আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে (পর্ব-২)

তোমার আমার ঠিকানা,পদ্মা-মেঘনা-যমুনা ঔষধ খেলেই রোগ নিরাময় হয় না, সঙ্গে কিছু নিয়ম-নিষেধও মানতে হয়। তেমনি শুধু যোগ-ব্যায়াম অভ্যাস করলেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায় না, কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয় বৈ কি। নিয়মিত যোগ-ব্যায়াম অভ্যাসে শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকে, এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু সাথে চাই পরিমিত ও যতদূর সম্ভব নিয়মিত আহার, বিশ্রাম, সংযম, নিয়মানুবর্তিতা, আত্মবিশ্বাস, অটুট মনোবল ও একাগ্রতা। তাহলে চলুন শুরু করি।

তবে নিয়মিত যোগাভ্যাসকারীদের জন্য কয়েকটি বিষয় মনে রাখা বিশেষ প্রয়োজন। তা হচ্ছে: ০১) ৫/৬ বছর বয়স থেকে শুরু করে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত যোগ-ব্যায়াম অভ্যাস করা যায়। শুধু প্রয়োজন অনুযায়ী কয়েকটি আসন বেছে নিতে হবে। সব বয়সে সব রকম আসন করা যায় না। অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের কোন আসন দুইবারের বেশি করা ঠিক নয়।

ছেলেদের ১৪/১৫ বছর বয়েসের পূর্বে আর মেয়েদের ঋতু প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত প্রাণায়াম ও মুদ্রা অভ্যাস করা উচিৎ নয়। ০২) সকাল, সন্ধ্যা ও স্নানের পূর্বে বা রাত্রে যে কোন সময় যোগ-ব্যায়াম করা যায়। তবে সে সময় যেন ভরপেট না থাকে। অল্প কিছু খেয়ে আধঘণ্টা খানেক পরে আসন করা যেতে পারে, কিন্তু প্রাণায়াম বা মুদ্রা খালি পেটে অভ্যাস করাই বাঞ্ছনীয়। প্রাতঃক্রিয়াদির পর আসন করা ভালো।

তবে যাদের কোষ্ঠবদ্ধতা, পেট ফাঁপা প্রভৃতি রোগ আছে, তারা সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিছানায় কয়েকটি নির্দিষ্ট আসন ও মুদ্রা করতে পারে। যাদের অনিদ্রা-রোগ আছে, রাত্রে খাবার পর শোবার পূর্বে কিছুক্ষণ বজ্রাসন করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ভরপেট খাওয়ার পরও কিছুক্ষণ বজ্রাসনে বসলে খাদ্য হজম বা পরিপাকক্রিয়া সহজতর হতে পারে। ০৩) যাদের শরীরে কোন রোগ বা অসমতা রয়েছে অথবা যাদের বয়স অত্যন্ত কম বা বেশি, তাদের জন্য অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়। শুধু লেখা বা বই পড়ে বা ছবি দেখে তাদের যোগ-ব্যায়াম করা ঠিক নয়।

এতে উপকারের পরিবর্তে অপকার হবার সম্ভাবনাই বেশি। ০৪) আসন, মুদ্রা বা প্রাণায়ামে একটি ভঙ্গিমায় বা প্রক্রিয়ায় একবারে যতটুকু সময় সহজভাবে করা যায় বা থাকা যায়, ঠিক ততটুকু সময় করা বা থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে কোন ক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দিষ্ট আসন ছাড়া একবারে এক মিনিটের বেশি থাকা উচিৎ নয়। পদ্মাসন, ধ্যানাসন, সিদ্ধাসন ও বজ্রাসনে ইচ্ছেমতো সময় নেয়া যেতে পারে। ০৫) একবারে ৭/৮টির বেশি আসন অভ্যাস করা ঠিক নয়।

আসনের সঙ্গে বয়স অনুযায়ী ও প্রয়োজনমতো দু’একটি প্রাণায়াম, মুদ্রা অভ্যাস করলে অল্প সময়ে আরো ভালো ফল পাওয়া যায়। এক একটি আসন বা মুদ্রা অভ্যাসের পর প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে। ৫/৭ মিনিট খালি হাতে কিছু ব্যায়ামের পর আসন বা মুদ্রা করলে ফল খুব দ্রুত পাওয়া যায়। কিন্তু কোন শ্রমসাধ্য কাজ বা ব্যায়ামের পর বিশ্রাম না নিয়ে কোন প্রকার যোগ-ব্যায়াম করা উচিৎ নয়। সপ্তাহে একদিন বিশ্রাম নেয়া উচিৎ।

০৬) আসন অভ্যাসকালে জোর করে বা ঝাঁকুনি দিয়ে কোন ভঙ্গিমা বা প্রক্রিয়া করা ঠিক নয়। আসন অবস্থায় মুখে যেন কোন বিকৃতি না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ০৭) আসন অভ্যাসকালে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু মুদ্রা বা প্রাণায়ামে নিয়মানুযায়ী শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ০৮) কম্বল, প্যাড বা পাতলা তোষকের উপর আসন অভ্যাস করা বাঞ্ছনীয়।

শক্ত মাটি বা পাকা মেঝেতে অভ্যাস করলে যে কোন সময়ে দেহে চোট লাগতে পারে। ০৯) আলো-বাতাসহীন বা বদ্ধ ঘরে যোগ-ব্যায়াম অভ্যাস করা ঠিক নয়। এমন জায়গায় অভ্যাস করার চেষ্টা করতে হবে, যেখানে বায়ুর সঙ্গে প্রচুর অক্সিজেন নেয়া যায়। ১০) ১২/১৩ বছরের উপর এবং ৪৫/৪৬ বছরের নিচে (স্বাস্থ্যানুযায়ী বয়সসীমা কম-বেশি হতে পারে) মেয়েদের স্বাভাবিক কারণে মাসে ৪/৫ দিন কোন আসন করা ঠিক নয়। তবে ধ্যানাসন, শবাসন প্রভৃতি অভ্যাস করা যায়।

১১) মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তানসম্ভবা হলে তিন মাস পর্যন্ত কিছু সহজ আসন বা প্রাণায়াম করা যেতে পারে, কিন্তু মুদ্রা অভ্যাস একেবারে করা উচিৎ নয়। সন্তান প্রসবের তিন মাস পর আবার ধীরে ধীরে সব আসনাদি অভ্যাস করা বাঞ্ছনীয়। গর্ভাবস্থায় সকাল ও সন্ধ্যায় খোলা জায়গায় পায়চারি করা বিশেষ উপকারী। ১২) আসনাদি অভ্যাসকালে এমন কোন পোশাক পরা উচিৎ নয় যাতে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। ১৩) যোগ-ব্যায়াম অভ্যাসকালে ‘কথা বলা’ বা অন্যমনস্ক হওয়া ঠিক নয়।

কারণ মনের সঙ্গে দেহের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ যোগ-ব্যায়ামের মূলমন্ত্র। একাগ্রতাই অভীষ্ট ফল এনে দিতে পারে। ১৪) যোগ-ব্যায়ামে তাড়াতাড়ি ফল পাবার আশা করা ঠিক নয়। এতে বিশ্বাস ও ধৈর্য্যের একান্ত প্রয়োজন। নিয়মিত ও নিয়মমতো যোগ-ব্যায়াম অভ্যাসে সুফল আসবেই।

১৫) যদি তামাকের অভ্যাস বা মাদসাক্তি থাকে, বর্জন করুন। ১৬) যতটা সম্ভব মন প্রফুল্ল রাখা বাঞ্ছনীয়। কুচিন্তা বা দুশ্চিন্তা যেন মনে না আসে। মনে রাখতে হবে, আসন, মুদ্রা ও প্রাণায়াম সব প্রক্রিয়ারই মূল লক্ষ্য এক- শরীরকে সবল, সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখা। শুধু পথ আলাদা।

আসন ও মুদ্রার প্রধান কাজ দেহের ধমনী, শিরা, উপশিরা, স্নায়ুজাল, পেশী, শ্বাস-যন্ত্রাদি ও গ্রন্থিগুলোকে সবল ও সক্রিয় রাখা এবং পরিপাক ও নিঃসরণ ক্রিয়াকে ঠিকভাবে পরিচালিত করা। আর প্রাণায়ামের প্রথম ও বিশেষ প্রভাব শ্বাস-যন্ত্রাদির উপর, তারপর দেহের অন্যান্য অংশে। প্রাণায়ামকে দৈহিক ব্যায়াম না বলে একটি উত্তম শ্বাস ব্যায়াম বলা যেতে পারে। প্রাণায়ামের উদ্দেশ্য হলো শ্বাসগতির নিয়ন্ত্রণ। প্রাণায়ামে মন একাগ্রভাবে শ্বাসগতির অনুগামী থাকবে।

উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো যদি নিজস্ব মনোভঙ্গির সাথে বিপরীতার্থক না হয়ে সহমতপ্রবণ হয়, তাহলে ধরে নিতে পারি যে আমরা এখন ইয়োগা বা যোগাভ্যাস চর্চায় প্রস্তুত। এবং সে ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন যোগাসন, প্রাণায়াম ও মুদ্রার অভ্যাস-অনুশীলনে মনোনিবেশ করতে পারি শবাসন (Shavasana): ইয়োগা চর্চাকারীমাত্রই জানেন যে, যোগাসনের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ও দুর্বোধ্য আসন হচ্ছে শবাসন (Shavasana)। অথচ মজার বিষয় হলো, এই শবাসনকেই অনেকে অত্যন্ত সহজ একটি আসনাবস্থা হিসেবে ধারণা করে নিতে কেন যে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তা বোধগম্য নয়। যোগ-কুশলীদের মতে আসন অভ্যাসের প্রতি পর্যায়ে একবার করে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে। ইয়োগার কোন একটি আসন বার কয়েক সম্পূর্ণ অভ্যাসের পর পরই শবাসনের মাধ্যমে দেহমনের বিশ্রাম দেয়া যোগব্যায়ামের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ।

এভাবে একটি যোগাসন অভ্যাসের পর প্রয়োজনমতো একবার ৩০সেঃ থেকে ৪৫সেঃ শবাসনে বিশ্রাম নিলে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। বরং অন্য কোন আসনের প্রকৃতি অনুযায়ী দেহের বিশেষ কোন অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গে রক্তসঞ্চালন সাময়িক রুদ্ধ বা প্রচুর রক্ত চালিত করার ফলে যে ভিন্নতা প্রয়োগ করা হয়, তাকে পূর্বাবস্থার উন্নততর স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া হিসেবে শবাসনের চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শব অর্থ মৃতদেহ। মৃত ব্যক্তির যেমন তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর কোন কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ থাকে না, তেমনি শবাসন অবস্থায় অভ্যাসকারীর দেহের কোন অংশে তার কোন কর্তৃত্ব থাকবে না। মৃত ব্যক্তির মতো আসনচর্চাকারীকেও কিছুক্ষণের জন্য বাস্তব জগৎ থেকে দূরে সরে যেতে হবে।

ব্যক্তি আর ব্যক্তিতে থাকবে না। সমস্ত চিন্তা-ভাবনা থেকে মনকে কিছুক্ষণের জন্য দূরে রাখতে হয়। প্দ্ধতি: দু’হাত শরীরের দু’পাশে মেলে রেখে সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাতের তালু উপর দিকে এবং পায়ের পাতা দু’পাশে একটু হেলে থাকবে। অথবা যেভাবে ভালো লাগে সে ভাবেই রাখুন।

এবার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শিথিল করে দিন। দেহের প্রতিটি জোড়া ও মাংসপেশী আলগা করে দিন। শরীরের কোন অংশে কোনরকম জোর থাকবে না। মন শান্ত, ধীর, চিন্তাশূন্য করে মৃতের মতো কিছুক্ষণ পড়ে থাকুন। শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ সরল ও মন্থর থাকবে।

মনে রাখতে হবে, বাস্তব জগৎ থেকে আপনি এখন দূরে আছেন। মনটাকে শিথিল করে অনুভব করুন, আপনার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো এখন আর আপনার নেই, কোথায় আছে তাও জানেন না আপনি। এ আসন অবস্থায় যদি ঘুম ঘুম ভাব চলে আসে বুঝতে হবে আসনটি ঠিকমতো অভ্যাস হচ্ছে। অনেকের মতে পা থেকে শুরু করে এক এক করে শরীরের এক একটি অংশ শিথিল করে এনে তারপর মাথা শিথিল করতে হবে। প্রক্রিয়াটি আসলেই কঠিন এবং দুর্বোধ্যও।

তবে যার কাছে যেভাবে সহজ ও স্বাভাবিক মনে হবে সেইভাবেই করা উচিৎ। আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মনকে চিন্তাশূন্য করে দেহকে শিথিল করে দেহ ও মনকে কিছুক্ষণ সম্পূর্ণ বিশ্রাম দেয়া, তা সে যেভাবেই হোক। উপকারিতা: শবাসন অসম্ভব উপকারী একটি আসন। দীর্ঘ সময় বা শ্রমসাধ্য কাজের পর অথবা অনিদ্রার পর কিছু সময় এই আসনটি করলে দেহ ও মনের সমস্ত ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়ে যায়। নতুন জীবনীশক্তি, উদ্যম ও কর্মপ্রেরণা ফিরে আসে।

যাদের অত্যধিক শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করতে হয়, তাদের আসনটি অবশ্যই করা উচিৎ। মন ও স্নায়ুতন্ত্র প্রয়োজনমতো বিশ্রাম না পেলে স্নায়বিক দুর্বলতা, বধিরতা, দৃষ্টিহীনতা প্রভৃতি নানা কঠিন রোগ হতে পারে। এমনকি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলাও অস্বাভাবিক নয়। ছাত্র-ছাত্রীদের এ আসনটি ‘মৃত সঞ্জীবনী’র মতো কাজ করে বলে অনেকে মনে করেন। বিশেষ করে পরীক্ষার সময় অত্যধিক পড়াশুনার পর এই আসনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে অবসাদ, ক্লান্তি দূর হয়ে শুধু যে নতুন উদ্যম ফিরে আসে তাই নয়, স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়।

প্রায় সব আসন অভ্যাসের পর কিছুক্ষণ শবাসনে বিশ্রাম নিতে হয়। কারণ, অন্যান্য আসন অবস্থায় শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে প্রচুর রক্ত চলাচল করে। তারপর শবাসনে বিশ্রাম নিলে রক্ত চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে। রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং হৃদরোগীদের জন্য আসনটি অবশ্য করণীয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের দু’মাস আগে থেকে এবং প্রসবের পর অন্ততঃ দু’মাস দিনে কিছু সময় শবাসনে বিশ্রাম নেয়া উচিৎ।

পদ্মাসন (Padmasana): ইয়োগা চর্চায় বহুল ব্যবহৃত এ আসনটিকে দেখতে অনেকটা প্রস্ফুটিত পদ্মের মতো মনে হয় বলে একে পদ্মাসন (Padmasana) বলা হয়। সব্জির মধ্যে আলু যেমন সকল কাজের কাজী, সব কিছুতেই মানিয়ে যায়, তেমনি যোগ-ব্যায়ামের যে কোন আসনের সাথে জুড়ে যাবার প্রয়োগযোগ্যতার কারণে লব্ধ জনপ্রিয়তার সাথে সাথে এই রহস্যময় পদ্মাসন চর্চায় বহু বৈচিত্র্যও লক্ষ্য করা যায়। পদ্মাসন মূলতঃ তিন প্রকার: মুক্ত-পদ্মাসন, বদ্ধ-পদ্মাসন ও উত্থিত পদ্মাসন। (১) মুক্ত-পদ্মাসন (Mukta-Padmasana) পদ্ধতি: সামনের দিকে পা ছড়িয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন। এবার বাঁ পা হাঁটু থেকে ভেঙে ডান উরুর উপর এবং ডান পা একইভাবে বাঁ উরুর উপর রাখুন।

হাত দু’টোর চেটো উপুড় করে বা চিৎ করে অথবা ধ্যান করার ভঙ্গিতে দু’হাঁটুর উপর রাখুন (আসনের এই ভঙ্গিকে সিদ্ধাসনও [siddhasana] বলা হয়)। অথবা নমস্কারের ভঙ্গিমায় বুকের উপর রাখুন। এখন দৃষ্টি নাসিকার অগ্রভাগে এবং জিহ্বার অগ্রভাগ মাড়ির শেষদিকে স্পর্শ করে রাখুন। সহজভাবে যতক্ষণ পারা যায় ঐ অবস্থায় থাকুন। পদ্মাসনে বেশি সময় থাকলেও কোন ক্ষতি নেই।

শ্বাস-প্রশ্বাস অবশ্যই স্বাভাবিক থাকবে। এবার পা বদল করে অর্থাৎ প্রথমে ডান পা হাঁটু থেকে ভেঙে বাঁ উরুর উপর এবং বাঁ পা একইভাবে ডান উরুর উপর রাখুন এবং আগে যতক্ষণ অভ্যাস করেছেন ততক্ষণ এ অবস্থায় থাকুন। এরপর ধীরে ধীরে পায়ের বাঁধন খুলে প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন। উপকারিতা: যোগশাস্ত্র মতে আসনটিতে সর্বরোগ দূর হয়। হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ফলে হাঁপানি রোগ হতে পারে না, আর থাকলেও অল্পদিনে সেরে যায়। মেরুদণ্ড সোজা ও সরল রাখে। চিন্তাশক্তি, স্মৃতিশক্তি ও ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি করে এবং মনের একাগ্রতা আনে। পায়ের পেশী ও স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় রাখে। দেহে বাত বা সায়টিকা আক্রমণ করতে পারে না।

(২) বদ্ধ-পদ্মাসন (Baddha-Padmasana) পদ্ধতি: প্রথমে মুক্ত-পদ্মাসনে বসুন। এবার ডান হাত পেছনদিক দিয়ে ঘুরিয়ে এনে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল এবং একইভাবে বাঁ হাত পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে এনে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এভাবে কিছুক্ষণ এই আসনে থেকে হাত-পা বদল করে আবার করুন এবং শেষ হলে প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন। উপকারিতা: পদ্মাসনের সব গুণ এ আসনটিতে বর্তমান।

এতে দ্রুত ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও আসনটি কাঁধ ও বুকের খাঁচার গঠনগত দোষত্রুটি দূর করে। (৩) উত্থিত পদ্মাসন (Utthita Padmasana) পদ্ধতি: মুক্ত-পদ্মাসনে বসুন। এবার দু’হাত পাছার দু’পাশে রাখুন। এখন দম নিতে নিতে হাতের জোরে দু’হাতের চেটোর উপর ভর রেখে শরীরকে কিছুটা উপরে তুলুন এবং দম ছাড়ুন।

শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এই অবস্থায় ২০-২৫ সেকেন্ড থাকুন। এরপর দম ছাড়তে ছাড়তে দেহ মাটিতে নামিয়ে পদ্মাসন অবস্থায় বসুন। ক্ষাণিকটা বিশ্রাম নিয়ে পা বদল করে আবার করুন। প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন। উপকারিতা: মুক্ত-পদ্মাসনের প্রায় সব গুণ এতে বর্তমান।

উপরন্তু পেটের বাড়তি চর্বি কমিয়ে ক্ষিদে বাড়ায়, হাতের ও কাঁধের পেশী পুষ্ট করে এবং হাতে প্রচণ্ড শক্তি আনে। আসন-বৈচিত্র্য: পদ্মাসনের এই মূলানুগ চর্চার বাইরেও ব্যবহারবৈচিত্র্যে নতুন নতুন প্রক্রিয়ায় পদ্মাসন চর্চিত হতে দেখা যায়। এইসব সৃষ্ট আসনের মধ্যে অর্ধ-পদ্মাসন, উর্ধ্ব-পদ্মাসন, অর্ধ বদ্ধ-পদ্মাসন অন্যতম। অর্ধ-পদ্মাসন (Ardha-Padmasana): এই আসন-পদ্ধতিতে এক পা হাঁটু থেকে ভাঁজ করে অন্য পায়ের উরুর উপর রাখা হলেও অন্য পা মুক্ত-পদ্মাসনের ভঙ্গিতে আরেক পায়ের উপর না উঠিয়ে ভাঁজ করে মাটিতেই রাখা হয়। এই আসনকে সুখাসনও (Sukhasana) বলা হয়ে থাকে।

উর্ধ্ব-পদ্মাসন (Urdhva-Padmasana): এ আসন-পদ্ধতি মুক্ত-পদ্মাসনের ঠিক উল্টো অর্থাৎ মুক্ত-পদ্মাসনের আসন ভঙ্গিটিকে উপর-নীচে ঠিক উল্টে দিয়ে কাঁধের উপর শরীর ধারণ করে আসনবদ্ধ পা উপরে উঠিয়ে দিয়ে এর চর্চা করতে হয়। অর্ধ বদ্ধ-পদ্মাসন (Ardha Baddha Padmasana): এ আসন-পদ্ধতিতে এক পা অন্য পায়ের উপর স্থাপন করে বদ্ধ-পদ্মাসনের নিয়মে হাত পেছন দিক থেকে ঘুরিয়ে এনে উপরে রাখা পায়ের বুড়ো আঙুলকে এই হাত দিয়ে ধরতে হবে। তবে অন্য পা সামনে সোজা রেখে দম ছাড়তে ছাড়তে আরেক হাত দিয়ে সরাসরি বুড়ো আঙুল ধরবে এবং তলপেট ভেতরে টেনে কপাল জানুতে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে। অথবা মুক্ত-পদ্মাসনে বসে বদ্ধ-পদ্মাসনের নিয়মে এক হাত পেছন দিক দিয়ে ঘুরিয়ে পায়ের বুড়ো আঙুল ধরলেও অন্য হাত স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে। নতুন অনুশীলনকারী যারা প্রাথমিক অবস্থায় মুক্ত-পদ্মাসন বা বদ্ধ-পদ্মাসন চর্চা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না বা সমর্থ হন না, তারা এই অর্ধ-পদ্মাসন বা অর্ধ বদ্ধ-পদ্মাসন অনুশীলনের মাধ্যমে শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দেহকে প্রস্তুত করে তুলতে পারেন।

এতেও উপকারে কোন ঘাটতি হবে না। তথ্য ও ছবিঃ- নেট থেকে নেওয়া। চলবে.............................। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.