আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইতালীর রোমের মসজিদের ঈমামদের আন্দোলন ।

আগামী ১৫/০৩/২০১৩ শুক্রবার রোমে বিভিন্ন মসজিদের খতিবগন ইসলাম ও মহানবী (সাঃ)এর প্রতি কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমনের বিপক্ষে প্রতিবাদ সভা ও সাংবাদিক সম্মেলন করবেন । পরে তারা রোমস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে স্বারক লিপিও পেশ করবেন । ০৮/০৩/১৩ শুক্রবার জুমাআর নামাজ আদায় গিয়ে মসজিদের ঈমাম সাহেবের এই ঘোষনা শুনলাম এবং নামাজ শেষে একটি প্রচার পত্রও পেলাম । প্রতিবাদ সভার ঘোষনা দেওয়ার সময় ঈমাম সাহেব যেভাবে কথা বলছিলেন, তাতে মনে হলো, সে খুবই বিরক্ত বাংলাদেশের উল্লেখিত বিষয় গুলি নিয়ে । ধর্মপ্রান ঈমানদার মুসলমান হলে, এই সব ঘটনায় চুপ থাকার কথা না ।

আমিও তার মত ব্যথিত এবং বিরক্ত, বতর্মান সরকারের উপর কারন কেন সরকার ঐ সমস্ত ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে না, যারা ইসলাম ধর্ম ও নবীজিকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করে এবং করেছে । ঈমাম সাহেব বললেন বাংলাদেশে আইন না থাকলে সংসদে আইন পাশ করতে হবে, ঐ সমস্ত ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে । তিনি সংখ্যালঘুদের উপরে হামলার ভিডিও চিত্র বিভিন্ন টিভি চ্যানেল দেখায় তার উপর ক্ষোপ প্রকাশ করলেন । তার ভাষায় এই গুলো দেখানোর কারনে এখানে (রোমে) আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ হচ্ছে । হুজুর এর পর কয়েক জনের নাম ঘোষনা করলেন,উল্লেখিত প্রতিবাদ সভার আয়োজক, যারা আহবায়ক কমিটির বিভিন্ন পদে রয়েছেন ।

এর আগে মানে দুই সপ্তাহ আগে এই ঈমাম সাহেব, একটি প্রচার পত্র পড়া নিয়ে মসজিদের ভিতরে একটা ঝামেলা হয়েছিল । শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর এর খোলা চিঠি । সরকার ও দেশবাসীর কাছে লিখা ঐ চিঠিতে শিরোনাম ছিল শাহবাগে ইসলাম বিদ্বেষের প্রতিবাদে গর্জে উঠুন । ঈমাম সাহেব প্রচার পত্র পড়ার আগে বলছিলেন এই শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর একজন বয়স্ক লোক এবং সকল রাজনীতির উর্ধে থেকে ইসলামের হেফাজত করতে কাজ করছেন । যদিও ঈমাম সাহেব যেকোন কারনে প্রচার পত্র পড়া শেষ করতে পারেনি ।

প্রিয় পাঠক, আমি যে মসজিদের ঈমাম সাহেবের কথা বলছি তিনি পেলেসতিনা মসজিদ এ মক্কির খতিব । অন্য সব মসজিদের খতিবগণ একই বিষয়ে একই ভাবে বলেন কিনা তা আমার জানা নেই । তবে রোমে মসজিদের ঈমামগণের এই সকল পদক্ষেপে আমি নিজেও শরিক হতে পারলে ভাল লাগতো, কিন্তু কাজ থাকার কারনে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহন করতে পারছি না । যদিও শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর সাহেবের খোলা চিঠিতে শাহাবাগ আন্দোলনের সমালোচনা করা হয়েছে, সমালোচনা করা হয়েছে ৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এবং লেখক সাংবাদিক শাহারিয়ার কবিরের । এখানে বলে রাখি যে ৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এবং লেখক সাংবাদিক শাহারিয়ার কবির বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্যই কাজ করছে ।

তবে হা কোন ধর্ম ব্যবসায়ীর মত করে না । এই বিষয়ে সুযোগ এলে অন্য সময় বিস্তারিত লিখবো । শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর সাহেবের খোলা চিঠি পড়ে মনে হয়েছে, তিনি ইসলাম রক্ষার নামে স্বাধীনতা বিরোধী ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের রক্ষায় মাঠে নেমেছেন । এই বিষয়টি নতুন নয়, সেই ৭১ থেকে শুরু করে যখনই দেশে স্বাধীনতার কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয় সামনে চলে আসে, তখনই এই ধরনের আলেমরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে ইসলাম রক্ষার নামে । যা বাংলাদেশ ছাড়িয়ে আজ ইতালীর রোমে মসজিদের ঈমামদের উপর ভর করেছে ।

এই সমস্ত আলেমদের চোখে পড়ে না, বাংলাদেশে অলিতে গলিতে মাল্টিপারপাস ব্যবসার নামে সুদের ব্যবসা, আজ মরন ব্যাধির মত ছড়িয়ে পড়েছে । তারা বোবা হয়ে, চোখ বন্দ করে থাকেন, যখন সংবিধানে ইসলাম ধর্মে হারাম, মদ খাওয়া আর জুয়া খেলার অনুমোদন দিয়ে আইন পাশ করেন জেনারেল জিয়া । তারা উল্লাস প্রকাশ করেন যখন সংবিধান থেকে ধর্র্মনিরেপক্ষতা বাদ দিয়ে বিসমিল্লাহ রাহমানের রাহিম সংযোগ করে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করার রাস্তা তৈরী করে অবৈধ্যভাবে ক্ষমতা দখল করা জেনারেল জিয়া । আজ তারা সংখ্যালঘুদের জন্য মায়াকান্না কাদে শুধুই ভারসাম্য রক্ষার জন্য অন্যকিছু নয় । শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর তার খোল চিঠিতে ধর্মীয় ইসুতে সামাজিক আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন ।

প্রিয় পাঠক, আপনারা কি কখনও শুনেছেন যে, বাংলাদেশে তাবলীক জামায়াত ছাড়া আর কোন ইসলামী সংগঠন আল্লাহ কথা, মহানবীর কথা বা ইসলাম ধর্মের কথা, জনসাধারনকে আল্লাহর পথে আনার জন্য রাস্তায় হেটে হেটে বুঝাতে । বাংলাদেশে ইসলামী দল গুলি বায়তুল মোকারম মসজিদের উত্তর গেটেই সমাবেশ করে সরকারের বিরুদ্ধে গরম গরম বক্তব্য দিয়ে (যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল ক্ষমতায় থাকে) ইসলাম রক্ষা করে । কিন্তু যখন তাদের গ্যাতি ভাইরা ক্ষমতায় থাকে তখন তারা সংবিধান থেকে মদ খাওয়া, জুয়া খেলা অনুমোদন বাতিল, মহিলাদের হিজাব পড়া বাধ্যতামূলক করা, বা সুদের ব্যবসা বন্দ করতে আইন প্রনয়ন করা, এই সব কিছুর ব্যাপারে কোন কায্যকর ব্যবস্থা নেওয়া কথা বলে না । শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর বা রোমের মসজিদের কিছু সংখ্যক খতিবগণ(বিশেষ করে রোমে মক্কি মসজিদের ঈমাম)শাহাবাগের গণজাগরন মঞ্চের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত কন্ঠে কথা বলেন,তাদেরকে সহজেই নাস্তিক বলে গালি দিয়ে সরকারের কাছে বিচার চাইতে পারেন । কিন্তু বাংলাদেশে ইসলামে হারামকে (মদ,জুয়া) যিনি হালাল করেছে এবং যার উছিলায় সুদের ব্যবসা (মাল্টিপারপাস) আজ বাংলার ঘরে ঘরে ঢুকে গেছে তাদের বিচারের ব্যাপারে বিড়ালের সুরে কথা বলতেও লজ্জা পান ।

যুদ্ধাপরাধীদের ফাসির দাবিতে আজ সারা বাংলাদেশে গণজাগরন মঞ্চ তৈরী হয়েছে, ঐ মঞ্চকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে জাগরন সৃষ্টি হয়েছে । এদের মধ্যে দুই চার জন হতেই পারে অন্য মন মানুষীকতার, তার জন্য কি গণজাগরন মঞ্চে সমালোচনা করে, তাদের সবাইকে ঢালাও ভাবে নাস্তিক বলে, এটা বন্দ করে দিতে হবে বা এখানে হামলা করে জাতীয় পতাকা ছিড়তে হবে । এই মঞ্চে তো দেশের অনেক বড় বড় আলেমরা এসে একাত্বতা ঘোষনা করে গেছে । তাহলে কি তারাও নাস্তিক ? আসলে ধর্মে নামে এই সব ধর্ম ব্যবসায়ীরা যুদ্ধাপরাধীদের বাচানোর জন্য মাঠে নেমেছে । আগামী ১৫/০৩/২০১৩ শুক্রবার রোমে বিভিন্ন মসজিদের খতিবগনের প্রতিবাদ সভা ও সাংবাদিক সম্মেলন এবং স্বারক লিপিতে যদি, বাংলাদেশের সংবিধান থেকে মদ,জুয়ার অনুমোদন বাতিল এবং যিনি এটাকে সংবিধানে সংযোগ করেছেন তাকেও বিচারের আওতায় আনার দাবি, সংসদে বিল এনে মাল্টিপারপাসের নামে সুদের ব্যবসা বন্দ, মহিলাদের বাধ্যতামূলক হিজার পড়া আইন পাশ করা, এই সমস্ত বিষয গুলি থাকে তাহলেই সাধারন মুসলমান বুঝতে পারবে যে রোমের মসজিদের খতিবগণের আন্দোলন কোন বিশেষ উদ্দ্যেশে নয়, সত্যিকারে ইসলাম রক্ষায় ।

তা না হলে সাধারন মুসলমানের মাঝে বিরুপ ধারনা জন্মাবে যে, বাংলাদেশের ধর্ম ব্যবসায়ীদের মত ইতালীর রোমে মসজিদের ঈমামরাও ধর্ম ব্যবসায় নেমেছে । আমিও ঘৃনা করি তাদেরকে যারা ইসলাম ধর্ম ও আমাদের মহা নবী (সাঃ)কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয় এবং তাদেরকে যারা কাপুরুষের মত সংখালঘুদের উপর হামলা করে । আমি অবশ্যই চরমভাবে ঘৃনা করি যারা ইসলাম ধর্মের কথা বলে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় মাঠে নেমেছে তাদেরকে। আগামী ১৫/০৩/২০১৩ শুক্রবার রোমে বিভিন্ন মসজিদের খতিবগন ইসলাম ও মহানবী (সাঃ)এর প্রতি কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমনের বিপক্ষে প্রতিবাদ সভা ও সাংবাদিক সম্মেলন সফল হোক । ধন্যবাদ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.