আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লেজকাটা শেয়াল যখন বনের রাজা- এমএবি সুজন

সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালবাসিলাম যে করেনা কখনও বঞ্চনা....

(এটি একটি অনবদ্য রম্য রচনা, পড়লে ভাল লাগে) কোন এক গহীন জঙ্গলে একটি সিংহের গুহা। সিংহটি এ জঙ্গলের রাজা বড়ই সন্দেহপ্রবন। সে তার রাজ পরিজন ছেড়ে এই গুহায় নিঃসঙ্গ একাকী বসবাস করতে পছন্দ করে। জঙ্গলের লেজকাটা সেই শিয়ালটি সমাজ থেকে বহিস্কৃত হয়ে তার পরিবারসহ শিয়াল পল্লী ছেড়ে অন্য ময়ালে বসবাসযোগ্য একটি আবাসস্থল খুঁজতে বের হয়েছে। একটি বানর শিয়ালটিকে বোকা বানাবার জন্য জঙ্গলের রাজা ঐ সিংহের গুহাটি পরিত্যাক্ত বলে দেখিয়ে দিল।

শিয়াল বানরের পরামর্শে উক্ত সিংহের পরিত্যক্ত গুহাকে তার আবাসযোগ্য মনে হল। ভিতরে ঢুকে দেখলো কেউ নেই। তারপর সে তার পরিবারে এক স্ত্রী, ৪টি সন্তানসহ ঐ গুহাতে প্রবেশ করে স্থায়ীভাবে সেখানে বসবাস করবার ইচ্ছাপোষণ করলো। এদিকে উক্ত গুহার মালিক বনের রাজা পুরুষ সিংহটি খাবারের সন্ধানে বের হয়েছে। কোথাও কোন খাবারের বন্দোবস্ত না করতে পেরে সে অত্যন্ত ক্লান্ত বদনে গুহায় ফিরছে।

বানর এবার গাছের উপর থেকে সিংহকে বললো রাজা মশাই তাড়াতাড়ি যান আপনার খাশ মহলে নতুন মেহমান আছে, একটু খাতির যতœ করেন। সিংহ অবাক! আমার বাসায় মেহমান! নাকি শুন্য প্রাসাদ আক্রমন করে কেউ দখলে নিয়ে নিলো নাকি! যাক সিংহ গুহার দিকে হাঁটছে। শিয়ালটি অতি চালাক। তাই সে গুহার সম্মুখে বসে অতন্ত্র প্রহরীর মতো দেখছে গুহায় আতর্কিত সিংহ এসে পরে কিনা। হঠাৎ দূরে তাকিয়ে দেখে একটি সিংহ এই গুহার দিকে হেঁটে আসছে।

শিয়াল এবার চিন্তা করে বাবা তোমার বাসা যেহেতু একবার দখলে নিয়েছি তখন আর ছাড়ছি না। তোমাকেই তাড়াতে হবে এখান থেকে; ভাবতে ভাবতে সে তার স্ত্রীকে ডাকলো। শিয়াল ঃ কইগো এদিকে আসো তো। শিয়ালী ঃ তাড়াতাড়ি বলো বাচ্চারা ঘুমুচ্ছে! আমার এই ফাঁকে ঘর গোছাতে হবো। শিয়াল ঃ শোন এই প্রাসাদের মালিক কিন্তু ঐ আসে সিংহটি।

শিয়ালী ঃ কি কও ? তবে আর দেড়ি ক্যা, নও যাই পলাইয়া যাই! শিয়াল ঃ না! আমি যা কই তাই করো তুমি; দেখো আমাগোরই বিজয় হবো। শিয়ালী ঃ ঠিকআছে কও কি পিলান কইরছো- শিয়াল ঃ শোন তুমি ঘুমন্ত বাচ্চাগোর এই মান্দার গাছের ডাল দিয়া পিটাবা, ওরা কাঁনবো, আমি এখান থিকা চিৎকার কইরা কবো ঐ ওগোর কি হইছে ? ওরা কাঁন্দে কেন ? তখন তুমি কবা- কাঁনবো না! বারে ওগো ক্ষিধে পাইছে যে! আমি কবো ওগোর এত ক্ষিধা লাগে কেন ? তুমি কবা- ওগো বাড়ন্ত শরীল, এইবয়সে ঘন ঘন ক্ষুধাতো লাগবোই। শিয়ালী ঃ ঠিক বুঝলাম না এসব বইলা কি লাভ হবো ? সিংহতো দয়া কইরা বাচ্চাগোর খাইতে দিবোনা বরং আমগো সবাইক মাইরা ফেলবো। শিয়াল ঃ তোমাক যা কই তুমি তাই করো, তারপর কি হবো কি বলতে হবো সেটা আমি দেখমুনি। যাও দু’একবার রিয়াচ্ছেল করো যাও! (শিয়ালের স্ত্রী দ্রুত গুহার ভিতরে গিয়ে কথামত ঘুমন্ত বাচ্চাদের পেটাচ্ছে আর বাচ্চাগুলো কাঁদছে) শিয়ালী ঃ হারামজাদা পোলাপাইন! সময় নাই অসময় নাই খালি খাওন দাওন আর ঘুম! ওঠ! বাইড়ায়া পিটের চামড়া খুইলা ফালামু! শিয়াল ঃ ঐ মাগি তোগো কি হইছেরে ? পোলামাইনে এত কান্দে ক্যা ? শিয়ালী ঃ তুমি জান না পন্ডিত মশাই; ৩-৪ দিন ধইরা কোন দানাপানি নাই, কানবো না হাসবো- বজ্জাত বাপের কজ্জাত পোলাপান! শিয়াল ঃ আরে না ওভাবে না! এতকথা কওয়ার সময় নাই।

সময় দিন উল্লেখ করা যাবো না। শুধু বলবা ওগো ক্ষিধা লাগছে। শিয়ালী ঃ আচ্ছা কইলাম তারপর তুমি কি কইবা তাতো কওনা ? শিয়াল ঃ আমারটা আমি কমুনে। হায় হায় ! আইসা পড়ছে শালা। (সিংহ প্রায় গুহার নিকটে এসে পোঁছেছে) রেডি ৫-৪-৩-২-১-০ একশন! ঐ ভিতরে এত গন্ডগোল কিসের ? ওরা কান্দে ক্যা ? শিয়ালী ঃ কানবো না ওগো ক্ষিধা নাগছে যে! ক্ষিধা মরার ক্ষিধা!! (সব শুনছে আর অবাক হয়ে একটু দূর থেকে দেখার চেষ্টা করছে কার এতবড় দুঃসাহস যে সিংহের গুহার ভিতরে অবস্থান করছে) শিয়াল ঃ কস্ কি ? ঐ একটু আগে না আস্তা একটা জেতা সিংহ ধইরা- ঘাড় মটকায়া- ওগো ছিড়া ভাগ কইরা দিলাম! খায়া কইলো পেট ভরছে! ৫ মিনিট হয় নাই এহনই আবার ক্ষিধা! আর এই নতুন জায়গায় এততাড়াতাড়ি সিংহ পামু কই ? ওরাতো সিংহের রক্ত মাংস ছাড়া অন্য কিছু খায়ওনা! কি মুশকিল! সিংহ ঃ ওরে বাপরে বাপ! সেরের উপর সোয়া সের!! কয় কি আস্তা সিংহ খায়াও পেট ভরে না, সিংহ ছাড়া কিছু খায়না।

ভগবান তুমি দীনবন্ধু! রক্ষে কর। এই গুহায় কেন এই জঙ্গলেই আমার থাকার আর দরকার নাই! (সিংহ দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে; গুহা ছেড়ে বেশ খানিকটা দূরে একটি গাছের নিচ দিয়ে দৌঁড়ানোর সময় গাছের উপর থেকে সেই বানরটি সিংহকে থামতে বলে) বানর ঃ কথা আছে রাজা মশাই শোনেন! সিংহ ঃ তুমি আমার প্রাণ বেঁচে যাক তা চাও না ? তুমি বললে মেহমান! এরাতো মেহমান না! আমার আজরাঈল। বানর ঃ কি বলেন! ধুর! শোনেন আমি দূরথিকা দেখছি; আপনার গুহায় ঐ পাশের ময়ালের একটা লেজকাটা শিয়াল তার বাচ্চাকাচ্চা আর বিবি নিয়া উঠছে। আপনি চইলা যান কেন? ওক তাড়ায়া দেন। সিংহ ঃ না ওটা শিয়াল না রে বাবা! আমি নিজে শুনেছি কি ভয়ংকর! বলে কিনা সকাল বিকাল ৮ বার সিংহ দিয়া আহার করে! সিংহের পিঠে চইড়া শিকারে বের হয়- কি সাংঘাতিক! বানর ঃ আরে না! বিশ্বাস না হয় আমাক আপনার নেঞ্জার নগে বাইন্ধা নিয়া চলেন।

যদি মিথ্যা কই তবে আমাক মৃত্যুদন্ড দিবেন। সিংহ ঃ হ্যাঁ তবে যেতে পারি। চলো। শিয়াল ঃ শালা বান্দর! ব্লেড তুমি! তুমি এইবার মামুরে বোঝায়া আনতাছো না! খাড়াও দেখতাছি। ঐ গেলা বেলার মা শোন আবারও একি কাম করতে হবো।

রেডি ! রেডি ৫-৪-৩-২-১-০ একশন! ঐ এতকইরা বুজাইলাম! তারপরও গেদারা কান্দেকে রে ? শিয়ালী ঃ ক্ষুধার জ্বালা কি মুহের কতায় মেটে ? খাদ্য চাই, পরিমাণ মত খাদ্য আহার বিহার বিশ্রাম স্নান নিদ্রা ঘুম তবেই না ওরা চুপ থাকবো। (সিংহ এবং বানর সব শুনছে) শিয়াল ঃ হালায় চোর চোট্টায় জঙ্গলডা ভইরা গ্যাছে। কারে কি কমু ! আমি বুজলাম না ঐ বান্দর হালায় নগদ ৫টা ট্যাকা নিয়া গেলো কইলো ১ মিনিটের মধ্যে পটায়া পুটায়া একটা সিংহ ধইরা আনতাছি। এহনও আসে ক্যা ? হালায় ট্যাকা নিয়া ভাইগা গেল নাকি ? সিংহ ঃ কি! শালা বান্দর ঘুষখোর! আমার সাথে চালাকি! আজ তোকেই বদ করবো শয়তান! (এই বলে বান্দর কে একটি আছার দিয়ে ফেলে সিংহ চিরতরে পালিয়ে গেল অন্য কোথাও) তারপর লেজকাটা শিয়াল হলো এ বনের রাজা। শুরু হলো প্রজাকুলের অশান্তি আর দুঃখ কষ্টের দিন।

নানা অনিয়ম অনাচার শৈরাচার চলতে লাগলো বহাল তবিয়তে। সুখময় স্বর্গরাজ্য যেন করদরাজ্যে পরিণত হলো। এভাবে জীবন চলে না ভেবে রাজা লেজকাটা শিয়ালের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম গণআন্দোলনের ডাক দিলো শিয়াল স¤প্রদায়। এদিকে রাজা লেজকাটা শিয়াল ঘোষণা দিলো ঃ শিয়াল ঃ প্রিয় প্রশাসন! তোমরা প্রস্তুত হও। বনের শিয়াল স¤প্রদায় বড্ড বাইড়া গেছে।

ওগো দমাতে হবে। আগামী কল্য প্রত্তুষ্য হইতে নির্বিচারে শিয়াল ধরো। যাদের কান আড়াই ইঞ্চির বেশি লম্বা ধরে ধরে তাদের কান কেটে দাও। জঙ্গলবাসী বুঝবে এরাই ষড়যন্ত্রকারী বিদ্রোহী। তাদেরকে দেখে কেউ আন্দোলনের সাহস করবে না।

(সেমতে শুরু হলো শিয়ালের কান কাটার মহাধুম। কত শিয়ালের যে কানা কাটা হলো তার কোন ইয়ত্তা নেই। এক পর্যায়ে ছোট বড় সব শিয়াল আত্মগোপন করতে লাগলো। প্রশাসনিক ফৌজ দেখা মাত্রই তারা দৌঁড়ে পালাতে লাগলো। এক পর্যয়ে দেখা গেলো কতিপয় ছোট ছোট শিয়াল পালিয়ে যাচ্ছে বাঁচার তাকিদে।

সাংবাদিক তাদের জিজ্ঞাসা করলো) ঃ সাংবাদিক ঃ আচ্ছা ভাই! আমরা শুনেছি শিয়াল ধরে যেসব শিয়ালের কান আড়াই ইঞ্চির উপরে তাদের কান কাটা হচ্ছে। যতদূর মনে হয় আপনাদের কানতো এক দেড় ইঞ্চির বেশি হবেনা তবে আপনারা পালাচ্ছেন কেন ? দয়া করে বলবেন কি ? ছোট শেয়াল ঃ আরে ভাই শোনেন! এই জঙ্গল সরকারের আইন এক রকম আর প্রশাসন আইন পালন করে অন্যরকম। যেমন ধরেনঃ আগে শিয়াল ধরে কান মাপবে তারপর কাটবে এই হলো আইন রাজার ঘোষণা কিন্তু প্রশাসনিক বাহিনী কি করছে ? তারা আগে কান কাটে তারপর মাপে। সেক্ষেত্রে কান ছোট-বড় কোন বাঁচার উপায় না বরং নিজের কান নিয়া নিরাপদে লুকিয়ে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। এভাবেই চলতে লাগলো বনের রাজা লেজকাটা শিয়ালের দুঃশাসন ব্যবস্থা আর কানকাটা প্রজাদের নিরন্তর দুঃখকষ্টের পালা এবেলা ওবেলা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।