আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিন্দু ধর্ম মত ও পথ ০৪ কৃষ্ণ করলে লীলাখেলা আর আমরা করলে দোষ!!

অযথা ক্যাচাল পছন্দ না, তাই তালগাছবাদীরা দূরে থাকুন

অনেকদিন ধরেই দেখছি সবাই কথায় কথায় নিজের দোষ ঢাকতে একটা উপমা দিচ্ছে যে কৃষ্ণ করতে পারে সে ঈশ্বর বলে কিন্তু আমরা করলে দোষ কি?? সত্যি ই তো ঈশ্বর অবশ্যই খারাপ কোন কাজ করবেনা। আর ভাল কাজ করলে তা আমরা করলে দোষ কোথায়? অবশ্যই করব হাজার বার করব। কিন্তু কথা হচ্ছে কি করছে এবং কেন করেছে তা জেনে তো করা উচিত। নইলে তো কাজের কোন মুল্য থাকবেনা। যেহেতু হিন্দু ধর্ম নিয়ে সিরিজ আকারে লিখছি তাই এটা ও লিখার ইচ্ছা ছিল তবে তা এখন না কয়েকটা পোষ্ট এর পরে কিন্তু আজ একজনের পোষ্ট ও তদানুযায়ী কয়েকজনের কমেন্ট দেখে আর পারলামনা।

আসুন দেখা যাক কৃষ্ণ কে ও উনি এমন কি করেছে? যেহেতু এটি একটি সিরিজ পোষ্ট তাই আমি অনুরোধ করব আমার আগের পর্বগুলো একটু নজর বুলাতে নইলে অনেকের ই কথাগুলো বুঝতে একটু সমস্যা ও হতে পারে। যাই হোক কৃষ্ণ কে? ঈশ্বর হচ্ছেন সেই নিরাকার ব্রক্ষ্ম, যার কোন আকার নেই, রুপ নেই, বর্ণ নেই তিনি সৃষ্টির পূর্ব থেকে মহাপ্রলয় এর পরেও বর্তমান থাকবেন। তিনিই আমাদের প্রকৃত আরাধ্য, কিন্তু সেই নিরাকার ব্রক্ষ্মকে কল্পনা করে আরাধনা করে ধর্মকর্ম করা আগের যুগে সহজ হলেও ধীরে ধীরে মানুষের মাঝে পাপ বেড়ে যাওয়াতে তাদের মনে শুভ জিনিসগুলো ক্ষয় হয়ে যায়। তাই তখনকার যুগে মুনি ঋষিরা ও সাধারণ মানুষেরা যা যা পারতেন তা আমাদের কাছে শুধুই রুপকথা ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না। ঈশ্বর এক কিন্তু তিনি বহু রুপ ধারণ করতে পারেন।

তাই বিভিন্ন সময়ে তিনি বিভিন্ন রুপে পৃথিবীতে অবতার নামে এসেছেন যেমন রাম,বলরাম, কৃষ্ণ,পরশুরাম, নৃসিংহ অবতার প্রভৃতি। কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে অর্থাৎ পূর্ণ অংশে পৃথিবীতে আসেন না সাধারণত, একবার এসেছিলেন রাম এর নামে আবার এসেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ এর অবতারে। তবে শ্রীকৃষ্ণ এর অবতারে তিনি সর্বোচ্চ অংশে আসেন। ভক্তদের মতে তিনি ও রাধা দুজনে মিলে পূর্ণ অংশে আসেন। এবং পৃথিবীতে এসে পূর্বের অনেক নিয়ম কানুন মানুষের জন্য অসুবিধা হওয়াতে তিনি সব কিছুর সংক্ষিপ্ত ও সহজ উপায়ে বিশ্লেষন ও পথের অবতারণা করেন।

যা গীতাতে অন্তর্ভুক্ত। তাই শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর মানা হয়। অথবা ব্যাপারটা এমনভাবেও দেখা যায় ব্রক্ষ্ম হচ্ছে একটা পদ, যেমন প্রধান শিক্ষকের পদ সেখানে পদাধিকার বলে যে বসবেন সেই যেমন প্রধান শিক্ষক হবেন ঠিক তেমনি শ্রীকৃষ্ণ, ঈশ্বর রুপে অধিষ্ঠিত আছেন নিরাকার ব্রক্ষ্মের সাকার রুপে তার ভক্তদের মাঝে। কেউ যদি বলে কৃষ্ণ না শিব ই আমার ঈশ্বর কোন সমস্যা নেই। যেহেতু শ্রীচৈতন্য দেবের মতে কলিতে কৃষ্ণনাম ও নামকীর্তন ছাড়া মুক্তি নাই, তাই শ্রীকৃষ্ণ কেই ঈশ্বর ধরা হয়।

এখন আসা যাক কৃষ্ণের সাথে রাধা ও তার সখীদের কি সম্পর্ক ও কেন.. আগের পোষ্টে বলছি যে ঈশ্বর হচ্ছে পরমাত্মা আর মানুষের মাঝে আত্মা, আত্মা পরমাত্মার একটি ক্ষুদ্র অংশ হিসেবে পৃথিবীতে আসে এবং আবার পরমাত্মাতে মিলিত হওয়াই এর চুড়ান্ত লক্ষ্য। এবং পরমাত্মাও চায় আত্মা আবার আসুক এই দুই এর মাঝে যে আকর্ষণ একেই বলে প্রেম। প্রেমের মিলন শরীরে না, ঐ দুইয়ের মিলনে ই প্রকৃত প্রেমের মিলন। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে যে অন্যান্য দেবতাদের যেমনটা বাবা বলে সম্বোধন করা হয়, শ্রীকৃষ্ণকে কিন্তু তা করা হয়না তাকে সখা বা বন্ধু হিসেবে ডাকা হয়, তার কাছে প্রেম নিবেদন করা হয়, কিন্তু কিসের প্রেম? হ্যা আত্মার প্রেম। তাই এই প্রেম নারী পুরুষ সবাই করতে পারে।

এই বিষয় নিয়ে নারদ ভক্তিসূত্র তে কিছু কথা পেয়েছি, তার কিছু কিছু কথা তুলে ধরছি... "যেহেতু এটি (পরম প্রেমভক্তি) নিরোধরুপী, সুতরাং এটি কামনাযুক্ত হয়না"। ৭। । এখানে নিরোধ বলতে বুঝিয়েছেন "প্রকৃতপক্ষে, সকল পার্থিব(লৌকিক) এবং ধার্মিক (বৈদিক) কর্ম ত্যাগকেই নিরোধ বলা হয়"। ৮।

। আবার বলেছেন "ঈশ্বরে অনন্যতা (আন্তরিকতা ও একক ভাবে ভক্তি), এবং তার (ভক্তির) বিপরীত বা বিরুদ্ধ সকল বিষয়ে উদাসীনতাকেও নিরোধ বলা হয়"। ৯। । এখানে একটা জিনিস দেখা যায় প্রকৃত ভক্তের সাধনার জন্য শুধুই ভক্তির দরকার হয়, তার বেদের জ্ঞান, লৌকিক জ্ঞান কিছুর ই প্রয়োজন হয়না।

শুধু ভক্তির মাধ্যমেই ভক্ত তার ঈশ্বরকে নামিয়ে আনতে পারে। কিন্তু ভক্তি কেমন হতে হবে?? মহর্ষি নারদ তার ভক্তিসূত্রতে আরো বলেছেন,"ঈশ্বরের কাছে সকল কর্ম সমর্পণ এবং মুহুর্ত কালের জন্যেও ঈশ্বর বিস্মরণ হলে অত্যন্ত ব্যাকুল হওয়াকেই ভক্তি বলে"১৯। । "যেমন ব্রজগোপীদের প্রেমভক্তি"। ২১।

। "ঈশ্বরজ্ঞান ব্যাতীত প্রেমভক্তি ব্যভিচারী প্রেমের সমান"২৩। । "(প্রিয়তমের)এইরুপ ব্যাভিচারী প্রেমের সুখে সুখী হওয়া যায় না"। ২৪।

। আমরা জানি ভক্তির জন্য নারদ বিখ্যাত, এবং নারদ ই বলছেন প্রেমভক্তি করতে হলে ঈশ্বরজ্ঞানে করতে হবে নইলে সেটা প্রেমভক্তি হয় না। তাহলে আমরা যা করি বর্তমানে আজকে হাই হ্যালো কালকে মোবাইলে ফোন পরেরদিন মোবাইলে কিস........ এগুলো কি ধর্মের দৃষ্টিতে প্রেম? আমাকে কি মেয়ে ঈশ্বরজ্ঞানে প্রেম করছে? আমি কি এমন কেউ?? না না না তাহলে ধর্মের দৃষ্টিতে তো এগুলো প্রেমই না ব্যাভিচারী শুধুমাত্র। আর ও খেয়াল করলে দেখা যাবে রাধা, তার সখীগণ কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকে কখনও সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখেনাই। ঈশ্বরজ্ঞানে ভক্তি সহ প্রেম করেছে।

আমরা এখন ও শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলার নাম শুনলে মনে মনে পুলকিত হই সেখানে কিন্তু এক সখী মৃত্যুর পরে গিয়েছিল কেননা তার বাসা থেকে তাকে বাইরে বের হতে দেয়নাই, তাকে বেধে রাখা হয়েছিল, যদি তারা সাধারণ মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আসতেন তাহলে এইসব কিভাবে সম্ভব ছিল?? শুধুমাত্রই সম্ভব যদি ঈশ্বরজ্ঞানে প্রেমভক্তি করা যায়। প্রতিটি প্রাণীর ই প্রথম স্বামী বা প্রভু হচ্ছে ঈশ্বর তারপর অন্য কেউ। এজন্য অনেকটা কৌতুক করে বলা হয় মেয়েদের প্রথম স্বামী শ্রীকৃষ্ণ পরের স্বামী তার জামাই। আর শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার অনেক কথাই অতিরঞ্জিত করা হয়েছে তৎকালীন কবিদের দ্বারা যেমন চন্ডীদাশ, কেননা মহাভারত, গীতায় শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে এত কথা থাকলেও রাধার কথা উল্লেখ নেই। শুধুমাত্র ব্রক্ষ্মবৈর্বত পুরাণে রাধার কথা পাওয়া যায়।

কিন্তু মানের দিকে পুরাণের মান অনেক নিচে অর্থাৎ বিশ্বস্ততার দিক থেকে। তবুও সেখানে কিন্তু তাকে ঈশ্বর রুপে দেখানো হয়েছে। আর ও সেখানে এই সব কিছুর ই কারণ ও তৈরীকার্য বিস্তারিত ভাবে লেখা হয়েছে। তাই যারা সেখানের কিছু অংশের উদ্ধৃতি দেয় তাদের অনুরোধ করব, সম্পূর্ণ পড়ে দেখুন। তাই নিজেকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা না দেওয়াটাই ভালো হবে কেননা দুই প্রেম একরকম জিনিস নয়।

আর আম আর কৃষ্ণ ও একরকম নই। তাহলে কিসের তুলনা? তাই সব কথার শেষে কিছু কথা না বলে পারছিনা, প্রায় ই আমরা এই কথার সন্মুখীন হই কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করিনা কারণ আমরা নিজের ধর্ম সম্পর্কেই ভালমত জানিনা(যদিও আমি নির্দিষ্ট কোন ধর্মে বিশ্বাষ করিনা) তাই প্রথমে নিজের ধর্মটাকে জানুন এর কথাগুলা বিচার করুন। তারপর যে ভুল করে তাদের সংশোধন করুন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.