আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্থপতি লুই কানের পাওনা এখনো বকেয়া

ভাবনারা মাথার ভিতর অবিরত তুলছে ঢেউ
সংসদ ভবনের স্থাপত্য নকশা প্রণয়নের জন্য বিশ্বখ্যাত মার্কিন স্থপতি লুই আই কানের পাওনা ৬১ হাজার ডলার স্থাপত্য ফি বাংলাদেশ দীর্ঘদিনেও পরিশোধ করেনি। মৃত্যুর ৯ বছর পর ১৯৮৩ সালে ২৪ জুলাই লুই কানের বকেয়া ফি ২ লাখ ১৬ হাজার ৯৬৪ ডলার তিন কিস্তিতে পরিশোধের বিষয়ে তার উত্তরাধিকারী ডেভিড উইসডমের অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বন্ধুত্বপূর্ণ নিষ্পত্তি হলেও শেষ কিস্তি ২৮ বছরেও পরিশোধ করা হয়নি। বহুবার যোগাযোগ করেও সাড়া না পেয়ে হতাশ ডেভিড উইসডমের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে বহু বছর আর কোনো যোগযোগ করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। বৈদেশিক ঋণে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বাংলাদেশের নিয়মিত ঋণ শোধের ঐতিহ্য থাকলেও বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের নকশা প্রণয়নকারী লুই কানের কাছে বাংলাদেশ 'ফি খেলাপি' হিসেবে ঋণী থেকে গেছে। 'স্থপতিদের মধ্যে দার্শনিক' হিসেবে অভিহিত লুই আই কান যুক্তরাষ্ট্রে ফিলাডেলফিয়ায় বিভিন্ন স্থাপত্য ফার্মে বিভিন্ন পদে কাজ করার পর ১৯৩৫ সালে নিজের ফার্ম এটলিয়ার প্রতিষ্ঠা করেন।

তবে পাশাপাশি ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ইয়েল স্কুল অব আর্কিটেকচারে এবং ১৯৫৭ থেকে আমৃত্যু ইউনিভার্সিটি অব পেনসেলভেনিয়ার অধ্যাপনা করেন। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৬৭ সালে শেরে বাংলা নগরে জাতীয় পরিষদ ভবন নির্মাণ ও সংলগ্ন এলাকার বিস্তারিত স্থাপত্য নকশা প্রণয়নের জন্য বিশ্বখ্যাত এ মার্কিন স্থপতিকে নিয়োগ করে। তবে স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার তীব্র আর্থিক সংকট সত্ত্বেও অসমাপ্ত এ সংসদ ভবন ও শেরেবাংলা নগর এলাকার বিভিন্ন নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখতে লুই কানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ ছিল এবং তিনি সংসদ ভবনের বিস্তারিত নকশা সরবরাহ করেন। তবে লুই কানের মৃত্যুর ৯ বছর পর ফার্মের পাওনা ফি ২ লাখ ১৬ হাজার ৯৬৪ ডলার তিন কিস্তিতে পরিশোধের বিষয়ে উত্তরাধিকারী ডেভিড উইসডমের অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে ১৯৮৩ সালে ২৪ জুলাই বাংলাদেশ সরকারের বন্ধুত্বপূর্ণ নিষ্পত্তি হয়।

নিষ্পত্তির ওই চুক্তিতে মধ্যস্থতাকারী হেনরি উইলকট নামের একটি প্রতিষ্ঠান সাক্ষী ছিল। ১৯৮৫ সালের ১৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে ডেভিড উইসডমের পক্ষ থেকে লেখা এক চিঠিতে পাওনা ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৯০ ডলার পরিশোধের পর আরও ৬০ হাজার ৯৭৪ ডলার অপরিশোধিত থাকার কথা উল্লেখ করে তা প্রদানের অনুরোধ করা হয়। এ ছাড়া ডেভিড উইসডমের পক্ষ থেকে ১৯৮৪ সালে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে এবং স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতিকে ১৯৮৫ সালে লেখা চিঠিতে চুক্তি অনুযায়ী বকেয়া ফি পরিশোধের তাগিদ দেওয়া হয়। এ সম্পর্কিত ৩টি চিঠি শেরেবাংলা নগরে নতুন বাংলাদেশ সচিবালয় নির্মাণ প্রকল্পের জন্য তৈরি উন্নয়ন প্রকল্প ছকের (ডিডিপি) সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লুই কানের নকশার ভিত্তিতে বাংলাদেশ সচিবালয় নির্মাণের নির্দেশ দেওয়ায় লুই কানের স্থাপত্য নকশার ফি বাবদ পাওনা ৬০ হাজার ডলার ৯৭৪ ডলার বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধের জন্য ডিপিপিতে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে।

তবে এ ফি পরিশোধ এবং লুই কানের স্থাপত্য নকশার যে অংশগুলো তার অফিস থেকে আগে পাওয়া যায়নি তা আনার জন্য পূর্ত মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত অধিদফতর ও স্থাপত্য অধিদফতরের ৩ জন কর্মকর্তার ৩ দফা যুক্তরাষ্ট্র সফরের ব্যয় বাবদ আরও ৪৬ লাখ টাকাও ওই ডিপিপিতেও বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। তবে এত বছরে ডেভিড উইসডমের অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস টিকে আছে কিনা তার কোনো তথ্য ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়নি। স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি মো. ইসমাঈল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে টেলিফোনে লুই কানের ফি পাওনা থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।