আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্ধকার পেড়িয়ে..... ( একটি হাসির নাটকের পান্ডুলিপি)

চরিত্রঃ নায়ক ঃ হাসান, এবং তার তিন বন্ধু, ঃ মাসুদ,মানিক ও রফিক। নায়িকা ঃ সাবিনা। ছোট বোন ঃ সাবিহা। চেয়্যারম্যান, চেয়্যারম্যানের বউ, দুধর্ষ ডাকাত ঃ কালু চকিদার ঃ আবুল, বাবুল। মেম্বার ঃ ২জন এন জি ও কর্মি ঃ শামিম।

মোল¬া ঃ সালাম, মজনু। চোর ঃ সামচু মজিদ। এছাড়া ও গ্রামের বিভিন্ন ব্যক্তির চরিত্র। [ তিন বান্ধবী নিয়ে হেটে যাচ্ছে সাবিনা, তার হাতে বই খাতা। তাদের চোখে-মুখে উচ্ছাস, গল্প করতে করতে তারা রাস্তা দিয়ে হেটে স্কুলে যাচ্ছে।

রাস্তার মোড় ঘুরতেই সাবিনার সাথে হাসানের দেখা হয়। সাথে হাসানের তিন বন্ধু। ] মাসুদ ঃ হাসান আজ তোকে বলতেই হবে যে তুই সাবিনারে কে ভালোবাসিস। রফিক ঃ তিনটা মাত্র কথা বলার জন্য তুই তিন বছর যাবত অপেক্ষা করছিস। আর তোর পিছনে থেকে থেকে নিজেদের কে মনে হচ্ছে পুরানো সিডি ক্যসেট।

বার বার শুধু একই জায়গায় গিয়ে আটকে যাচ্ছি! মানিক ঃ তুই আসলে একটা ভিতু টাইপের ছেলে, আজ যদি তুই সাবিনা কে ভালোবাসার কথা টা বলতে না পারিস তাহলে ভাববো তুই বন্ধু নামের কলংন্ক। হাসান ঃ তোরা দোস্ত আমার জন্য দোয়া করিস, আজ কিছু একটা ঘটে যাবে। [হাসান খুব ভাব নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়, হাত দিয়ে মাথার চুল ঠিক করে একবার পেছন ফিরে তাকায় তারপর সাবিনার সামনে গিয়ে হা করে কিছু একটা বলতে গিয়ে বলতে পারে না শুধু তোতলাতে থাকে। সাবিনা মুচকি হেসে সামনে এগিয়ে যায়। হাসান বেকুবের মত কিছুকক্ষন দাড়িয়ে থাকে তারপর চেচিয়ে বলে] ঃ সাবিনা তোমার সাথে আমার তিন টা কথা ছিল।

[সাবিনা পেছন ফিরে তাকানো মাত্রই কলার খোসায় পা পিছলে রাস্তার মধ্যে পড়ে যায় হাসান। সাবিনা তার বান্ধবী সহ উচ্চ স্বরে হেসে উঠে। তারপর আবার সামনের দিকে হেটে চলে যায়। প্রচন্ড হতাস হাসান রাস্তার মধ্যে আধা শোয়া অবস্থায় শুয়ে থাকে। হাসানের বন্ধুরা এগিয়ে আসে।

তাদের মুখে ব্যাঙ্গতক হাসি। ) মানিক ঃ কিরে এবারো পারলি না? (হাসি ...) রফিক ঃ তোরে দিয়ে কিচ্ছু হবে না! হাসান ঃ বলে তো প্রায় ফেলে ছিলাম, কিন্তু কলার খোসা টা যে কোথা থেকে এলো ? মাসুদ ঃ দোস্ত তুই এখন থেকে খেলোয়াড়দের বুট জুতা পড়তে পারিস। খোদা না করুক এভাবে তুই যদি আবার পড়িস তবে তো কোমড় ভেংগে বিচ্ছিরী একটা ব্যপার হবে। বুট জুতার নিচে অনেক গুলো করে পায়া থাকে যার কারনে তুই মাটির সাথে গেথে থাকবি। হ ঃ হি ঃ হাসান ঃ ছি : ছি :! তোরা আমার বন্ধু? নাকি অন্য কিছু।

[হাসান উঠে দাড়ায়। দুর থেকে সাবিনা আবার পেছনে ফিরে তাকায়। মুখে তার মুচকি হাসি। হাসান ভাব নিয়ে সামনে এগুতে চেষ্টা করতেই দেখে তার স্যান্ডেল টা ছিড়ে গেছে। বন্ধুরা সবাই একসঙ্গে হেসে উঠে।

] দ্বিতীয় দৃশ্য ঃ [চেয়্যারমান বাড়ি। বাড়ি টা সু-বিশাল। কাচারি ঘরের সামনে চেয়ারমান বসে আছে, তার সামনে বেনচি তে বসে আছে গ্রামের নিম্নবৃত্ত শ্রেনীর কয়েক জন লোক। বাম পাশে দাড়ানো চৌকিদার দ্বয়, তাদের বগলে ছাতা। ] চেয়্যারমান ঃবশির মিয়া কি খবর, ভালো আছো নি?জমি-জমার কি খবর, চাষ করতাছো নী? বশির ঃ [বশির মিয়া মাথা চুলকিয়ে বলে] চেয়্যারমান সাব যে কি কন জমি পামু কনে? সবইতো আপনার কাছে বন্ধক রাখছি।

আইছিলাম যুদি একখান রেশনের কাট দিতেন তইলে পোলাপান নিয়া চাইড্ডা খাইয়া বাচতাম। চেয়্যারমান ঃ মিয়া এইডা কি কইল¬া, অহন কি কার্ড দেওনের সময় নি ? আর দুই মাস আগে আইলা না কেন? বশির মিয়া: দুই মাস কি কন আমি তো বছর ভইরা আফনের কাছে একটা কতাই কই! আর আফনে কন পড়ে দিমু। আর আইজক্যা কইতাছেন দুই মাস আগে কেন আইলাম না? [পাশে দাড়ানো চৌকিদার সামনে এগিয়ে এসে বলে] ঃ অহন কাট নাই, চাইলে বাঁশ দিতে পারি! বশির মিয়া ঃ এইডা কি কন মিয়া, বাঁশ দিবেন ক্যা? ভোডের সময় তো চেয়্যারমান সাব কইছিলো পাস করলে তোমারে কাট দিমু। আর অহন কন বাশ দিবেন । এইডা কেমুন ইনসাফ? চেয়্যারমান ঃ [উত্তেজিত হয়ে] আবুইল¬া তোরে কত দিন না কইছি তুই আমার কথার মধ্যি বাম হাত দিবি না!সর সামনে থিকা।

আবুল ঃ হুজুর যে কি কন আমার তো তিন দিন ধইরা বাম হাত কাইট্টা রইছে,এইযে দ্যাহেন। চেয়্যারমান ঃ আবুইল¬া তুই আমার সামনে থিকা যা, আজ সারা দিন তুই সাসপেন্ড। [বাবুল সামনে এসে বলে ঃ- এই জন্যইতো আমি চুপ কইরা থাকি। চেয়্যারমান সাব বাশ না দিক কাশ দিক শালা তোর কি? [চকিদারদের প্রস্থান] বশির মিয়া ঃ চেয়্যারমান সাব আমি তাইলে কি খামু ? উপায় তো কিছু দেহি না। চেয়্যারমান ঃ বশির তোমার ভিটাডা তো বাকি আছে ওইডারে না হয় বন্ধক রাহো।

বশির মিয়া ঃ [কান্না জড়ানো কন্ঠে] পাচ জন পোলাপান নিয়া তইলে থাকমু কোথায়? পতে নামমু নি, কি কন এইডা! [বশির মিয়া চুপ করে বশে থাকে, তার চোখ থেকে জ্বল ঝরে পড়ে। ] জব্বর শেখঃ চেয়্যারমান সাব আমার ভাইতো আমারে ক্ষেতে যাইতে দেয়না। বাপের জমিনে কিছুই ভাগ দিতে চায়না। উল্টো আমাকে বলে বাড়ি ছাড়! এই বাড়িতে তোর কোন হক নাই, এইডা কেমুন বিচার? চেয়্যারমান ঃ এই সব বিচার আচার তো কম করলাম না। তোমাদের ভাইঘোর মধ্যি ব্যাপার, উচিত তোমাদের নিজে দেরি মিল হইয়া যাওয়া,আমরা বাইরের লোক গেলে দেখা যাবেনে যে তোমাদের দুই ভাইরী খরচ বাড়বে।

তারচে. . জব্বর শেখ ঃ খরচ নওইয়া আফনে কোন চিন্তাই করবেনা। প্রয়োজনে বাড়ি-ঘর সব বেইচ্চা হালামু কিšু— বেইমান ভাইরে ছাড়মু না। চেয়্যারমান ঃ তোমারে দিয়াই হইবো, যাও তোমরা। ভাইবা দেহি কি করা যায়। [লোকজন উঠে দাড়ায়, এমন সময় চেয়্যারমান এর মেয়ে সাবিনা বাড়িতে প্রবেশ করে।

] চেয়্যারমান ঃ মা জননী স্কুলে গেলা আর আইল¬া কেলাস হয় নাই? সাবিনা ঃ ক্লাস হইবো কেমনে হেড স্যারের বাড়িতে চুরি হইছে। স্যারের জামা-কাপড় জুতা সেন্ডেল কিচ্ছু নাই, সব কিছু নিয়া গেছে। চেয়্যারমান ঃ (আশ্চর্য হয়ে) কি কইলা! চুরি হইছে? আমার এলাকায় চুরি আমি কিছু জানিনা, এইডা কেমনে হইলো? এমন তো কোন সময় হয় নাই। এইডা কিসের আলামত? সাবিনা ঃ আব্বা কি কইলেন আপনে ? চোরেরা সবাই আপনেরে জানাইয়া চুরি করে নি? আপনে কি চোরের লিডার নি? চেয়্যারমান ঃ (বিব্রত হয়ে, জিব্বায় কামড় দিয়ে) মাগো আমার মাথা ঠিক নাই। কি কইতে কি কই! মেম্বার দৌড়ে এসে বাড়িতে প্রবেশ করে।

সে হাপাতে হাপাতে বলে ঃ- হুজুর সাড়ে সর্বনাস হইয়া গেছে! চোরে খালি হেড মাষ্টারের জিনিষ-পত্রই নিছে আর কারো কিচ্ছু নেয় নাই। আজব চোর! [চেয়্যারমান চিন্তিত ভাবে উঠানে হাটাহাটি করতে থাকে। চকিদার এবং মেম্বার ও চেয়্যারমান এর পিছেনে পিছনে হাটাহাটি করতে থাকে, তাদের মুখে কৃত্তিম গম্ভিরতা] তৃতীয় দৃশ্য [স্থান : খোলা মাঠ। দুপুরের সুনশান নিরবতা। সামচু মিয়া একজন বিখ্যাত ছেচরা চোর।

মজিদ তার নতুন সহকারি। ] মজিদঃ ওস্তাত কালকে রাতের কামডায় কিন্তু হেভি সাকসেস হইছি। সারা গেরামে তোলপাড় শুরু হইয়া গেছে, সবার খালি একই কথা এমন চোর আইলো কোথা থিকা? [মুচকি হেসে] এরেই কয় প্রথম বলেই বাউন্ডারী। সামচুঃ মজিদ মিয়া তুই কিন্তু হালায় কতা বেশি কস। কতা কম কইবী মনে রাখবী তাল গাছের ও কান আছে, কি বুচ্ছসনি? মজিদ ঃ (হাসি থামিয়ে, এদিক ওদিক তাকিয়ে) সামচু ভাই স্যরি ওস্তাদ ভাই,আমার কি মনে হয় আফনে যেহানে আছেন, সেই হানে কাউয়া-পক্ষি ও কোন কিছু টের পাইবো না।

সামচু ঃ শোন অতি ভক্তি চোরের লক্ষন! খালি ওস্তাত কইলেই হইবো,ওস্তাত ভাই কতাডা কানে লাগে। যাই হোউক কামের কথায় আহি, এই এলাকার চোর বাটপারের লিডার হইলো চেয়ারম্যান। অহন এই ঘটনায় তার মাথার চুল খারা হইয়া যাইবো। সে খুজতে থাকবো এই ঘটনা কে ঘটাইতে পারে, তাই কয়েক দিন চুপ মাইরা থাকতে হইবো। মজিদ ঃ আপনে তো শহরের একজন বড় মাপের ছেচরা চোর আছিলেন তই সেই হান তনে চলে আইলেন কেন ? বর্তমানে সেই হানে সুযোগ সুবিদা কইমা গেছে নি? নাকি কোরস ফায়ারের ডরে? সামচু ঃ মজিদ মিয়া তুই কি আমারে ইন্টারভিউ নিতে চাস নি? মজিদ ঃ (লজ্বায় লাল হয়ে, হাত কচলিয়ে) ওস্তাত আমারে মাফ করবেন, বেয়াদপি নিবেন না।

এইডা নালায়েকের সামান্য কৌতুহল মাত্র! সামচু ঃ শোন গাছের যেমন শিকড় আছে তেমনী মানুষের ও শিকড় আছে। [মজিদ আর্শ্চয্য হয়ে লাফ দিয়ে দাড়িয়ে যায়। হাত পায়ের দিক ভালো করে তাকায় সে, তারপর হাত পা ঝারা দিয়ে বলে -] ঃ কি কন এইডা,কই শিকড়! সামচু ঃ বহো মিয়া না বুইজ্জা লাফাও কেন? এই শিকড় দেখা যায় না। এইডা হইলো বোঝার ব্যাপার উপলোদ্ধি করনের ব্যাপার! গেরামের মানুষরা শহরে গিয়া অনেকে বড় চাকরি করে, অনেকে বড় ব্যবসায়ী হয়, কেউ কেউ ডাক্তার ইনঞ্জিনিয়ার হয়, কিন্তু তারপর তারা গেরাম রে ভুইল¬া যায়। তাদের শিকড় হইলো গেরাম আর তা এ সব মানুষরা মনে রাহে না।

কিন্তু আমি হালায় নিমক হারাম নই। হেড মাষ্টার আমারে পিডাইয়া স্কুল ছাড়া করছে,তাই লেহা-পড়া হয় নাই। বাপ আছিলো না,মায়েও মইরা গেলো. . . মজিদঃ আহারে উস্তাত আফনের জীবন নিয়াতো ফিলিম বানানো যায়। হের পর কি হইলো? সামচুঃ কি আর হইবো ঢাকায় গিয়া অনেক কিছুইতো করলাম কিন্তুু কোন কিছু তে জুইত করতে না পেরে শেষে হইলাম চোর! যেমুন তেমুন চোর না, বিখ্যাত চোর। ঢাকায় কানা সামচু কইলে একনামে সবাই আমারে চেনে।

ঢাকায় আমার দুইডা ফেলাট বাড়ি আছে। পোলট ও আছে। তারপরও মাটির টানে আমি চইল¬া আইছি। বড় বড় শিক্ষিত মাইনসের চেয়ে আমার দেশ প্রেম বেশি। মজিদঃ আপনেরে কানা সামচু কই কেন? আফনের চোখেতো ডাবল পাওয়ার রাইতের আন্ধারে বিলাইর মতন সব কিছু দেইখ্যা তারপর চুরি করেন।

একজন চোরের দৃষ্টি নিয়ে এমন কতা কওন ঠিক নি? সামচু ঃ ঘটনা হইলো প্রথম যখন ঢাহায় গেলাম তহনতো বেডা অনেক কিছু করতে চাইলাম, কিন্তু কিছুই হইতেছিল না। কয়দিন কানাসাইজা ভিক্ষা করছিলাম । তারপর প্রমশন পাইতে পাইতে আইজ আমি বিখ্যাত হইছি। এখন শুধু একটাই আশা চেয়্যারমানের মাইয়া সাবিনারে বিবাহ কইরা বাকি জীবন সহি সালামতে কাটানো। মজিদ: চুরি? চুরি করন কি ছাইরা দিবেন নি? সামচুঃ চুরি হইলো চোরের নিঃশ্বাস।

চুরি ছাড়া চোর থাকতে পারে না। চুরি করা হইলো নিশার মতন। তবে চুরি কে তুমি র্আট ও কইতে পারো। মজিদ ঃ আট কেন কমু দুই বাড়াইয়া দশ কমু। সামচু ঃ তুই বেডা না বুইঝা বেশি কতা কস! তুই অহন যা।

মজিদ ঃ তইলে আমি উঠি, আফনে বাড়ি যাইবেন নি? সামচু ঃ না। আমি একটা নতুন প¬ান করতে আছি। চুরি কোন সাধারন কাম না। প্রচুর বেরেন খাডাইয়া নিত্য নতুন ফন্দি আবিষ্কার করন লাগে বুচ্ছসনি? মজিদ ঃ জি ওস্তাদ আমি তইলে আফনেরে আর ডিসটারাপ দিমু না। (মজিদ মিয়া চলে যায়, মাথা চুলকাতে চুলকাতে।

সামচু মিয়া ধ্যানের ভংগিতে বসে থাকে। ) চলবে..... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।