আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ষাটের দশক থেকে বেলাল মোহাম্মদ সাদা পোশাকে

কোন প্রেক্ষাপটে বেলাল মোহাম্মদ শুভ্রবেশ ধরেছিলেন মৃত্যুর পর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন তার ঘনিষ্ঠজন শহীদজায়া মুশতারী শফী।
তিনি বলেন, ষাটের দশকের শুরুতে চট্টগ্রাম কলেজে পড়ার সময় একবার হুলিয়া নিয়ে মিরসরাইয়ের একটি খানকাহ শরীফে এক হুজুরের কাছে কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন বেলাল মোহাম্মদ।
“এরপর থেকেই বেলাল মোহাম্মদ সাদা ফতুয়া, সাদা লুঙ্গি ও চাদর পড়া শুরু করেন। ”
ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে জন্ম নেয়া বেলাল। ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম কমিটির প্রথম সদস্য ছিলেন তিনি।


১৯৩৬ সালে জন্ম নেয়া বেলাল মোহাম্মদের জীবনাবসান ঘটেছে মঙ্গলবার, যিনি মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কারে ভূষিত।
বেলাল মোহাম্মদ পাকিস্তান বেতারের চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ‘স্ক্রিপ্ট রাইটার’ হিসেবে কাজ করতেন। আর মুক্তিযুদ্ধের উষালগ্নেই কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন তিনি, যেখান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার হয়েছিল।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ বেতারের চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক হন বেলাল। একজন কর্মকর্তা হিসেবে তাকে প্যান্ট-শার্ট পড়তে বলা হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন বলে সহকর্মীরা জানান।


১৯৬৪ সালে বেতারে বেলাল মোহাম্মদের সঙ্গে কাজ শুরু করা মোহাম্মদ ফজল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেলাল ভাই খুবই সাধারণ জীবনযাপন করতেন। প্রমোশন দেয়ার পর উনাকে ড্রেস পরিবর্তন করতে বলা হয়েছিল। তিনি তখন চাকরি ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। ”
বেলাল মোহাম্মদের সঙ্গে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যোগাযোগ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “গত ১৮ জুলাই ঢাকায় উনার সঙ্গে সর্বশেষ দেখা হয়েছিল। শ্বেতশুভ্র মানুষটি কখনোই বুঝতে দেননি, তিনি অসুস্থ।


১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বেলাল মোহাম্মদ কাজ করেছেন চট্টগ্রাম বেতারে। চাকরিজীবনে চট্টগ্রাম ছাড়াও সিলেট, খুলনা ও ঢাকা বেতারে কাজ করেছেন। ঢাকা থেকেই উপ-আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবেই তিনি অবসর নেন।
একাত্তরের ২৬ মার্চ সকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালুর জন্য বেলাল মোহাম্মদ কালুরঘাট রওনা হয়েছিলেন বন্দর নগরীর এনায়েত বাজারের শফী লজ থেকে। সেখানে থাকতেন মুশতারী শফী, যিনি একাত্তরে হারিয়েছেন তার স্বামী ও ছোটভাইকে।


স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুশতারী শফী বলেন, বেলাল মোহাম্মদসহ অন্যান্যরা ২৫ মার্চ রাতেই তার বাসায় এসে উঠেছিলেন। ওই সময়েই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালুর কথা মাথায় আসে তার।
বেলাল মোহাম্মদের সঙ্গে ছিলেন আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, কাজী হাবিব উদ্দিন মনি, আবদুল্লাহ আল ফারুক ও রেজাউল করিম।
“২৬ মার্চ সকালে তারা কিছু একটা করার তাগিদ থেকেই বেরিয়ে যান এবং ওই দিন সন্ধ্যায় ৬টা ৪০ মিনিটে চালু হয় কালুরঘাটে (বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল সংলগ্ন) স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার এবং এতে প্রথম কণ্ঠ দেন আবুল কাশেম সন্দ্বীপ। ”
স্বাধীনতার ওই ঘোষণা নিয়ে বিস্তারিত তিন বছর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন বেলাল মোহাম্মদ।


একাত্তরের ৩০ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী বোমা মেরে বেতার কেন্দ্রটি গুঁড়িয়ে দেয়।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কাজের সাথে মুশতারী শফীও সম্পৃক্ত ছিলেন। একাত্তরের ৭ এপ্রিল মুশতারী শফীর স্বামী ডা. মোহাম্মদ শফী ও তার ছোটভাই খোন্দকার এহসানুল হককে পাকিস্তানি সৈন্যরা বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মুশতারী শফীর পরিবারের অন্যরা পরে মিরসরাই হয়ে ভারতের আগরতলায় চলে যান এবং সেখানে গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কার্যক্রমে যুক্ত হন।


“কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র পাকবাহিনী বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার পর সকলেই ভারতে গিয়ে পুনরায় তা চালু করেন। মে মাস থেকেই পুরোদমে এ কেন্দ্র চালু হয়। বেলাল মোহাম্মদ এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ”
“আগাগোড়া মানুষের কথা ভেবে যাওয়া এই মানুষটি সাধারণ জীবনযাপন করতেন। ”


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.