আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধুর আমার মায়ের হাসি....

মানুষে মানুষে সমানাধিকারে বিশ্বাস করি

মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু যেন ভাই, ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভূবনে নাই। আজ 'মা' দিবস। পৃথিবীতে বহু মানুষ আছেন যাদের নানাবিধ শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। কিন্তু, তারও ততটা অভাগা নয়, যতটা একজন মাতৃস্নেহ বঞ্চিত মানুষ। সকলের নিকটই তার মা অসাধারণ একজন মা।

একটি বিশেষ দিবস মা-র জন্য যথেষ্ট নয় বটে, কিন্তু একটি দিন মা-কে নতুন করে গভীরভাবে মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয়তাও আগামী প্রজম্মের জন্য উপকারী বলে আমার বোধ হয়। আমি নিজে মানুষ হিসেবে একটু দুর্বল! আমি মোটামুটি আত্মীয়তা (ভাই-বোন-বাবা-মা) সম্পর্ক নিয়ে খুবই নির্মোহ। এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে একসময় পরিবারের অন্য সদস্যদের অভিযোগ ছিল। আছে হয়ত এখনও তবে তারা একরকম বুঝে ফেলেছেন যে, আমাকে নিবিড় করার চেষ্টো বৃথা। কিন্তু, আমার মায়ের ব্যাপারে আমার বিশেষ এক ধরনের অনুভূতি রয়েছে।

আমার মা একটু বোকা এবং সরল প্রকৃতির। তাকে সহজেই বোকা বানানো যায়। মায়ের ছোটকালের অনেক শিক্ষকের সাথে আমার বড় হয়ে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে। তাদের মারফত জেনেছি আমার নানা এবং নানী কেউই নিজের নাম লিখতে পারতেন না। অথচ সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যাপারে আমার নানী ছিলেন অত্যন্ত সিরিয়াস।

তার চেস্টায় তাদের ৯ সন্তানের ৬টি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছে। আমার মায়ের শিক্ষকদের ভাষ্যমতে মা অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন গণিতে। কিন্তু মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ের পিড়িতে বসতে হলে তার লেখাপড়ার ইতি ঘটে। আমরা ৬ ভাই-বোন। আমার বড়বোন ক্যান্সারে মারা যায় ক্লাস সেভেন-এ পড়া অবস্থায়।

বাবা এবং মা উভয়ে খুব প্রিয় এবং প্রথম সন্তানটি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। সম্ভাবনা ছিল বড় কিছু হওয়ার কিন্তু তা সে হতে পারে নি। সে ছিল ক্লাসের ফার্স্ট। দ্বিতীয় থাকা তার সহাপাঠীনি যশোর বোর্ডে মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল পরবর্তীকালে। বড় সন্তানকে হারিয়ে আমার মা মানসিকভাবে ভেড়ে পড়েছিলেন।

তদুপরি আমাদের হটাত আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটে। যা বেশ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল। বিত্তবান পরিবারের মেয়ে আমার মা আমাদের জন্য যা করেছেন তা অকল্পনীয়। আজ যা কিছু আমি হতে পেরেছি তা সম্ভব হত না তার ত্যাগ ছাড়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার পাঠ শেষ হলে সবাই যখন জানল আমি কখনও কোথাও চাকুরীর দরখাস্ত করব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তখনও আমার একেবারেই সাদামাটা মা একবারের জন্যও আমার স্বাধীন চিন্তা এবং সিদ্ধান্তের মাঝে দেয়াল হয়নি।

আমার বয়সের তুলনায় আমার ঘনিষ্ঠতা অনেক বড়দের এবং কখনও কখনও অনেক ছোটদের সাথে। আমি যে সব মানুষদের সাথে স্বাচ্ছন্দে চলি তা অনেককে অবাক করে। আমার মা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন আমার বাবার মতই। কিন্তু বিন্দুমাত্র প্রতিবন্ধিকতা তৈরি করেননি আমার সাম্যবাদী হয়ে ওঠায়। আমাদের পরিবারে ছেলে এবং মেয়ে সন্তানের মধ্যে নূন্যতম বৈষম্যও কখনও হতে দেখিনি।

অথচ অসংখ্য উচ্চশিক্ষিত জনকে দেখি এখনও ব্লগ লিখছেন নারী অধিকারের বিপক্ষে। আমার মা-কে এসব কথা বলা হবে না কখনও। আমি তাকে আপনি বলে সম্বোধন করি আমাদের পারিবারিক রীতি অনুযায়ী। যদিও ইদানীং আমার বোনেদের কেউ কেই তাকে তুমি ডাকে। মা আমার সকল সুখের ধারা।

আমার একটু সুখের জন্য যাকে সইতে হয়েছে হাজারও কষ্ট। মাগো তোমার ঋণ শোধ করতে চাওয়ার ধৃষ্টতা আমার কোনদিনই হবে না। আমি বায়েজিদ বোস্তামীর মত সৌভাগ্যবানও নই। শুধু চেষ্টা করছি তুমি যেমন করে তোমার সন্তানদেরকে বড় করে তুলেছ নিজেকে নিঃশেষ করে, তেমনি যেন আমিও মানুষ তৈরির চেষ্টায় সক্রিয় থাকতে পারি আমৃত্যূ। মধুর আমার মায়ের হাসি চাদের মুখে ঝরে মাকে মনে পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে।

তার মায়ায় ভরা সজল দিঠি সে কি কভূ হারায় সে যে জড়িয় আছে ছড়িয়ে আছে সন্ধ্যা রাতের তারায়...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।