আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেদিনের ছোট্ট ফল বিক্রেতা : বেড়ে চলা বৈষম্যেরই এক রূপ

সব লেখার স্বত্ব লেখকের সংরক্ষিত

অফিস থেকে ফেরার পথে মাঝে মাঝে মিরপুর ১০ এর গোল চক্করে নেমে কিছু কেনাকাটা করার অভ্যাস আমার। সেদিনও নেমেছিলাম। ফুটপাতে এক ফল বিক্রেতাকে দেখলাম দারুন সব বরই নিয়ে বসে আছে। আমি দরদাম করে কিছু কিনছি এর মধ্যে হটাৎ করে হৈ চৈ । ছোট্ট এক বাচ্চা ছেলেকে দুই পাশ থেকে দুই ভদ্রলোক ধরে নিয়ে চলছে।

ছেলেটার চোখেমুখে আতংক আর বিদ্বেষের ছাপ। একজন ধরেছে তার জামা আরাকজন মাথা। ছেলেটার এক হাতে একটা বেল শক্ত করে ধরা। আশেপাশের লোকজন দেখলাম মজা পাচ্ছে ছেলাটার দুরবস্থা দেখে। ভদ্রলোক দুইজনের গলায় পরিচয়পত্র ঝুলছে, কোন বেসরকারী সংস্থার (ব্যাংক) কর্মকর্তা এরা।

বেশ আ্যগ্রোসিভ। শক্ত করে ছেলেটাকে ধরে রেখেছে। আমি এগিয়ে গেলাম, থামালাম এদের। 'কি হয়েছে ভাই?' জানা গেল ছেলেটার হাতের বেলটা নিয়েই যত সমস্যা। প্রথমে সে এটা এদের কাছে বিক্রি করতে চাইলেও এখন দিতে চাচ্ছেনা, এরা দুইজনও ছাড়বেনা , বিক্রী করতে হবেই।

আমি বললাম, 'ছেড়ে দেন ভাই , ছোট ছেলে, কস্ট পাচ্ছে। ' এদের কোন বিকার নেই, আমার দিকে তাকালনা পর্যন্ত। এগিয়ে চলল। পাশ দিয়ে চলে যাওয়া কোন কোন ভদ্রলোক বলছিলেন, ঠিকিই আছে এইগুলো বেশী বাইরা গেছে। আমার দোকানদার ছেলেটা বয়সে পঁচিশ ছাব্বিশ হবে , সে দেখছিল সবকিছু এতোক্ষণ ।

তার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সে আটকালো, কি হইছে ভাই এরে এইভাবে ধরছেন ক্যা? -তুমার কি? এ কি তুমার লোক? - হ আমার লোক। এখন কি হইছে? (নিশ্চিত জানি তার লোক নয় ছেলেটা) -সে এই বেলটা একবার দাম বলেছে, এখন বলছে বিক্রি করবেনা। - তয় কি হইছে? ওর ইচ্ছা হইছে এখন বেচবে না, ছাড়েন ওরে। ছাড়েন। ঐ তুই এই দিকে আয়।

ছেলেটার কথায় জোড় ছিল, সেই সংগে সে ছোট ছেলেটাকে টেনে নিজের দিকে নিয়ে নিল। লোক দুইটা ছেড়ে দিতে বাধ্য হল। বড় ছেলেটা তখন গজরাচ্ছে ,গরীব হইছে বইলাই মারতে হইব? তুই এই জায়গা দাঁড়া। লোক দুইজন সরে গেল সেখান থেকে। আমিও আমার ঝকঝকে বরইগুলো নিয়ে সরে এলাম এই শ্রেনী বিদ্বেষ অথবা শ্রেনীপ্রেমের এক নীরব সাক্ষী হয়ে।

ভাবছিলাম নীরবে এই যে বিভেদ তৈরী হচ্ছে সমাজে যার প্রভাব হয়ত একদিন ভয়ংকর রূপে দেখা দেবে। কিছু লক্ষণ কি এখনও দেখা যায় না? কোন ধরনের গন্ডগোল শুরু হলেই গাড়ি ভাংগার উৎসব শুরু হয় ঢাকায়। খেয়াল করে দেখবেন একদল টোকাই শ্রেনীর লোকই বিপুল উৎসাহে গাড়ি ভাংচুরে এগিয়ে আসে, মনের আনন্দে ভাংগে গাড়িগুলো। সে জানে যে এই সমাজ ব্যবাস্থায় এই গাড়ীর মালিক সে কোনদিন হতে পারবেনা, তা-ই হয়ত সে মনের যত ঘৃনা গাড়িগুলোর উপর তা চরম উৎসাহ নিয়ে ঝেরে দেয়। দেশের আইন শৃংখলা যদি কোনদিন কোন কারনে ভেংগে পড়ে (কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা অন্যকারনে) তখন এই বন্চিত মানুষগুলো তাদের বন্চনা নিয়ে ভয়ংকর রূপধারন যে করবে না কে বলতে পারে?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।