আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

`ভিজিডি' এখন `পিজিডি'

আমি বাংলার গান গাই আমি বাংলায় গান গাই আমি আমার আমাকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি ইউনিয়ন ও বরিশালের গৌরনদীতে ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে দৈনিক প্রথম আলো’র আজকের সংখ্যায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদে বলা হয়েছে, রমজান উপলক্ষে বরিশালের গৌরনদী পৌরসভায় দরিদ্র ও অসহায় ৩ হাজার কার্ডধারীর মাঝে বিতরণের জন্য ৩০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ করা হয়। কিন্তু, পৌরসভার কর আদায়কারী ও ভিজিএফ কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত মোশারফ হোসেন ২ হাজার ৩শ’ কার্ডের চাল বিতরণ করে বাকিগুলো আত্মসাৎ করেছেন। আবার যাদের চাল প্রদান করা হয়েছে তাদেরকে কার্ডপ্রতি ১০ কেজির পরিবর্তে ৮ কেজি প্রদান করা হয়েছে। মোশারফ হোসেন যে চাল কম দিয়েছেন তা তার কথাতেই প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি প্রথম আলো’র প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘গোডাউন থেকে মাপে কম দেওয়া হয়। গোডাউন থেকে যে হারে মাল গ্রহণ করা হয়েছে সেভাবেই দেওয়া হয়েছে। যারা চাল পায়নি তাদের পরে দেওয়া হবে’। গৌরনদী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, ‘সঠিক মাপে চাল বুছিয়ে দেওয়া হয়েছে। চাল নিয়ে যাওয়ার পর কোনো অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়’।

অন্যদিকে, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন ভিজিএফ কার্ডধারীদের জনপ্রতি ৩ থেকে ৪ কেজি করে চাল ওজনে কম দিচ্ছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত কার্ডধারীরা বিষযটি নিয়ে স্থানীয় থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। বিপদ আঁচ করতে পেরে চেয়ারম্যান আশরাফ পালিয়ে যান। এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা হয়েছে। শুধু সাতক্ষীরা আর বরিশাল নয়, গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেই এভাবে ভিজিএফ কার্ডধারীদের সাথে প্রতারণা, ভিজিএফের চাল আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

এসব ঘটনার বেশিরভাগেই রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী। সাধারণত জনপ্রতিনিধিদের ‘ভালনারেবল গ্রুপ’ খুঁজে বের করে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ‘ফিডিং’ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব জনপ্রতিনিধিদের। সংশ্লিষ্ঠ এলাকার মেম্বর/কাউন্সিলররাই এই দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই দায়িত্বটি পালন করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। অসহায় মানুষ চেয়ারম্যান, মেম্বরদের কাছে ধর্না দিয়েও একটিও ‘ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং’ বা ‘ভিজিএফ’ কার্ড জোগাড় করতে পারছেন না।

নিরূপায় জনপ্রতিনিধিরা এসব মানুষকে নিজেদের অপারগতার কথা জানিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছেন এলাকার পাতি নেতা/নেতাদের কাছে। যারা জেলার কোন না কোন শীর্ষ নেতার আশির্বাদপুষ্ট। এসব পাতি নেতাদের কেউ কেউ ভিজিএফের চাল আত্মসাৎ করা ছাড়াও এই কার্ড নিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও চালাচ্ছেন। নামকাওয়াস্তে দু’একজন প্রকৃত অসহায় মানুষকে কার্ড প্রদান করা হলেও প্রকৃত ‘ভালনারেবল’রা থেকে যাচ্ছেন আওতার বাইরে। বাকী যেগুলো বিতরণ করা হচ্ছে তার অধিকাংশই পাচ্ছে নেতার স্বচ্ছল নিকটাত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশি।

যাদের ‘ফুড’ বা খাদ্যের কোন কমতি নেই। এভাবে দলীয় বিবেচনায় ভিজিএফ কার্ড বিতরণ করায় তাদের জায়গা দখল করছে ‘বিত্তবান ভালনারেবল’। ভিজিএফ কার্ড ছাড়াও ‘ভিজিডি’ কার্ড নিয়েও একই রকম দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতি হচ্ছে বয়স্ক এবং বিধবা ভাতার কার্ড বিতরণ নিয়েও। স্বামী বর্তমান এবং তিনতলা বিল্ডিঙের মালিক এমন বিত্তবানও বিধবা কার্ড লাভ করেছেন এই এলাকায়।

কোন কোন নেতা আবার ১শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকায় বিভিন্ন কার্ড বিক্রি করেছেন করেছেন। দারিদ্র্যকিষ্ট অসহায় মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে দলীয় লোকজন যেভাবে ‘ডেভলবড’ হচ্ছেন তাতে অনেকেই ‘ভিজিডি’সহ অসহায় মানুষের উন্নয়নের জন্য গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচীর নাম পরিবর্তন করে ‘পিজিডি’ বা ‘পলিটিক্যাল গ্রুপ ডেভলপমেন্ট’ ডাকতে শুরু করেছেন।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।