আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"পরিমিত দুঃখের বচন "-মুদ্রার এপিঠ

নাহ ভাল লাগছে নাহ। ভাবলাম বেশ কিছুক্ষণ পরব। কিছুক্ষণই হল নাহ আর বেশ কিছুক্ষন। মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়। পড়া বাদ দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম এবং ভাইভা,কুইজের ঊরধে উঠে গিয়ে জীবনের দর্শন নিয়ে ভাবা শুরু করলাম।

এস এস সির সময়েই সিদ্ধান্ত নিলাম যে বাড়ি থাকব নাহ মানে ইন্টার এর পর বাড়ির বাইরে থেকে পড়াশুনা করব। মনের আশা পূরণ হল বেশ ভালভাবেই। বাসায় থাকার সময় যখন মন খারাপ হত,কিছুই ভাল লাগত নাহ, কোনও কিছু ভাবার আগেই আম্মুর কাছে গিয়ে বলতাম,আম্মু আমার ভাল লাগছে নাহ। আম্মু তখন সব কাজ ফেলায় রেখে আমাকে নিয়ে বসত। বলত কেন বাবা কি হয়েছে??? ভাল লাগছে না কেন???? আমি বলতাম জানি নাহ।

আম্মু তখন মাথায় হাত বুলায় দিত আর এত সুন্দর সুন্দর কথা বলত যে মন খারাপ ভাবটা কোথায় যেন পালাত। বড় হওয়ার পর মা বাবা মানসিক সমর্থন দিয়ে সব সময় সাহায্য করত। আর ছোট বেলায় যখন পড়ে যেতাম, অন্ধকারে একা যেতে ভয় পেতাম, কোনও কিছু নিয়ে মন খারাপ হলে বা কোনও কিছু নিতে ইচ্ছা হলে কান্না কাটি করতাম আম্মু আব্বু চোখের নিমেষে সেই জিনিসটা এনে দিত। পড়ে গেলে দৌড়ে এসে উঠায় দিত। একা যেতে না পারলে আমার হাত ধরে সাথে সাথে যেত।

যখন নিজের দায়িত্ব বুঝলাম মা বাবা স্বাধীনতা দিয়ে দিল। নিজের সব সিদ্ধান্ত নিজেই নিলাম। এর জন্য কোনও দিন মা বাবা দুঃখ পাননি। আমিও পাইনি। কিন্তু আজ অনেক বড় হয়ে গেছি।

তাই মা বাবা থেকে বেশ দূরে বাংলাদেশের সেরা ভার্সিটির একটি হলের দোতলায় আমার বসবাস। এখানে সব আছে। জীবন এখানে নানা রঙ্গে রঙ্গিন। কখনও বন্ধুদের সাথে সারা রাত আড্ডা দেয়া, কখনও দল বেধে Star এ খেতে যাওয়া, কখনও Newmarket এ শর্মা খেতে যাওয়া, রুমের বড় ভাইদের সাথে দর্শনগিরি করা ,পড়তে ভাল না লাগলে একসাথে সিটি বাদ দিয়া, প্রিয় বন্ধুর প্রক্সি দিয়া আরও নানা রঙ...............। কিন্তু সব রঙ এক মুহূর্তে নিজের কাছে মূল্যহীন মনে হয়, এখানে জীবন মাঝে মাঝে দুর্বিষহ, কারন আগে মাথার উপর যে ছাদটা ছিলও সেটা থেকে আমি দুই বছর আগেই বের হয়ে এসেছি।

ছাদটা ছিলও অনেক অনেক শক্তিশালী ,ছিলও মা বাবার সীমাহীন ভালবাসা,স্নেহ,অমূল্য আদর দিয়ে তৈরি। এই ছাদ ছাড়া আগের মত ভাল থাকা সম্ভব নাহ। এখন জ্বর হলে কেউ দেখার নেই, খেতে মন না চাইলে আদর করে বুঝায় শুনায় অথবা ধমক দিয়ে খাওয়ানোর কেউ নেই। মন খারাপ থাকলে কেউ জিজ্ঞাসার নেই;মনের কষ্টের চটে কাদলে,ফুলে যাওয়া লাল চোখ দেখে বোঝার কেউ নেই। একই জিনিস বারবার খেতে খেতে বিরক্তি লাগলেও শোনার কেউ নেই যে অন্য কিছু রান্না করবে।

এখানে সবাই অনেক বড় বড় মেধাবী অভিনেতা যারা প্রতিনিয়ত নিজের কষ্ট, অপ্রাপ্তি ভুলে আনন্দে থাকার ভান করে। কিন্তু অস্কার বিজয়ী অভিনেতারও ভুল হয়। আমাদেরও মাঝে মাঝে ভুল হয়েই যায়। তখন আনন্দের খোলস থেকে জীবন্মৃত বেঁচে থাকার চেষ্টায় ব্যস্ত একজনের অস্তিত্ব বের হয়ে আসে। এখন নিজের আলাদা কোনও রুম নেই,চার জনের রুমে ঘরের এক কোনায় আমার ছোট অস্তিত্ব।

এখন বুঝি মা বাবা আমাদের জন্য কি। বুঝি বলেই মনে হয় মাঝে মাঝে এখন যদি আম্মু পাশে থাকত তাহলে আমার এত খারাপ লাগত না। মনে হয় এখন আম্মুর একটা ঝাড়ি বা থাপ্পড় পেলে আমার খুব ভাল লাগত। কিন্তু তাতো হবে নাহ কারণ আমাই যে বাসার বাইরে থেকে পড়ব। মনের সেই একান্ত ইচ্ছা পূরণ হল বটে তবে তার মূল্য মাঝে মাঝে খুব বেশি মনে হয়।

এখন যখন আম্মু ফোন দিয়ে বলে আব্বু কি কর???আমি কাষ্ঠ হেসে বলি এইত্ত আম্মু আমি পড়তেসি যদিও আমি আড্ডা দিচ্ছি অথবা মন খারাপ করে বারান্দায় পায়চারি করছি বা ক্যাম্পাসে হেটে বেরাচ্ছি। তারপরও.। .। .। .।

.। .। .। .। .।

.। । (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।