আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরের জন্ম থেকে সামলে.........

ইন্টারনেট মানেই মুক্তির স্বাদ,এক ক্লিকে গোটা বিশ্ব পুরে ফেলার আহবান- এমন একটা ধারণা কীভাবে যেন আমাদের মাথার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। সেই ইয়াহু চ্যাটরুমের আমল থেকে অর্কুট পেরিয়ে আজকের ফেসবুকের যুগ পর্যন্ত একটা অভ্যাসই যেন হয়ে গেছে ; আমরা বাস্তবের দুনিয়ায় এক জন, ইন্টারনেটে আর এক জন। সবার ঘরে বসত করে দুইজনা। যে আমি রোজ সকালে উঠে বাজার করে ঘেমো গন্ধওয়ালা আর পাঁচ জনের সঙ্গে গা-ঘষাঘষি করে ছয় নম্বর চেপে অফিসে এসে সারা দিন বিভিন্ন পাঁয়তারা কষে রাতে বাড়ি ফিরে শুকনো মরিচের সালুন খেয়ে অ্যান্টাসিডের খোঁজ করি, সেই আমি-র সঙ্গে ফেসবুক প্রোফাইলের আমি-র বিস্তর ফারাক। যে আমি বাজারে যায়, রাস্তায় হাঁটে, সে সতর্ক।

সে জানে, তার মধ্যবিত্ত কলজেয় ঠিক কতখানি জোর আছে। সে জানে, সে পরকীয়া করে সামলাতে পারবে না, বন্দুক হাতে বিপ্লব করতে পারবে না, এমনকী গোলাম আজমকে চারটে এলোমেলো গাল দেওয়ার পর জামাতের গুঁতোও হজম করতে পারবে না। সেই আমি তাই এই সব ঝামেলায় যায় না। সে বড় জোর খবরের কাগজ পড়তে পড়তে ফোঁত্ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, 'ধুসশালা, গুলি করে মারা উচিত ছিল'। এ দিকে মনের মধ্যে পরকীয়া ঘাই মারে, বিপ্লব স্লোগান দেয়, চারপাশের বেমক্কা অসভ্যতা দেখলে ঠাঁটিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করে ক্ষমতাবানদের গালে।

এত চাওয়া নিয়ে কোথায় যাই ? কেন, ইন্টারনেটে ? ইন্টারনেটে আমি প্রেমিক হতে পারি, চূড়ান্ত স্মার্ট হতে পারি, বিপ্লবী হতে পারি, প্রতিবাদী হতে তো পারি-ই। দেখেননি, প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে গুঁতো থেরাপির জন্য ফেসবুকে এন্তার পেজ খোলা হচ্ছে। হরেক রকম গুঁতো,হরেক রকম পেজ। বাহারী তার স্বাদ। টেষ্ট মেকারদের সংখ্যাটাও নেহায়েত কম নয়।

বাস্তবের আমি যা পারে না, বাস্তবের আমি-র যে সাহস হয় না, ইন্টারনেটের আমি সেই কাজগুলোই এমন অবলীলায় করে ফেলে কী করে? বাইরের ভিতু আমি-টা অনলাইন হলেই এমন অসমসাহসী হয়ে ওঠে কোন মন্ত্রবলে ? মন্ত্রটা সহজ। সেই ইন্টারনেটের আদি যুগ থেকে আমাদের মাথায় ঢুকে গিয়েছে, ইন্টারনেট আসলে অন্য দুনিয়া। তার সঙ্গে বাস্তবের কোনও যোগ নেই। ইন্টারনেটের আমি আর বাস্তবের আমি আলাদা। ইন্টারনেটের আমি যদি কিছু বলে, সেটা থেকে যাবে ইন্টারনেটের দুনিয়াতেই।

কিছু দেখলে,বড় জোর পর্দা ফুটো করে ঢুকে যেতে ইচ্ছা করবে। কিন্ত বাস্তবে তার কোনও অনুরণন শোনা যাবে না। জান্নাতুল মেওয়া কিংবা রেবতী পোদ্দারকে -কে আমি চিনি না। না-চেনাই স্বাভাবিক। তবে অনুমান করতে পারি, ২০-২১ বছরের এই দুটো মেয়ের কখনও এই সাহস হত না যে, ওরা জামাতের সমর্থকদের জমায়েতের মধ্যে দাঁড়িয়ে ‘সাইদির ফাঁসি চাই’ স্লোগান দিতে পারতো।

যতই সত্যি হোক, মুখ ফুটে কখনও বলত না,ওই লোকটাকে ফাঁসিতে না লটকে শাহবাগের তপ্ত লাভায় ছেড়ে দেয়াটাই হতো সুবিচার। জান্নাত বা রেবতী এই কথাগুলো বলত না, কারণ বাস্তবের জান্নাত বা রেবতীদের নিজেদের কলজে-র জোর জানা আছে। তারা জানে, জামাত-শিবিরের পোষা গরুদের সামনে তাদের কল্পতরুও নামে টুঁ শব্দটি করলেও কী কী হতে পারে। তারা এটাও জানে, সেই তাণ্ডব সামলানোর মতো জোর তাদের নেই। কিন্তু ফেসবুকের দেয়ালে লেখার সময় এত চিন্তা হয়নি।

সাইদিকে চাঁদে পাঠাতে এবং তার জবাবে আরেকপক্ষ তাকে নীল আর্মষ্ট্রংয়ের পাসে বসাতেও তিল পরিমান বেগ পায়নি। ওটা তো অন্য দুনিয়া, তাই না? না জান্নাত-রেবতী, ওটা অন্য দুনিয়া নয়। ফেসবুক-ট্যুইটার খুব মারাত্মক রকম এই দুনিয়ারই জিনিস। যে দুনিয়ায় স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি প্রকাশ্যে তার হিন্দু প্রতিবেশীর ঘরে আগুন দেয়, যে দুনিয়ায় পুলিশের হাতে চাইনিজ রাইফেল থাকতের কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে হয়,যে দুনিয়ায় কে সত্যি কে মিথ্যা তা বোঝার উপায় নেই। ফেসবুক-ট্যুইটার সেই দুনিয়ারই উপাদান।

আসলে আর কোনও দুনিয়া নেই। দুনিয়া একটাই। সেই দুনিয়ায় বাকস্বাধীনতা নামের কোনও বালাই নেই। সেই দুনিয়ায় তথ্য আইন নামে একটা বেভুল আইন আছে। সেই দুনিয়ায় ফেসবুকিয়ানরা ক্লিক মেরে যুদ্ধ করে,সেখান থেকে বেরিয়ে ফের আঁতাত করে।

পরের জন্ম থেকে সামলে, কেমন? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।