ এবং জাতীয় সংসদসহ গণপ্রতিনিধিত্বমূলক সব প্রতিষ্ঠানে নারীদের নির্ভয়ে ভোটে দাঁড়াবার এবং নির্বিঘেœ ভোট দেবার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।

যদি আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থে রক্ষা করতে চাই, চাই বিকশিত করতে। যতো ভুল-ভ্রান্তি কিংবা ত্র“টি-বিচ্যুতিই থাকুক না কেন ১/১১-এর মধ্য দিয়ে এ দেশের দুই নেত্রী একটি সত্যি প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাহচ্ছে-- এদেশে গণতন্ত্র থাকবে! দলে দলে পুরুষ মহারথীরা যখন সংস্কারবাদীর খাতায় নাম তুলে ভেক সাধুসন্তের বাণীচর্চা করছিলেন, তথাকথিত বীর-মহাবীররা পালিয়ে দেশান্তরী ইঁদুরে পরিণত হয়েছিলেন তখনও দেশছেড়ে যেতে রাজী হননি বাংলার এই দুই দূহিতা। গণতন্ত্র ফিরে এসেছে এদেরই অনমনীয় দৃঢ়তায়! এই গণতন্ত্রকে প্রাণমূল্যে ভুলভ্রান্তি, ত্র“টিবিচ্যুতিতেও এরাই রক্ষা করবেন বলে আমার ধারণা। এই দেশে বিভিন্ন সিন্ডিকেট এবং স্টেক হোল্ডারদের গণতন্ত্র নয়, যথার্থ গণমানুষের গণমত প্রতিফলিত গণতন্ত্র এদেরকেই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আজই একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল নারী জনপ্রতিনিধিদের কয়েকজনকে সাক্ষাৎকারে দেখলাম তারা ৬৪ জেলায় ৬৪ জন নারী প্রতিনিধিকে সরাসরি ভোটে দাঁড়িয়ে নির্বাচিত করার পক্ষে কথা বলছেন।

তারা মনোনীত, কোটা পদ্ধতির সুবিধা চাইছেন না, তারা তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে সত্যিকার জনমতের রায়ের ভিত্তিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে চান। জনমতের যে শক্তি তারা সেই শক্তিকে যথার্থ জ্ঞান করছেন। তারা সেই যথার্থ স্থানে তাদের আস্থা এবং ভরসা করছেন। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘জনগণই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি, আবার জনগণই আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। ’ অর্থাৎ সত্যিকার গণতন্ত্রে, প্রকৃত জনমত প্রতিফলিত গণতন্ত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির দৃঢ় শক্তি যেমন জনগণ, তেমনই জনপ্রতিনিধি যদি ভুল করে তবে তার জন্য বড় দুর্বলতাও সেই জনগণ।

গণতন্ত্রের প্রকৃত শক্তি এবং প্রকৃত দুর্বলতার ওপর ভরসা ও আস্থা স্থাপনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন চাই নারী অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে অর্থাৎ কথায় নয়- কাজে- তাহলেই সেটা যথার্থ হয়ে উঠবে। আমার একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। বছর কয়েক আগে আমরা কয়েকজন গিয়েছিলাম খুলনা। খুলনা শ্যামনগর একটি স্বশাসিত ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা নেয়াই ছিল আমাদের সে সফরের উদ্দেশ্য।

শ্যামনগর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান কামরুল হাসান দীর্ঘক্ষণ আমাদের তার ইউনিয়নের জনসম্পৃক্ত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিতে দিতে এক পর্যায়ে জানালেন, ইউনিয়ন পরিষদের যে ভবনটিতে আপনারা বসে আছেন সেটি কেন্দ্রীয়ভাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নকশা অনুযায়ী করা। বাংলাদেশের সব ইউনিয়ন পরিষদের অফিসই এই একই নকশা অনুযায়ী করার কথা কিন্তু এই ভবনটিরও নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে এর স্থপতিকে আমার ইউনিয়নের মেয়েদের পরামর্শে। এই ভবনটি করতে গিয়ে দেখা গেল যে, এই ভবনে মেয়েদের জন্য ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়নি। যেমন মেয়েদের জন্য পর্যাপ্ত বসার জায়গা, বাথরুম ইত্যাদি রাখা হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদের প্রদত্ত সেবাসমূহের স্টেক হোল্ডার যেমন পুরুষেরা তার চাইতে বেশি বলা যায় মেয়েরা কারণ সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি- টিকা দান, পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য কার্যক্রম এসবের বেশির ভাগের সঙ্গেই মেয়েরা সংশ্লিষ্ট ফলে ইউনিয়ন পরিষদে তাদেরকেই বেশি আসতে হয় অথচ তাদেরই কোনও জায়গা রাখেননি স্থপতি।

বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর স্থপতি এই ভবনের নকশায় পরে মেয়েদের জন্য পর্যাপ্ত এবং প্রয়োজনীয় জায়গার ব্যবস্থা করে রি-মডেল করেন। এখন বাংলাদেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে মেয়েদের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা রয়েছে। শ্যামনগর ইউনিয়ন পরিষদের কামরুল হাসান সেদিন যা বলেছিলেন সেটা একটা কমন বাস্তবতা এই বাংলাদেশের। আমরা এতো সংকীর্ণ পিতৃতান্ত্রিক, এত সাংঘাতিক পুরুষ মৌলবাদী যে আমাদের ভাবনার ভেতরও নারীদের জন্য কোনও স্পেস থাকে না। শিশুদের জন্য কোনও স্পেস থাকে না।

সাধারণ মানুষের জন্য কোনও স্পেস থাকে না। আমরা রমণীকে ‘অমীমাংসিত’ রাখি ভোগের সুবিধার্থে, ভোগ্যপণ্য গণ্য করে ভোগের পিচুটিপূর্ণ আচ্ছন্নদৃষ্টির আÍরতিতে নিজেরা বিভ্রান্ত হই, অন্যকে বিভ্রান্ত করি। আমরা ভাবি নারীর হাতে ক্ষমতা গেলে সংসার উচ্ছন্নে যাবে, আমরা ভয় পাই, কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা এই যে, নারীরা আমাদের এই জনপদে এখনো অভয়মুদ্রা ধরিত্রীর মত। ইউএনডিপির সূচকের চেয়েও অনেক উঁচুতে তাদের সূচকÑ সেটা আমরা জানি কিন্তু স্বীকার করি নাÑ সেটা স্বীকার করার জন্য আরও বড় স্কেলের প্রয়োজন হবে। যতদিন সেই স্কেলটি পাওয়া না যাবে ততদিন বললেও কেউ বুঝবে না।

না বুঝুক, আপাতত এটুকু নিশ্চিত কর হোক, সরাসরি ভোটে নারীদের নির্বাচিত হবার মীমাংসা। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.