আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তাগাছার মন্ডা থাকে শুধু প্রাণ টা

do good সম্রাট মিয়া রিক্সা চালায় শ্যামসিদ্ধি বাজারে, আজ চার মাস হল সে এই খানে এসেছে, রহিম বাদশার সতের টি রিক্সার মধ্যে একটি চালায় সম্রাট মিয়া, রহিম বাদশার কাছে তাকে এনেছে ছোরহাব মিয়া, তারা একই সাথে রিক্সার গেরেজের সাথে লাগোয়া টং ঘরে থাকে , বাড়ি মুক্তাগাছার শালগাউ, ছোরহাব তার চাচাত ভাই । প্রতি দিন রিক্সায় কামাই খারাপ হয় না , জমা দিয়ে ২০০ টাকা থাকে । জমা দিতে হয় ৫০ টকা , ২ বছর আগে জমা ছিল ২০ টাকা, হু হু করে সব কিছু বেড়ে গেছে, প্রতি দিন রিক্সা চালিয়ে দুপুরের পর সুমন মিয়ার দোকানে একটা পান একটা বিড়ি না খেলে আর একটু খোশ গল্প না করলে সম্রাট মিয়ার পেটের ভাত হজম হয় না। আজকেও এর ব্যাতিক্রম হল না, যাবার সময় টাকা বের করতে গিয়ে দেখে পকেটে কোন টাকা নাই , লজ্জায় তার মাথা যায়, বলে -সুমন ভাই আমারে এট্টু সময় দেইন, আমি ঘরে যায়াম আর আয়াম, দৌড় দিয়ে ঘরে গিয়ে আবার ফিরে আসে । এসে জানায় -বাই আমার টেহা কনো পরছে বুজতাসি না, তয় টেহার লাগান এটা জিনিস আনছি , চলত না ? দেহুন ছে ? সম্রাট মিয়া একটা কিছু বের করে দেয় , সুমন হাতে নিয়ে দেখে যে এটা তো মার্কিন ডলার, হায় এটা রিক্সা ওয়ালা কিভাবে পেল , সুমন দের গ্রামের অনেক মানুষ বিদেশে থাকে যে কারনে এটা তার কাছে খুব পরিচিত।

সুমন বলে এইডা তুমি কেমনে পাইলা ? সে জানায় –ক্যা এইডায় চলত না ? হ্যা চলবে বলে সুমন তাকে ৫০ টাকা দেয় আর বলে ১৫ টাকা হইছিল , এরপর সম্রাট বলে যে আম্রার দেশে এই টেহা অনেক আছে। ,ডাহাত আনলে মাইনসে কাইরা লয় নইলে পুলিসে দরে, আমরা অইহানেই ৪০/৫০ টাহা কইরা বেচি, সুমনের চক্ষু চড়ক গাছ! ৪০ হলে ৩০ টাকা আর ৫০ হলে ২০ টাকা কম প্রতি ডলারে , সে আগ্রহী হয়ে উঠে , বলে আমারে ৪০ টাকা করে এনে দিতে পারবে, হ দেওন যাইব তয় আফনের যাওন লাগত আমার লগে , আমার এডি আনতে ডর লাগে, পুলিসে দরলে কাইরা রাখত আবার জেলেও ডূহাইত, সুমন বলে তুমার বাড়ি কই জানি ? বসে বলে মোমেনশীঞ মূক্তাগাছা, ক্যা মন্ডার নাম হুনুন নাই ? এই খান থেকে যাইতে কত ক্ষন লাগবে ? সম্রাট বলে এন থন ডাহা ১ ঘন্টা আর ডাহা থন ৩ ঘন্টা , সুমন বলে অনেক ক্ষন লাগব তাহলে, তুমি আমারে এই জিনিস কত গুলা দিতে পারবা আর আরেক টা কথা এই জিনিস তুমরা কেমনে পাও, সম্রাট বোলে যে আম্রার দেশের লগে কিস্টান গো গিরজা আছে, অনে বিদাশিরা আহে হেরা দেয়, বেশি কইরা দেয় ,মানত পুরা করার লিগা। আফনে যত টাহার চাইবেন হেইডাই দিমু ,গেরামের হগলের কাছ থিকা আনাআম, আফনের কত লাগত ? সুমন বলে ধর কয়েক লাখ টাকার , সম্রাট বলে গত বছর ডাহা থিকা একজনে ১০ লাখ টাহার লইছিল , কবে যাইবান ? সুমন বলে তাইলে তো তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার , কাইল্কা তো হাট আছে তয় পরশু যাওন যায় , সম্রাট জ়ানায় তাইলে আমি মোবাইল দিয়াম কতা কয়া রাহাম, সুমন বলে ঠিক আছে তুমি কতা কউ , আমি যামু তুমার দ্যাশে। ঐ দিন রাতে সম্রাট সুমন কে তার ঘরে নিয়ে যায়, ঘরে গিয়ে দেখে চৌকির উপরে ১৫/২০ টা ডলার শুকাইতে দেওয়া, ভাই দ্যাশে থিকা আনার সুম বিস্টিত ভিজা গেসিল হের লিগা শুকায়াম। সুমন পরের দিন একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে মুক্তাগাছা যাবার জন্যে, ড্রাইভার খোকন তাদের গ্রামেরই, কখনো গাড়ি দরকার হলে তাকেই সাথে নেয় সুমন, খুব ভোরে রউনা দেবার কথা থাকলেও বের হতে হতে ১০ টা বেজে যায়।

সুমন সাথে নিয়ে যায় তার ফুফাত ভাই রহমান কে আর যায় সম্রাট মিয়ার চাচাত ভাই ছোরহাব । প্রথমে তারা যায় থানা সদরে ব্যাংকে, সেখান থেকে সুমন উঠায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সাথে থাকা একটি চামড়ার ব্যাগ এ টাকা গুলো ভরে ফেলে, মুক্তাগাছার উদ্দ্যেশে রউনা হয় দুপুর ১ টায়। সম্রাট মিয়া কিছুক্ষন পর পর মোবাইলে কথা বলছে, কোথায় আছে তারা সেই জায়গার নাম এবং সব কিছু যাতে রেডি থাকে তার তাগিদ দিচ্ছে। গাজীপুর চৌরাস্তা পার হতে হতে ৩ টা বেজে যায়, এরপর বিকেল ৫। ৩০ টায় পৌছায় মুক্তাগাছা বাজারে ।

সম্রাট বলে ভাই মন্ডা খাইবান না ? সুমন বলে ঠিক আছে খোকন গাড়ি থামাও ,মন্ডা খাই, গাড়ি থেকে নেমে তারা মন্ডা খায় এবং আরো কয়েক কেজি কিনে নেয়। সম্রাট মিয়া আর কত দূর তোমার বাড়ি ? এই তো আর ৫/৬ মাইল। ভর সন্ধ্যা গড়িয়ে আসে মুল রাস্তা থেকে তারা পাশের একটি সড়কে ঢূকে পড়ে , পথ আর ফুরায় না । শালবনের ভিতর দিয়ে গাড়ি চলছে এত গহীন যে গা ছম ছম করে, সুমন বলে আর কত দূর ? এইত ভাই আইসা পরছি, সে আবার মোবাইলে অবস্থান জানায়। হঠাৎ করে সম্রাট মিয়া গাড়ি থামাতে বলে, সুমন বলে না এই শাল বন পাড় হোক তার পর গাড়ি থামাব, সে বলে না আমার লোক উঠব, হঠাৎ করেই সম্রাটের আচরন টা কেমন যেন লাগছে, সে ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে বলে ,গাড়ি থামার সাথে সাথে ৭/৮ জন লোক গাড়ীতে উঠে পড়ে।

সুমন , রহমান,ও ড্রাইভার খোকন কে বেদম মারতে থাকে , মারতে মারতে তাদের সাথে থাকা সব টাকা মোবাইল ফোন এমন কি তাদের পরনের লুংগি শার্ট খুলে নেয়, চোখের মধ্যে মরিচের গুড়া দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। যাবার সময় মুখের মধ্যে কাপড় দিয়ে বাধে যাতে চিৎকার করতে না পারে, এরপর সুমন নিজেকে দেখতে পায় হাসপাতালে, থানা থেকে দারোগা সাহেব এসেছেন, তার সাথে কথা বলতে চাইছেন্ , সুমনের চোখের নিচে কালো দাগ ও ফোলা জখম, সারা শরীরে প্রহারের দাগ ব্যাথায় কাতরাচ্ছে । সব ঘটনা শুনে দারোগা সাহেব ওসি সাহেব কে ফোনে বলছেন - স্যার মনে হচ্ছে মনসুর ,চেহারার বর্ননায় তাকেই মনে হচ্ছে, আবারো সেই ৪২০/৪০৬/৩২৮। স্যার এরে তো ধরতে না পারলে ঘটনা তো ঘটতে থাকবেই আর আমাদের ঘুম হারাম । মনসুর মিয়া যিনি সম্রাট নামে রিক্সা চালাতেন , সম্রাট তার ছদ্মনাম, তারা একটা সংঘবদ্ধ প্রতারক দল, প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন জেলা কে তারা টার্গেট করে ঐ এলাকাতে রিক্সা চালিয়ে এভাবে একটা করে তাদের ভাষায় ‘খোপ’ ধরে এনে সর্বস্ব এমন কি পরনের লুংগি টাও তারা নিয়ে যায়।

সুমন মিয়া বেডের পাশে থাকা মন্ডার প্যাকেট টার দিকে তাকায় ,কি কারনে যেন তারা এটি রেখে গেছে, সে ভাবে বেঁচে যে আছি এইটাই তো অনেক , বেশি লোভ করে সব কিছুই হারালাম, আছে শুধু মুক্তাগাছার মন্ডা আর আমার লোভী এই প্রাণ টা ! (একটি বাস্তব ঘটনার ছায়া অবলম্বনে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।