আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্দী সত্তা

ক্লান্ত পথিক

ছোটবেলা থেকেই রাজধানী ঢাকাতে আছি। আমার এই অর্ধ হাফ শতক বয়সে অনেক পরিবর্তন দেখেছি ঢাকায়। চোখের সামনে ভিসিআর থেকে হোম থিয়েটার আসলো, চিঠি থেকে আসলো ইমেইল। আর মোবাইলের কথা না হয় বাদই দিলাম। বিশ্ব প্রযুক্তির সাথে আমরা সমান তালে না চললেও খুব একটা পিছিয়ে নেই।

কত নতুন নতুন শব্দ শিখলাম এবং প্রতিনিয়ত শিখছি। ওয়াইম্যাক্স, ব্লুরে ডিস্ক, টাচস্ক্রিন, ইত্যাদি ইত্যাদি কতই না শব্দ ! মজার ব্যপার হলো বাঙ্গালীরা এইসব খুব সহজে গ্রহন করেছে। অন্ততঃ এগুলো নিয়ে নোংরা রাজনীতি হয়নি। তবে কেন জানি শংকিত হই। আমরা যতই তথাকথিত আধুনিক হচ্ছি ততই মানবিক বোধগুলো নিজেরাই ধ্বংস করছি।

পাশ্চাত্য যেখানে প্রাচ্যের হাজার বছরের আচার, সংস্কৃতি সাদরে গ্রহন করছে, প্রাচ্য সেখানে পাশ্চাত্যের ঘুণে ধরা অস্থির কায়দা কানুন গর্বের সাথে অনুকরণ করছে। বোকা সমাজকে কে বোঝাবে যে বেগম রোকেয়া, মাওলানা ভাসানী, প্রমূখ এই সময়ের অনেক অতি আধুনিক মানুষের চেয়েও হাজার হাজার গুনে আধুনিক ছিলেন। বলাই বাহুল্য আধুনিকতার সংজ্ঞা তাঁরাই আমাদের দিয়ে গেছেন। আধুনিকতার যে সংজ্ঞা গত এক দশক ধরে চলছে তা একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় কতটা শেকড়হীন, কতটা বিবেকহীন, কতটা হিংস্র। সাফল্যের চূড়া ছোয়ার ইদুর দৌড়ে আমরা নিজেদের প্রতিনিয়ত নিচে নামাচ্ছি।

ব্যর্থ আধুনিকতার সফল প্রচেষ্টায় আমাদের সঙ্গী হয় মানসিক অস্থিরতা, হতাশা। আমরা নিজেদের শেকড় এমনভাবে উপড়ে ফেলেছি যে তাকে আর আগের জায়গায় বসানো যাবে না, আবার অতি আধুনিকতার জীর্ণ সংজ্ঞাকে আমরা আমাদের ঐতিহ্যমন্ডিত সমাজে পুরোপুরি জায়গা দিতে পারছি না(জায়গা না দিতে পারার জন্য আমি গর্বিত)। ফলে আমাদের পরিচয় দিন দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। আমরা বিষয়টাকে স্বীকার করি না ঠিকই কিন্তু আমাদের অবচেতন মন এখনও পচে যায়নি বলেই ব্যাপারটা অনুভব করে। আমাদের মাঝে এই অসংগতি এবং সত্তার টানাপোড়েনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে মূল্যবোধের অবক্ষয় দিয়ে।

যেখানে অপরাধ করাটা ফ্যাশন সেখানে মূল্যবোধের স্থান কেবলমাত্র জাদুঘরেই হতে পারে। আর ইতিহাসের আধার এই জাদুঘর শুধু দর্শনীয়-ই হয়ে থাকবে। কেননা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবার বিষয় এই যে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।