আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তরুনীর বিবাহ সমাচার (পর্ব-০৩)

জীবনটা যেন এক বর্ণীল প্রজাপতি পর্ব-০১ পর্ব-০২ পর্ব-০৩ আকাশ গুড়ুম গুড়ুম শব্দ করিয়া বাজিয়া চলিয়াছে। সেই কখন হইতে। তরুণীর মনের অন্দরেও আকাশের মতনই গুড়ুম গুড়ুম বাদ্য বাজিতেছে। মুখ ভার! সকালের সূর্য উঠিয়াছিলো ফকফকা হইয়া। মাড় দেওয়া সাদা কাপড়ের মতন চারিদিকে চকচক করিতেছিলো।

দিনে্র প্রথম ভাগ হইতে প্রকৃতির অনুরূপ ভাব মনের মধ্যে বিরাজ করিতেছিলো তরুণীরও। সারা সকাল হইতে মধ্য দুপুরের গনগনে রৌদ্রের আলোর মতন তাহার মনের মধ্যেও আলো চমকিত হইতেছিলো। বৈকালের পূর্বাবধিও ঘুমাইবার আপ্রাণ চেষ্টা করিয়াও দুই চক্ষের পাতা এক করিতে পারিতেছিলো না। অশান্ত হইয়া যাইতেছিলো বারে বারে। যতই সে শান্ত রাখিতে চেষ্টা করিতেছিলো, তথাপি পারিয়া উঠিতেছিলোনা।

বৈকাল হয় হয় এমন সময়ে আচমকা আকাশ গাল ভার করিয়া কাহার উপরে জানি তাহার সমস্ত আবেগের ভাব গোপন করিয়া রাখিতে না পারিয়া হাউমাউ করিয়া কান্দিয়া বুক ভাসাইলো। এহেন আকাশের ক্রন্দন দেখিয়া তরুণী কিঞ্চিৎ আশান্বিত হইয়া উঠিলো এই ভাবিয়া যে আজগে আর কোন ঘটনা ঘটিবে না। বৈকাল গড়াইয়া যাইয়া সন্ধ্যা হইয়া আসিতেছে। এতক্ষণে আকাশের ক্রন্দনও থামিয়াছে। বোধকরি, মেঘের সাথে তাহার অভিমানেরও সমাপ্তি ঘটিবার তোরজোড় চলিতেছে।

নতুন করিয়া ঝগড়া বাঁধিবার সম্ভাবনাও একেবারে উড়াইয়া দেওয়া যাইতেছে না যদিও। উত্তর পাশের কক্ষের কাছ দিয়া যে বারান্দা রহিয়াছে, সেইখানে দাঁড়াইয়া তরুণীর মাতা কাহাকে যেনো টেলিফোন করিয়া কুশল জিজ্ঞাসা করিলো। তাহার পরে কাহার আগমনজনিত কারনে রন্ধনগৃহে নানাবিধ খাদ্য সজ্জিত করিতে নিজেকে ব্যপৃত রাখিতে চলিয়া গেলো। তরুণী ইহার সকলই জানিতো। “কাহার আসিবার কথা আর কে আসিতেছে!” তরুণী স্মিত হাসিয়া উঠিলো আপন মনে।

দিন দুয়েক আগে তরুণী সৌন্দর্য্য চর্চাকেন্দ্র হইতে আপন বাটীতে ফিরিয়া আসিবার পর মাতার সহিত মাতার কামরায় বসিয়া রহিয়াছিলো। মাতা তাহার পত্রিকার পাতা উল্টাইয়া পত্রিকায় প্রদত্ত বিবাহ শাদীর বিজ্ঞপ্তিগুলান চোখ বুলাইয়া যাইতে যাইতে একখান ঠিকানায় আসিয়া থামিয়া গিয়া আপন কন্যাকে অস্থির হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “পারুল, লক্ষ্য করিয়া দেখো, এইখানে কি একটিবার টেলিফোন করিতে পারি?” পারুলও উৎসুক নয়নে মাতার ডাকে পত্রিকায় চক্ষু বুলাইলো। যেই লম্বা সুদর্শন যুবকের আসিবার কথা ছিলো তাহারই প্রতীক্ষা করিতে করিতে বোধ করি তরুনী তাহাকে কিঞ্চিৎ ভালোবাসিয়া ফেলিতেছিলো। আর তাহার আগমনের কথা থাকিলেও সে আসিতেছিলো না বলিয়া তাহার উপরে অভিমানও হইতেছিলো। সেই অভিমানবশেই সে আচমকা এক সিদ্ধান্ত লইলো।

মাতাকে বলিয়া উঠিলো, “বার্তা লও উক্ত পাত্রের। “ বলাই বাহুল্য এই পাত্র বলিতে আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত নতুন এক যুবকের কথাই সে বলিতেছে যাহাকে সে চেনে না; এমনকি তাহার বৃত্তান্তও কিছুই জানা হয় নাই। মাতা তৎক্ষণাৎ টেলিফোন করিয়া বসিয়াছেন। বিবাহের হেতু একজন যুবকের আশায় বসিয়া থাকিলে তো চলিবে না। দেখাই যাউক না, আল্লাহ কাহার সাথে তাহার কন্যার জীবন বাঁধিতে চান।

আর তরুণীর এইরুপ ব্যবহারের হেতু হইলো এই, যে তাহার সেই সুদর্শনকে দেখাইবে, “তুমি না আসিলে কি হইবে, আমাকে দেখো আরো অনেকেই বিবাহ করিতে আগ্রহী!” এইসবের কিছুই যদিও উক্ত সুদর্শনের জানা সম্ভব ছিলো না কোনপ্রকারেই। সেই সেইদিন যাহাকে হঠাত করিয়া ফোন করিয়া বসিয়াছিলো মাতা, আজ অপরাহ্নে তাহারই আসিবার কথা। পাত্রের মাতা। পাত্র লম্বায় তরুণীর সমান উচ্চতা। সরকারী চাকুরে।

নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত হইয়াছে। ইহার আগেও আরো দুই দুইবার এই দুই মাতার কথা হইয়াছিলো। এইবার লইয়া তৃতীয়বার। একবার তরূণীর পিতা এবং আর দুই বার উক্ত ভদ্রমহিলা বিবাহের সম্বন্ধ ঘটাইবার ইচ্ছা পোষণ করিয়া পত্রিকায় বিবাহের বিজ্ঞপ্তি প্রদান করিয়াছিলো। তরূণীর মাতা সেই লম্বা যুবকের জন্য কয়েক পদ মিষ্টান্ন ও অন্যান্য আয়োজন করিয়া রাখিয়াছিলেন।

মাতাও একখান দীর্ঘশ্বাস গোপন করিলেন, “কাহার জন্য খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করিলাম আর কে আসিয়া এইসব সাবাড় করিবে!” তরুণী তখন গৃহের মধ্যে এক কামরা হইতে আরেক কামরায় অস্থির পদে হাঁটিতেছিলো। এমন সময়, বাড়ির সদর দরজায় কেহ আসিয়াছে বলিয়া সাড়া দিয়া উঠিলো দরজা স্বয়ং। অর্থাৎ বেল বাজিয়া উঠিলো। তরুণী অভ্যাসবসে দরজার ছিদ্রে যাহাকে লুকিং গ্লাস বলা হইয়া থাকে তাহাতে চোখ বুলাইয়া দেখিতে পাইলো, এক ভদ্রমহিলা সালোয়ার কামিজ পরিধান করিয়া তাহাদেরই দরজায় দাঁড়াইয়া! তরুণী দরজা না খুলিয়া ভিতর হইতে তাহার মাতাকে ডাকিয়া “ঐ ভদ্রমহিলা আসিয়াছেন বোধকরি!” কহিয়া দ্রুত পদে নিজের কক্ষে যাইয়া প্রবেশ করিলো। এবং উক্ত কক্ষের দাঁড় টানিয়া দিয়া বিছানার এক কোণায় বসিয়া তাহাকে ডাকিবার অপেক্ষা করিতে লাগিলো।

এ এক পরীক্ষা! রোজ রোজ! পুরুষ সম্প্রদায় যদি জানিতো এইরকম হেনস্থার কথা, বুঝিতে পারিতো! অপরিচিত ভদ্রমহিলা আসা হইতে তিনি চলিয়া যাইবার পর সময়কাল পর্যন্ত কোনরুপ অনিষ্টকর ঘটনা ঘটে নাই। তরুণীর হৃদয়ের মধ্যকার উথাল পাথালও অনেকখানি শান্ত হইয়া গুমোট গরমের পরে হঠাত একপলক দমকা বাতাস যেমন করিয়া প্রশান্তি জুড়াউয়া যায় মনের মধ্যে সেইরকম প্রশান্তি দিতেছিলো। কিন্তুক, আগমনী হেতু হইয়া মনকে প্রশান্ত করিয়া দিয়া গেলো যিনি তাহার একখান কথাতেই চাপা ক্ষোভ দানা বাঁধিয়া উঠিতে লাগিলো। না, ক্ষোভ তাহার সমীপে নহে যিনি কন্যা দেখিতে আসিয়াছেন। ক্ষোভ তাহার আপন পিতা-মাতার প্রতি।

(চলিবে...)  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.