আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কলকাতা ভ্রমণ গাইড-২ (তথ্যমূলক পোস্ট)



কলকাতা ভ্রমণ গাইড-১ (তথ্যমূলক পোস্ট) ইন্ডিয়ান এমিগ্রেশন এমিগ্রেশনে আপনার মূল কাজ হল একটা এরাইভাল কার্ড পূরণ করে জমা দিয়ে পাসপোর্টে এরাইভাল সিল ও স্বাক্ষর নেয়া। ইন্ডিয়ায় ঢোকার সময়ে বাংলাদেশ এমিগ্রেশনে লাগেজ চেক করে না। আর এপারে খুব গুরুত্ব না দিলেও লাগেজ চেকিং হয়। কিন্তু ইন্ডিয়ান এমিগ্রেশনে ঢোকার মুখে অন্য ধরণের অভ্যর্থনার মুখোমুখি হবেন আপনি। এ্যারাইভাল ফর্ম পূরণ করে লাগেজ চেকিংয়ের হাত থেকে বাঁচাতে দালালরা আপনাকে প্রতিযোগিতা করে এমনভাবে ডাকাডাকি করতে থাকবে যে আপনার মনে হতে পারে এমিগ্রেশনের মধ্যে না জানি কোন্ কেয়ামত হয়।

মূলত এখানকার দালালদের মূল ব্যবসা হল মানি এক্সচেঞ্জ। এরা যে কোন ভাবে হোক আপনাকে পেট্রাপোল বাজারে থাকা তাদের মানি চেঞ্জিং সেন্টারে নিয়ে যাবে এবং ডলার এক্সচেঞ্জ করার জন্য চাপাচাপি করবে। নতুন যায়গা হিসেবে আর আপনার মানসিক স্ট্রেংথ যদি খুব বেশি না হয়, তাহলে এমিগ্রেশনে দালালের সাহায্য নেওয়ায় ভালো। ইন্ডিয়ান এমিগ্রেশনের অফিসারগুলো সাংঘাতিক খতরনাক। সব কিছু ঠিক থাকলেও অহেতুক ঝামেলা করে।

দালালকে কিছু টাকা দিলে এই ঝামেলা থেকে বেঁচে যাবেন, এমনকি আপনার লাগেজও চেকিং ছাড়াই পার হয়ে যাবে। এমিগ্রেশনে পার হেড ৪০ রুপি দিতে হয় অফিসিয়াল খরচ হিসেবে। যদিও এটার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। ইন্ডিয়ায় যেতে সাথে কি ধরণের এবং কি পরিমাণ কারেন্সি নেওয়া যাবে এ নিয়ে কিছূটা অনিশ্চয়তা থাকে। বিভিন্ন কথা শোনা যায়।

আমার অভিজ্ঞতা হল- ১. সাথে বাংলাদেশি কারেন্সি থাকলে এপার ওপার কোথাওই সমস্যা নেই। বরং সাথে ১০, ২০, ৫০ টাকার নোটে কিছু বাংলাদেশি কারেন্সি রাখা ভালো, ফেরার সময়ে প্রয়োজন হয় খুব। হয়ত যেখানে ১০ টাকা দিলে কাজ হয়ে যেত, সেখানে খুচরা নোটের অভাবে ১০০ টাকা দিতে হবে বাধ্য হয়ে। ২. আপনি ঢাকা থেকেই হাজার খানেক ইন্ডিয়ান রুপি সাথে নিয়ে নিন। সাবধানতার জন্য লুকিয়েই নিন, বা গ্রুপে অনেকে থাকলে সবার কাছে ২০০, ৪০০ করে ভাগ করে রাখুন।

আমার মনে হয় না কোন সমস্যা হবে। তারপরেও ধরা পড়লে গ্রহণযোগ্য একটা ব্যাখ্য দিলেই হবে। বেনাপোলে এক্সচেঞ্জ হাউজ আছে। আপনি টাকা বদলে রুপি বা ডলার বদলে রুপি নিতে পারেন। তবে আমি সীমান্ত এলাকায় কোন ধরণেরই এক্সচেঞ্জ না করার পরামর্শ দেব।

ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। ৩. ডলার। মোস্ট ইমপর্টেন্ট কেস। সাধারণত ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য ১৫০ ডলার এনডোর্স করতে হয়। বেশি এনডোর্স করলে কোন সমস্যা নেই, তবে পরিমান সন্দেহজনক হলে ভিসা অফিসেই ডাকতে পারে।

আমি বলব, এনডোর্সমেন্টের বাইরেও আপনি সাথে বেশি কিছু ডলার নিয়ে নিন। কারণ ফেরত আসার সময়ে ইমিগ্রেশন আপনার পার্সপোর্টে এনডোর্সমেন্টের পরিমাণ এবং ইন্ডিয়ায় ডলার এক্সচেঞ্জের সার্টিফিকেট মিলিয়ে দেখবে। খরচ না হওয়া ডলার এরা ফেরত আনতে দিতে চায় না। অনেক সময় জোর করে রেখে দেয়। এনডোর্সমেন্টের বাইরে হলে এই সমস্যা নেই।

তবে যেহেতু এনডোর্সমেন্টের বাইরে ডলার নেওয়া আইনসিদ্ধ নয়, লুকিয়ে নিন। কিভাবে লুকাবেন সেটা আপনার বিষয়। দয়া করে জুতার ভেতরে, মোজার মধ্যে বা আন্ডার গার্মেন্টস এর ভেতরে রাখবেন না, চেকিং-এ এটা খুব কমন যায়গা। তবে ইন্ডিয়ান এমিগ্রেশনে দেখেছি, সাথে রোগী, অতি বয়স্ক কেউ থাকলে ওরা যথেষ্ঠ নমনীয় ব্যবহার দেখায়, অনেক সময় চেকিংও হয় না। আমাদের এমিগ্রেশনে আবার এসব নেই, সবার সম অধিকার।

সীমান্তের খাদক শ্রেণী আগেই ওপারের দালাল শ্রেণীর কথা বলেছি। ট্যুরিস্টদের জন্য এরা সাহায্যকারী অবশ্যই। তবে তার চেয়ে বেশি আতংক সৃষ্টিকারী। এমিগ্রেশনে ঢোকার মুখেই ৫ টাকা বা ১০ টাকার বিনিময়ে এমিগ্রেশন পার করিয়ে দেওয়ার কথা বলে আপনার পার্সপোর্ট নিয়ে নেবে। আর একবার পাসপোর্ট আপনার হাতছাড়া হল তো আপনি এদের খপ্পড়ে পড়ে গেলেন।

এদের সাথে এমিগ্রেশন অফিসারদের যোগসাজস আছে, তাই আপনার কোন কিছুই করতে হবে না। দালাল চক্রের কেউ একজন আপনাকে পেট্রাপোল বাজারে তাদের মানি এক্সচেঞ্জ অফিসে নিয়ে বসাবে। এরপর দেখা যাবে আপনি একখানে, আপনার লাগেজ এবং পাসপোর্টের কোন হদিস নেই। অন্য একটা দেশের ভুখন্ডে আপনি পাসপোর্ট ছাড়া, লাগেজ ছাড়া। এরচেয়ে আতংকজনক পরিস্থিতি আর কিছুই হতে পারে না।

এরকম পরিস্থিতিতে আপনার সবকিছু খুইয়ে ফেলাও বিচিত্র কিছু নয়। তবে সচারচর পুরো লাগেজ বা পাসপোর্ট হাওয়া হয়ে যায় না। বিজনেস এথিকস হবে হয়ত। তাই আপনি আপনার সবকিছুই ফেরত পাবেন। তবে আপনাকে এদের কাছ থেকে ডলার ভাঙাতে হবে।

বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এরা কম রেটে আপনার ডলার এক্সচেঞ্জ করবে। দেখা যায়, কলকাতার চেয়ে এখানে ২-৩ রুপি কম দেয়। এটা অনেক। ধরুণ আপনি ১০০ ডলার বদলে পেলেন ৪২০০ রুপি, যেটা কলকাতাতে পেতেন ৪৪৫০ রুপি। ২৫০ রুপি বা প্রায় ৫০০ টাকা নিট লস।

এটাই হল এই দালালদের মূল ব্যবসা। আর কোনভাবে যদি কিছু আদায় করা যায়, সেটা উপরি। যেমন ৫ বা ১০ টাকায় যে এমিগ্রেশন পার করিয়ে দেওয়ার কথা ছিল, সেটা গিয়ে দাড়াবে ১০০-১৫০ টাকায়। তারপর এরা প্রায় জোর করে আপনাকে বনগাঁ স্টেশনে গিয়ে রেলে করে কলকাতা যাওয়ার অটোতে তুলে দিতে চাইবে। সেখানে অটোতে অতি অবশ্যই বেশি ভাড়া হবে এবং নিশ্চিতভাবেই এর একটা ভাগ তারা পাবে।

তারপর সেই অটো বনগাঁ স্টেশনে দাড়ালে আবার নিশ্চয় কোন ভদ্রলোক এসে জোর করে সাহায্য করতে চাইবে। অতএব মানে মানে করে যত দ্রুত এদের হাত থেকে মুক্ত হতে পারবেন, আপনার পকেট থেকে তত কম খসবে। কিভাবে মুক্ত হবেন, সেটা আপনার মানসিক শক্তি এবং বুদ্ধিমত্তাই বলে দেবে। ভাল হয়, এপারে সীমানায় পরিচিত কেউ থাকলে তার মাধ্যমে ওপারের একজন দালাল কন্ট্রাক্ট করে নেওয়া। তাতে টাকা খসলেও অন্তত মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্ত থাকবেন।

পেট্রাপোল থেকে কলকাতা বেনাপোল থেকে কলকাতা মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। কিন্তু অপ্রশস্ত হাইওয়ে, অসংখ্য বাজার আর ইন্ডিয়ার নিজেদের তৈরী রাবিশ বাসের কারনে সময় লাগে প্রায় ৪-৫ ঘন্টা এবং বাসও ঘন্টা, দেড় ঘন্টা পরপর থাকে। পক্ষান্তরে রিকশা বা অটোতে বনগাঁ স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরতে পারলে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা এবং খরচও কম। তবুও আমার মতে, পেট্রাপোল থেকে সরাসরি বাসে চলে যাওয়াই ভাল। এখানে সোহাগ, গ্রিন লাইন এবং শ্যামলী’র কাউন্টার আছে।

২৬০ রুপি ভাড়া। এগুলোর একটাতে ঢুকে অপেক্ষা করতে থাকুন। অনেক চাঁটগাইয়া, নোয়াখাইল্যা বা আরো অনেককে পাবেন। একটা দেশি দেশি ভাব আছে, সাথে দালালদের হাত থেকে মুক্ত হতে পারলেন। এবার বাস আসলে আপনি উঠে বসুন।

ও, এখান থেকে টিকেট নিলে কোন সিট নাম্বার দেয় না, এমনকি কোন কোন সময় টিকেটও দেয় না। হাতে লেখা একটা কাগজ দেয়। চিন্তার কিছু নেই। ওই কাগজ সুপারভাইজারকে দেখালেই হবে আর বাস খালিই থাকে, সিট পাবেন। যদি না পান, আরেকটু অপেক্ষা করে পরের বাসে যান।

চার থেকে পাঁচ ঘন্টা পরেই আপনি পৌঁছে গেলেন কলকাতার মারকুইস স্ট্রিট-এ। ঢাকা-কলকাতা রুটের সব বাস এখানেই থামে। পেট্রাপোল থেকে যাত্রা শুরুর ঘন্টা দুই পরে রাস্তার মাঝে এক হোটেলে বাসগুলো ২০ মিনিটের একটা ব্রেক দেয়। আর যদি ট্রেনে যান, তাহলে আপনাকে নামতে হবে শিয়ালদা স্টেশনে। এখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে যেকোন যায়গায় যেতে পারবেন।

এখানে দুটো বিষয় বলে রাখা ভালো। ১. ইন্ডিয়ায় ঢুকে প্রথমেই আপনার ঘড়ির সময় আধাঘন্টা পিছিয়ে নিন। ২. যদি আপনার একান্তই টাকা বা ডলার বদলে রুপি নেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তাহলে আপনার জন্য ভালো হবে ওপরের তিন বাসের কাউন্টারে আসা। এরা তুলনামূলকভাবে রিজনেবল রেট দেয়। ৩. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল- পুরো পশ্চিমবঙ্গে লোকজন রুপিকে টাকা বলে।

পরিচিত শব্দ হওয়াতে আমরা বাংলাদেশিরা অধিকাংশ সময়েই রুপি এবং টাকার পার্থক্যটা ঠিক মনে রাখতে পারি না। ফলস্বরূপ প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়ে যায়। যেমন ধরুণ এক বোতল পানি, যেটা আমরা কিনি ১০ টাকা দিয়ে, ইন্ডিয়াতে সেটা ১৪ টাকা। আমরা যেহেতু বাইবর্ন খরুচে স্বভাবের, তাই ৪ টাকা বেশি দিয়ে পানির বোতল কিনতে আমাদের কোন সমস্যা হয় না। কিন্ত এই ১৪ টাকা যে আসলে প্রায় ২৫ টাকা, সেই বোধটা আমাদের মাথায় থাকে না একদমই।

ফলে খরচও বাড়ে হুহু করে। একইভাবে যে আপেল আমাদের এখানে ১০০-১২০ টাকা কেজি, সেই একই আপেল ওখানে ১২০-১৪০ টাকা কেজি। মনে রাখতে হবে এই ১২০-১৪০ টাকা মানে আসলে ২০০-২৫০ টাকা। তাই একটু সাবধান থাকলে আপনার খরচ বাঁচার পাশাপাশি দেশের মূল্যবান ফরেন কারেন্সিও বাঁচে। পরবর্তী পর্বে থাকবে কলকাতার কথা।

কলকাতা ভ্রমণ গাইড-৩ (তথ্যমূলক পোস্ট)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।