আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্রাউন লেডি


যে ছবিটি দেখা যাচ্ছে,সেটি এ পর্যন্ত তোলা সবচেয়ে আলোচিত ভৌতিক ছবি। ভূতে অবিশ্বাসীদের বহুদিনের বিশ্বাস অনেকটাই নাড়িয়ে দিয়েছে এই ছবিটি। এ পর্যন্ত বহুবার পত্রপত্রিকায় ,নিবন্ধে ছবিটি ভূতের অস্তিত্বে পক্ষে প্রমান হিসেবে ব্যবহারিত হয়েছে ছবিটি । তো.. ছবিটি কার ?? ছবির এই অশরীরী মানবী, যিনি 'ব্রাউন লেডি' নামে পরিচিত [যেহেতু সে বাদামী পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখা দিত] বলা হয় তিনি হলেন Dorothy Walpole ; ব্রিটেনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী Sir Robert Walpole এর বোন। 'ডরোথি ছিলেন Charles Townshend [ চার্লস ছিলেন Raynham এর ২য় Viscount] এর ২য় স্ত্রী।

চার্লস ডরোথির বাবার অভিভাবকত্বে বড় হন। একসময় তিনি ডরোথিকে ভালবেসে ফেলেন এবং তাকে বিয়ে করতে চান। কিন্তু ডরোথির বাবার এই বিয়েতে মত ছিলনা কারন তার ধারনা ছিল তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বিয়েটিকে "অভিভাবকত্বের প্রভাবে কন্যার সৌভাগ্য আদায়" হিসেবে দেখবে। শেষে চার্লস Baron Pelham এর কন্যাকে বিয়ে করেন। ১৭১১ সালে তার পত্নীবিয়োগ হয় এবং এরপর তিনি ডরোথিকে বিয়ে করেন।

বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন লর্ড ওয়ার্টনের সাথে ডরোথির পূর্ব প্রণয়ের কথা। চার্লস ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে রেনহাম হলের এক কামরায় তাকে আটকে রাখেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ডরোথি সেখানেই ছিলেন। নথিপত্রের হিসেবে ১৭১৬ সালের ২৯ শে মার্চ গুটিবসন্তে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু লোকমুখে প্রচলিত যে সিড়ি থেকে পড়ে যাওয়ায় অথবা ধাক্কা দিয়ে ফেলার কারনে তার মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ পরেই রেনহাম হলে ডরোথির ভূত দেখা দিতে শুরু করে......... উনিশ শতকের শুরুতে কিং জর্জ IV রেনহাম হলে অবস্থানকালে একরাতে ব্রাউন লেডিকে দেখতে পান। হঠাৎ মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে তিনি দেখেন যে তার বিছানার পাশে বাদামি পোশাক পরিহিতা এলোমেলো চুলের এল মহিলা দাড়িয়ে আছে। এ ঘটনার পর তিনি আর রেনহাম হালে অবস্থান করেননি। এর কয়েক বছর পর বিখ্যাত সাহিত্যিক Captain Frederick Marryat (Mr Midshipman Easy এর লেখক) ও তার দুই বন্ধু আবার ব্রাউন লেডিকে দেখেন। Marryat ব্রাউন লেডির ঘটনা জানতেন।

কিন্তু সবকিছুকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে তিনি সেই কামরাটিতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন যেখানে ব্রাউন লেডির আনাগোনা বেশি ছিল। কামরায় অবস্থানের এক পর্যায়ে তিনি তার দুই বন্ধুর খো‍‌‍জে কামরা থেকে বের হন। যখন তিনি তার বন্ধুদের নিয়ে করিডোর ধরে ফিরে আসছিলেন তখন তিনি দেখেন সিড়ি বেয়ে এক ছায়ামূর্তি তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ছায়ামূর্তিটির হাতে একটি লন্ঠন এবং তার পদচারনায় কোন শব্দ নেই। তিনি ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে দরজার পিছনে আশ্রয় নেন।

ছায়ামূর্তিটি তাদের পাশ কাটিয়ে গেলে তিনি তার হাতের পিস্তলটি দিয়ে ছায়ামূর্তির দিকে গুলি করেন ,কিন্তু গুলি তাকে অতিক্রম করে চলে যায় এবং হঠাৎ সেটি অদৃশ্য হয়ে যায়। Marryat এর ভাষ্যমতে ছায়ামূর্তিটি তাদের দিকে তাকিয়ে পৈশাচিক ভঙ্গিতে হাসছিল। ১৮৩৫ সালে Colonel Loftus ব্রাউন লেডিকে দেখতে পান। কর্নেল বড়দিনের ছুটি কাটাতে রেনহাম হলে এসেছিলেন। একরাতে তিনি ও তার বন্ধু হকিন্স তাস খেলা শেষে কামরায় ফেরার জন্য যখন সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছিলেন,তখন তিনি করিডরের দরজায় বাদামি পোশাক পরনে এক মহিলা দাড়িয়ে থাকতে দেখেন।

কর্নেল তাকে আমন্ত্রিত অতিথিদের একজন হিসেবে চিহ্নিত করতে পারলেন না। তিনি যখন কথা বলার জন্য মহিলাটির দিকে এগুচ্ছেন তখন রহস্যজনক ভাবে মহিলাটি উধাও হয়ে যায়। এক সপ্তাহ পর আবার তিনি সেই মহিলার মুখোমুখি হন। তবে এবার অনেক কাছাকাছি। সেই বাদামি পোশাক,সেই অভিজাত সাজসজ্জা...কিন্তু... তার কোটরের কোন চোখ ছিলনা... এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনে ' 'ব্রাউন লেডি' কে দেখেছে।

তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটে ১৯৩৫ সালের ১৯ শে সেপ্টেম্বর। Country Life ম্যাগাজিন এর দুই ফটোগ্রাফার Captain Provand এবং Indre Shira ,কিছু ছবি তুলতে রেনহাম হল এ গিয়েছিলেন। Captain Provand যখন রেনহাম হলের পুরনো ওক কাঠের সিড়ির ছবি তুলছিলেনন তখন তার সহকারী Indre Shira সিড়ির দিকে নির্দেশ করে বলেন ধোয়াটে 'কিছু একটা'' যেন সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসেছে। Indre তাকে দ্রুত একটি ছবি নিতে বলেন। Provand ছবি তুললেও ভিউ ফাইন্ডারে অশরীরী কোন কিছুই দেখতে পাননি।

পরবর্তীতে ছবিটির নেগেটিভ ডেভেলপ করা হলে অশরীরী ছায়ামূর্তির উপস্থিতি ধরা পরে। উপরের ছবিটিই সেই বিখ্যাত ছবি এবং এখন পর্যন্ত তোলা ব্রাউন লেডির একমাত্র ছবি। এ পর্যন্ত বহু বিশেষজ্ঞ ছবিটিকে পরীক্ষা করলেও কেউই এতে কোন কারসাজি খুজে পাননি। ১৯৩৬ সালের ১৬ ই ডিসেম্বের প্রকাশিত Country Life এর সংখ্যায় ছবিটি নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটা সন্দেহাতীত যে রেনহাম হল এ ব্রাউন লেডি কে অনেকেই দেখেছেন...কিন্তু এই ছবিটি সত্য কি মিথ্যা এই বিচারের ভার সম্পূর্ন আপনার ..............................।

। Dorothy Walpole
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.