আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোদ, বৃষ্টি আর মেঘের খেলা

প্রতিদিন অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে আমাকে অফিসে আসতে হয় আবার অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে অফিস থেকে বাসায় ফিরতে হয়। এই র্দীঘ পথে আমার সাথী আমার বইগুলো। বই পড়তে পড়তেই আমার এতো লম্বা সময়টা কাটে। বরাবরের মতো আজকেও বাসে উঠে, সিটে বসে সাথেই বইটা বের করলাম, তা না করলে আমাদের পাবলিক বাসের খারাপ সিটে বসে লম্বা সময় পার করার কষ্টটা চেপে বসবে। যাই হোক, বাস চলা শুরু করলো, আমারও বই পড়ার শুরু হলো।

বাসের জানালার যে পাশে বসেছিলাম, সে পাশেই প্রতিদিন রোদ পড়ে আর লেডিস (!!!) গুলো ওপাশে হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই রোদ পুড়ে কাবাব হতে হয়। আজকে রোদের তেজ একটু কমই মনে হয়েছিলো, তাই যখন বইয়ে গল্পে একদম ডুবে গেছি তখন হঠাৎ করে কড়া তেজের রোদটা যখন মুখটা পুড়িয়ে দিয়ে মেঘের আড়াল থেক বের হলো, অনেকটা বিরক্তি নিয়েই তার দিকে আর মেঘের দিকে তাকালাম। কেন বাবা, তোমার তেজটা এখনই কেন দেখাতে হবে ??? আর মেঘেরই বা কি সমস্যা তার কি রোদটা আড়াল করতে কষ্ট লাগে ??? হাতের বইটাকে ঢাল হিসেবে ধরে রোদের হাত থেকে পোড়া মুখটাকে বাঁচাতে চাইলাম। কিছুক্ষণ সফলও হলাম, কিন্তু বই পড়ার আগ্রহ আর গল্পের কাহিনীর টানে আবার বই পড়ায় মনোনিবেশ করলাম। হঠাৎ ঠান্ডা কয়েক ফোঁটা পানির স্পর্শে ঝট করে বই থেকে মুখটা তুলেই দেখি, মেঘ বুঝি আমার রাগটা বুঝতে পেরেই অভিমানী মেয়ের মতোই ঝর ঝর করে কেঁদেই ফেলেছে।

তার এতদিনের দেওয়া আরামটাকে ভুলে আমি তার উপর বিরক্ত হলাম, এই দুঃখেই যেন তার চোখের পানি আর বাঁধ পমানলো না। আর সূর্যও হঠাৎ মেঘের কান্নার কারণটা না বুঝে অবুঝের মতো তা রোদের আলো নিয়ে দাঁড়িয়েই থাকলো। মানে রোদ আর বৃষ্টি একসাথেই চলতে থাকলো। আর আমি অবাক হয়ে তাদের কাণ্ড কারখানা দেখতে থাকলাম। আমার ফিরে তাকানোতে মেঘ যেন তা অভিমান কিছুটা ভুলে আরও রাগী হয়ে আঁচলটা আরও জোড়ে টেনে সূর্যটাকে পুরোটাই ঢেকে দিলো।

বেচারা সূর্য মেঘের রাগ আর অভিমানের ব্যাপার স্যাপার না বুঝতে বুঝতেই আড়ালে ঢাকা পড়ে গেলো। তার মেঘ তার বুক উজার করে কষ্টের পানিগুলো ঝিরঝির করে বইয়ে দিলো। এতকিছুর পর আর আমি থাকতে না পেরে তাকে বললাম, হয়েছে এবার থামো, অফিস টাইমে এভাবে কোন রকম আওয়াজ না দিয়ে কেউ নামে ??? সবার কি দূর্দশাটা করেছো একবার দেখতো !!! এতো ক্ষণে তার হুস হলো। বুঝিবা একটু লজ্জাও পেলো। আর লজ্জা পেয়েই হুট করে তার কান্নাও থেমে গেলো।

আমি তো অবাক। নিয়মের একি ব্যতিক্রম ??? একটু আবাস না দিয়েই শেষ। আর আমি যে মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম, তার চোখের পানিতে হাত ভেজাবো - সেটা তো করাই হলো না !!! কান্না থামার সাথেই সূর্য বুঝি একটু সাহস করেই আচঁলের বাইরে মুখটা বাড়িয়ে দিলো, আর একঝলক রোদের ছোঁয়ায় অদ্ভুত সুন্দর একটা পরিবেশের সৃষ্টি হলো। কান্না ভেজা আকাশ, সূর্যের উঁকি দেওয়া মুখ আর মেঘের ছায়া - এই তিন বিপরীতমুখী চিত্র পুরো পরিবেশটা স্বপ্লীক করে তুললো। কি যে এক মায়াবি পরিবেশ তা আসলে লিখে বা বলে বোঝানো যাবে না !!! এইভাবেই একসময় তাকিয়ে দেখি আমি আমার গন্তব্য পৌঁছে গেছি, আর রোদ-বৃষ্টি-মেঘের খেলা আমার বই পড়ার বারোটা বাজিয়েছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।