আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অদ্ভূত সামহোয়্যার ইন ব্লগ..........

:-) ব্লগ লেখা শুরু করেছিলাম চার মাস তিন দিন আগে থেকে। অদ্ভূত জায়গা এই ব্লগ! ১. কাল আমি একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম। “আজ আমার বিয়ে”। পুরো পোষ্টটাই একটা গল্পের মত ঘটনা ছিল। গল্পের শেষে আমি লিখে দিয়েছিলাম বিয়ের ষ্টেজে বসে থাকা পুতুল বউকে নিয়ে আমার কিছু চিন্তা থেকে এই পোষ্টের উদ্ভব।

কাল্পনিক লেখা। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য,সেই পোষ্টে এমন কিছু মন্তব্য এসেছে,যা সম্পূর্ন ভাবে আমার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে প্রশ্ন। আমি মন্তব্যের জবাব যতটুকু দিয়েছি,মার্জিত ভাবে দিয়েছি। সবাইকে বলেছি এটা একটা গল্প। অনেক রুচিহীন কমেন্টেও ধৈর্য ধরে রেখেছি।

কিন্তু আমাকে চরম বিরক্ত করে একটা কমেন্ট আসল—“এখন মনে হয় লেখিকার বাসর রাত চলছে!” আশ্চর্য! অদ্ভূত! এধরণের নোংরা কমেন্টকারী মানুষগুলো ও একজন পুরুষ। কারো বাবা,কারো ভাই অথবা কারো চাচা,মামা,খালু। তাদের ঘরেও নিশ্চয় মেয়েরা থাকেন। তাদের কি কোন বিবেকবোধ নাই? নাকি সামুতে মেয়ে নিকে,মেয়ের প্রোফাইল পিকচারে লেখালেখি করা আমার অন্যায়? বিয়ের সাজে একটা মেয়ে কি ভাবতে পারে,সেই পোষ্ট লেখা যাবেনা সামুতে,লিখলেই সেই লেখা কেমন হল—তার গঠনমূলক সমালোচনা না করে ব্লগারের বিয়ের খোঁজ-খবর নিতে হবে—এই আইন সামহোয়্যার ইন ব্লগের কোন নীতিমালায় লেখা আছে? সামহোয়্যারইন ব্লগে আমি খুব অল্প সময় ধরে আছি। এই অল্প সময়েই আমি প্রচুর কমেন্ট পেয়েছি,লাইক পেয়েছি।

দেখা পেয়েছি অনেক ভাল,ভদ্র,রুচিশীল ব্লগারের। সামু আমাকে দুহাত ভরিয়ে দিয়েছে,প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দিয়েছে। অথচ এসবের প্রতি আমার কোন আগ্রহ ছিলনা,এখনো নেই। ব্লগের হিট দিয়ে আমার জীবন চলবেনা। তবু ও আমি এক পর্যায়ে কিভাবে যেন ব্লগটাকে খুব পছন্দ করে ফেলেছিলাম।

এই ব্লগের পরিচিত তিন-চার জন ছাড়া কারো সাথে আমার কোন বন্ধুত্ব হয়নি,ফেইসবুক বা মেসেঞ্জারে এড দিইনি ইচ্ছা করেই,নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে আলাদা রাখতে চাওয়ার একান্ত ইচ্ছায়। কিন্তু তারপর ও মন্তব্য আদান-প্রদান করতে গিয়ে কিছু ব্লগারের-এর সাথে ভাল সম্পর্ক হয়েছিল। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। ডিজিটাল যুগ। ডিজিটাল ব্লগ।

ডিজিটাল ঈভ টিজিং। তাই সামুতে কোন মেয়ে নিক দেখলেই হামলে পড়ে কমেন্ট করা,এক লাইনের পোষ্টে হাজারটা মন্তব্য করে ফেলা। লেখা কেমন হল বিবেচ্য না,বিবেচ্য নিকটা একটা মেয়ের। সেই মেয়েটার ব্লগে আজে-বাজে যা-ই কমেন্ট করা হোক না কেন,সেটা আমি করিনি,আমার নিক করেছে। সব দোষ নিকের,মানুষটার না।

এই হচ্ছে আমাদের বিবেকবোধ,আমাদের শিক্ষা,আমাদের রুচিশীলতা। আর আছে গ্রুপ ব্লগিং। আমি যদি গ্রুপ ব্লগিং না করি,তাহলে আমাকে কেউ অসম্মান করলেও আমার বিপদে কেউ আসবেনা। কারণ আমি সেই গ্রুপের না। উদাহরন চান? উদাহরণ এই ব্লগের আদ্রিতা নামের এক ছোট্ট ব্লগার।

আদ্রিতাকে নিয়ে অদেখা ভুবন নামক এক ব্লগার এক দিনে চার-পাঁচটা করে পোষ্ট দিয়েছে,এই ব্লগের সুশীল ব্লগাররা তখন চুপ ছিলেন। কেউ কেউ আবার অদেখা ভূবনের পোষ্টেও হাসি-ঠাট্টা করে এসেছেন। কিন্তু সেই ব্লগে গিয়ে দুই-এক জন ছাড়া কেউ প্রতিবাদ করেননি। অথচ আনিসা আপু বা অদৃশ্য সত্তার বাক্যলাপ আপুকে এক-ই ব্লগার উক্ত্যক্ত করলে গ্রুপ ব্লগাররা,খ্যাতিমান ব্লগাররা প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন। এই আমাদের ব্লগ! এটাই সামহোয়্যার ইন।

একটা ছোট্ট মেয়ের বিষন্ন সময়ে আমরা পাশে থাকতে পারিনা! আমরা তখন ঘুমিয়ে থাকি। আমাদের রাজাকার তাড়ানো বিবেকবোধ শুধু রাজাকার তাড়ানোর জন্য-ই জেগে ওঠে। আর কোন অন্যায়ের ক্ষেত্রে জাগেনা! আমি এই পোষ্টটা ছাড়া আমার সব পোষ্ট ড্রাফট করে দিয়ে যাব। যদি কোন এক মেয়ে ভুল করে ঘুরতে ঘুরতে আমার ব্লগে এসে পড়ে,সে জেনে যাবে এই ব্লগে মেয়ে নিকে একাঊন্ট খোলা অন্যায়। খুললেই সাধারণ লেখাতেও মন্তব্যের বন্যায় ভাসতে হবে,আর নাহলে হতে হবে ব্লগীয় ঈভ টিজিং-এর স্বীকার।

এখানে আসলে ব্লগ কতৃপক্ষকে দোষ দিয়ে লাভ নেই,দোষ সেই সব তথাকথিত শিক্ষিত মানুষদের যারা ব্লগে এসে নিকের দোহাই দিয়ে রূচিহীন কমেন্ট করে। ২. আজ ব্লগে একটা জরিপ পোষ্ট এসেছে। জরিপ পোস্টঃ বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি হউয়া ভাল ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১০ পারসেন্টের কম (আপনার মতামত চাই) আমি ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজে পড়ি। হ্যাঁ,নিজের টাকা দিয়েই পড়ি। তাই বলে আমার বাবা-মায়ের যে অনেক টাকা তা না।

আমাদের সাথে অনেক নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা পড়ে। জানি আমাদের কতটূকু কষ্ট হয়। সেই কষ্ট অনেক খানি কমে গেছে আমাদের কলেজের পড়াশোনার মান,প্রত্যেক বছর প্রফে ষ্ট্যান্ডের সংখ্যা আর কলেজের প্রতি ভালবাসা থেকে। প্রত্যেকটা মানুষ তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভালবাসে। আমি ও ব্যতিক্রম না।

প্রথমে যখন ঐ পোষ্টটা পড়লাম,আমি ভেবেছিলাম কিছু বলব না কাউকে। কিন্তু দশ মিনিট পর হঠাৎ করেই চোখে ভেসে ঊঠল সারাদিন আমাদেরকে অত্যন্ত যত্ন নিয়ে পড়ানো শিক্ষকদের মুখ। আমার প্রিয় বন্ধুদের মুখ,যারা একটা আইটেম,কার্ড,টার্মে পাশ করার জন্য,ভাল করার জন্য টানা এক সপ্তাহ মাত্র দুই-তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে পড়াশোনা করে। যে মায়া,যে ভালবাসা আমাকে আমার কলেজ দিয়েছে,যে কলেজের প্রত্যেকটা ছাত্র কষ্ট করে পড়াশোনা করে ভাল করছে, তাদের অবদান কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য-ই সেই পোষ্ট পড়েও চুপ করে বসে থাকতে পারলাম না। সরকারী মেডিকেলে বেশিরভাগ ছাত্রদের-ই বাবা-মাই বড়লোক।

নিম্নবিত্ত ও আছে। তবে আগের মত সেটা প্রকট নেই। পুঁজিবাদের যুগে অর্থ শিক্ষার জন্য বড় বেশি প্রয়োজন। কাজেই সরকারী মেডিকেলে পড়লেই টাকা নাই,আর বেসরকারী মেডিকেলে পড়লেই টাকার পাহাড়ওয়ালা ছেলে-মেয়ে—এই ধারণা ভুল। যিনি পোষ্ট দিয়েছেন,তিনি অনেক কিছু না জেনেই দিয়েছেন।

একজন মানুষের মেধাকে অসম্মান করার আগে নিজের মেধা বা যুক্তির জোর কতটুকু তা জানতে হয়। মানুষের মূল্যবোধকে যিনি সম্মান করতে পারেননা,তিনি সম্মান পাওয়ার যোগ্য কিনা আমি জানিনা। আমি কোনদিন কোন মানুষের সহজাত গুনাবলী নিয়ে মজা করিনা। কেউ মজা করলে আমার একটু খারাপ লাগে। প্রত্যেকটা মানূষ সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।

আমি কোন ইনফিরিয়রিটি কম্পলেক্সে ভুগে পোষ্ট দিচ্ছিনা। আমি আমার কলেজ নিয়ে গর্বিত। যেহেতু পোষ্টের শিরোনাম-ই হচ্ছে বেসরকারীতে নাকি ১০ পার্সেন্টের কম ভাল ছাত্র পড়ে—কাজেই কলেজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমার এই পোষ্ট। আমি খুব হাসিখুশি মানুষ। সহজে মন খারাপ হয়না।

ব্লগ নিয়ে আমার বাড়াবাড়ি ও নেই। আমি জানি ব্লগের মত একটা ভার্চুয়াল জগতে মান- অভিমানের কিছু নেই। কেউ এক কানা-কড়ি দাম দিবেনা। প্রতিবাদ করা দরকার ছিল,করলাম। অনেকে এই পোষ্ট পড়ে মজা পাবেন জানি।

আনন্দিত হবেন। তাঁদের বলি—আপনাদের আনন্দ দান করতে পেরে আমি ধন্য। সামহোয়্যার ইন ব্লগের জন্য সবসময় শুভকামনা। অদ্ভূত ব্লগ ভাল থাকুক। আমার ফিরে আসা না আসা নিয়ে পোষ্ট না দেওয়ার জন্য সকলের কাছে অনুরোধ রইল।

অঃটঃ আমার লেখা “আসাদের জন্য ভালোবাসা” গল্পটার চারটা পর্ব শুধু আমার ব্লগে থাকবে। কারণ এই গল্প আমার নিজের লেখা হলেও কথক পলাশ ভাইয়ের একটা পোষ্ট আমি ব্যবহার করেছি। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরুপ সেই পোষ্টটা থাকুক। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।