আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কারো পিচ্চিবেলার ডায়রি



১৯৯৯ ১৭ মার্চ বুধবার আজ স্কুল যাইনি, ভান করলাম মাথা ঘুরে পড়ে গেছি, আসলে কিন্তু ঠিকই ছিলাম। আমার মাঝে মাঝে এমন হয়। স্কুলের সময়টা সব সময় অনেক লম্বা মনে হয়। আব্বু বকা দেয়নি, কিন্তু আম্মুতো পারলে খেয়ে ফেলে এজন্য। আমি যখন বড় হব, তখন মনে হয় আমার অফিস যেতে ভালোলাগবেনা।

আবার যখন বুড়ো হব, তখন বাসায় থাকতে ভালোলাগবেনা। আমার আসলে কিছুই ভাললাগেনা, শুধু ঘুমাতে ভালোলাগে। আবার কমিক্স পড়তেও ভালোলাগে। আমি টিভি দেখিনা বেশি। টিভিতে ভাইয়া ইংলিশ মুভি দেখে।

ইংলিশ মুভি আমি বুঝিনা। আমিও মনে হয় বড় হলে ইংলিশ মুভি দেখবো সারাক্ষন। তখন যদি পিচ্চি কেউ কার্টুন দেখতে চায়, আমি দেখতে দিব। আমি ভালো হতে চাই, আমি হিংসুটে হতে চাইনা। কিন্তু আমার অনেক হিংসা, সবাইকে এটা বুঝতে দেইনা।

আমার ফ্রেন্ড কেউ যদি একটা নতুন কলম ও কেনে, আমার অনেক লোভ হয়, হিংসাও হয়। আমাকে ইচ্ছামত সব দেয়া হয়না। আমি টিফিনে টাকা পাইনা, আম্মু রুটি আর ভাজি দিয়ে দেয় প্রায় প্রতিদিন, আমার অনেক কষ্ট হয় কাউকে ভালো খেতে দেখলে, আমার টিফিন আমি লুকিয়ে খাই। আমার আব্বুর অনেক টাকা নেই, আম্মু তাই অনেক হিসেব করে চলে। আমরা যদি অনেক বড়লোক হতাম, তাহলে আমাদের একটা গাড়ী থাকতো।

আব্বুর অফিসের গাড়ীতে মাঝে মাঝে যখন চরি, তখন নিজেকে অন্যরকম লাগে। আমরাও একদিন বড়লোক হব, ভাইয়া ভালো ছাত্র, ও অনেক টাকা আনবে চাকরী করে। আজকেও দুপুরে লাউ আর কুচা চিংড়ী, সাথে ডাল খেয়েছি। আরো অনেকদিন এটাই চলবে। আমরা শুধু শুক্রবারে মাংস খাই।

মাংস বেশী নেয়া নিয়ে আমার সাথে ভাইয়ার ঝগড়া হয়। আম্মু সব সময় কম খায়, বাসি খাবারও খায়। আমি খেতে পারিনা। আমি আম্মুর মত বড় হলেও কখনো পচা খাবার খাবনা। একদিন যখন অনেক বড় হব, তখন আমি আর টাকা কুড়িয়ে পেলে নিজে রেখে দিবনা।

মসজিদে দিয়ে দিব। আমি কয়দিন আগে ৫০ টাকা কুড়িয়ে পেয়েছিলাম, আম্মুকে বলেছিলাম ফকিরকে দিয়ে দিয়েছি, কিন্তু আসলে টাকাটা আমি রেখে দিয়েছি। প্রতিবার যখন মামারা আসে, তখন ১০০ টাকা করে আমাদের দেয়, আম্মু নিয়ে নেয়, অগুলা আর পাইনা। ভাইয়ারটাও নিয়ে নেয়, ভাইয়া অনেক ঝগড়া করে, আমার কষ্ট লাগে। আম্মু অনেক বকাবকি করে, পরে আবার লুকিয়ে কাঁদে, আমি টের পাই।

আমি জানি আম্মু আমাদের অনেক ভালোবাসে। আমরা যদি বড় হয়ে অনেক টাকা পাই, তাহলে আম্মু অনেক খুশি হবে। বিকেলে যখন আব্বু অফিস থেকে বাসায় আসে, তখন আব্বু সাথে করে বেধে কিছু না কিছু নিয়ে আসে প্রায়ই। ব্যাগ এ করে না এনে মাঝে মাঝে হাতে অনেক কষ্ট করে ক্যানো আনে জানিনা। আমরা কি আনলো দেখতে পাগল হয়ে যাই।

যদি ২-৩ টা শশাও থাকে, তাও আমাদের অনেক আনন্দ হয়। আব্বু মাঝে মাঝে আমাদের ৫-১০ টাকা দেয়, আম্মু ১ টা টাকাও দেয়না। আম্মু অনেক হিসেবী। একবার ওই টাকা পেলে আমার অনেকদিন মন ভালো থাকে। ঈদের দিন আমাকে ২০ তাকা দেয় আব্বু।

ওই টাকাই অনেক দিন রেখে দেই। আমার নানা ভাই আমাদের অনেক প্রিয়। কখন স্কুটারের আওয়াজ শুনলে আমরা জানালা খুলে সাথে সাথে বাইরে তাকাই নানাভাই আসলো নাকি দেখতে। ফুপু আসলেও অনেক ভালোলাগে। ফুপু আমাদের সব সময় কিছু না কিছু কিনে দেয়।

যতদিন থাকে আমাদের মন অনেক খুশী থাকে। ফুপু অনেক শুকনা। আমাদের চেয়েও বেশী লাফালাফি করতে পারে। আমরা দাদুবাড়ী যাই বছরে ১ বার। পুকুরে সাতার কাটি, বরশী দিয়ে মাছ ধরি।

আব্বু অনেক ভালো মাছ ধরে, আমরা পারিনা। আমরা ওখানে গিয়ে হুক্কার মত একটা কি জানি খেয়েছি অনেক। অনেক কাশি হয়। তিতা তিতা লাগে, তারপরেও অনেক মজা লাগে। মেলার সময় তো সবচেয়ে মজা হয়।

বন্যার সময়ও হয়। আমার পানি দেখতে ভালোলাগে। আমার আসলে সবই ভালোলাগে। আগে মিথ্যা বলেছি। খারাপ খুব কম জিনিসই লাগে।

আমরা যখন দাদুবাড়িতে বেরাতে যাই, তখন গ্রামের পিচ্চিরা আমাদের হা করে দেখে। ওরা আমাদের থেকে কত গরিব। শুধু ঢাকায় থাকি তাতেই ওরা আমাদের দেখতে আসে। আর অল্পতেই মজা পায়। আমারও যদি এত অল্পতেই সব ভাললাগত তাহলে ভাল হত।

এখন শেষ। পরে আবার লিখব। বাই বাই দানটু মানটু ডাইরি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.