আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারীর স্বাধীনতা , ইসলাম ও বর্তমান পেক্ষাপট.

নাহিন

পুরুষ শাষিত সমাজে নারীদের স্বাধীনতা কতটুকু .......... নারীর স্বাধীনতা ও সমঅধিকার কি........... এই প্রসঙ্গে একটা কলাম পত্রিকায় পড়লাম তা হল আধুনিক যুগে নারীর স্বাধীনতা ও কর্মসংস্থান বিশ্বজুড়ে একটি আলোচিত বিষয়। নারীর স্বাধীনতা বলতে স্বেচ্ছাচারিতাকে বোঝায় না; বরং নারীর স্বাধীনতা হচ্ছে—নারীর বাকস্বাধীনতা, সিশক্ষা গ্রহণ ও সত্কর্মের স্বাধীনতা, ইজ্জত, সম্মান ও যাবতীয় অধিকার বজায় রেখে সুন্দর ও নিরাপদ জীবনযাপনের পূর্ণ নিশ্চয়তা। স্বাধীনতাহীন পুরুষ বা নারী কেউই তার সব অধিকার ভোগ করতে পারে না। অর্থাভাবে মানুষ পরমুখাপেক্ষী হয়, তার ধর্ম সঙ্কীর্ণ, বুদ্ধি দুর্বল এবং মানবতা বিনষ্ট হয়। ইসলাম ও তার নবী মানুষের স্বাধীনতা ও কর্মসংস্থানের প্রশ্নে ছিলেন অনুপম আদর্শ।

অমর্যাদা ও গ্লানির অতল গহ্বর থেকে তুলে ইসলাম নারীদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার উঁচু আসনে সমাসীন করেছেন। যার কারণেই আজকের নারীসমাজ সভ্য জগতের দিগন্ত উজ্জ্বল সুষমা। নারীদের পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও কর্মের স্বাধীনতা ছিল বলেই রাসুলের (সা.) যুগে বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাহাবি হজরত জোবায়েরের (রা.) স্ত্রী, হজরত আবুবকরের (রা.) কন্যা আসমা (রা.) স্বপর্দায় ঘোড়ার ঘাস সংগ্রহ করা, খেজুর বাগানের পরিচর্যা, খেজুরের আঁটি বহন করে বাড়ি আনা থেকে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতেন। জাবের ইবনে আবদুল্লাহর খালা তালাকপ্রাপ্ত হলে তিনি খেজুরবাগান থেকে খেজুর সংগ্রহ করতেন। রাসুল (সা.) এটা জানলে বললেন, এতে কোনো ক্ষতি নেই।

(রাসুলের যুগে নারী স্বাধীনতা, ২য় খণ্ড)। মহিলা সাহাবি কস্ফীলাহ (রা.) বাজারে ব্যবসা করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা.) স্ত্রী ঘরে বসে শিল্পকর্ম করতেন এবং তা বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। ওহুদের যুদ্ধে উম্মে আম্মারা (রা.) শত্রুদের তরবারির ডজনখানেক আঘাত সহ্য করেও বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে রাসুলের (সা.) ওপর আক্রমণকারী শত্রুদের প্রতিহত করেছিলেন। ওমরের (রা.) সময় উম্মে শিফা নামক মহিলা বাজারের পরিদর্শক (আল হিসবাহ্) হিসেবে নিয়োজিত হন।

রুফায়দা আল-আসলামিয়া প্রথম মহিলা ডাক্তার ছিলেন। রাসুল (সা.) খন্দকের যুদ্ধের সময় তাকে মদিনার মসজিদের পাশে তাঁবু টানিয়ে দিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি যুদ্ধাহত মুসলিম সেনাদের শুশ্রুষা করতেন। আশ শিফা বিনতে আবদুল্লাহ মুসলিম মহিলাদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য বের হতেন। উম্মে মিজান নামক এক মহিলা রাসুলুল্লাহর (সা.) মসজিদে ঝাড়ু দিতেন। তার মৃত্যুর পর তিনি তার জানাজার নামাজ পড়ান।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘জয়নব আমাদের মধ্যে সবচেয়ে দানশীল। কারণ তিনি স্বহস্তে কাজ করতেন ও সদকাহ করতেন। ’ (মুসলিম)। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) নিজের সহধর্মিণী জয়নবের কাছে এসে দেখলেন, তিনি চামড়া পাকা করার কাজ করছেন। ’ (মুসলিম)।

নবীজীর সময়েই ব্যবসা-বাণিজ্য, যুদ্ধক্ষেত্রে নারীদের ছিল স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী তখন স্বপর্দায় নারীরাও জীবনযাপনের জন্য বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন। তবে সব ক্ষেত্রেই নারীরা তার শালীন ও নিরাপত্তা অনুকূল জীবনধারা অনুসরণ করেছেন। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই সে জীবনধারাকে উপেক্ষা করে চলে জীবনে বিশৃঙ্খলা নিয়ে আসছেন। মানুষ হিসেবে নারী ও পুরুষ সমান।

এ ক্ষেত্রে উত্তম হওয়ার উপায় হলো বেশি তাকওয়া বা আল্লাহর প্রতি সচেতনতা (এড়ড়ফ ঈড়হংপরড়ঁংহবংং) অর্জন করা। পেশা গ্রহণে আল্লাহ নারীকে বাধ্য করেননি, একইভাবে প্রয়োজনে নারীর জন্য উপার্জনকে হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়নি। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, মুসলমানরা যেভাবে শিক্ষা-দীক্ষা ও অর্থনীতিতে পিছিয়ে পড়েছে তাতে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক অংশ নারীর মেধা ও ক্ষমতাকে কাজে না লাগিয়ে বসিয়ে রাখা (ওহধপঃরাব) খুবই ভুল হবে। আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে পুরুষের পাশাপাশি তাদের অংশগ্রহণ জরুরি একটি বিষয়। কর্মসংস্থান নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি আনে, তার স্বাধীন ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়, দক্ষতার বৃদ্ধি ঘটায় এবং তাকে সুন্দর পরিবার, সমাজ ও দেশ গঠনে উদ্বুদ্ধ করে।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সূরা নিসা নামে পূর্ণাঙ্গ একটি সূরা নাজিল করেছেন নারীর যাবতীয় স্বাধীনতা ও অধিকারের বার্তা নিয়ে। নারীরা আমাদেরই মা, বোন, স্ত্রী কিংবা কন্যা। তাদের হয়রানি বা নির্যাতন করা এবং তাদের অধিকার হরণ করা এবং অর্থনৈতিক ও কর্মের স্বাধীনতা হরণ করা মানেই তাদের মানবাধিকার হরণ করা, যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমাদের প্রত্যেকের উচিত, ইসলাম নির্দেশিত পথে নারীকে তার জীবন পরিচালনা ও অধিকার আদায়ে সহযোগিতা করা


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।