আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এটাইতো নিয়ম

লিখে খাই, সবার ভাল চাই

এটাইতো নিয়ম শামীমুল হক লিমনের ঘটনা নিয়ে সারা দেশে হইচই। লিমন নিরীহ, নির্দোষ- এটি ইতিমধ্যে আমজনতার কাছে প্রমাণিত হয়ে গেছে। কিন্তু যারা তাকে পঙ্গু করল। যারা পায়ে গুলি করল। সেই র‌্যাব বলছে লিমন সন্ত্রাসী।

তার কাছে অস্ত্র পাওয়া গেছে। লিমনের মা মামলা করেছে। আদালত পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে মামলা নিতে। কিন্তু না এ মামলা পুলিশ নিতে চায়নি। সময় ক্ষেপণ করেছে।

এ সময়ে পুলিশ র‌্যাবের পক্ষ হয়ে লিমনকে সন্ত্রাসী বানিয়ে চার্জশিট দিয়েছে। কি সুন্দর দেশ। সুন্দর তার নিয়ম। সবাইকে চমকে দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, এ ব্যাপারে সরকারের করার কিছুই নেই। আদালতই দেখবে বিষয়টি।

হায়রে দেশ। হায়রে মন্ত্রী। হায়রে অভাগা লিমন। কেন যে তুমি এ দেশে জন্ম নিলে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে ইচ্ছে করে সরকারের কাজ কি তাহলে? সরকার কি করতে পারে? নাকি অন্যসব কিছুর মতো এখানেও আপনি বিরোধী দলের গন্ধ পাচ্ছেন। সারা দেশ লিমনকে নিয়ে এক বিধায় আপনি এর বিরোধিতা করতে হবে- এটি যদি আপনার উদ্দেশ্য হয়, তাহলে বলার কিছু নেই।

আপনি জনগণের বিরুদ্ধে থাকবেন এটাইতো নিয়ম। কারণ আপনি সরকারে। জনতার কাতারে নয়। এ প্রসঙ্গে একটি চুটকি খুব মনে পড়ছে। এক গ্রামে অর্থ সম্পদওয়ালা এক লোক বাস করতেন।

তার টাকাকড়ির কোন অভাব নেই। কিন্তু তার বাড়ির পাশেই ছিল এক কৃষকের বাড়ি। যার নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তার বড় শখ ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করবেন। গেলেন সেই লোকের কাছে।

তার ইচ্ছার কথা জানালেন। সম্পদওয়ালা কৃষককে বললেন, লেখাপড়া করিয়ে কি করবে? তাছাড়া লেখাপড়ায় অনেক খরচ। এর চেয়ে তুমি তাকে কৃষক বানাও। তোমার সঙ্গে জমিতে নিয়ে যাও। অন্যের জমিতে কাজ করে টাকাও পাবে।

তোমার সংসারে অভাবও ঘুচবে। বাপ-বেটা দুজন রোজগার করলে তোমাকে আর না খেয়ে থাকতে হবে না। কৃষক তার কথা শুনে বাড়িতে এলেন। অনেকক্ষণ ভাবলেন। এরপর ছেলেকে ডাকলেন।

তার ইচ্ছার কথা ছেলের কাছে বললেন। ছেলেও বাবাকে জানাল তার লেখাপড়ার স্বপ্নের কথা। এভাবে প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী করে এক সময় পঞ্চম শ্রেণীতে উঠল। ক্লাসে সে ফার্স্ট বয়। সারা গ্রামে তার সুনাম।

বৃত্তি পরীক্ষা দিলো। সারা দেশে সে প্রথম হলো। তাকে নিয়ে কৃষকের এখন গর্ব। কিন্তু পাশের বাড়ির অর্থ সম্পদওয়ালা এ কথা শুনে হাসতে লাগলেন। আর মনে মনে বললেন, কোনরকমে ফাইভ পর্যন্ত গিয়েছে।

আর যাবে কতদূর? কৃষকের ছেলে এখন হাইস্কুলে পড়ে। সিক্স, সেভেন পেরিয়ে এইটে। এবারও একই অবস্থা। বৃত্তি পেয়ে গ্রামের সুনাম বয়ে আনল। গ্রামের সব কৃষক তাকে নিয়ে নাচানাচি করছে।

তা দেখে সম্পদওয়ালা বলছে- এ নাচানাচি বেশি দিন নয়, আসলতো রয়ে গেছে মেট্রিক। তখন দেখা যাবে। না কৃষকপুত্র মেট্রিকেও বোর্ডে প্রথম হয়েছে। এবারও সম্পদওয়ালা বলতে লাগলেন, মেট্রিক হয়তো নকল টকল করে পাস করেছে। আর এগুতে পারবে না।

কলেজে পড়তে হলে শহরে যেতে হবে। এ টাকা পাবে কোথায় বেটা কৃষক। কৃষকপুত্র কলেজে ভর্তি হলো। সেখানেও একই রেজাল্ট। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হলো।

এবার সম্পদওয়ালা বললেন, লেখাপড়া করেছে ঠিকই, চাকরি পাবে না। অথচ দেখা গেলো- সরকারি প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসাবে চাকরিও পেয়ে গেলো। এখনও সম্পদওয়ালা বলছে, চাকরি পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু সংসারের উন্নতি হবে না। চোখের সামনে উন্নতি দেখেও তাকে কৃষকপুত্রের বিরোধিতা করতে হচ্ছে।

হায়রে দেশ আমার। যারে দেখতে নারী তার চলন বাঁকা। লিমনকে নিয়ে বিরোধী দল, জনতা এক সুরে কথা বলছে বলে তার বিরোধিতা করতে হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। এ যেন কৃষকপুত্র আর সম্পদওয়ালার কাহিনীর মতোই ঘটনা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.