আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গৃহবন্দি ছিলেন লাদেন!



ইসলাম রফিকুল--( ০৯/০৫। ২০১১---দুপুর ১-২২ মি: )---- নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত ওসামা বিল লাদেন এবোটাবাদের বাড়িতে গৃহবন্দি ছিলেন। প্রকাশিত ৫টি ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করেও এমন ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে এক মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষকের। ওয়ার '৬৯ ডটকম নামে এক ওয়েবসাইটে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে শনিবার। ওসামা বিন লাদেন তার এবোটাবাদের বাড়িতে 'গৃহবন্দি' ছিলেন।

দৃশ্যত তাকে নিজের বাড়িতেই রাখা হয়েছিল 'বন্দি' হিসেবে। ২ মে এবোটাবাদের বাড়ি থেকে জব্দ করা ৫টি ভিডিও চিত্র দেখে এমনটা অনুমান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক জুয়ান জারাটে। বার্তা সংস্থা সিবিএসকে তিনি বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর আল কায়দা প্রধান একটি বাড়ির চার দেয়ালের ভেতর কাটিয়েছেন তার জীবনের মূল্যবান ৫টি বছর। লাদেন প্রতিদিন গড়ে দু'ঘণ্টা করে তার বাড়ির চত্বরে হাঁটাহাঁটি করতেন। আমেরিকান স্যাটেলাইট চিত্রেও এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এজন্য তাকে নাম দেওয়া হয়েছিল পেসার। যাকে নিয়মিত পায়চারি করতে দেখা গেছে। অভিযানে জব্দ পাঁচটি ভিডিও ফুটেজ দেখে জুয়ান জারাটে মনে করছেন, তার (লাদেন) বাড়ির বাইরে যাবার অনুমতি ছিল না এবং বাড়িটির নির্মাণ কৌশল, তার দৈনন্দিন জীবন যাপন, বাড়িতে বসবাসকারী পরিবারের অন্যান্য সদস্যের প্রাত্যহিক আচার-আচরণ দেখে অন্তত এমনটাই ভাবা স্বাভাবিক। জারাটে বলেন, আমি বিস্মিত হয়েছি একটি লোক কী করে দীর্ঘ সময় একটি বাড়িতে কাটিয়ে দিতে পারেন। যেখানে লাদেন আল কায়দার মতো একটি জঙ্গি দলের শীর্ষ নেতা।

বাইরে তার কত কাজ। সে কি-না বাড়ির কম্পাউন্ড ছেড়ে এক পা বাইরে রাখেননি। ওয়েবসাইটটি দাবি করে ওবামা প্রশাসনের ডেপুটি নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন ব্রেনান নিজেও এ সত্যটি জানতেন। অথচ অভিযানের পরে তিনি মিডিয়ার সামনে এমন ভান করছিলেন যেন কিছুই জানেন না। কিন্তু প্রশ্ন_ কেন ওবামা প্রশাসনের নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টারা বলছিলেন এবোটাবাদে লাদেনের অবস্থান সম্বন্ধে তাদের আগে থেকে কিছুই জানা ছিল না।

গণমাধ্যমকে এমন ধারণা দিয়ে আসছিলেন তারা। ওয়েবসাইটটি দাবি করে, অভিযানের পূর্বাপর চিত্র বিশ্লেষণ করলে বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে, লাদেন কার্যত পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা 'আইএসআই'-এর গৃহবন্দী ছিলেন। এ কারণে এবোটাবাদের যে বাড়িতে লাদেনকে মার্কিন কমান্ডো সিল বাহিনীর সদস্যরা হত্যা করেছে, সেখানে একটি মাত্র একে-৪৭ রাইফেল এবং পিস্তল ছিল নিরাপত্তার কাজে ব্যবহারের জন্য। লাদেন যেন বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে না পারেন সে জন্য সে বাড়িতে কোনো টেলিফোন বা ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়নি। এমনকি লাদেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের চলাফেরার ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।

নিহত যে দু'জনকে লাদেনের বার্তাবাহক বলে ভুল ধারণা করা হচ্ছিল মূলত তারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। এ কারণে নিহত হওয়ার পরেও পাকিস্তান প্রশাসন তাদের পরিচয় বা ছবি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করেনি। এমনকি বাড়িটির প্রকৃত মালিক কে তার নামটিও কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। বাড়িটিকে আল কায়দা নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন ও অজ্ঞাত রাখা হয়েছিল বলেই সেখানে কারও যাতায়াত ছিল না। এবোটাবাদে লাদেনের বাড়ির কাছাকাছি বাস করতেন এমন এক প্রতিবেশী বলেন, এটাকে ঠিক বাড়ি বলা যাবে না।

বাড়িটা দেখতে অনেকটা গোডাউনের মতো। যার কোনো ব্যালকনি ছিল না। এমন একটি বাড়িতে স্বল্পদিনের জন্য হলেও আপনি চাইবেন না পরিবারকে নিয়ে থাকতে। আর তিনি তো ছিলেন দীর্ঘ পাঁচ বছর। অর্থাৎ এমন বন্দিশালায় কে থাকতে চায়? ধরে নেওয়া যায় আল কায়দার প্রধান সংগঠক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ওসামা বিন লাদেনের শেষ জীবন এবোটাবাদের বাড়ির বন্দিশালায় নিঃশেষ হয়ে গেছে।

জীবনের শেষ ক'টা বছর কম্পিউটার, টিভি এবং স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন। আর বাড়ির কাছে যেসব প্রতিবেশী বাস করতেন, তাদের জন্যও সে বাড়িতে প্রবেশাধিকার ছিল না। জারাটে বলেন, লাদেন হত্যার মধ্য দিয়ে আল কায়দার নেতৃত্ব শুধু পাকিস্তানেই নয়, হয়ত বিশ্বের অন্যত্রও দুর্বল ও ক্ষয় পেতে থাকবে। লাদেনের এবোটাবাদের বাড়ি থেকে যেসব অডিও-ভিডিও ও অন্যান্য নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে, তা থেকে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আল কায়দার ইয়েমেনি নেতা আনওয়ার আল আওয়ালাকিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সম্ভাব্য হুমকি এবং আল কায়দার ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। দি নিউইয়র্ক টাইমস, জিনিউজ।

আইএসআই প্রধান অজ্ঞাত স্থানে :পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) প্রধান লে. জেনারেল আহমেদ সুজা পাশা গত শুক্রবার দেশের বাইরে গেছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পাকিস্তান সরকার তার এ সফর সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। খবর জিনিউজ ও ডনের। পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়, আইএসআই প্রধান যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন।

তার এ যাত্রার উদ্দেশ্য ওবামা প্রশাসনকে বোঝানো যে পাকিস্তানের গোয়েন্দারা বিশেষ করে আইএসআই জানত না, লাদেন সাত বছর ধরে এবোটাবাদে আত্মগোপন করে আছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা সন্দেহ করছেন, নিশ্চয়ই আইএসআইয়ের কোনো কর্মকর্তার জানা ছিল লাদেনের হদিস। লাদেনকে সহায়তাও দিয়েছে আইএসআইয়ের একটা অংশ। ডন আরও জানায়, সুজা পাশা ওয়াশিংটনে গেছেন। যাওয়ার আগে ইসলামাবাদে সিআইএর স্টেশন প্রধানের সঙ্গে দেখা করে গেছেন তিনি।

ভারতীয় গণমাধ্যম জিনিউজের এক প্রতিবেদনে গতকাল রোববার বলা হয়, লে. জেনারেল সুজা পাশা গেছেন বন্ধুপ্রতিম দেশ চীন কিংবা সৌদি আরবে। পাকিস্তানের সরকার কিংবা হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে তার এই বিদেশ সফর সম্পর্কে অতি গোপনীয়তা রক্ষার কারণেই গণমাধ্যমে এ সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ওবামা প্রশাসনের অসমর্থিত এক সূত্রের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ওপর হতাশ। যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আশফাক কায়ানি ও আইএসআই প্রধান লে. জেনালের সুজা পাশা লাদেনের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে জানতেন না, তা বিশ্বাস করা মুশকিল। হোয়াইট হাউসের ওই সূত্র জানায়, আশ্চর্যের কিছুই থাকবে না যখন আমরা জানতে পারব, এবোটাবাদে লাদেনের অবস্থান সম্পর্কে লে. জেনারেল সুজা জানতেন।

পাকিস্তানি সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, আইএসআই প্রধান সুজা পাশাকে হয়তো শিগগিরই পদ ছাড়তে হবে। কারণ, সরকার তাকে ব্যর্থ কর্মকর্তা হিসেবে গণ্য করছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।