আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরীক্ষা - The Examination (একটি আত্ম-ট্রাজেডী)

আই লাভ দ্যা স্মোক, আই লাভ দ্যা স্মোকি লাইফ। সব ধোয়াটে থাকবে। ইচ এন্ড এভরিথিং।

২/২ সেমিস্টারে একটা কোর্সে ড্রপ দিয়েছিলাম। ৩/১ এ নিলাম।

কালকে ওইটার টার্মটেষ্ট। পড়তে একদমই ইচ্ছা করছেনা। ইচ্ছে করছে পড়াশুনা যে আবিষ্কার করসে তার কবর বের করে তার মুখে ইয়ে করতে। সন্ধা থেকে বারবার মাইন্ড ফ্রেশ করে পড়তে বসি, মাগার পড়া হয় না। এই মাঝরাতে মনে করলাম, শুধু শুধু সময় নষ্ট না করে একটা পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষামূলক ব্লগ লিখি।

কাজে দেবে। পরীক্ষা নিয়ে প্রথম স্মৃতি হল নার্সারীর। কিভাবে পরীক্ষা দিয়েছিলাম ঠিক মনে নাই। তবে পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছিলাম। ক্লাস-টিচার আমার মাকে বললেন, “আপনার ছেলে জীবনের প্রথম পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছে।

মিষ্টি খাওয়ান”। হুলুস্থুল কান্ড। আমি ফার্স্ট হবার মাহাত্ম্য না বুঝলেও অনেক খুশি হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, ‘পরীক্ষা জিনিসটা তো ভালই। প্রতিদিন হওয়া দরকার’।

তখন কি আর জানতাম, সেদিনের সেই ছেলের আজকের সবচেয়ে ব্যাথাফুল জিনিস হবে পরীক্ষা। আফসুস। যাওক গা। বাচ্চাকালের পরীক্ষা নিয়ে তেমন কিছু মনে নেই। প্রায় সব সময়ই ফার্স্ট হতাম এটাই মনে আছে।

ক্লাস ফাইভে শুনলাম যে আমাকে নতুন স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে এবং কুমিল্লায় ভাল স্কুল ৩টা। কঠিন প্রতিযাগিতা। ছেলেদের জন্য কুমিল্লা জিলা স্কুল। আর মেয়েদের জন্য ফয়জুন্নেসা আর মিশনারী স্কুল। স্বভাবতই জিলা স্কুলের ফরম কেনা হল।

আমি আমার মাকে ইশারা ইঙ্গিতে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করলাম যে জিলা স্কুলে পরীক্ষা দেবার চাইতে মনে হয় ফয়জুন্নেসা অথবা মিশনারীতে পরীক্ষা দিলে আমার জন্য ভাল হয়। কিন্তু নাহ, হতাশ হলাম আমার মার কোন কিছু বোঝার পারফরমেন্স দেখে। যাই হোক জিলা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষাটা অনেক মজার হয়েছিল। গিয়ে দেখি আমার কিন্ডারগার্ডেনের সব ভাই-ব্রাদার একসাথে। আগে শুনসিলাম যে আলাদা বসানো হবে।

ওইদিন আমি জানলাম যে পরীক্ষায় অন্যের খাতা দেখে লেখা নামক একটা বিষয় আছে। আমি স্বভাবতই নতুন জিনিসের প্রতি বেশ তাড়াতাড়ি আকৃষ্ট হই। তাই আমার লেখা শেষ করে বন্ধুদেরকে আমার খাতা রিভিশান দিতে দিলাম। আর ওদের খাতা রিভিশান দিয়ে দিলাম। কিন্তু, কোথাকার এক ক্ষেত টিচার এসে সবার খাতা নিয়ে গেল।

টিচারের এমন ব্যবহারে আমরা স্তম্ভিত, মর্মাহত এবং ফাইনালি শোকাহত। কারণ আমাদের এক বন্ধুর লেখা তখনো শেষ হয়নি। যাই হোক হল থেকে বের হয়ে সবাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে, ‘এই টিচার পড়াশোনা যতই জানুক না কেন, বন্ধুত্ব নামক জিনিসটার ব ও সে বোঝেনা। ’ বেটা ফাউল। জিলা স্কুলে ছয় বছরে অনেক পরীক্ষা দিয়েছি।

ক্লাস সেভেন পর্যন্ত ভালই করছিলাম। তারপর ক্লাস এইটে গঙ্গা কোচিং সেন্টারে(জিলা স্কুলের সবচেয়ে শয়তান ও মেধাবী ছেলেগুলা এখানে চান্স পায়। অ্যাডমিশন টেস্ট নেয়া হয়। ) ভর্তি হলাম। নারীবিহীন জীবনে ফয়জুন্নেসা স্কুলের নারীদের সন্ধান পেয়ে মাথা পুরাই খারাপ।

ঝোলবাজি করেই দিন কাটে। পরীক্ষার জন্য পড়ার সময় কই? এই কোচিং এর পরীক্ষাগুলো ব্যাপক মজা করে দেখে দেখে দিতাম। ৫০ নাম্বারের সাপ্তাহিক পরীক্ষা হতো এবং রেজাল্ট দেয়ার পর বাসা থেকে খাতা সাইন করে আনা লাগত। সাইন যে প্রায় সময়ই নকল করতাম তা নিশ্চয়ই বলা লাগবেনা। একদিন পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে স্যার এর কাছে ধরা খেলাম।

স্যার খুব দু:খী মুখ করে বললেন, “তোমাকে তো ভাল মনে করেছিলাম। তুমিও?” উল্লেখ্য, আমি মিচকা শয়তান টাইপের ছিলাম। সামনে চুপচাপ থাকলেও পিছনে বেশ একটিভ ছিলাম্। স্যারের কষ্ট দেখে প্রতীজ্ঞা করলাম, ‘স্যার আপনার মনে আমি আর কষ্ট দেবোনা। পরের বার এমন ভাবে নকল করবো যাতে আপনার চোখে না পড়ে।

’ আমি আমার প্রতীজ্ঞা রেখেছি এবং অনেক দেখাদেখি করেও স্যারের কাছে ধরা খাইনি। স্কুলের পরীক্ষায়ও বেশ দেখাদেখী করতাম। তবে দেখার চেয়ে দেখাতাম বেশী। ক্লাস সিক্স আর সেভেন এই দু বছর আমার এক বন্ধু আর আমি সামনে-পেছনে ছিলাম। ও অংকে দুর্বল ছিলো।

তাই পুরা ৩ ঘন্টা আমার খাতা তার জন্য খোলা থাকত আর আমি বাকা হয়ে বসে থাকতাম। কিন্তু ঝামেলায় পড়তাম ধর্ম পরীক্ষায়। আমার চারপাশের এলাকায় কোন হিন্দু ছাত্র ছিলনা। ধর্ম পরীক্ষায় ধাতুরূপ আর শব্দরূপ নামক ব্যাপক পেইন দুটা জিনিস মুখস্ত করে যাওয়া লাগত। ক্লাস এইটে একবার অনেক সাহস করে পকেটে টুকলি নিয়ে গিয়েছিলাম।

বের করার পরপরই দেখি স্যার আসছেন। তাড়াতাড়ি পা চুলকানোর ভান করে টুকলি পায়ের নিচে চালান দিলাম। পরে অবশ্য ওখান থেকে ৩০ নাম্বার মেরে দিয়েছিলাম। কলেজে প্রাইভেটে পুরা বই খুলেই লেখতাম। আর ফাইনালের সময় তেমন দেখা হতো না।

কারণ, পড়াশোনা তখন বেশ ভালোই করতাম। আর ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষার আগের দিন যতো ইনোভেটিভ আইডিয়া আছে সব মাথায় এসে ভিড় করে। কিন্তু কিছুই করার থাকেনা। বাধ্য হয়েই পড়তে বসতে হয়। কিন্তু ফাকিবাজি করতে করতে এখন এমন একটা অবস্থা যে পড়তে চরম পেইন লাগে।

তাই ৫ মিনিট পড়ার যাই একটু ঘোরাঘুরি করতে। এক বন্ধু এই জিনিসটার নাম দিয়েছে ‘মাইন্ড-ফ্রেশ’। মাইন্ড-ফ্রেশের আওতায় পড়ে গান শোনা, ফেসবুকে ঢোকা, মুভি দেখা, বাইরে গিয়ে চা-সিগারেট খাওয়া, আড্ডা দেয়া, গিটার বাজানো, এই রকম একটা ফালতু কোর্স কেন সিলেবাস থেকে বাদ দেয়া হবে না-এই নিয়ে আলোচনা করা ইত্যাদি। একটু মাইন্ড ফ্রেশ করলে বেশ কিছুক্ষণ পড়া যায়। আর মাইন্ড ফ্রেশটা একটু বেশী হয়ে গেলে পরের দিন পরীক্ষায় ড্রপ।

তখন সিলেবাস নিয়ে হিসাব করতে বসি, মোট ড্রপ কত ক্রেডিট হল। /# তবে সব কথার শেষ কথা এই যে, পরীক্ষা দেবার চাইতে এডাম টিজিং মনে হয় অধিক আনন্দময়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.