আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাগ্যকুলের জমিদারদের রবিঠাকুরের কুঠিবাড়ি

সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা

সরকারী হরগঙ্গা কলেজ বার্ষিকী ২০১০ (৭০ বছর পূীর্ত সংখ্যা) হাতে পেয়ে অভিভূত হয়েছিলাম। একটি মফস্বল শহরের কলেজ থেকে প্রকাশিত এতো সমৃদ্ধ এবং সুপরিকল্পিত কলেজ বার্ষিকী চোখে পড়ে না। আবার যখন বিক্রমপুরের ঐতিহ্য এবং সম্পাদক উপাধাক্ষ্য মো: শাহজাহান মিয়া স্যারের কথা ভেবে এটাকে প্রত্যাশিত বলেই মনে হয়েছে। এটা পড়ে একটি তথ্য সংযোজন করার ইচ্ছাও জাগলো। মুন্সীগঞ্জ শহরে প্রথম কলেজ নির্মাণ করেছিলেন রায়বাহাদুর হরেন্দ্রলাল রায়, তাঁর নিজ নামে।

এতে তৎকালীন ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। স্থানীয় দ্বন্দ্বে কলেজটি বিলুপ্ত হয়। হরেন্দ্রলাল রায়ের নামে মুন্সীগঞ্জে একটি পাবলিক লাইব্রেরিও রয়েছে যা নির্মাণে তার তৎকালীন ৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল। বিষয়টি আমারও জানা ছিল না। প্রায় ১৫ বছর আগে হরেন্দ্রলাল রায়ের নাতবৌ ৮২ বছর বয়স্কা শ্রীমতি সবিতা রায়ের কলকাতাস্থ ঠিকানা পেয়ে তাকে হরেন্দ্রলাল এবং ভাগ্যকুলের জমিদারেদের সম্পর্কে তথ্য দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে একটি পত্র দিয়েছিলাম।

তিনি অল্প দিনের মধ্যে অনেক তথ্য ডাকযোগে পাঠিয়ে দিলেন। সেই তথ্যগুলো সমন্বিত করে কয়েকটি পত্রিকায় ছাপানোও হয়েছিল। এই ভাগ্যকুলের জমিদারদের অনেক কৃর্তির মধ্যে একটি হল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়ি সমেত জামিদারি ক্রয় করা। ফলে শিলাইদহলের কুঠিবাড়ির সর্বশেষ মালিক রবীন্দ্রনাথের পরিবার ছিলেন না। মালিক ছিলেন ভাগ্যকুলের জমিদারগণ।

অবশ্য ১৯৬৫ সালের মধ্যে ভাগ্যকুলের কুন্ডু জমিদার পরিবারের (রায় উপাধি প্রাপ্ত) সকল জমিদার পূর্ববঙ্গ ত্যাক করে চলে যান। ফলে তাদের সারাদেশের অনেক সম্পদের মতো শিলাইদহের কুঠিবাড়িও পরিত্যাগ করেন। কুষ্টিয়া জেলার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ প্রথম আসেন তার বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে। ১৮৭৫ সালের সেই আগমন ছিল দিন দশের জন্য। দুইমাসের মধ্যে তিনি আবারো শিলাইদহে আসেন জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে।

তখন জ্যোতিন্ত্রনাথ ঠাকুরই জমিদারি দেখার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। শিলাইদলে রবীন্দ্রনাথ লেখার মতো অপরূপ পরিবেশ এবং অফুরন্ত সময় পেয়েছিলেন। তিনি দুহাত খুলে, প্রাণভাবে শিলাইদলে লিখেছেন। কুঠিবাড়ি এবং কুঠিবাড়ি ছেড়ে কিছুটা উত্তরে পদ্মায় রক্ষিত বোটে বসে লিখেছেন। এই বোটটি শিলাইদহে সংরক্ষিত রয়েছে।

কুঠিবাড়িতে তার কক্ষে প্রবেশ নিষেধ লেখা থাকতো। শিলাইদহে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ রচনা লিখেছেন। তার অনেকগুলো রচনার নিচে কাল এবং স্থান দেয়া রয়েছে। শিলাইদহে লেখার একটি তালিকাও রয়েছে। কিছু লেখা নিয়ে নিশ্চিত হওয়াও যায়নি।

সোনারতরী কাব্যগ্রন্থের সোনার তরী, গানভঙ্গ; চিত্রা কাব্যগ্রন্থের পুরাতন ভৃত্য, দুই বিঘা জমি, ব্রাহ্মন, আবেদন, স্বর্গ হতে বিদায়, দিনশেষে; কনিকা কাব্যগ্রন্থের অবশেষে; ক্ষণিকা কাব্যগ্রন্থের যাত্রী, নববর্ষা, অকালে, বিলম্বিত, মেঘমুক্ত, কল্যানী, অবিনয়, কৃষ্ণকলি, আবির্ভাব ইত্যাদি অনেক বিখ্যাত কবিতা তিনি কুঠিবাড়িতে অথবা বোটে বসে লিখেছেন। রবিন্দ্রনাথের শিলাইদহের কুঠিবাড়ি দেখতে গিয়ে বারবারই মনে হয়েছে এই বাড়ি ভাগ্যকুলের জমিদারদেরও। আমার জন্মস্থান ভাগ্যকুল বলেই এটা মনে হয়েছে। বোট দেখে মনে হয়েছে এই বোট আমাদের, এই বকুল গাছ আমাদের, দুই বিঘা জমির ওপেনের সেই আমগাছটিও (কুঠি বাড়ির পেছনে একটি পুরাতন আমগাছ দেখে) আমাদের। এভাবেই বিক্রমপুরের ভাগ্যকুলের বিখ্যাত জমিদারদের স্মৃতির সাথে জরিয়ে রয়েছেন আমাদের শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথ।

মুজিব রহমান: সভাপতি, বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা, সভাপতি- অনুপ্রাস শ্রীনগর শাখা, সহ-সাধারণ সম্পাদক অগ্রসর বিক্রমপুর শ্রীনগর কেন্দ্র।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.