আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রযুক্তিনির্ভর ভালবাসা এবং কিছু অপ্রিয় সত্যি কথা

https://www.facebook.com/arshinogorer.porshi

ভালবাসা বলতে প্রথমেই চলে আসে রোমিও-জুলিয়েটের কথা। কিন্তু তাদের সময়ের সেই প্রেমের দিন আজ আর নেই। প্রযুক্তির কল্যাণে পুরোটাই বদলে গেছে। দূর-দূরানত্ম ছুটে গিয়ে চিঠি দেয়ার দিনটিও আজ শেষ হয়েছে। প্রযুক্তি আজ ভালবাসার চেহারাই বদলে দিয়েছে।

কথা হচ্ছে তিশার সঙ্গে, কিরে তোর প্রিয় মানুষটি তো থাকে অস্ট্রেলিয়া! তোর খারাপ লাগে না? সে উত্তর দিল তাতে কি? প্রতিমুহূর্তেই তো তার সঙ্গে কথা হচ্ছে মোবাইলে, চ্যাট হচ্ছে ফেসবুকে, কিংবা দেখতে ইচ্ছা করলে আশ্রয় নিচ্ছি স্কাইপি ভিডিও চ্যাটের। তারপরেও কেন দূরে থাকা? কিন্তু কি বদলে দিয়েছে সেটাই এখনকার সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ভালবাসার কথা মুখে আসতেই যেটির কথা প্রথম মনে পড়ে সেটা হলো মোবাইল ফোনের কথা। ভালবাসাতে মোবাইল নামক প্রযুক্তির কোন বিকল্পই নেই। কথা বলতে বলতে হারিয়ে যাওয়া এ যেন কেবল মোবাইলেই সম্ভব।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা মারার মাধ্যমে প্রিয় মানুষটির কাছে রাখার মতো প্রযুক্তি মনে হয় শুধু মোবাইল ফোনেরই আছে। দূরত্ব যতই হোক কাছে থাকুন। এটাই মোবাইলের অবদান। আর মোবাইল অপারেটরগুলোরই কিন্তু এ নিয়ে চেষ্টার অনত্ম নেই। কি করে আরও কাছে আনা যায় প্রিয় মানুষটিকে এ নিয়েই চলতে থাকে নিত্য নতুন অফার।

মোবাইলের আর এক ধরনের প্রযুক্তি হলো এস.এম.এস। এরও কিন্তু অবদান কম নয় ভালবাসাতে। শুভেচ্ছা বিনিময় করতে কিংবা না বলা কথাটি কেবল এস.এম.এসেই প্রকাশ করা সম্ভব। আপনি বলেছেন মিটিংয়ে, তাই বলে আপনার প্রিয় মানুষটিকে ভুলে থাকবেন? তা তো সম্ভব নয়। পাঠিয়ে দিন না একটি এস.এম.এস.।

এই এস.এম.এস. নামক প্রযুক্তিটাই হয়ত কিছুটা হলেও ধরে রাখতে সৰম হয়েছে চিঠিপত্র বিনিময়ের সেই অতুলনীয় আবেদনময়ী ধারাটি। সম্পর্কের সঙ্গে ফেসবুকও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সম্পর্কের নতুন মাত্রা ফেসবুক। চ্যাটিং করতে করতে মনের কথাটি বলার উপযুক্ত স্থানটি হলো ফেসবুক। সম্পর্কের বিভিন্ন ধাপ অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য ফেসবুকের রয়েছে অন্যরকম ভাষা।

সম্পর্ক শুরম্নতে এটি হয় "ইটস কমপিস্নকেটেড"। ধীরে ধীরে সেটা পরিণত হয় "ইন এ রিলেশনশিপ"-এ। সত্যিই ভালবাসাতে ফেসবুকের জুড়ি নেই। প্রত্যেক মুহূর্তের অবস্থা জানার জন্য ফেসবুকে রয়েছে ওয়াল। এই ওয়ালই প্রকাশ করে কার এখন অবস্থা কেমন।

ডিজিটাল কফি হাউজ বলতে যেন আজ ফেসবুককেই বোঝায়। জয় একা বসে বসে মোবাইল নাড়াচাড়া করছে আর হাসছে। জিজ্ঞাসা করা হলো কিরে হাসছিস ক্যান? সে উত্তর দিল আমি তো একা নইরে, তোদের ভাবিও তো আছে, মিগে চ্যাটিং করছি ওর সঙ্গে। ভালবাসার আর একটি নতুন মাত্রা মিগ৩৩। এখান হতে অনেকেরই শুরু হয় ভালবাসা।

আড্ডা দেয়ার মতো স্থান হলো মিগ৩৩। এখানে বিভিন্ন রুম থাকে। যেখানে সবাই জমা হয় এবং শুরু হয় আড্ডা। কিন্তু আড্ডার ফলশ্রুতিতে কখন যে একটা নতুন সম্পর্কের জন্ম নেবে বিধাতা বৈ কেউ মনে হয় সে কথা জানে না। মিগএ নতুন কারও সঙ্গে চ্যাট করার শুরুটা অনেকের কাছেই আনন্দদায়ক।

শুরু হয় অঝখ নামক প্রশ্ন দিয়ে। স্বাভাবিকভাবে এটা দেখে বোঝার কোন উপায় নেই। কিন্তু এটা দিয়ে বোঝার অমব ঝবী খড়পধঃরড়হ? হয়ত এটি প্রকাশ করছে তোমার বয়স যদি আমার কাছাকাছি হয়, তুমি যদি বিপরীত সেঙ্রে হও এবং তোমার বাসা যদি হয় আমার বাসার আশপাশে তবেই মনে হয় তুমি পাস করে গেছ ভালবাসার প্রথম ধাপে। তবে হয়ে যাক না ভালবাসার কথা চ্যাটিংয়ে। ই-মেইলে প্রেমের গতি কিছুটা কম।

কারণ এতে তাৎৰণিক কোন রিপস্নাই পাওয়া যায় না। তাই তো প্রেম গড়ে ওঠে ধীরে ধীরে। কিন্তু প্রিয়জন যদি দূরে থাকে তবে বেশি টাকা খরচ না করে মেইলে যোগাযোগ করলে দোষ কি? মেইল একটি তাৎক্ষণিক বার্তা না হলেও এটি কিন্তু চিঠির মতো আলাদা একটা অনুভূতি বহন করে। কখন আসবে মেইলের উত্তর। এর জন্য অপেৰাও কিন্তু কম মজার নয়।

ই-মেইলে রয়েছে ফাইল এ্যাটাস্ট করার ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে খুব সহজেই পাঠিয়ে দেয়া যেতে পারে কোন স্মৃতিময় ঘটনার ভিডিওফুটেজ অথবা ফটো। ইয়াহু মেসেঞ্জারও ভালবাসার পালায় পিছিয়ে নেই। চ্যাটিং করতে করতে মনের কথা বলার আর একটি স্থান হলো ইয়াহু মেসেঞ্জার। অনলাইন আড্ডা দেয়ার মতো সবারই প্রিয় স্থান হলো ইয়াহু মেসেঞ্জার।

এখানে চ্যাট করার জন্য বিভিন্ন রুম থাকে। যেখানে সবাই জমা হয় এবং শুরু হয় আড্ডাবাজি। যেন এটিই বর্তমান যুগের তরম্নণ প্রজন্মের ডিজিটাল টি-স্টল। স্কাইপি সম্পর্কের একটি নতুন মিডিয়া। মোবাইলে কথা বলা আর স্কাই পেতে কথা বলার মধ্যে মূলত কোন পার্থক্য নেই।

কিন্তু মেইন পার্থক্য হলো মোবাইলে কথা বলার জন্য প্রতি মিনিটে প্রচুর টাকা গুনতে হয়, কিন্তু স্কাইপিতে শুধু ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই হবে। এটা বলা চলে অতি আধুনিক প্রেম। যতই কথা বলুন আপনাকে কোন বিলই দিতে হবে না। শুধু একটি ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই হবে। স্কাইপের আর একটা সুবিধা হলো এতে ভিডিও চ্যাট করার ব্যবস্থা রয়েছে।

যার মাধ্যমে শুধু কথা বলা নয়। প্রিয় মানুষটিকে সম্পূর্ণ জীবন্ত দেখা যাবে। এবং তার আসে পাশের পরিবেশটিও উপলব্ধি করা যাবে খুব সহজভাবে। ভালবাসার কতই না মাত্রাই যোগ হয়েছে প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে। কিন্তু প্রশ্ন একটিই, ভালবাসার আস্থা, বিশ্বসত্মতা কি আগের মতো এখনও আছে, নাকি কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে।

ফেসবুকে চ্যাটিং হচ্ছে প্রিয়জনের সঙ্গে কিন্তু তার চ্যাটিং লিস্টে রয়েছে অনেকেই। শুধু হ্যালো বলতে বলতেই কখন যে মেয়েটি বা ছেলেটি জড়িয়ে যাচ্ছে নতুন একটি প্রেমে সেটি বলাইবাহুল্য। আবার মোবাইলেই রয়েছে একাধিক নম্বরে এফ.এন.এফ. করার ব্যবস্থা। মেয়ের এফ.এন.এফ. লিস্টে হয়ত শুধু ছেলেটিই রয়ছে কিন্তু ছেলেটির এফ.এন.এফ লিস্টে কি শুধু মেয়েটি একা না কারও রয়েছে একাধিক? কিংবা উল্টা ঘটনা। প্রযুক্তি শুধুই কল্যাণে সেদিনই বয়ে আনবে যেদিন আমাদের ভালবাসার মধ্যে ফিরে আসতে বিশ্বাসযোগ্যতা।

ডিজিটাল প্রযুক্তি কিন্তু আমাদের তাই শেখাচ্ছে। শুধু অথবা ১ হলো ডিজিটাল প্রযুক্তির ভিত্তি। এখানে কিন্তু ২ বা ৩ এর কোন স্থান নেই অর্থাৎ একজনের জন্য একজনই। আবার সবার মন মানসিকতা যখন ভালবাসার জন্যও ডিজিটালে পরিণত হবে তখন হয়ত সত্যিই একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।