আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিষ্টি সফলতা

আমারে দিবো না ভুলিতে

সফলতার ধারণাগুলো আমাদের আশপাশেই লুকানো থাকে। প্রয়োজন শুধু সেগুলো খুঁজে বের করার। কোনো কাজই ছোট নয়। এমন অনেক কাজ আছে যেগুলো খুব সহজেই পেঁৗছে দিতে পারে সফলতার সিঁড়িতে। তেমই জ্বলন্ত এক প্রমাণ ১৪ বছরের ফ্রাসের ডর্থি।

সে তার স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করে তার বাসার রান্নাঘরে বসে। স্কটল্যান্ডের এনিবারা শহরের ছোট্ট একটা বাড়িতে থাকে ডর্থি। সে প্রথমবারের মতো আচার তৈরি করে তার দাদির জন্য। দাদীর রান্নার প্রস্তুতপ্রণালী দেখে শেখে সে। সেসময় তার আচারের গ্রাহক বলতে ছিলো তার বন্ধু ও প্রতিবেশীরা।

সে তার দাদীর ব্যবসায় সাহায্যের জন্য এ কাজ করতো। ধীরে ধীরে তার আচারের ব্যবসা লাভজনক পর্যায়ে চলে যায়। প্রয়োজনের তাগিদে ব্যবসা বাড়াতে হয়। তখন তার বয়স ছিলো ১৬। আচার তৈরির ব্যবসায় পুরো সময় দেওয়ার জন্য স্কুল ছাড়তে হয় তাকে।

পুরোদমে ব্যবসাতে নাম লিখিয়ে সে চিন্তা করে, এটা নিয়েই যখন থাকতে হবে, তবে ব্যবসাটা ভালোমতো করি। সে তার দাদীর প্রস্তুতপ্রণালীর সাথে নিজের কিছু ধারণা যোগ করে নতুন এক প্রস্তুতপ্রণালী তৈরি করে এবং সেটার নামও দেয়_চমৎকার আচার। সমস্যা বাঁধে তার লোকবল নিয়ে। কারণ, তার জোগানের তুলনায় অধিক চাহিদা সৃষ্টি হয়। সেসময় আরো একটা সমস্যা ছিল।

সে তখনও তার পারিবারিক রান্নাঘরে আচার প্রস্তুত করতো। প্রথমে সে ফল ও ফলের রস দিয়ে আচার বানাতো। সেখানে এতো বিশাল পরিধিতে ব্যবসা করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরের কয়েক মাসের মধ্যে সে একটা কারখানা ভাড়া নেয়। ২০০৭-এর শুরুর দিকে সে যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম সুপারমার্কেট, ওয়েটরোজ-এ তার আচার বিক্রির চেষ্টা করে।

সে আশা করে তার আচার ব্যবসা ভালো হবে সেখানে। মাত্র কয়েক মাসের মাথায় ওয়েটরোজ সুপারমার্কেটের ১৮৪ দোকানের সামনে আচারের একটা বড় দোকান হয়ে গেল। ডর্থি তার ব্যবসাকে নতুন এক প্রান্তে নিয়ে আসতে পারল অবশেষে। সে তখন সফলতার চূড়ার কাছাকাছি। একের পর এক নতুন ধারণার জন্ম দিতে লাগলো তার ব্যবসাকে কেন্দ্র করে।

আর এর জন্য প্রয়োজন টাকা, যা সেসময় তার কাছে যথেষ্ট পরিমাণে ছিলো না। তাই তার ব্যাংকের শরণাপন্য হতে হয়। এক বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৫০০০ পাউন্ড (৯হাজার ডলার) ধার নেয় সে। বাংলাদেশি টাকায় তা প্রায় ৬৩,৯২,২৫০ টাকার সমান। সে এই টাকা দিয়ে তার আচারের তিনটি নতুন স্বাদ আনতে চায়_বস্ন-বেরি ও বস্নাক কারেন্ট, রুবার্ব আদা ও ক্যাবেরি এবং র্যাসপবেরি (কমলার রসের মতো স্বাদ)।

ধীরে ধীরে যুক্তরাজ্যের প্রায় ৩০০ দোকানে ডর্থির আচার ছড়িয়ে পড়তে লাগল। ২০০৬-এর শেষ থেকে ২০০৭-এর দিকে তার ‘সুপার জ্যামের’ বিক্রি ১.২ মিলিয়ন ছুঁয়ে গেল। বলতে গেলে ব্যবসার ক্ষেত্রে সফলতার এ মাত্রাটি ৬০ শতাংশের মতো। বর্তমানে তার এই আচার ব্যবসা তাকে আসডা ওয়াল মার্ট-এর প্রতিদিনকার খুচরা বিক্রেতা হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। শুধু যুক্তরাজ্যেই নয়; তার এ ব্যবসার পরিধি মরিজন ও আইয়ারল্যান্ডেও ছড়িয়ে গেছে।

এরপর ২০০৮ সালের দিকে সে একটা চ্যারিটির ব্যবস্থা করে তার আচারের ব্যবসার মাধ্যমে। নাম দেয়, ‘সুপার জ্যাম টি পার্টি’। ধারণার বাইরে ছিলো ব্যাপারটা। তার এ উদ্যোগ স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ডে ব্যাপক হারে জনপ্রিয়তা পায়। ‘অতিথিরা অনুষ্ঠান শেষে হাসতে হাসতে প্রায় কেঁদে ফেলার জোগাড় হয়েছিলো’, বলে ডর্থি।

সে অনুষ্ঠানে নাচ, গান, খাওয়া-দাওয়ার সাথে ছিলো তার আচারের বিশাল সমাহার। প্রায় ৫০০-এর উপর অতিথিরা এসেছিলেন সেখানে। সেই বছরই ডর্থি ঘোষণা দেয়, তার এ আচারের ব্যবসা কিছুদিনের মধ্যে অন্যতম আচার ব্যবসায়ী সেইনবেরিকেও হার মানাবে। এবং যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে অন্যতম স্থানটি দখল করে নেবে। উদাহরণ দিয়ে সে আরো বলে, বিখ্যাত জেলি প্রস্তুতকারক জে এম স্মুকার যেখানে ১ থেকে ১.৪ মিলিয়ন বিক্রি করে, সেখানে তার বিক্রি নিঃসন্দেহে ১ থেকে ২ মিলিয়নের মতো।

তাই সে আত্মবিশ্বাসী তার আচার ব্যবসার ভবিষ্যত নিয়ে। বর্তমানে সে সবচেয়ে অল্পবয়সী মিলিয়নেয়ারদের মধ্যে একজন। তবে এ নিয়ে তার কোনো চিন্তা নেই। সে বলে, ‘আমার টাকার প্রতি কোনো লোভ নেই অথবা আগ্রহ। আমি আচারের এই ব্যবসা করি কারণ, আমি এটা করতে ভালোবাসি।

’ তার উপর সফলতার মিঠে স্বাদটাও তো আছে; ঠিক ডর্থির আচারের মতো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.