আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফি ও নব বর্ষ

সৃষ্টিশীল কোন কাজ করা।

রাতের অন্ধকারের সাথে পাল্লা দিয়ে শীত জেকে বসেছে। আর কয়েক ঘন্টা পরেই বিদায় নিবে পুরাতন বছর ইংরেজী কলেন্ডারের পাতা থেকে। নতুন বছর বরণ করে নিতে শহরের যুবক যুবতীরা তৎপর। পাড়া মহল্লার প্রতি মড়ে মড়ে চলছে ইংরেজী গানের কলি।

ধ্রীম ধ্রীম আওয়াজে রাতার আকাশ বাতাস ভারী করে তুলেছে। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে গাছের ঘুমন্ত কাক সমস্বরে ডাকা ডাকি শুরু করেছে। এই অসময়ে বৎসরের অন্য রাতে তারা চুপচাপ থাকে। রাস্তা দিয়ে মটর গাড়ী ও মটর সাইকেল হাই স্পীডে ছুটে চলে যায়। পিছনে রেখে যায় শব্দের বিকট ঢেউ।

একটি মটর সাইকেলের পিছনে রুশু বসে আছে। কমলা রঙ্গের সালোয়ার কামিজ এর সাথে ম্যাচ করে লিপস্টিক দেওয়া। কানে পোড়া মাটির রিং পড়া। চুলগুলি মুক্ত বাতাসে রাতের অন্ধকারের সাথে একাকার হয়ে ওড়ে। তার গায়ের রং চাপা, শ্যামলা কিংবা ফর্সা নয়।

স্বাস্থ্য অন্যান্য আর দশটা মেয়ের তুলনায় আলাদা একটু ফ্যাটি। হাইট বর্তমান মেয়েদের মতই নিম্নের দিকে। তারপরও তাকে সুন্দর লাগছে। সাজ সজ্জার জন্য না কি অন্য কারনে। আসলে সৃষ্টিকর্তা রুশুর মত করেই ওকে সৃষ্টি করেছে।

সৌন্দর্য শুধুই ওর নিজস্ব ঐ রুপে আর একজন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। মনটা আজ শান্ত হয়ে আছে প্রকৃতির বিছানো শীতল চাদরের গুনে কি না রুশু ধরতে পারে না। সামনে বসা শুভ্র হোন্ডা চালায় আপন মনে মাঝে মাঝে কথা বলছে। শুভ্রর দৃষ্টি রাজপথের দিকে রুশু আলতো করে ধরে আছে শুভ্রর কোমর। শুভ্র হ্যান্ডসাম মাথা ভর্তি ঝাকরা চুল, মাঝারি গড়ন, গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যাম।

তার পরনে জিন্সের প্যান্ট, গায়ে লেদারের জ্যাকেট আর চোখে অটোগ্লাস। রুশুর সাথে পরিচয় কয়েক মাস হল, একটি ম্যারেজ ডে পার্টিতে গিয়ে। রুশু একটি ফ্যাশন হাউজে ডিজাইনার হিসাবে কর্মরত আছে। সমাজে তাদের অবস্থান মোটামুটি শক্ত, শুভ্র একটি ঔষুধ কোম্পানিতে চাকুরী করে নিম্ন মধ্য বিত্ত। ঐ ফাংশন থেকে রুশু ও শুভ্রর পরিচয় দিন দিন এগিয়ে বন্ধুত্বের রুপ নেয়।

নববর্ষের শুরুটা উৎযাপন করার আইডিয়া রুশুকে জানাতেই সে রাজি হয়ে যায়। সারা বৎসর দু’জনেরই ব্যস্ততার মাঝে কাটে। ছুটি ছাটা যা পায় বেশীর ভাগ সময় ঘরে, না হয় পরিবার আত্মীয় স্বজনদেরকে নিয়ে কাটায়। তাই ওরা পরিকল্পনা মতাবেক ছুটে চলে রমনার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে। পার্কের ভিতরে চটপটির দোকানে শুভ্র হোন্ডা থামায় তারপর চটপটির অর্ডার দেয়।

দুজন নিরিবিলি দেখে দুটা চেয়ারে বসে। কিন্তু আশে পাশে লোকজন অনেক যে যার মত ঘোরা ফেরা করছে। বেশীর ভাগই জোড়া মিলিয়ে একে অপরের হাত ধরা ধরি করে হাটছে। কিংবা কোন গাছ তলায় বসে গল্প করছে। আলো আধারী খেলায় মেতেছে প্রকৃতি।

সুযোগ করে দিয়েছে যুগলদেরকে ঘনিষ্ট হবার। দোকানীদের ল্যাম্পোর আলোর ধোঁয়া আর পোড়া কাগজের ধোঁয়া পাঁক খেয়ে গাছের পাতার ফাঁক গলে আকাশে গিয়ে মিশে যাচ্ছে। জলন্ত আগুনের চারপাশে চার পাঁচজন করে বসে আগুনে হাত ছেঁকছে। রুশুর মনটা একমাত্র এইখানে আসলেই ভালো হয়ে যায়। সে খাওয়া থামিয়ে চারপাশটা দেখে নেয়।

এখানে সবাই স্বাধীন, কেউ কাউকে বিরক্ত করে না। নিজেকে সে প্রকৃতি এই কুয়াশা ভেজা রাতের মত বিলিয়ে দিতে থাকে। পাশে বসা শুভ্র দূরে তাকায় সীমানা যত দূর যায়। কেউ কোন কথা বলে না একটা গাছের নীচে বসে থাকে। আশে পাশের শব্দের সাথে হৃদয়ে সুর মিলিয়ে দেয় রুশু।

বোঝার চেষ্টা করে মেলাতে পারছে কিনা। মাঝে মাঝে তাল কেটে যায়। তখন বাস্তবে ফিরে আসে, আবার অসীমে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়। রুশু জানে কিভাবে প্রকৃতির সাথে নিজের মন মিশিয়ে দিতে হয়। হিমেল হাওয়ার সাথে মিশে ধোঁয়ার কুন্ডলী সাথে পাক খেতে আকাশের দিকে ছুটে চলে।

রাতের আকাশে তখনও একটা দুটা তারা দেখা যায়। মিট মিট করে জ্বলা তারাদের সাথে চোখের পাতার সম্পর্ক স্থাপন করে। সময় যে কিভাবে পাড় হয়ে যায় শুভ্র বুঝতে পারে না, কিন্তু তারপরেও তার খারাপ লাগছে না। উঠতে ইচ্ছে করছে না এই জায়গা থেকে, আজ ওরা ১২টা পর্যন্ত এক সঙ্গে সময় কাটাবে। দূর সীমানা থেকে শুভ্র যখন চোখ ফেরায় রুশুর দিকে অবাক হয়ে যায়।

কী শান্ত স্নিগ্ধ হয়ে আছে, চোখের পাপড়ি বন্ধ, কমলা রঙ্গের ঠোঁটে মৃদু কম্পন, নাকের ছিদ্র থেমে আছে। রাতের আধার যেন রুশুর শরীর থেকে ঠিকরে বের হচ্ছে। সময়ের যেন কোন মূল্যই নেই রুশুর কাছে। এখন সে সময় ও পরিবেশের অনেক উর্দ্ধে, যে জগৎ শুধুই নিজের যেখানে ভাগাভাগি করার কোন কথা নেই। বাস্তবের নিষ্ঠুর আঘাত যেখানে তের সৃষ্টি করতে পারে না।

একবার সেই জগতে গেলে রুশুর ফিরে আসতে ইচ্ছে করে না। পার্মানেন্টভাবে থাকার অধিকার এখনও রুশু পায়নি। তাই সে বাস্তবে ফিরে আসে চোখ খুলেই দেখে শুভ্র তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শুভ্রকে রুশুর এইজন্যই ভালো লাগে ব্যক্তিগত ব্যাপারে সে কোন প্রশ্ন করে না। রুশু নিজেই তার হাত এগিয়ে দেয় শুভ্রর দিকে।

শুভ্র দাড়িয়ে হাত ধরার পর উঠে পরে রুশু। হাত ধরা ধরি করেই নিঃশ্চুপ ভাবে হেটে যায় হোন্ডা গ্যারেজের দিকে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।