আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাবি উপাচার্যের অনিয়ম ফাঁস!

সত্য প্রকাশে সংকোচহীন

কখনও বা টিপ-টিপ বৃষ্টির মাঝে আপনি নিজে নৌকা চালিয়ে সস্ত্রীক চিত্তবিনোদন করবেন (রোম যখন দাঁউ দাঁউ করে জ্বলছিল, নিরু তখনও বাঁশি বাজাচ্ছিল)। এমন দৃশ্যের সাথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গত ৪২ বছর যাবত পরিচিত নয় এবং এমন দৃশ্য তারা প্রত্যক্ষও করেনি, এমন পরিবেশ দর্শনে তারা অভ্যস্থও নয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন কর্তৃক “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়¬- মো. আনোয়ার হোসেন ‘অবাঞ্ছিত’” শীর্ষক একখানা প্রবন্ধ গত ১৭ জুলাই ২০১৩ তারিখ জাতীয় দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে যা আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত শিক্ষক সমিতি কর্তৃক উত্থাপিত তার পদত্যাগের দাবি কিংবা তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘অবাঞ্ছিত’ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমি যেহেতু বর্তমানে শিক্ষক সমিতির একজন সাধারণ সদস্য এবং শিক্ষক সমিতি যে সাধারণ সভায় অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগ ও তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে সভায় আমি উপস্থিত ছিলাম না ও ঐ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কোন বক্তব্য উপস্থাপন করিনি এবং যেহেতু ঐ সিদ্ধান্ত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত সেহেতু আমার অবস্থান বর্তমানে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের সুযোগ নেই।

আমার এ লেখা অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনের লেখার কিছু বক্তব্যেরে বিষয়বস্তু নিয়ে অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন তার লেখায় উল্লেখ করেছেন ১২ই ফেব্রুয়ারি রাতের ঘটনা নিয়ে শিক্ষক সমিতি তার পদত্যাগ দাবি করেছেন অথচ ঐ দিন তিনি ছুটিতে ছিলেন এবং সহ-উপাচার্য (প্রো-উপাচার্য) উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন। বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। প্রথমত : উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন যখনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বাইরে কোথাও যেতেন তখন মৌখিকভাবে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরকে অবহিত করতেন না বা করা প্রয়োাজন বোধ করতেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সাহেবকে একটা অফিসিয়াল নোট দিয়ে চলে যেতেন, ফলে প্রো-উপাচার্য জরুরি কোন প্রয়োজনে ভিন্ন অফিসিয়াল নোটিশের পূর্বে উপাচার্যের ছুটিতে থাকার বিষয়টি অবহিত হতেন না। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রো-উপাচার্য চিঠি পেতেন পরের দিন।

১২ ফেব্রুয়ারী ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয়। ১২ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের ছুটিতে থাকার নোটিশটি প্রো-উপাচার্য অফিসে পৌঁছে ১৩ ফেব্রুয়ারী সকালে, অফিসের নথিতে তা লিপিবদ্ধ রয়েছে। তবে ঐ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ উপাচার্যের পিএস-এর নিকট থেকে প্রো-উপাচার্য উপাচার্যের ছুটিতে থাকার বিষয়টি অবহিত হন একটি জরুরী প্রয়োজনে টেলিফোন মারফৎ। অথচ মহামান্য রাষ্ট্রপতি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রো-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োাগ দেন এ কারণে যে এরা তিন জন পরস্পর আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণা ও অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবেন। যদিও এদের মাঝে উপাচার্যের গুরত্ব সর্বাধিক।

অথচ অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন সিংহভাগ ক্ষেত্রেই এই আলোচনার প্রয়োজন বোধ করতেন না। X দ্বিতীয়ত : ঐ দিন রাত্রে আকস্মিকভাবেই হঠাৎ করে যখন কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার ভাংচুর করে উপাচার্যের বাসভবনের সম্মুখের কিছু জিনিসপত্র ভাংচুর করে চলে যায় তখন প্রো-উপাচার্য (আমি) জরুরী ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরকে বিষয়টির ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেয়ার জন্য আহবান জানায় (যেহেতু ঐ সময়) কোষাধ্যক্ষ মহোদয় ঢাকায় ছিলেন সেহেতু তাকে পরামর্শের জন্য আহবান করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি । তারা উভয়ে প্রো-উপাচার্যের বাসায় আসেন, একই সময় ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আহমদ রেজা ও শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর সাহাদত হোসেনও আসেন এবং তারা সবাই ধারণা করেন যে, উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদের দ্বারা তাৎক্ষণিক আরো বড়ধরনের কোন আক্রমণ হওয়ার ম্ভব নয় । অতএব ক্যাম্পাসে পলিশ মোতায়েন প্রয়োজন সে অনুপাতে ততকালীন প্রক্টরকে পুলিশ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করতে বলি। প্রক্টর পুলিশ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলে পুলিশ প্রশাসন জানায় উপাচার্য মহোদয় জনিয়েছেন ক্যাম্পাসে শিবির আক্রমণ করেছে অতএব, প্রচুর (প্রায় ২-৩ হাজার) পুলিশ লাগবে।

যেহেতু ঐ মুহূর্তে তাদের নিকট পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল না সেহেতু তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে পুলিশ সংগ্রহ করছে এবং দুই তিন ঘণ্টার মধ্যে তারা (পুলিশ) ক্যাম্পাসে পৌঁছে যাবে। তখন আমি (প্রো-উপাচার্য) নিজে পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলি-পুলিশ প্রশাসন আমাকেও একই কথা বলে। আমি তখন প্রক্টরকে উপাচার্যের সাথে (উপাচার্য তখন পাবনায় অবস্থান করছিলেন) মোবাইলে যোগাযোগ করতে বলি। যোগাযোগ শেষে প্রক্টর আমাদের জানায় যে উপাচার্য মহোদয় ক্যাম্পাসে পুলিশ আনতে বারণ করেছেন। তখন আমি (প্রো-উপাচার্য) নিজে উপাচার্য মহোদয়ের সাথে মোবাইলে কথা বলি এবং ক্যাম্পাসে জরুরি ভিত্তিতে পুলিশ মোতায়ন প্রয়োজন বলে তাকে জানাই এবং এ ব্যাপারে তার সহযোগিতা কামনা করি।

উপাচার্য মহোদয় মোবাইলে আমাকে জানায় ক্যাম্পাসে শিবির আক্রমণ করেছে অতএব অনেক পুলিশ প্রয়োজন এবং তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে ২-৩ হাজার পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবে, আমি বললাম জরুরি ভিত্তিতে এখনই কিছু পুলিশ প্রয়োজন কিন্তু কিছুতেই তাকে বোঝাতে পারলাম না। তার একই বক্তব্য, ক্যাম্পাসে শিবির আক্রমণ করেছে অতএব অনেক পুলিশ লাগবে, তাই ঐ মুহূর্তে ২-৩ হাজারের কম পুলিশ আনা ঠিক হবে না। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই উচ্ছূঙ্খল এক দল ছাত্র কর্তৃক উপাচার্যের বাসভবন, প্রাক্তন উপাচার্যদের বাসাসহ ক্যাম্পাসের অনেক শিক্ষকের বাসা ব্যাপক ভাংচুর হলো, এমন কি তারা পরিসংখ্যান বিভাগের সভাপতির কক্ষসহ অনেক শিক্ষকের কক্ষ ব্যাপক ভাংচুর করল। অথচ উপাচার্য মহোদয় যদি ঐ সময় বলতেন যেহেতু আমি ক্যাম্পাসে নেই সেহেতু আপনারা পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করুন এবং আমার কী কী সাহায্য লাগবে বলুন আমি সে পদক্ষেপ নিচ্ছি। তা হলে হয়তোবা ঐ পরিস্থিতির একটা তাৎক্ষণিক সমাধান দেয়া যেত, কিন্তু উপাচার্য তা না করে দায়িত্ব প্রো-উপাচার্যকে দেয়ার নাম করে পাবনা থেকে নিজেই বিষয়টি মিসহেন্ডেলিং করে পুরো বিষযয়টি ঘোলাটে করে ফেললেন।

কোঁথা থেকে কী ভাবে তিনি উপলব্ধি করলেন ক্যাম্পাসে শিবির আক্রমণ করেছে এবং ২-৩ হাজার পুলিশ না হলে ঐ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না যে ক্যাম্পাসে গত ২৩ বছর যাবত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ সে ক্যাম্পাসের সাথে সম্পূর্ণ অপরিচিত নতুন একজন ব্যক্তি উপাচার্যের দায়িত্বে এসে সুদূর পাবনা থেকে কী করে বুঝে ফেললেন ক্যাম্পাসে শিবির আক্রমণ করেছে? তাছাড়া ১২ই ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে-রাত তিনটার দিকে তিনি ক্যাম্পাসে এসে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলো পরিদর্শনে বেয়িয়েছিলেন বলে শুনেছি (পরে শুনেছি) কিন্তু তার ভাষায় ঐ দিন উপাচার্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রো-উপাচার্যকে ডেকে বিষয়টি শুনার বা তাকে সঙ্গে নিয়ে উপাচার্য মহোদয় বেরনোর- প্রয়োজন বোধ করলেন না। তাছাড়া ঐ দিনের পরিসংখ্যান বিভাগের মৃত ছাত্রটিকে নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনা কী করে প্রশমিত হল তাও অবহিত হওয়া তিনি প্রােজনবোধ করলেন না। অথচ সেই ছাত্র উত্তেজনা নিরসনের লক্ষ্যে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও মওলানা ভাসানী হলের তৎকালীন প্রাধ্যক্ষের সাথে আলোচনা করে জরুরি ভিত্তিতে রাত ১১.৩০টার দিকে মৃত ছাত্রটির নামাজে জানাজা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত করে তার দেশের বাড়ী বগুড়ায় তার মৃত দেহ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেই, কারণ পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের ধারণা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত লাশ ক্যাম্পাসে থাকবে ততক্ষণ পর্যস্ত ছাত্র-উত্তেজনা কমানে যাবে না এবং মওলানা ভাসানী হল কম্পাটমেন্টে (যেখানে তখনও ব্যাপক ছাত্র-উত্তেজনা বিরাজ করছিল) নামাজে জানাজার ব্যবস্থা করতে গেলে ছাত্র-উত্তেজনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব, সে লক্ষ্যে যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও আরো অন্যান্য বেশ কিছু সম্মানিত শিক্ষকসমেত কেন্দ্রীয় মসজিদের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে নামাজে জানাজা শুরু করবো ঠিক তখনি উত্তেজিত ছাত্ররা এক অস¦াভাবিক উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি করে তুলল এবং মৃত ছাত্রটির মৃত্যুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাম্বুলেন্স প্রদানের গাফলতি, ডাক্তারদের অবহেলাকে দায়ী করে তার মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা ও মৃত ছাত্রটির একজন বোনের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চাকুরি দেয়ার দাবি করে পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল ও ঘোলাটে করে তুললো এবং দাবি উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে আমাকেই পূরণ করতে হবে বলে জোর দাবি জানানো শুরু করল ও শ্লোগান দেয়া শুরু করল। আমি বলি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট উত্থাপিত দাবি আমার একার পক্ষে ঐ স্থানে দাঁড়িয়ে পূরণ করা সম্ভব নয় এমনকি আমার একার পক্ষে ঐ জাতীয় কোন প্রতিশ্রুতি দেয়াও সম্ভব নয়, আমি পারি আমার নিজ পকেটের অর্থ প্রদানের প্রুতিশ্রুতি দিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ প্রদান বা কাউকে চাকুরি দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই।

অতঃপর পরিস্থিতি শান্ত করার লক্ষ্যে আমি আমার নিজের থেকে এক লক্ষ টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে মৃত ছাত্রটির নামাজে জানাজা শেষ করে তার মৃতদেহ বগুড়ায় তার গ্রামের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করি। পরবর্তীতে আমি আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে আমার পৈতৃক জমি বিক্রি করে এনে মৃত ছাত্রটির পিতা-মাতার নিকট এক লক্ষ টাকা প্রদান করি এবং ছাত্র-ছাত্রীরা আরো এক লক্ষ টাকা চাঁদা দেয় যা দিয়ে ঐ মৃত ছাত্রটির পিতা-মাতার নামে বগুড়ায় একটি ব্যাংকে একটা এফডিআর করে দেই যাতে করে মৃত ছাত্রটির পিতা-মাতা কোন রকমে তাদের সংসার পরিচালনায় একটু সহযোগিতা পায়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয় পরবর্তীতে, এ বিষয়টি নিয়ে আর মোটেই ভাবনার প্রয়োজন বোধ করেননি। এমনকি আমার সাথেও আর কোন আলাপ করেননি। ঘটনার পর দিন ১৩ ফেব্রুয়ারী সিন্ডিকেট সভায় যখন আমাকে আহবায়ক করে ঐ দিনের ঘটনার বিষয় তদন্ত করার লক্ষ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, তখন আমি মাননীয় উপাচার্যকে বারংবার নিষেধ করেছি এই বলে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে যে কোন দায়িত্ব নিতে আমার আপত্তি নেই এবং গত চার বছরে আমার প্রো-উপাচার্যের দায়িত্ব পালনকালে আমি বহু জটিল বিষয় এমনকি হত্যা সংক্রান্ত বিষয়ের তদন্ত কমিটির সভাপতির দায়িত্ব¡ পালন করেছি এবং আমি আমার সাধ্যাতীত চেষ্টা করেছি প্রতিটি তদন্ত সুষ্ঠূভাবে পরিচালনার জন্য, কিন্তু যেহেতু ২৩ ফেব্রুয়ারি আমার প্রো-উপাচার্যের চার বছর মেয়াদকাল শেষ হয় যাবে এবং আমার মেয়াদকালে ঐ তদন্ত কাজ আমি সুষ্ঠুভাবে শেষ করে যেতে পারবো না সেহেতু দয়া করে এ দায়িত্বটি অন্য কাউকে দেন এবং যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে কোন বাধ্যবাধকতা নেই যে প্রো-উপাচার্যকেই সভাপতি করে ঐ জাতীয় তদন্ত কমিটি করেতে হবে সেহেতু অন্য কাউকে প্রধান করায় কোন আইনগত জটিলতাও থাকবে না।

কিন্তু আমার শত আপত্তি সত্ত্বেও আমাকেই ঐ কমিটির সভাপতির দায়িত্বে দেয়া হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমার মেয়াদের অবশিষ্ট দশ দিনে আমি ঐ তদন্ত কমিটির ছয়টি সভা করি এবং প্রতিটি সভায় প্রায় ছয়-সাত ঘণ্টা কাজ করে তদন্ত কাজের বেশ কিছুদূর অগ্রগতি আনয়ন করি, কিন্তু ২৩ ফেব্রুয়ারি আমার প্রো-উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বহুদিন পর্যন্ত ঐ তদন্ত কমিটির প্রধানের দায়িত্ব অন্য কাউকে আর না দেয়ার দরুন উক্ত তদন্তের কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। এই তদন্ত বিলম্বিত হওয়ায় উপাচার্যের অভিজ্ঞতার অভাবে অথবা ইচ্ছাকৃত অবজ্ঞার দরুন ঘটেছে ফলে পরিসংখ্যান বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার কার্যক্রম গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। অথচ শিক্ষক সমিতির দাবির মুখে মাননীয় উপাচার্য তার লেখায় উক্ত ঘটনার দায়ভার সহ-উপাচার্যের (প্রো-উপাচার্যের) উপর বর্তাতে সচেষ্ট হয়েছেন। এটি উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার শামিল।

একইভাবে ১লা ও ২রা আগস্টের ঘটনা তদন্ত পূর্বক ১৩ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যেও নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। নিয়মানুসারে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার সাথে সাথে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে ঐ দিনেই জরুরি ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সভা ডেকে ও পরে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে ঐ তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জরুরি ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়। উভয় কমিটির সভা ডাকার এখতিয়ার সম্পূর্ণই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের। এ ক্ষেত্রেও মাননীয় উপাচার্য হয় অনভিজ্ঞতার দরুন যথাসময়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন অথবা ইচ্ছাকৃত বিলম্ব¦ ঘটিয়ে বিষয়টির গুরুত্ব অত্যন্ত হাল্কা করার চেষ্টা করেছেন, যা অনৈতিক। কারণ ঐ ঘটনার সাথে যেহেতু শিক্ষকদের বাসাবাড়ি ভাংচুর, হল প্রাধ্যক্ষের উপর হামলা, পুলিশ আক্রান্ত হওয়া সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাট অংকের সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা জড়িত সেহেতু ঐ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ সংক্ষুব্ধ হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

তবে প্রশ্ন হতে পারে কেন ঐ তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতে প্রায় ছয় মাস সময় লেগে গেল যেখানে প্রাথমিক ভাবে মাত্র ২১ দিন সময় বেধে দেয়া হয়েছিল ? এ জন্য মূলত দু‘টি কারণ ছিল, এক সাত সদস্য বিশিষ্ট ঐ তদন্ত কমিটিতে দুজন প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন যারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনভুক্ত নন এবং তারা ঢাকায় বসবাস করেন, যাদের একজন বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব ও অন্যজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ফলে তাদের দাপ্তরিক কাজ শেষে সচরাচর সব সময় তদন্ত কমিটির সভার কাজে যোগ দেয়া সম্ভব হতোনা, করাও যেত না। তাছাড়া ঐ সময় বিরোধীদলের ঘন ঘন হরতালের দরুনও তাদের পক্ষে তদন্ত সভাগুলোতে উপস্থিত হওয়া কষ্টসাধ্য হত। দ্বিতীয়ত : ঐ ঘটনার অল্প কিছু দিন পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া জোরে সোরে শুরু হয়, মাননীয় উপাচার্য ভর্তি প্রক্রিয়ার প্রায় পুরো দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করে কখনও কিশোরগঞ্জ, কখনও নেত্রকোনা কখনও ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় আবার কখনও বা কুমিল্লায় সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য চলে যেতেন এমনকি অস্ট্রেলিয়াতে গিয়েও এক নাগারে প্রায় ১৩ দিন পর্যন্ত কাটান। ফলে ঐ সময় বহুদিন আমাকে সকাল থেকে রাত্র ১টা এমনকি রাত্র ২টা পর্যন্ত কখনও ডিন অফিসগুলোতে কখনও ইন্টারনেট অফিসে কখনও বা আমার নিজ অফিসে কাটাতে হয়েছে। ফলে সুষ্ঠু সুন্দর একটি ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।

এর ফলে উলি¬খিত ১লা ও ২রা আগস্টের ঘটনার তদন্তের প্রতিবেদন প্রণয়নে একটু বিলম্ব ঘটেছে। উপরোল্লিখিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনারই বিচারপ্রক্রিয়া বিম্বকরণ হয়েছে বিশেষ করে ১লা ও ২রা অগাস্টের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন যেহেতু ইতোমধ্যে জমা দেয়া হয়েছে সেহেতু ঐ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনই কালক্ষেপণের প্রয়োজন ছিল না। ঐটির সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিল¤¦ করার জন্য বিচার বিষয়েরর বিখ্যাত উক্তটি এখানে প্রযোজ্য বলে আমার মনে হয় ”Justice delayed means justice denied। অতএব এ দুটি ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহল সংক্ষুব্ধ হলে আশ্চার্য হওয়ার কিছু থাকে না। মাননীয় উপাচার্য, ১৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক সমিতির দাবির মুখে আপনার পদত্যাগের ঘোষণায় আমিই প্রথম বিরোধিতা করেছিলাম এবং আপনাকে ঐ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম; তবে ঐ বিরোধিতা এ জন্য নয় যে, আপনি অনেক ভালো কাজ করেছেন অথবা সব সিদ্ধান্ত সঠিক নিচ্ছেন অথবা বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নয়েনে ও সমৃদ্ধির শীর্ষে নিয়ে গিয়েছেন অথবা নিয়ে যাচ্ছেন।

আমি আপনার পদত্যাগের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম এ জন্য যে, বর্তমান সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ভূতপূর্ব উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এবং আপনিও যদি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তা হলে এটা প্রতিভাত হয় যে, বর্তমান সরকার হয় অযোগ্য ব্যক্তিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেন, অথবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি/শিক্ষক সমাজ বর্তমান সরকারকে মোটেই পছন্দ করে না এবং সে কারণেই বর্তমান সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত যেকোন উপাচার্যকে এখানে কাজ করতে দেয়া হয় না। তাই তারা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। আমি দ্বিতীয় বক্তব্যটি গ্রহণ করতে একদম রাজি নই। সে কারণেই আপনার পদত্যাগের বিপক্ষে আমার অবস্থান ছিল। আর আমি নিজে যেহেতু বর্তমান সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত প্রো-উপাচার্য ছিলাম সেহেতু বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ঐ জাতীয় অপবাদ দেয়ার সুযোগ দিব কেন ? যদিও আপনি বারংবার বলেছিলেন যে আপনি পদত্যাগ করে আমাকে দায়িত্ব দিয়ে চলে যাবেন।

আমি ঐ জাতীয় চাপের মুখে পদত্যাগ করা উপাচার্যের নিকট থেকে দায়িত্ব নিয়ে নিজের নামের সাথে উপাচার্য কিংবা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শব্দটি সংযোজন করা মোটেই পছন্দ করি না। তা ভূতপূর্ব উপাচার্যের পদত্যাগের সময়ই হউক কিংবা আপনার বিষয়েই হউক না কেন ? যে কেউ এ ব্যাপারে সরকারের উপর মহলের যেকোন পর্যায়েই খবর নিয়ে দেখতে পারে। অনেকেই পদ-পদবীর জন্য সরকারের উপর মহলে অনেক দৌড়-ঝাঁপ পেড়েছে কিন্তু আমি কখনও কোথাও পদ-পদবীর জন্য যাইনি। হাফ প্যান্ট পড়ে মিস ফাতেমা জিন্দাবাদ বলে শ্লোগান দিয়ে আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছি এরপর থেকে ‘৬৯-এ ছয় দফা-এগার দফার আন্দোলন, ‘৭০-এর নির্বাচন, ‘৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ, সত্তুরের দশকের মাঝামাঝি থেকে ‘৯০ সাল পর্যন্ত সামরিক-সৈ¦রাচার বিরোধী আন্দোলন, পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত বিএনপি সরকার কর্তৃক অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরদ্ধে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে আওয়ামী রাজনীতির প্রতি আস্থাশীল ছিলাম এবং আছি। কখনও ডিগবাজি খেয়ে অন্য আদর্শের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হইনি এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিংবা নিজের ক্যারিয়ারের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়ে আওয়ামী আদর্শেও রাজনীতির সাথেই সম্পৃক্ত থেকেছি এবং আছি।

আমি মনে করি বর্তমান সরকার আমার আদর্শের মূল্যায়ন করে আমাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছিলেন, যদি সরকার প্রয়োজবোধ করেন তবে দেশের ও সরকারের প্রয়োজন আমাকে এর পরও কাজে লাগাবেন। আর যদি কোথাও কাজে নাও লাগান তাতে কোন মনোবেদনা নেই। আমি আদর্শে বিশ্বাস করি আর প্রো-উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে সরকার আমাকে যে সম্মানিত করেছেন তাতেই আমি বর্তমান সরকারের প্রতি ও মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠা, সততা ও ঐকান্তিকতার সাথে পালন করতে সদা সচেষ্ট। জাহাঙ্গীরনগর পরিবারের সবাই গত ২৫ বছর যাবত আমার সম্বন্ধে সম্যক অবগত।

আমি কোন ধরনের হঠকারিতার আশ্রয়ও নেই না বা প্রশ্রয়ও দেই না এবং তা পছন্দও করি না। আর বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী আপনাকে সাড়ে সাত ঘন্টা অবরোধ করে শ্লোগান দিয়ে আপনার পদত্যাগ ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবির যে বিষয় মাননীয় উপাচার্য আপনি আপনার লেখায় তুলে ধরছেন, আমি ঐ সময়ের সিংহভাগ সময়ই আপনার অফিসে আপনার সম্মুখে উপস্থিত ছিলাম। অতএব ঐ সময়ের যে নাটকের অবতারণা ঘটানো হয়েছিল তা আমি সম্যক অবগত প্রয়োজনে যথাস্থানে ও যথাসময়ে তা বিবৃত করবো। মাননীয় উপাচার্য, আপনি লিখেছেন ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আপনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। মাননীয় উপাচার্য এক বছরে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের কয়টি সভা করেছেন ? বিভাগীয় সভাপতিদের এমনকি অনুষদের ডিনদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে কয়টি সভা করেছেন ? কোন বিভাগের ক্লাশের কেমন অগ্রগতি, বিভাগগুলোতে পরীক্ষাসমূহ সঠিক সময়ে হচ্ছে কি না ? পরীক্ষার ফলাফলগুলো যথাসময়ে প্রকাশ করা হচ্ছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ের উপর আপনার কতটা আগ্রহ ছিল ? গত এক বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার কার্যক্রম বিভাগভিত্তিক গড়ে পাঁচ মাস থেকে আট মাস পিছিয়ে পড়েছে।

জানুয়ারিতে শুরু ক্লাশ শুরু হওয়া প্রথম বর্ষের ক্লাস এখন পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি বিভাগেই অর্ধেকও শেষ হয়নি। মাননীয় উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয়েরর অর্থে গাড়ির জ্বালানি ব্যয় করে দিনাজপুর, পাবনা, রাজবাড়ী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায়, কুমিল্ল, চট্টগ্রামের রামুতে, ঢাকার শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে প্রায় প্রতিদিন গমন, বিভিন্ন গণ-মাধ্যমের টকশোতে যোগদানের জন্য ঘন ঘন ঢাকা গমন করে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে আপনার নিজস¦ একটি গাড়ি সহ তিনটি গাড়ির জ্বালানি ব্যয় বহন করে ঐ ব্যক্তিগত/সামাজিক/রাজনৈতিক অনুষ্ঠানাদিতে যোগদান কতটা যুক্তিগ্রাহ্য ও নৈতিকতাপূর্ণ একবারও কি ভেবে দেখেছেন ? আর ঐ সকল অনুষ্ঠানে যোগদান করতে যে বিরাট অংকের সময় ব্যয় করেছেন তার সিকি ভাগও যদি জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার কার্যক্রম উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য ব্যয় করতেন তা হলে গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা-কার্যক্রমের এমন বেহাল অবস্থা হত না। আমাদের দেশে একটা প্রবাদ রয়েছে, ‘‘যে বউ পাড়া বেড়ায় তার সংসার উচ্ছন্নে যায়” মাননীয় উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ তথা সর্বমহলের ধারণা আপনি নিজের প্রচার ও খ্যাতির জন্য যতটা তৎপর তার সিকি ভাগও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের প্রতি নিষ্ঠাবান নন। তাইতো তাদের ধারণা, আপনার যদি জাতীয় রাজনীতি করারই মনোবাসনা থেকে থাকে তা হলে জাতীয় রাজনীতিতে যোগদান করলেই পারতেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদটি আঁকড়ে রয়েছেন কেনো ? তবে কি আপনার বর্তমান পদ ও পদবী শুধু ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্র প্রস্তুতে ব্যবহার করতেই আপনি সদা সচেষ্ট রয়েছেন ? জাহাঙ্গীরনগর একটা আর্থিক অনটন সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় এ বিশ্ববিদ্যালয়টি আর্থিক সচ্ছল নয়।

ঘাটতি বাজেটের দরুন যার শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেখানে জুন মাসের বেতন ভাতা দেয়া হয় বিভিন্ন খাত থেকে ধারকর্য করে, সেই উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ব্যয় করে নানান জায়গায় নিজের প্রচার ও খ্যাতির জন্য ঘুরে বেড়াবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে উপাচার্যেও বাসায় মুরগির ফার্ম বানাবে, চিত্তবিনোদনের জন্য দক্ষিণ দিকে বিরাট লম্বা একটা শানবাঁধা ঘাটলা বানাবে লেকে যাওয়ার জন্য, লেকের জলে জলসা ঘর তৈরি করবে এবং সেখানে নৌবিহারের জন্য নৌকা রাখবে এবং শিক্ষক সমিতি যখন তার পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করতে থাকবে এমন কি উপাচার্যের অফিসের প্রবেশদ্বার বন্ধ করে তাকে অফিসে প্রবেশ করতে দিবে না তখন তিনি শিক্ষক সমিতির দাবির প্রতি প্রদ্ধাশীল হয়ে তাদের আন্দোলন/ধর্মঘট/আপনার দাপ্তরিক কাজে প্রতিবন্ধকতা নিরসনকল্পে জোর প্রচেষ্টা/আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সাধ্যাতীত চেষ্টা না করে কখনও নব নিযুক্ত একজন প্রো-উপাচার্য কর্তৃক নৌকা চালান হবে আর আপনি নৌকার অন্যপ্রান্তে বসে উভয়ে চিত্তবিনোদন করবেন, কখনও বা টিপ-টিপ বৃষ্টির মাঝে আপনি নিজে নৌকা চালিয়ে সস্ত্রীক চিত্তবিনোদন করবেন (রোম যখন দাঁউ দাঁউ করে জ্বলছিল, নিরু তখনও বাঁশি বাজাচ্ছিল)। এমন দৃশ্যের সাথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গত ৪২ বছর যাবত পরিচিত নয় এবং এমন দৃশ্য তারা প্রত্যক্ষও করেনি, এমন পরিবেশ দর্শনে তারা অভ্যস্থও নয়, তাই তারা এজন্য সংক্ষুব্ধ হলে তাদের কি খুব বেশি দোষ দেয়া যায় ? তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে উপাচার্যের জন্য দু‘জন গানম্যান সার্বক্ষণিক থাকবে এমন পরিস্থিতির সাথেও তারা গত ৪২ বছর যাবত পরিচিত নয়। মাননীয় উপাচার্য, কাবিখা প্রকল্পাধীন যে সাতটি পুকুর খননের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে সেখানে ঐ সাতটি প্রকল্পের প্রধান হয়ে আপনি নিজে সাভার থানার টিএনও এবং একজন ঠিকাদার ব্যবসায়ীর যোগসাজশে ভ্যাকু ও তিনশত শ্রমিক দিয়ে সাতটি পুকুর খনন করার লক্ষ্যে সাইলোর গম ১৬.৫০ টাকা দরে বিক্রি করার চূডান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা পরে আমার ও আরো বেশ কিছু সুধীজনের তীব্র বাধার মুখে আপনি স্থগিত করতে বাধ্য হন। (আমার ও অন্যান্য) সুধী জনের ঐ তীব্র বাধা ছিল আপনার সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ও পরবর্তীতে ঐ সুধীজনদের সহযোগিতায় ঐ সাইলোর গম ২৭.১০ টাকা দরে বিক্রয় করা সম্ভব হয়। ফলে ঐ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় এক হাজার টন গম থেকে অতিরিক্ত এক কোটি দুই লক্ষ টাকা বেশি অর্জন করা সম্ভব হয়, যা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের প্রায় সকলেই অবগত।

ঐ ঘটনায় আপনার ভূমিকায় যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমহল সংক্ষুব্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় ? তাছাড়া ঐ অর্থ ব্যয় নিয়েও যদি চুলচেরা বিশে¬ষণ করা হয় তাহলে কি পানি অনেক দূর ঘোলাটে হয়ে যাবে না ? মাননীয় উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চতম পদে আসীন হয়ে বিভিন্ন সভা-সমিতিতে সাংবাদিক ও সাধারণ জনতার সামনে বক্তৃতা-বিবৃতিতে একটু সংযত ভাষা ব্যবহার করলে কি ভালো হয় না ? যখন-তখন যারে-তারে জামা-শিবির বানিয়ে ফেলাটা কি যুক্তিসঙ্গত ? এতে কি সংশ্লিষ্টরা সংক্ষুব্ধ হলে তা খুব অন্যায় হয়ে দাঁডাবে ? ষাটের দশকে পাকিস্তানের শাসকদের ভুল ও অন্যায় পদক্ষেপে এদেশের মানুষ যখন সংক্ষুব্ধ হয়ে পড়ত তখনি পাক সরকার ঐ সংক্ষুব্ধদের ভারতের চর আখ্যদিয়ে দিত। অনুরূপভাবে আপনার কোন অন্যায় অথবা ভুল পদক্ষেপের দরুন জাহাঙ্গীরনগরের কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তাকে জামাত-শিবির আখ্যা দেয়াটা কি যুক্তিসংগত ? এতে কি বড়ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টি হয় না ? মাননীয় উপাচার্য, আপনি আপনার সততার স্বাক্ষর হিসেবে ঢাকাতে আপনার কোন বাড়ি বা থাকার জায়গা নেই উল্লেখ করেছেন। আপনার লেখায় এটা ইংগিত বহন করে যে, ঢাকায় যাদের নিজস্ব বসবাসের স্থান রয়েছে তাদের মধ্যে অসততার গন্ধ রয়েছে। আপনি পৃথিবীর সবচেযয়ে বেশি পরিমাণের বৃত্তি প্রদানকারী জাপানের মনবসু বৃত্তি পাঁচ বছর ভোগ করেছেন, ঐ বৃত্তি ঐ পরিমাণ ভোগ করা অনেক মিতব্যয়ী ব্যক্তি দেশে এসে ঢাকায় ছোট খাটো হলেও একটা বসবাসের ব্যবস্থা করেছে। অবধকন্তু আপনি যুক্তরাষ্ট্রে একটা বিশ্ববিদ্যায়ে এক বছর ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

অতএব আমার মনে হয়, আপনি যদি মিতব্যয়ী ও বৈষযয়িক হতেন তা হলে ‘৮০ দশকে মনবসু বৃত্তি পাঁচ বছর ভোগ করার পরে সহজেই আপনি আপনার ঢাকায় বাসস্থান সমস্যার একটা ন্যূনতম সমাধান করতে পারতেন। তবে আপনি যে মিতব্যয়ী নন তার প্রমাণ মিলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থব্যয় আপনার সীমাহীন অপরিকল্পিত অপব্যয়ের প্রতি গভীর দৃষ্টি দিলে লক্ষ করলে, গত এক বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি বাজেট গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে গেছে আপনার অপরিকল্পিত অমিতব্যয়ী অপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপে বিরাট ব্যয় বেড়ে যাওয়ার দরুন যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সংক্রান্ত ও বাজেট বিষয়ক অফিসে খোঁজ নিলেই বুঝা যাবে। অতএব মাননীয় উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর পরিবারের সর্বসাধারণকে নির্বোধ ভেবে নিজের যে কোন অভিমত তাদের উপার চাপিয়ে দেয়া সুন্দর দেখায় না। ড. মো. ফরহাদ হোসেন অধ্যাপক, পরিসংখ্যান বিভাগ ও ভূতপূর্ব উপ-উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।