আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"ইরি মৌসুমে মজুদদারির শঙ্কায় সংসদীয় কমিটি" (শীর্ষ কাগজের ৭ মার্চের সংথ্যায় প্রকাশিত)



চাতাল বা চাল কল মালিকদের ব্যাংক ঋণের সীমা নিয়ন্ত্রিত না হলে আগামী ইরি মৌসুমেও মজুদদার ব্যবসায়ীরা সরকারকে বিপাকে ফেলবে। এমনটাই আশঙ্কা করছে খাদ্য ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। আর এ শঙ্কার কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের মুক্ত বাজার অর্থনীতির দোহাইয়ে হতাশ এ কমিটি। এই দোহাই দিয়ে তারা চাল ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণের সীমা নিয়ন্ত্রণে অপারগতা প্রকাশ করায় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ছায়েদুল হক নিজেই এ হতাশা প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি (গত ২৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ ভবনের নিজ কার্যালয়ে কমিটির ২২তম বৈঠক নিয়ে আলাপকালে তিনি এ হতাশা ব্যক্ত করেন।

শীর্ষ কাগজ প্রতিবেদকের সাথে ওই একান্ত আলাপচারিতায় ছায়েদুল বলেন, চাতাল বা চাল কল মালিকদের ব্যাংক ঋণের সীমা নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠি জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে বিদ্যমান মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব ঋণ নীতির আলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করে ঋণ ঝূঁকি যাচাই করেই গ্রাহকদের ঋণের পরিমাণ নির্ধারন করে। ওই ঋণ ব্যাংকার-কাস্টমার সম্পর্কের ভিত্তিতে গ্রাহক প্রদত্ত জামানতের বিপরীতে প্রদান করা হয়। তাই এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন নির্দেশনা দেয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এরপরও কমিটির পক্ষ থেকে আমি মন্ত্রীকে (খাদ্য ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক) বলেছি- আপনি মন্ত্রী হিসেবে ব্যাক্তিগত ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের সাথে দেখা করে তাকে এই ঋণ সীমা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে বলেন। তারপরও যদি তিনি এ ব্যাপারে কোন ইতিবাচক সমাধান না দিতে পারেন, তবে আপনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করুন।

তাকে সামগ্রিক পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলুন। তিনি যদি বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা বোঝেন তবে অবশ্যই এব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী চাইলে সবই সম্ভব। নয়ত আগামী ইরি মৌসুমে অসাধু মজুদদার ব্যবসায়ীরা আবার সমস্যা কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তিনি আরো বলেন, এটা আমার বলা উচিত না- কিন্তু গত আমন মৌসুমে মজুদদারদের নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

আর তাদের ঋণ সীমা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আসন্ন ইরি মৌসুমেও মজুদদারি প্রতিরোধ করা যাবেনা। এর আগে এই কমিটির ২১তম বৈঠকে চাতাল বা চাল কল মালিকদের ঋণ সীমা নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয়কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আলোচনার সুপারিশ করা হয়। এসময় মিলের মোট উৎপাদন ক্ষমতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঋণ সীমা নির্ধারণেরও পরামর্শ দেয় কমিটি। এছাড়া ওই বৈঠকে চাতাল মিল মালিক ও ধান-চালের বড় ব্যবসায়ীরা যাতে ১ মাসের বেশী সময় ধান-চাল মজুদ না রাখতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করে কমিটি। গত ১৯ জানুয়ারির ওই বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি ছায়েদুল শীর্ষ কাগজকে বলেছিলেন, চালের দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণে না থাকার প্রধান কারণ- চালের বাজার সিন্ডিকেট।

২০০৯ সালের ডিসেম্বর থেকেই আমরা (সংসদীয় কমিটি) বলে আসছি- এই সিন্ডিকেটের চালাত ও মিল মালিক এবং অসাধু চাল ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে আনলিমিটেড লোন (সীমাহীন ঋণ) নিয়ে ধান মজুদ করে রেখে নিজেদের ইচ্ছে মতো চাল উৎপাদন করে। এভাবে তারা চালের বাজারটাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। ওই দিন সভাপতি আরো জানান, সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমেদ হোসেন সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছেন- উত্তরবঙ্গের প্রতিটি চাতাল মালিক ৪-৫ হাজার মেট্রিক টন ধান মজুদ করে রেখেছে। এদিকে, কমিটির সর্বশেষ (২২তম) বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া এক পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে ছায়েদুল শীর্ষ কাগজকে জানান, বোরো মৌসুমের হিসেব অনুযায়ী সারাদেশে ১৬ হাজার ৩শ ৫৮টি চাতাল বা চালের মিল রয়েছে। এর মধ্যে বড় চাল কলের সংখ্যা ১শ ১৩টি।

এ সময় তিনি বলেন বলেন, সংসদীয় কমিটি মনে করে চালের দাম কমেনি; তবে দামের উর্ধ্বগতি থেমেছে। এবার চালের দাম কমিয়ে আনতেই খোলা বাজারে চাল বিক্রির আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কারণ বর্তমানে সরকারি গুদামে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। তিনি জানান, বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন চালসহ মোট সাড়ে ৯ লাখ টন খাদ্য মজুদ রয়েছে। আগামী এপ্রিল-মে নাগাদ এই মজুদ সাড়ে ১১ লাখ টন চাল ও সাড়ে ৯ লাখ টনসহ মোট ২১ লাখ টনে গিয়ে দাঁড়াবে।

তিনি আরো বলেন, খোলা বাজারে চাল বিক্রির আওতা ও পরিমাণ আরো বাড়ালে মজুদদার ব্যবসায়ীরা সুবিধা করতে পারবে না। ছায়েদুল বলেন, বর্তমানে প্রতি উপজেলায় কমপক্ষে ৭ জন করে ওএমএস ডিলার রয়েছে। তাছাড়া হাওর এলাকার প্রতি ইউনিয়নেও ওএমএস ডিলার রয়েছে। এবার আমরা (সংসদীয় কমিটি) সারাদেশের সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়নেই একজন করে ডিলার নিয়োগ করতে বলেছি। তিনি বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে এই ডিলার নিয়োগ সম্পন্ন করতে বলার প্রেক্ষিতে খাদ্য মন্ত্রী বলেছেন- ২/১ দিনের মধ্যেই তারা এ ব্যাপারে কাজ শুরু করবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের ওএমএস ডিলারদের মাধ্যমে প্রতিদিন কমপক্ষে ১টন করে চাল বিক্রির জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি গত বুধবার (২ মার্চ) খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সভাকে মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওএমএস কার্যক্রম পর্যালোচনা সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজধানীতে খোলাবাজারে চাল বিক্রির (ওএমএস) কাজে আরও ৫০টি ট্রাক নেমেছে। এ নিয়ে এই কাজে ট্রাকের সংখ্যা দাঁড়াল ২শ ৫০। এছাড়া এখন থেকে মঙ্গলবার বাদে সপ্তাহের সব দিনই এ কার্যক্রম চালানোর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুক্রবার (৪ মার্চ) থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।

বৈঠকে আরো সিদ্ধান্ত হয়, ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিজন ডিলার এক টনের পরিবর্তে দেড় টন করে চাল বিক্রি করবে। আতপ চাল বিক্রি হয়- এমন জেলাগুলোর ডিলাররা এই সুযোগ পাবেন। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও সিলেট বিভাগের সব জেলা এবং খুলনা ও সাতীরা এর আওতাভুক্ত। তবে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দেশের সব ইউনিয়নে ওএমএস ডিলার নিয়োগের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া চাতাল বা চাল কল মালিকদের ব্যাংক ঋণের সীমা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও মন্ত্রণালয় নতুন কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানা গেছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।