আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাদেন যেখানে সিনেমার নায়ক, আর আমরা যেখানে সেই সিনেমার দর্শক। যেখানে সবাই সব কিছু হজম করে।

সকল প্রসংশা আল্লাহর জন্য। আমার চলমান মেইল এড্রেস ঃ shimantodhk2010@gmail.com ,

আমি জানি না লাদেন কে? আর লাদেনের কি অপরাধ? আসলেই কি সে অপরাধী ? নাকি সে প্রি-ডিফাইন্ড সিনেমার নায়ক? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের প্রধান সহযোগী গোয়েবলসের প্রপাগান্ডার কথা মনে আছে? তার নীতি কথা ছিলো- মিথ্যা কে বার বার প্রচার করতে থাকো, তাহলে সেটা সত্য হয়ে যাবে। মানুষের মগজে মিথ্যা খবর টাকে বার বার এমন ভাবে ধোলাই করে দিতে হবে যেন সেটা সত্য বলে মনে করে। আর সেই ঘটনাই আমাদের সাথে বার বার ঘটানো হচ্ছে। আমরা নির্দিদ্ধায় সব হজম করে নিচ্ছি।

আসুন এবার সিনেমা দেখা শুরু করি। সিনেমার পরিচালকঃ হোয়াইট হাউজ ও পেন্টাগনের কর্তা ব্যাক্তিরা, যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাগ্য নির্ধারন করে। সিনেমার শুটিং স্পটঃ সারা পৃথিবী। সিনেমার নায়কঃ ওসামা-বিন-লাদেন, সাদ্দাম হোসেন,গাদ্দাফী, পারভেজ মোশাররফ প্রমুখ ব্যাক্তি বর্গ। কাহিনী ক্লুঃ ভিয়েত নাম যুদ্ধ থেকে শুরু – (আফগান যুদ্ধ, ইরাক-ইরান যুদ্ধ, ইরাক -কুয়েত যুদ্ধ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে যুদ্ধ, ইরাক দখল) লিবিয়া যুদ্ধ পর্যন্ত চলমান।

সিনেমার দর্শকঃ এই মুহুর্তে যিনি আমার পোস্ট পড়ছেন তিনি সহ সমস্ত বিশ্বের মানুষ। সিনেমার ইতিহাসঃ ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, সিনেমার তৈরি না করলে আমেরিকা নামক দেশের অস্তিত্ত্ব থাকতো না। প্রতি একদশক পর পর আমেরিকা নামক দেশের সিনেমা সারা বিশ্বে বাজারজাত করার প্রয়োজনীয়তা আছে। ১৯৪৫ সালের যুদ্ধের পরে আমেরিকা কি কি সিনেমা করেছে তা হয়তো বিশ্ব বাসী জানেন। পঞ্চাশের দশকে ছিলো কোরিয়ান যুদ্ধ।

ষাটের দশকে ছিলো ভিয়েতনাম যুদ্ধ। আশির দশকে ছিলো আফগান যুদ্ধ। নব্বই দশকে ছিলো ইরাক যুদ্ধ। একবিংশ শতাব্দিতে এসে দেখছি ক্রমাগত তিনটি যুদ্ধ। কেন সিনেমার প্রয়োজন হয়? ঃ আমেরিকান ড্রিম বলে একটা কথা আছে।

বিশ্বের অন্য দেশ থেকে সম্পদ সংগ্রহ করো সেটা জোর করে হলেও করো। আর আমেরিকাতে বসে ভোগ করো। আমেরিকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার জন্য সিনেমার প্রয়োজনিয়তা অপরিসীম। কারন তাদের প্রধান পন্য হচ্ছে অস্ত্র। অস্ত্র ব্যাবসা না থাকলে আমেরিকা আর বাংলাদেশের কোনো তফাত মনে হয় থাকতো না।

ওদের বৃহত ভোগ্য পন্য হচ্ছে তেল। তাই সিনেমার শুটিং স্পট বেশীর ভাগই হয়ে থাকে তেল সমৃদ্ধ দেশ গুলোকে কেন্দ্র করে। তবে সিনেমার নায়ক দের কে কাহিনীর প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশে স্থানান্তর করা হয়। যেমন লাদেন কে সৌদি থেকে সুদানে নেয়া হলো। তার পরে আফগানিস্তানে পাঠানো হয়।

তার পরে পাকিস্তানে পাঠানো হয়। এখন তাকে পরপারে পাঠানো হয়েছে। সিনেমার কাহিনী একঃ সিনেমার ডিটেইলস কাহিনী বলতে গেলে পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই এই যায়গায় কাট করে দিলাম******************( এই যায়গায় কাহিনী ছিলো, ৮০’র দশকে সোভিয়েত আফগান যুদ্ধ। ইরাক ইরান যুদ্ধ ।

ইরাক কুয়েত যুদ্ধ। রাশিয়া ধ্বংস ও বিভক্তি। এই সিনেমার নায়ক ছিলেন সাদ্দাম হোসেন ও ওসামা বিন লাদেন) তবে সব কাহিনী একই সুত্রে গাথা- একটির সাথে আরেকটি জড়িত। সিনেমার কাহিনী এখানেই শেষ নয়। যেহেতু ইরাক ৯১ সালের যুদ্ধে আমেরিকার হাতে আসেনি।

লাদেন বহিস্কার হলেন সৌদি থেকে। সুদানে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। প্রথম সিনেমা যেহেতু শেষ হয়ে গিয়েছিলো...... জানিনা এখানে যাওয়ার পরে সিয়াইএর সাথে লাদেনের কোনো স্পম্পর্ক ছিলো কিনা। অনেকে বলে থাকেন সম্পর্ক ছিলো। কারন লাদেন কে আমেরিকার প্রয়োজন ছিলো।

সিনেমার কাহিনী দুইঃ ২০০১ সালে ১১ই সেপ্টেম্বর যখন টুইন টাওয়ারে হামলা হয় সেই সেময় আমি ছিলাম ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে। সন্ধ্যা বেলা টিভি দেখছিলাম মুড়ি ভাজা আর চা খাচ্ছিলাম। তখনই টিভিতে চোখ পড়ে। ব্যাপার টা প্রথমে ততোটা আমলে নেইনি। পরে সব কিছুই আস্তে আস্তে বুঝতে পেরেছিলাম।

টুইন টাওয়ার হামলার ব্যাপারে অনেক অনেক কাহিনী শুনা যায়, যা এখনো রহস্যাবৃত। বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা হলো সিআইএ, তার তুলনায় বিন লাদেন নিতান্তই গুহামানব, তিনি কি করে টুইন টাওয়ার ধ্বংস করলেন তাও একটা রহস্যাবৃত। একজন ইহুদিও কেন মারাগেলো না তাও রহস্যময়। কি ভাবে এতোগুলো বিমান ছিনতাই হলো তার বিশদ ব্যাখ্যাও কেউ পায়নি। যা হোক আমেরিকা সেই গোয়েবলসের কাহিনীর মতন প্রচার করতে লাগলো ওসামা বিন লাদেন এই ঘটনার জন্য দায়ী।

সিএনএন,বিবিসি,ফক্সনিউজ সব বিরাট বিরাট মিডিয়া গুলো আমেরিকার পক্ষে নির্লজ্জ মিথ্যাচার শুরু করলো। আর আমেরিকার হাতে চলে আসলো ট্রাম্প কার্ড। এই ট্রাম্পকার্ডের জোরে বলা শুরু করলো, আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলাম। যারা আমাদের পক্ষে নাই তারা সকলেই আমাদের বিরুদ্ধে। সারা বিশ্বেই আলকায়েদা নামক জু জুর ভয় ছড়িয়ে দেয়া হলো ।

কাহিনীর প্রয়োজনেই ওসামা বিন লাদেনকে পাঠানো হলো আফগানিস্তানে। আমাদের চোখের সামনেই এই সভ্যযুগেও আফগানিস্তানের মতন দেশকে দখল করে নেয়া হলো। সিনেমার কাহিনী তিনঃ আফগান যুদ্ধে বিশাল ও ব্যায় বহুল যুদ্ধে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য এখন আমেরিকার প্রয়োজন পেট্রোলিয়াম, যা বিশ্বের জ্বালানী শক্তি। আমেরিকার নিমজ্জিত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারে ইরাকের মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা তেল। তাই লাদেন কে ইরাকের মাটিতে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলো।

ব্যাপক হারে প্রচার করা হলো সাদ্দামের সাথে আলকায়েদার সম্পর্ক আছে। কিন্তু বিশ্ব বিবেক সেটা মেনে নেয়নি- সেকুলারিস্ট দল সাদ্দামের বাথ পার্টির সাথে ইসলামিক মৌলবাদী আলকায়েদার দলের সম্পর্ক থাকতে পারে সেটা কেউ হজম করতে পারছিলো না। তাই হজম করানোর জন্য নতুন টেকনিক করা হলো। প্রচার করা হলো সাদ্দামের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী মারনাস্ত্র আছে। অবশ্য অনেকে বলে সেটা নাকি ইরাক-ইরান যুদ্ধে আমেরিকাই সাদ্দামকে দিয়েছিলো।

(সিনেমার কাহিনী এক দৃস্টব্য) যা হোক জাতিসঙ্ঘের অস্ত্র পরিদর্শক দল তন্ন তন্ন করে খুজেও কোনো অস্ত্র পেলেন না। অস্ত্র পরিদর্শক দলের প্রধান হান্স ব্লিক্স কে লন্ডনে তার নিজ বাড়িতে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেলো। ততকালীন আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডোনাল্ড রামস্ফেল্ড হাস্যকর মিথ্যা চার করে ইরাকের বিরুদ্ধে স্যাটেলাইট ছবি-ফুটেজ নিয়ে ইরাক আক্রমনের যুক্তি তুলে ধরলেন। আমি তখন ইউনিভার্সিটির ৩য় বর্ষে পড়ি আর সব কিছু আমি নিজের চোখে টিভিতে(বিবিসি ও সিএনএন) দেখেছি। টনি ব্লেয়ার তো ডাইরেক্ট বলে দিলেন ৪৫ মিনিটের মধ্যেই ইরাকি মারনাস্ত্র খুজে পাওয়া যাবে যদি ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনী ইরাকের মাটিতে প্রবেশ করে।

২০০৩ সালে শুরু হলো ইরাক অভিযান। লাখ লাখ ইরাকির মৃত্য হলো, কিন্তু গন বিধ্বংসী কোনো অস্ত্র খুজে পাওয়া গেলো না। সাদ্দাম একসময়ে(২০০৪) সালে ধরা পড়লেন। তাকে টিভিতে লাইভ দেখানো হলো। টানা তিন দিন মিডিয়া তাকে নিয়ে প্রচার করলো ।

হাস্যকর বিচারে তার ফাসি হলো। সিনেমার নাট্যমঞ্চ থেকে একজন নায়কের বিদায় হলো। এখানে একটি শুটিং শেষ। পুরা কাহিনী আমি পর্যবেক্ষন করেছি বিশ্ব মিডিয়া দ্বারা। সেটা বহু কাল ব্যাপি।

এখনো সেই সিনেমা দেখছি। আমার কিছু কাহিনী পর্যবেক্ষন ঃ ইরাকের গনবিধ্বংসী অস্ত্রের মিথ্যা তথ্য দেয়ার জন্য বিবিসি চরম সুনামহানীর শিকার হয়। সিএনএন মিডিয়াতেও ভাঙ্গন শুরু হয়। যা হোক তাতে কিছু আসে যায় না-২০ লাখ ইরাকি অলরেডী নিহত। জর্জ টেনেট কে বরখাস্ত করেন বুশ সাহেব।

কিন্তু তিনি বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাননি। টনি ব্লেয়ারও উদ্ধত কন্ঠে বলেছিলেন ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তার কথা ইরাক যুদ্ধ সঠিক ছিলো। যেমনি ভাবে আমাদের দেশের খুনী জামাতী যুদ্ধাপরাধীরা উদ্ধত আচরন করে থাকে। বুশের প্রেসিডেন্ট থাকা কালীন সময়ে যখন মার্কিন মুলুকে মন্দা আসতো ঠিক তখনই লাদেনের একটা ভিডিও ক্যাসেট বের হতো-যেটাতে সব সময়েই মার্কিনীদের হুমকি দেয়া হতো।

আর অমনি করে মার্কিনীরা আফগানে বোম্বিং করতো। প্রেসিডেন্ট বুশের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিপেত। ক্যাসেট গুলো বের হতো তখনোই যখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রয়োজন হতো। পরিশেষেঃ পরিশেষে আরেকজন নায়কের নাকি পতন হয়েছে। তার নাম ওসামা বিন লাদেন।

বিশ্বের একনম্বর ভয়ানক সন্ত্রাসী। কিন্তু তার গডফাদার কে? বা তার উত্থানের পিছনে কারা জড়িত? তাদের হদিস এখনো নাকি পাওয়া যায়নি। আর লাদেনের লাশ নাকি সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে সেটা কেউ দেখেছে কিনা জানা যায়নি। সাদ্দামের মতন তাকে লাইভ টিভি শো-তে উপস্থাপন করাই হয়নি।

আর আমরা হাজমোলা বা প্রান হজমী ক্যান্ডি খেয়ে সব রুপকথা-ঠাকুর মার গল্প হজম করেই যাচ্ছি। বর্তমানে যেখানে সিনেমা চলছে ঃ লিবিয়া। ভবিষ্যতে যেখানে সিনেমা চলবেঃ সিনেমার শুটিং ভবিষ্যতে কোথায় হবে তা পেন্টাগনের নির্মাতা পরিচালকগন ভালো বলতে পারবেন। আগামী ২০-৩০ বছর পরে কি হবে সেই কাহিনীও হয়তো তৈরি করে ফেলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশও শুটিং স্পটের বাইরে থাকবে কি না সেটাও বিবেচ্য বিষয়।

আর সিনেমার প্রয়োজনেই বিভিন্ন নায়কের আগমন ঘটবে যেমনটি ঘটেছিলো সাদ্দাম-লাদেনের । আমেরিকান পেন্টাগনের পরিচালকেরা যাকে যোগ্য মনেকরেন এই পদের জন্য তিনিই আসবেন। উপসংহারঃ লাদেন পৃথিবী বাসীর কাছে মরে গেছে। হয়তো তিনি পৃথিবীর নির্জন কোনো দ্বিপে প্রাসাদোপম অট্টালিকায় বসবাস করছেন,-- জানি না আসলে কি হয়েছে। মার্কিনীরা যদি প্রয়োজন মনে করে তাহলে তাকে আবারো বিশ্ববাসীর কাছে জীবিত করবে।

আর প্রান হজমী ক্যান্ডি খেয়ে বিশ্বাস করে যাবো। অবাক হচ্ছেন- না অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারন লাদেন এর আগেও ৩ বার মরেছিলো। শেষ কথাঃ তেল আর অস্ত্র ব্যাবসায়ী মার্কিন এলিট সাম্রাজ্য বাদীদের থেকে আমার এই সবুজ পৃথিবী কবে মুক্ত হবে জানি না। তবে আমি শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস করি(দ্যা ডে অফ জাজ মেন্ট)।

পরম করুনাময় আল্লাহ সব কিছুই দেখছেন। মৃত্যুর পরে পুনরুত্থানে যারা বিশ্বাস করেন- একদিন আল্লাহই সেই দিন সব রহস্য খোলাস করে দিবেন। যে দিন কোনো গোপনই আর গোপন থাকবে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।