আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেয়েটির কষ্ট কেউ বুঝল না



সকাল ১০টা ২৫ মিনিট। আজ রোববার আমি গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করব। আমার মৃত্যুর জন্য আমার মা, ভাই, বোন সবাই দায়ী। তারা প্রতিনিয়ত আমাকে আত্মহত্যা করতে উৎসাহিত করেছে। আমি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে যেতে চেয়েছিলাম, আমাকে যেতে দেওয়া হয়নি।

গত রাতেও কাকা-কাকির সামনে আমার মা আমাকে গলায় দড়ি দিয়ে মরতে বলেছে...। ’ রোববার সকালে এমনই একটি চিরকুট লিখে বিকেলে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের প্রধান সহকারী হাসিনা ফেরদৌস। গত রোববার রাজধানীর কাঁটাবনের ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে নিউমার্কেট থানার পুলিশ বাদী হয়ে হাসিনার মা খাদিজা বেগম, ভাই মোস্তবা মীর মেহেদী, বোন তাহমিনা ফেরদৌস ও আলিয়া ফেরদৌসের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সোমবার বিকেলে মরদেহ গ্রহণ করার সময়ও হাসিনার পরিবারের কেউ ছিল না।

মরদেহ গ্রহণ করেন তাঁর সহকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি শাখার প্রধান সহকারী তাসলিমা বেগম। সহকর্মীরাই আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করেন। নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক এম এ হক প্রথম আলোকে জানান, হাসিনার ঘর তল্লাশি করে পুলিশ চারটি চিরকুট পেয়েছে। চিরকুটগুলোর একটিতে হাসিনা তাঁর মৃত্যুর জন্য মা, ভাই ও বোনদের দায়ী করেন। এটি পেয়েই পুলিশ ওই চারজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে মামলা করেছে।

তবে গতকাল পর্যন্ত কেউই গ্রেপ্তার হননি। এদিকে গত রোববার ঢাকা মেডিকেলে হাসিনার স্বজনেরা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রান্নাঘরে গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মারা যান হাসিনা। গতকাল কাঁটাবনের বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা জানান, হাসিনার মৃত্যুর পরপরই বাড়ির সবাই পালিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, হাসিনার বাবা আমিনুল হকও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ছিলেন।

২০০২ সালে বাবার মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে দৈনিক ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন হাসিনা। দুই বছর পর তাঁর চাকরি স্থায়ী হয়। রোববারও অফিসে এসেছিলেন হাসিনা। বিকেলে হঠাৎ কান্নাকাটি শুরু করায় তাঁকে বাসায় পাঠিয়ে দেন সহকর্মীরা। হাসিনার কক্ষে গতকাল সকালে তল্লাশি চালায় পুলিশ।

এ সময় উদ্ধার করা জিনিসগুলো থেকে দেখা যায়, বাবার মৃত্যুর পরও হাসিনা তাঁকে উদ্দেশ করে চিঠি লিখতেন। বাবার ব্যবহূত কিছু জিনিসও তিনি রেখে দিয়েছিলেন টেবিলের ড্রয়ারে। সহকর্মীরা জানান, নিজে আয় করে পরিবারকে সহায়তা করলেও পরিবারের সবাই হাসিনাকে বকাঝকা করত। মৃত্যুর আগেও হাসিনা তাঁর দায়িত্ব পালন করে গেছেন। মৃত্যুর জন্য মাকে দায়ী করলেও হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক বন্ধুকে বলে গেছেন পাওনা টাকা যেন তাঁর মাকে দেওয়া হয়।

এ কথাটি তিনি তাঁর ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠায় লিখে গেছেন। সহকর্মীদের কাছে হাসিনা ছিলেন শান্ত ও বিনয়ী স্বভাবের। রেজিস্ট্রার ভবনের তিনতলায় তাঁর পাশের টেবিলেই বসতেন এ কে এম বশীর। হাসিনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মেয়েটা খুবই চাপা স্বভাবের ছিল। কখনো কিছু বলত না।

কত চেষ্টা করেছি, মেয়েটা যেন একটু সহজ হয় কিন্তু পারলামই না। ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘ডিনস কমিটির বৈঠকে মেয়েটি সব সময় উপস্থিত থাকত। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুন সম্পর্কে তাঁর ভালো ধারণা ছিল। এমন একটি মেয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত এই মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। ’


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।