আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ষাড়ের লড়াই এর পিছনে রয়েছে অনেক কাহিনী, লাখ লাখ টাকার লেনদেন, আর রয়েছে আধ্যাত্মিক শক্তির লড়াই । (গত পোস্টের পর)

ফেস বুক আইডি: Mymensingh Hotey ইমেইল: mymensinghts@gmail.com
ষাড়ের লড়াইয়ের ছবিসহ পূর্বের পোস্ট ষাড়ের লড়াইয়ে বিজয়ীদের পুরষ্কার দেওয়া হয়ে থাকে রঙ্গীন টেলিভিশন, হোক সেটা ১৪ বা ১৭ ইঞ্চি। খারাপ কি? এই টিভির জন্য ৬০/৭০ কিঃমিঃ পর্যন্ত দুরের পথ পাড়ি দিয়ে আসাটায় একটু অবাক হই বটে, চমকিত হইনা। টাস্কি খেলাম ঠিক তখনেই, আমাদের পাশের লুঙ্গি আর গেঞ্জি পড়া লোকটি যখন বললো, “বাবুল মিয়া ইতিমধ্যে এই হাড়(ষাড়) দিয়া ১২ লক্ষ টেকা কামাই করছে, এই লড়াইয়ে ধরা ৫ লাখ টেকা ” । ৭/৮ হাজার দামের চায়না টিভি কয়টা হলে ১২ লক্ষ হয়, ১২ লক্ষের জন্য কয়টা লড়াইয়ে জিততে হয় অথবা আজকের ৫লাখ টাকার ব্যাপারটাই বা কেমন, সেই হিসাব মনে মনে শুরু করে দেই। আরে ফলাফল তো অসম্ভব ঠেকে! আমার সাথে নেত্রকোণার মদনের এক বন্ধু ছিল, সেই আমাকে হিসাব টা বুঝিয়ে দিল।

দুই পক্ষের গরুর মালিকদের ভিতর বাজি হয়, সেটা ৫০ থেকে লাখ, দুই লাখ, তিন লাখ পর্যন্ত উঠে। যেমন আজকে আড়াই করে পাচ লাখ। সেটা মালিকের ভিতর সীমাবদ্ধ থাকেনা, পক্ষ প্রতিপক্ষ ছাড়াও আশেপাশের যে কেউ “লাগবা বাজি” জুয়া চলে। যেমন বলা চলে, তাহার সাথে উহার সম্পর্ক খারাপ, অতএব, “সাহস থাকলে ধর দেহি বা বাপের ব্যাটা হইলে আউগ্যা দেহি”, ব্যাস্ । যে লোকটির কথা প্রথমে বললাম, সর্বশেষ লড়াই শেষে ফুর্তির ঠেলায় আমাদের চায়ের নেমন্তন করিলেন।

উনি বাজীতে ১৫ হাজার জিতেছেন, কয়দিন আগে ১০ হাজার হেরেছিলেন, আসলের সাথে বোনাস ৫ হাজার। একজন দুজন নয়, এসকল লোক শয়ে শয়ে, এরা লড়াইয়ের হাড়ির খবর রাখে, যে এলাকায় লড়াই হয় সেখানে চলে যায়, জাস্ট বাজির নেশায়। যে ষাড়ের মালিকের টাকা থাকেনা বাজি ধরার, তার হয়ে বাজি ধরে প্রভাবশালী অন্যকেউ। যে গরু জিতে, তার দাম তখন আসলের চেয়ে ৩/ ৪গুন বেড়ে যায়। অতএব, বাজি ধরতে নেই মানা।

এই যে এত লাখ লাখ টাকার খেলা, বাজিকরেরা লড়াইয়ে অংশগ্রহনকারী যোদ্ধাদের উপর উপর ভরসা রাখেনা। তাহলে তারা কি করে? জ্বি স্যার, সাথে চলে আধ্যাত্মিক শক্তির লড়াই। লড়াই চলাকালীন সময়ে হঠাৎ ছবির সাদা জামা গায়ের লোকটিকে মাঠ থেকে বের করে দিচ্ছে স্বেচ্ছসেবকরা । হ্যাঁ, এই লোকটির অপরাধ, উনি মাঠে মন্ত্র পড়ছিলেন। উনি একজন তান্ত্রিক।

লড়াইয়ে প্রতিপক্ষের নিরীহ ষাড়টির উপর উনি জাদুমন্ত্র করছিলেন। আকাশ থেকে পড়ার মত অবস্থা, আমি ভাই বিজ্ঞানের ছাত্র, ভাগ্যে যদিও বিশ্বাস করি তারপরও মন্ত্র দিয়ে কার্য হাসিল করাটা মোটেই বিশ্বাস করিনা। চোখকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করছি, কানকেও তাই। আবারও বন্ধুর বয়ান,- ষাড় একটি, মালিক একজন, কিন্তু তান্ত্রিক থাকে ৮/১০ জন। একেকজনের কাজ একেকরকম, কেউ মিসাইল (মন্ত্র) ছাড়ে প্রতিপক্ষের ষাড়ের উপর, কেউবা প্রতিপক্ষের মিসাইল ঠেকায়, কেউবা প্রতিপক্ষের তান্ত্রিককে অকার্যকর করে।

এসব লড়াইয়ে যদি ষাড় জিতে তো, তান্ত্রিকের ডিমান্ড বাড়ে, আর যদি হারে তো, বাজারে তার বেইল (কদর) নাই। কি ভাই, অবাক হচ্ছেন? পরের ছবিটি দেখুন, হাড়ির ভিতর কত কিছু আছে, তার ভিতর লেবুর উপর গেথে আছে অনেকগুলো আলপিন( দেখা না গেলে অনুবীক্ষন যন্ত্র লাগান)। ব্যাচারা তান্ত্রিক, শেষ রক্ষা করতে পারলোনা, তাদের ষাড় লেজ গুটিয়ে ভাগিছে। আফসোস, এই তান্ত্রিকের বাজার দর কমিয়া গেল। এসব কথা লিখছি, আর নিজেকে বার বার প্রশ্ন করছি, কিভাবে সম্ভব? আমরা তো এখন এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি, যেখানে মানুষ ভিন্ন গ্রহে আবাস গড়তে প্রস্তুত, ময়মনসিংহে বসে যে লেখাটি টাইপ করছি, সেটা হয়তো কিছুক্ষনের মধ্যেই পৃথিবীর অন্যপ্রান্তের কেউ এইমাত্র পড়া শেষ করবে।

তারপরও এটা আমার বাংলাদেশ, হয়তো এটাই আমার ঐতিহ্য, যাকে খুজে ফিরি সবসম, হোকনা সেটা বাস্তবতার বাইরে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।