আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খুনি দরজা : ভারত বর্ষের রক্তাক্ত ইতিহাসের স্বাক্ষী

যাপন করছি জীবন যেহেতু যাপন ছাড়া পরিত্রান নেই। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত দিয়ে রাজাকারদের ঘৃণা করে যাব মৃত্যু পর্যন্ত । । শের শাহ সুরি হুমায়ুনকে পরাজিত করে লাল কেল্লা দখল করার পর তার বিজয়কে স্মরনীয় করে রাখার জন্য লাল কেল্লায় একটি শাহী দরজা স্থাপন করেন দরজাটির নাম রাখা হয় লাল দরজা যা পরবর্তীতে খুনি দরজা নামে পরিচিত হয় । এই গেটটিকে অনেকে অভিশপ্ত দরজাও বলে থাকেন ।

নামকরনের পেছনে রয়েছে ভারতবর্ষের রক্তাক্ত ইতিহাস যা এই গেটের সামনে মঞ্চায়িত হয়েছিল যুগে যুগে । পরামক্রমশালী সম্রাট আকবর বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ হওয়ার পর তার পুত্র সেলিম (পরবর্তীতে সম্রাট জাহাঙ্গীর ) তাকে বন্দী করে দিল্লীর সিংহাসন দখল করেন । আকবরের পরম আস্থাভাজন নবরত্নদের পক্ষে তা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলনা । তারা প্রকাশ্যে সেলিমের বিরোধীতা করেন । এদের মধ্যে একজন ছিলেন আব্দুর রহিম খান ই খানা ।

তাকে হত্যা করে খুনি দরজার উপর টাঙ্গিয়ে দেয়া হয় । এখানেই তার লাশ পঁচে গলে শেষ হয় , কিন্তু শুরু হয় খুনি দরজার রক্তাক্ত ইতিহাস । সম্রাট সেলিমের পুত্র শাহজাহান অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চার পুত্র আওরঙ্গজেব , শাহ সুজা, দারা শিকো ও মুরাদের মধ্যে শুরু হয় সিংহাসন দ্বন্দ যা পরবর্তীতে রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে । শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় আওরঙ্গজেব । আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাশিকোর শিরোচ্ছেদ করে তার মস্তক একটি প্লেটে করে পিতা শাহজাহানের কাছে পাঠায় এবং দেহ খুনি দরজার সামনে ফেলে রাখে ।

এরপর ১৭৩৯ খ্রিষ্টাব্দে নাদির শাহ ভারতবর্ষ আক্রমন করে দিল্লীতে ঢুকে পড়ে । তার সৈন্যরা নির্বিচারের হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে দিল্লির রাস্তাকে রক্তে রঞ্জিত করে । দিল্লির লাল কেল্লার রক্ষীদের হত্যা করে তাদের লাশ খুনি দরজায় ঝুলিয়ে দেয়া হয় । কিন্তু এখানে খুনি দরজার কাহিনী শেষ হয়না বরং শুরু হয় । আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মোঘল সাম্রাজ্যের শক্তি ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে এবং একসময় ইংরেজরা ভারতবর্ষ দখল করে নেয় ।

ইংরেজদের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালে শেষ মোঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরকে প্রতীক করে সিপাহি বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় । ইংরেজরা প্রথম পর্যায়ে পর্যদুস্ত হলেও পাঞ্জাবী ও পাঠানদের সাথে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সিপাহি বিদ্রোহ দমন করে ও ব্রিটিশ কমান্ডার হডসন পুরো মোঘল কেল্লা ঘিরে ফেলে । সম্রাট এর তিন পুত্র মীর্জা মোঘল , খিজির সুলতান ও মীর্জা আবু বকর প্রথম দিন আত্নসমর্পন করেননি । তারা একহাজার বিদ্রোহি সৈন্য নিয়ে প্বার্শবর্তী হুমায়ুন এর গম্বুজে অবস্থান গ্রহন করেন । কিন্তু হডসন প্রতিটি সৈন্যকে হত্যার হুমকি দিয়ে তাদের নিঃসর্ত আত্নসমর্পন করতে বলে ।

সৈন্যদের কথা ভেবে তারা শেষ পর্যন্ত আত্নসমর্পনের সিদ্ধান্ত নেন । কিন্তু হডসন সিপাহিদের প্রাণ ভিক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে সবাইকে নির্বিচারে হত্যা করে । অধিকাংশ সৈন্যের লাশ জনসম্মুখে প্রদর্শনের জন্য খুনি দরজায় ঝুলিয়ে রাখা হয় । সম্রাটের তিনপুত্র মীর্জা মোঘল , খিজির সুলতান ও আবু বকর এর কাপড় খুলে নেওয়া হয় । তারপর তাদের বুকে বন্দুক লাগিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় ।

হত্যা করার পর তাদের মস্তক কেটে প্লেটে সাজিয়ে পিতা সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের কাছে পাঠানো হয় ঠিক যেভাবে আওরঙ্গজেব তার ভাইয়ের মস্তক কেটে পিতার কাছে পাঠিয়েছিল । এভাবে সিপাহী বিপ্লব অধ্যায়ের করুন সমাপ্তি ঘটে । পুরান দিল্লির মানুষ এখনও বিশ্বাস করে যে তিন জনের আত্না এখনও খুনি দরজার আশে পাশে ঘোরাঘুরি করে । অনেক উতসাহী মানুষ আবার তাদের দেখতে পাওয়ার দাবি ও করেন । আবার অনেক এর বিশ্বাস বর্ষাকালে এই দরজায় একবার বৃষ্টির পরিবর্তে রক্ত বর্ষিত হয়েছিল যা ছিল সিপাহী বিদ্রোহে যাদের হত্যা করে এই দরজায় ঝুলিয়ে রাখা হয় সেই সিপাহিদের রক্ত ।

বেশিরভাগ যুক্তিবাদী মানুষ এর পক্ষে তা বিশ্বাস করা কঠিন হলেও সবাই স্বীকার করেন এই দরজাটি ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে অভিশপ্ত স্থান । ২০০২ সালে পুরো ভারতে সারা ফেলে দেওয়া মেডিক্যাল ছাত্রীর ধর্ষনের কথা কে ভুলতে পারে । ধর্ষনের স্থানটি কিন্তু ছিল খুনী দরজা ।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।