আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরুষের ১০টি স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং করনীয়.................

ভালকে সমর্থন এবং খারাপকে বর্জন করতে শিখুন ।

পুরুষের স্বাস্থ্যের যে বড় ঝুঁকি রয়েছে, এগুলোর সবই প্রতিরোধ করা যায়। দীর্ঘ, সুস্থ জীবনের জন্য জানা চাই: মাত্র ১০টি স্বাস্থ্যঝুঁকি সামলালেই হলো। বিখ্যাত সংস্থা সিডিসি এবং আরও কয়েকটি স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান থেকে জানা গেল। ১. হূদরোগ পুরুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রধান ঝুঁকি তো বটেই।

আর স্বাস্থ্যকর জীবন পছন্দ মানলে হূদস্বাস্থ্য ভালো থাকবে অবশ্যই।  ধূমপান করা যাবে না। তামাক, জর্দা, গুল চিবানো চলবে না। কেউ ধূমপান যদি করে, তার পাশে থাকা যাবে না। বারণ করতে ব্যর্থ হলে দূরে সরে যেতে হবে।

 স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। প্রচুর শাকসবজি, টাটকা ফল, গোটা শস্যদানা, আঁশ ও মাছ। যেসব খাবারে চর্বি বেশি, নুন বেশি সেসব খাবার বর্জন করা ভালো।  রক্তে যদি থাকে উঁচুমান কোলেস্টেরল, থাকে যদি উচ্চরক্তচাপ তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা নিতে হবে।  প্রতিদিন জীবনযাপনের অংশ হবে শরীরচর্চা।

 স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে হবে।  মদ্যপান করে থাকলে বর্জন করতে হবে।  ডায়াবেটিস যদি থাকে, তাহলে রক্তের সুগার মান বজায় রাখতে হবে।  মানসিক চাপকে মোকাবিলা করতে হবে। ২. ক্যানসার পুরুষের মধ্যে ক্যানসারের কারণে যাদের মৃত্যু হয়, শীর্ষে রয়েছে ফুসফুসের ক্যানসার।

আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির অভিমত: এর কারণ হলো ধূমপান। এরপর রয়েছে প্রোস্টেট ক্যানসার ও কোলেস্টেরল ক্যানসার। ক্যানসার প্রতিরোধ করতে হলে—  ধূমপান করা যাবে না। তামাকপাতা, জর্দা, গুল চিবানো যাবে না।  পাশে কেউ ধূমপান করলে দূরে সরে যেতে হবে।

 দৈনন্দিন জীবনে শরীরচর্চা থাকতেই হবে।  স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে হবে।  ফল ও শাকসবজিসমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর আহার। এড়িয়ে যেতে হবে চর্বিবহুল খাবার।  কড়া রোদে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক নয়।

ছাতা ও মাথাল ব্যবহার, সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।  মদ্যপান বর্জন করতে হবে।  নিয়মিত ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ও সাহায্য নিতে হবে।  ক্যানসার জনক বস্তু অর্থাৎ কার্সিনোজেন যেমন, রেড়ন, এসবেসটস বিকিরণ ও বায়ুদূষণের মুখোমুখি যাতে না হতে হয়, সে রকম ব্যবস্থা করা। ৩. আঘাত সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল সিডিসির মত অনুযায়ী পুরুষের মধ্যে মারাত্মক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো, মোটরগাড়ি দুর্ঘটনা।

ভয়ানক দুর্ঘটনা এড়াতে হলে—  গাড়িতে সিটবেল্ট পরতে হবে।  গাড়ি চালানোর সময় গতিসীমা মেনে চলা উচিত।  মদ বা অন্য কোনো নেশা করে গাড়ি চালানো উচিত নয়।  ঘুম ঘুম চোখে গাড়ি চালানো ঠিক নয়। মারাত্মক দুর্ঘটনার অন্যান্য বড় কারণ হলো, পতন, পিছলে পড়ে যাওয়া, বিষক্রিয়া।

বায়ু চলাচল হয় এমন স্থানে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা উচিত, স্নানঘরে পিছলে যায় না এমন ম্যাট ব্যবহার করা উচিত। ৪. স্ট্রোক স্ট্রোকের কিছু ঝুঁক আছে, যা পরিবর্তন করা যায় না যেমন, পারিবারিক ইতিহাস, বয়স ও গোত্র। তবে আরও কিছু ঝুঁকি আছে যেগুলো বেশ বদলানো যায়।  ধূমপান করা ঠিক নয়।  রক্তচাপ বেশি হলে বা রক্তে কোলেস্টেরল মান বেশি থাকলে চিকিৎসকের চিকিৎসা ও পরামর্শ মেনে চলা উচিত।

 খাবারে যদদূর সম্ভব স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কম থাকা ভালো। ট্রান্সফ্যাট একেবারে বাদ দিলেই মঙ্গল।  স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা উচিত।  প্রতিদিনের দিন যাপনে ব্যায়াম অবশ্যই থাকা উচিত।  ডায়াবেটিস যদি থাকে, তাহলে রক্তের সুগার যেন থাকে নিয়ন্ত্রণে।

 মদ্যপান করে থাকলে বর্জন করা উচিত। ৫. সিওপিডি শ্বাসযন্ত্রের ক্রনিক রোগ যেমন ব্রংকাইটস এবং এমফাইসেমা-এদের বলে সিওপিডি। পুরো মনে করলে দাঁড়ায় কুনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ। এ রোগ ঠেকাতে হলে—  ধূমপান কখনই নয়। কেউ ধূমপান করলে পাশে, সে ধোঁয়াও গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

 রাসায়নিক বস্তু এবং বায়ু দূষণের মুখোমুখি যত কম হওয়া যায়, ততই মঙ্গল। ৬. টাইপ ২ ডায়াবেটিস সবচেয়ে সচরাচর ডায়াবেটিস টাইপ ২ ডায়াবেটিস রক্তে বেড়ে যায় সুগার। একে নিয়ন্ত্রণ না করলে হয় নানা রকমের জটিলতা, হূদরোগ, অন্ধত্ব, স্নায়ু রোগ, কিডনির রোগ। একে প্রতিরোধ করতে হলে—  শরীরে বেশি ওজন থাকলে বাড়তি ওজন ঝরাতে হবে।  ফল, শাকসবজি ও কম চর্বি খাবারে সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।

 দৈনন্দিন জীবনযাপনে থাকবে অবশ্যই ব্যায়াম। ৭. ফ্লু ইনফ্লুয়েঞ্জা হলো সচরাচর একটি ভাইরাস সংক্রমণ। সুস্থ শরীরের মানুষের জন্য ফ্লু এত গুরুতর নয় বটে, তবে ফ্লুর জটিলতা মারাত্মক হতে পারে, বিশেষ করে যাদের দেহ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বা যাদের ক্রনিক রোগ রয়েছে। ফ্লু থেকে রক্ষা পেতে হলে বছরে একবার ফ্লুর টিকা নিতে হবে। ৮. আত্মহত্যার মতো দুর্ঘটনা পুরুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে বড় একটি হলো আত্মহত্যা।

অনেক দেশে, সমাজে পুরুষের মধ্যে আত্মহত্যার কারণ হলো বিষণ্ন্নতা। মন বিষণ্ন মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। চিকিৎসা তো রয়েছেই। নিজের সর্বনাশ করা কেন? যতই প্রতিকূল অবস্থাই হোক, যত বিপদই হোক, একে অতিক্রম করাই তো মানুষের কাজ। ৯. কিডনির রোগ ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপের প্রথম জটিলতা হলো কিডনি বিকল হওয়া।

ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপ থাকলে চিকিৎসকের চিকিৎসা ও পরামর্শ নিতে হবে।  স্বাস্থ্যকর আহার। নুন কম খেতে হবে।  প্রতিদিন ব্যায়াম  ওজন বেশি থাকলে ওজন ঝরানো।  ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ।

১০. আলঝাইমারস রোগ এই রোগ প্রতিরোধ করার কোনো প্রমাণিত উপায় নেই। তবে এসব পদক্ষেপ নেওয়া যায়—  হূদযন্ত্রের যত্ন নেওয়া ভালো। উচ্চরক্তচাপ থাকলে হূদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস উঁচুমান কোলেস্টেরল থাকলে আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি বাড়ে।  মাথায় যাতে আঘাত না লাগে, দেখা উচিত। মাথায় আঘাত লাগার সঙ্গে ভবিষ্যতে আলঝাইমার রোগ হওয়ার একটি সম্পর্ক আছে, বলেন অনেকে।

 স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা উচিত।  প্রতিদিন ব্যায়াম।  ধূমপান বর্জন।  মদ্যপান বর্জন।  সামাজিক মেলামেশা চালিয়ে যান।

 মানসিক ফিটনেস বজায় রাখতে হবে। মগজ খেলানোর জন্য চর্চা, ব্যায়াম। নতুন জিনিস শেখার চেষ্টা করা। শেষ কথা স্বাস্থ্যের ঝুঁকিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। ঝুঁকিগুলোকে মনে হবে ভয়ের কিছু, তবে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই, বরং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য যা কিছু দরকার করা উচিত।

স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, দৈহিকভাবে সক্রিয় থাকা, ধূমপান করে থাকলে ছেড়ে দেওয়া, নিয়মিত চেকআপ এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম ও চলাফেরায় সতর্ক থাকা, সবই করা ভালো। প্রতিরোধমূলক এসব কাজকর্ম চালিয়ে গেলে দীর্ঘ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা। সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৫, ২০১০


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।