আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা ব্যবস্থা ও বই বাণিজ্য

বাংলাদেশ এ ব্যাঙ্গের ছাতার মত তৈরি হচ্ছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল। তথাকথিত উচ্চসিক্ষায় শিক্ষিত করার বাসনা নিয়ে অভিভাবকরাও সেসব স্কুলে নিজ সন্তানকে ভর্তি করছে। এখন আবার ভর্তি নিয়েও বাণিজ্য হচ্ছে। সে বিসয়ে পরে লিখব। আজকে লিখব কিন্ডারগার্টেন স্কুল এর শিক্ষা ব্যবস্থা ও বই বাণিজ্য নিয়ে।

তার আগে এই লেখার সাথে আমার সম্পর্কের কথা বলা দরকার। আমি মফস্বলে প্রায় ১ বছর একটি কিন্ডারগার্টেন এ চাকরি করি। এরপর ঢাকা এসে কয়েকজন কিন্ডারগার্টেন ছাত্রও পড়াই। এছাড়া ঢাকায় বড় হবার সুবিধায় অনেকগুলো কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়। তবে একথা বলব আমার সময়ে এত বই ছিলনা।

বাংলাদেশ এ কিন্ডারগার্টেন স্কুল গুলোর বেশির ভাগের নেই কোন সরকারী লাইসেন্স। তারপর আবার এখানে যারা শিক্ষা দিতে আসেন তাদের বেসিরভাগের নেই প্রশিক্ষণ। এছাড়া নেই সিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ। শুরু করি ভর্তি দিয়ে। আপনার সন্তানকে ভর্তি করতে হলে প্রয়োজন ভর্তি ফি।

এই ফি প্রতি বছর বহন করতে হবে। এছাড়া বই কিনতে হবে তবে তা স্কুল থেকে বা স্কুলের নির্দিষ্ট লাইব্রেরী থেকে। একজন প্লে বা নার্সারির শিশুর জন্য নির্ধারিত হয় স্কুল ভেদে ৬-৮ টি বই। যার মধ্যে ৩-৫ টি বই এই বয়সে দেওয়া যায় কিনা তা তারা জানেন না। এই বইগুলো থেকে স্কুলের লাভ হয় জনপ্রতি প্রায় ৪০০-৮০০ টাকা।

তার মানে যদি অই স্কুলে ছাত্র হয় ২০০ জন তবে বই বিক্রি বাবদ লাভ কত? অপ্রাসঙ্গিক বই গুলো হল ওয়ার্ড বুক, অ্যাক্টিভ ইংলিশ, অঙ্কন, বাংলা কবিতা, সাধারন জ্ঞান। প্লে ও নার্সারির জন্য বাংলা, ইংলিশ ও গনিত কি যথেষ্ট নয়? সরকারী স্কুল গুলোতে যে এত কম বই দেয়া হয়েছে তা কি না বুঝেই দেয়া হইছে? এই বই পড়ে কি কেউ ভাল কিছু হয়নি? এত অল্প বয়সে এতগুলো বই শিশুর মানসিক বিকাশে কি ক্ষতি করেনা? এছাড়া ছোট বেলাতেই পরালেখার প্রতি কি বিতৃষ্ণা ও ভীতির জন্ম দেয়না? কিছুদিন আগে দেখলাম নার্সারি আমার এক ছাত্রর পড়া দিয়েছে বাংলা কবিতা না দেখে লেখা। আমার ওই ছাত্র অক্ষর চিনে না ঠিকমত আর ও লিখবে কবিতা। তার মানে বোঝা যায় আমার ছাত্র জানে বেশি কিন্তু পারে কম। স্কুল গুলোতে বাংলা, ইংলিশ বা গনিত অক্ষরের উপর কম জোর দেয় কারন ওগুলো বাবা মা শিখাবেন।

আমাদের স্কুলের এক ম্যাডাম ছাত্র পিটাতেন। আমার স্কুলের প্রিঞ্চিপাল ছিলেন ছাত্র পিটানোর ঘোর বিরোধী। কিন্তু ওনার স্কুলে প্লে তে ছাত্র ছিল ৩৫ জন আর নার্সারিতে ছিল ৩০ জন। ২ জন শিক্ষক যদিও দিতেন তার একজন করত খাতা/ডাইরির কাজ অন্যজন পড়াত। অনেক স্কুলে এক্ষেত্রে ১ জন শিক্ষক থাকেন।

তাহলে শিক্ষকের দোষ দেই কিভাবে? আমি ক্লাসে গেলে সবসময় নতুন কিছু করার চেষ্টা করতাম। যেমন কাগজের তৈরি প্লেন, নৌকা, ব্যাঙ ইত্যাদি। মাঝে মাঝে গল্প শুনাতাম । কিন্তু বাঁধ সাজল অভিভাবক। আমি ক্লাসে গল্প করি।

বাবা মার ধারনা প্লে ছাত্র নামতা বলতে পারবে। এবার গল্প বাদ শুধু পড়া। কিন্তু বাচ্চাদের মনোযোগ নাই। শিক্ষকদের ট্রেনিং এর ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ট্রেনিং টা স্কুল কর্তৃপক্ষ করানো উচিত।

এই ট্রেনিং না করলে কোন ছাত্রই নিয়ন্ত্রন করা যায়না। খালি ডাইরিতে লিখতে হয় আপনার বাচ্চা খুব দুষ্ট। এবার আসি সিক্ষকের বেতন প্রসঙ্গে। শিক্ষক কখনই খারাপ করে পড়ান না। কিন্তু মাস শেষে যে পয়সা পান তা দিয়েত কিছুই হয়না।

ঢুকে যায় নতুন চাকরির ধান্ধা। এখন ছাত্র পড়ে ছাত্রের মত শিক্ষক পড়ান নিজের মত। টিফিন পিরিয়ডে বাচ্চারা খেলা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কয়টা স্কুলে খেলার মাঠ আছে। বাসায় যাবার পর যে খেলা করবে তার উপায় নাই।

বাবা মারাও বাড়িতে পড়ার চাপ দেন। প্লে, নার্সারির পড়া অন্তত ক্লাসে শেষ করে দেয়া উচিত। আর পড়াটাই যেন হয় খেলা। তাহলে বাচ্চারা পড়েও মজা পাবে। আদব কায়দা, সম্মান এগুলো কি স্কুলে শিখানো উচিত নয়? আমার মনে হয় সরকারীভাবে সব ক্লাসের সিলেবাস করে দেয়া উচিত।

এবং তদারকির যথাযথ ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ভর্তি বাণিজ্য নিয়ে তদন্ত শুরু হলেও কি অবস্থা তা আজো জানা যায়নি। লিঙ্ক Click This Link । মূল লেখার লিঙ্কঃ http://blog.bangla71.com/blog/103 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।