আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিজিডি কার্ড বিতরণে আওয়ামী দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি



বিভিন্ন স্থানে ভিজিডি কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি করা হচ্ছে বলে অভিযোগে প্রকাশ। এতে গরিব-দুস্থরা ভিজিডি কার্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিস্তারিত খবর পাঠিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা : নীলফামারী : জেলার ডিমলা উপজেলায় এবার সদ্যপ্রকাশিত ভিজিডির চূড়ান্ত তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্টরা ইউপি সদস্যদের দেয়া তালিকা পাল্টে ফেলে রাতারাতি চূড়ান্ত তালিকা করেছে।

এতে বাদ পড়েছেন প্রকৃত গরিব ও দুস্থরা। এই ভিজিডি কার্ড করে দিতে কারো কারো কাছ থেকে ২-৩ হাজার করে টাকা নেয়ারও অভিযোগ উঠছে যাচাই-বাছাই কমিটির সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে তালিকা নিয়ে সেগুলো পাশ কাটিয়ে অন্যদের নাম তালিকাভুক্ত করায় নির্বাচিত ইউপি সদস্যদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে মনে করছেন সদস্যরা। খগাখড়িবাড়ী ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন, ফজলুল হক, সাহিদা বেগম, পেয়ারা বেগম ও নাউতারা ইউপির জাহানারা মৌখিকভাবে অভিযোগ করে বলেন, তাদের দেয়া নামের তালিকা সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আবার কারো কারো তালিকা থেকে ২ থেকে ৮টি নাম নিয়ে আর সব নাম কেটে দিয়ে টাকার বিনিময়ে নতুন নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

নাউতারা ইউপির বাসিন্দা তমছের, নূর ইসলাম, তনজিনা, রশিদাসহ শত শত মানুষ অভিযোগ করে বলেছে, লটারির নামে রাতের অন্ধকারে তালিকা তৈরি করে তাদের মতো গরিবদের বঞ্চিত করা হয়েছে। গত রোববার ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নে ভিজিডি ও কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের কার্ড বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্যরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। কমরেড মংলুর সভাপতিত্বে ইউপি চত্বরে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন কমরেড মাহুবার রহমান, ফুলচাঁদ রায়, মহিন্দ্র নাথ রায়, মহেশ চন্দ্র রায় প্রমুখ। এদিকে জেলার ডোমার উপজেলায় অতি দুস্থদের জন্য ভিজিডি কার্ডের তালিকা ও ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের তালিকা প্রণয়নে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বাদ দিয়ে সরকারদলীয় লোকজন দিয়ে তালিকা করায় প্রকৃত দুস্থরা বাদ পড়েছেন এবং এসব তালিকায় সরকারদলীয় বিত্তবান লোকজন তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যকে ঘিরে নানা ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবাদে ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের ইউপি সদস্যরা কর্মবিরতি পালন করছেন। অপরদিকে সরকারি কর্মকর্তারা সরকারি বিধি মোতাবেক তালিকা প্রণীত হয়েছে, এমন বক্তব্য দিয়ে তাদের অনিয়মকে এড়িয়ে চলেছেন। ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের বরাবরে দায়েরকৃত অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার জোড়াবাড়ী, সোনারায়, হরিণচড়া ও বোড়াগাড়ী ইউনিয়নে ভিজিডি কার্ডের তালিকায় দুস্থ মায়ের পরিবর্তে সুস্থ মায়ের নাম পরিলক্ষিত হয়, যা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রণয়ন করা হয় বলে ইউপি সদস্যরা জানান। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারের অন্যান্য প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা নতুন এ তালিকায় সংযুক্ত হচ্ছে এবং অপেক্ষাকৃত অসহায়দের পরিবর্তে পাকাবাড়ি ও জমিজিরাত রয়েছে এমন ব্যাক্তিরা টাকার বিনিময়ে এবং দলীয় পরিচয়ে সুবিধা নিচ্ছে।

এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখার প্রতিবাদে উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের নির্বাচিত ইউপি সদস্যরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ইছাহাক আলী জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর বেশি আমি কিছুই জানি না। অপরদিকে ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রায়হান মিঞা এ দাবি অস্বীকার করে বলেন, সরকারি নিয়মমাফিক তালিকা করা হয়েছে। সরকারি নিয়মে ইউপি সদস্যদের তালিকা প্রণয়ন কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি না থাকায় তাদের এ ক্ষোভ এবং অভিযোগ রয়েছে।

বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ) : কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার ৫নং হালিমপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গত কয়েকদিন আগে কিছু ধনী লোককে ভিজিডি কার্ডের তালিকায় চূড়ান্ত করার কারণে ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মো. কাজল ভূইয়া তালিকায় স্বাক্ষর দেননি। চেয়ারম্যানের দাবি আওয়ামী লীগের লোকজন প্রকৃত দুস্থদের বাদ দিয়ে তালিকা চূড়ান্ত করেছেন। এরই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সরকারি দলের নেতাকর্মীরা দু-তিনশ’ মহিলা দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে। তাদের উল্টো দাবি, চেয়ারম্যান জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ভিজিডি কার্ডের মালামাল দেননি। ওইদিন বিকালে ইএনও বাজিতপুরের বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ৯টি ওয়ার্ডে তাদের মনগড়া তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী বরাবরে জমা দেন। চেয়ারম্যান ও ৯টি ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার ও সাধারণ সদস্যদের দাবি, ওই ভিজিডি তালিকায় প্রকৃত দুস্থদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেননি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এলাকায় অভিযোগ রয়েছে, হাবিবুর রহমান নামে একই ব্যক্তি তার দুই স্ত্রী মালা আক্তার ও রেজিয়া আক্তারকে ভিজিডি কার্ডের অন্তর্ভুক্ত করেছে। প্রকৃত অর্থে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সঠিক নাম দিতে না পারায় ভিজিডি কার্ডের তালিকায় অনিয়ম হয়েছে। প্রকৃত ভিক্ষুক ও দুস্থ মহিলারা বাদ পড়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা উলুকান্দি গ্রামের ছফুরা খাতুন নামে এক বিত্তশালী মহিলার নামও ভিজিডি কার্ডের তালিকাভুক্ত করেছেন। পিরোজপুর ইউনিয়নের গোথালিয়া গ্রামের মনোয়ারা বেগম হালিমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা নন, তাকেও ভিজিডি কার্ডে নাম দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দেয়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৩০-৪০ জন ভিক্ষুকের তালিকা বাদ দিয়ে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের পছন্দমত নাম ব্যবহার করে চূড়ান্ত তালিকা ইউএনও বরাবরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। হালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্যের চাচাশ্বশুর আঞ্জু মিয়াকে সম্মান প্রদর্শন করায় তিনি তালিকা করেছেন।

সরকারি দলের ওই ভিজিডি কার্ডে নিয়মবহির্ভূতভাবে তালিকা চূড়ান্ত করার কারণে তিনি ডিওতে স্বাক্ষর দেননি। তিনি হালিমপুর ইউনিয়নের প্রকৃত ভিক্ষুক ও দুস্থ মহিলাদের তালিকা আবার নতুনভাবে প্রস্তুত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান। দৈনিক পত্রিকা সমূহ থেকে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।