আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নৈশব্দ অথবা স্মৃতির অন্তরালে... ( পর্ব- ৩)



বিকালের নরম রোদে তোলা maple tree এর কিছু landscape photo তুলেছিলাম কালকে, সন্ধায় রুমে বসে সেই print গুলো দেখছিলাম। বসন্তের এই শেষদিকে যখন মেপল্ পাতাগুলো একদম লাল রঙের হয়ে যায় , তখন তা দেখতে কি যে ভালো লাগে ..!! আমি Boston এ এসে প্রথমেই এটা দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই । প্রতি বছরই চেষ্টা করি বসন্তের এই রঙগুলোকে ছবির মাধ্যমে ধরে রাখতে। কফি খেতে খেতে ছবি দেখছি, এমন সময় দরজায় বেলের শব্দ। খুলে দেখি নিলয়।

আজকেও হাতে খাবার এর বাক্স । বললো, এইখানে এসে প্রথমবার বাঙ্গালি খাবারের দোকান খুঁজে পেয়েছি, দেখোতো খাবারের quality কেমন? এই বলে খাবারের প্যাকটটা কিচেনে রেখে এসে সোফায় বসে পড়লো, হঠাৎ টেবিলে রাখা ছবিগুলোর দিকে চোখ পড়তেই হাতে তুলে নিয়ে দেখতে দেখতে বললো, এগুলো কার তোলা ? আমি মাথা নাড়তেই বললো, ছবিগুলো খুব সুন্দর হয়েছে, তুমি কবে থেকে ছবি তুলো ? আমি বললাম, লাইফে প্রথম camera কিনি university তে ঢুকে স্কলারশীপের টাকা দিয়ে, তখন থেকেই ছবি তোলার শুরু, তারপর প্রথম job এ join করে SLR কিনি। আর এখনতো বেশ কয়েক ধরনের ক্যামেরাই আমার সংগ্রহে আছে। প্রকৃতির রুপ আমাকে আমাকে এত আকর্ষণ করে যে আমি তা ছবির frame এ ধরে রাখতে চাই। নিলয় বললো, ‘তা অবশ্য তোমার চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

কথা বলতে বলতে তোমার চোখে আমি স্বপ্নময় মুগ্ধতার ছোঁয়া দেখতে পাচ্ছিলাম। এখন চলো যাই খেতে, আমার প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। এরপর আমরা ওর আনা বাঙালী খাবার ( খিচুড়ী, মুরগী ভুনা আর সেই সাথে আচার) খেলাম। খাবারগুলোর স্বাদও বেশ ভালো। খাবার পর আমি বললাম, চলো একটু হেঁটে আসি।

বাসা থেকে বের হয়ে আমরা বড় রাস্তার উপর চলে আসলাম। এখন বাজে রাত নয়টা। এখন রাস্তায় দু একটা গাড়ী চলাচল করছে, এখানকার মানুষ অনেক আগে থাকতেই বাসায় ঢুকে যায়, ফলে রাস্তাও বেশ ফাঁকা হয়ে যায়। Somerville এ একটু গ্রাম গ্রাম ছোঁয়া আছে আর মানুষগুলোও বেশ শান্তিপ্রিয়। তাইতো থাকার জন্য এমনই জায়গা বেছে নিয়েছি।

ইচ্ছা করলে কেমব্রীজ এ থাকতে পারতাম, কিন্তু নিরিবিলি থাকতে চাই বলে অফিস থেকে বেশ খানিকটা দূরেই থাকছি। হাটতে হাটতে নিলয় বলে উঠলো, এই কয়েক বছরে তোমার আমাকে একবারের জন্যও মনে পড়েনি? আমাকে তো খুঁজার চেষ্টাও করোনি..!!!আমি বললাম, হয়তো মনে পড়েছে কিন্তু যে নিজ থেকে হারিয়ে যেতে চায়, তাকে খুঁজে কি হবে? নিলয় বললো,এখন থেকে দেখে নিও আমি তোমাকে কিছুতেই ভূলতে দেবোনা... এরপর প্রায় প্রতি রবিবার ও আমার এখানে আসতে লাগলো। আমরা একসঙ্গে দুপুরে রান্না করতাম, খাওয়া দাওয়া করে বিকালের দিকে বের হতাম আশেপাশের জায়গাগুলোতে ঘুরতে। ওর পাল্লায় পড়ে Boston এর এমন সব জায়গা আমার দেখা হয়ে গেল যা গত সাত বছর এখানে থেকেও আমার দেখা হয়ে উঠেনি। এসময় আমি প্রচুর ছবি তুলতাম।

একবার আমরা downtown থেকে ফিরছি, হঠাৎ শুরু হলো বৃষ্টি। দুজনেই একেবারে ভিজে সারা। সকালে যখন বের হই তখন বুঝিনি যে এমন বৃষ্টিতে পড়তে হবে..!!! ভেজা অবস্থায় আমার বাসায় ফিরলাম। ওকে একটা টাওয়েল বের করে দিয়ে আরেকটাতে মাথা মুছছি , আর অমনি শুরু হয়ে গেছে অনবরত হাচ্ছি। মাথা মুছতে মুছতে নিলয় বললো, আমার জামাকাপড়তো সব ভিজে গেছে,আমি বাসায় ফিরবো কি করে? আমি বললাম, পোশাকগুলো খুলো, আমি ironing করে দিচ্ছি।

ও বললো, আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়? আজকে রাতটা এখানে থেকে যাই,কালকে এখান থেকেই কাজে চলে যাবো। আমি কড়া চোখে তাকাতেই ও বললো, plz..plz না কোরোনা, কথা দিচ্ছি তোমাকে মোটেই বিরক্ত করবো না। জানিনা ওকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হচ্ছে কিনা, আর এর পরে কি কি ঘটতে পারে সেটা ভাবতেও কেন জানি ইচ্ছা করছিলো না। মনের একটা অংশ হয়তো চাচ্ছিলো যে ও থেকে যাক। রাতে খাওয়া-দাওয়ার পরে আমি Laptop নিয়ে বসলাম, আর নিলয় সোফাতে বসে রিমোট হাতে টিভির চ্যানেল ঘুরাতে লাগলো।

এখানকার লোকাল চ্যানেলগুলোর একটাতে fix করে ও বলে উঠলো, দেখেছো, Arlington এ Mystic lake সাইডে একটা বাড়ি বিক্রি হবে, লোকেশনটা দারুণ, চলো যাই একদিন দেখে আসি। Laptop থেকে চোখ না সরিয়েই আমি বললাম, আমার অত টাকা নেই কেনার জন্য। নিলয় বললো, দুজনে মিলে টাকা দিলে হয়ে যাবে, কি বলো? আমি বুঝতে পারছিলাম, ও আমার লাইফে আসতে চাচ্ছে ভীষণভাবে, যার বহিঃপ্রকাশ হিসাবে ও আমার মনে জায়গা করে নিতে যাচ্ছে তীব্রভাবেই। এর আগে একদিন কথা প্রসঙ্গে আমি ওকে বলছিলাম, Lake side বাড়ি আমার খুব পছন্দের, যদি সুযোগ পাই, তবে এমনই একটা বাড়ি কিনে তাতে থাকতে চাই। একরুমের ভাড়া বাসায় আর থাকতে চাই না।

ও দেখি সে কথাটা ঠিকই মনে রেখেছে... Laptop বন্ধ করে আমি বললাম, আমার ঘুম পাচ্ছে, আমি শুয়ে পড়লাম। তুমি শোয়ার সময় বাতিটা নিভিয়ে দিও। এই বলে আমি বিছানায় গেলাম। এরপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তা টেরও পাইনি। ঘুমের মধ্যে পাশ ফিরতে গিয়ে হঠাৎ চমকে জেগে উঠলাম, চমক ভাঙ্গতেই আমি অনুভব করলাম নিলয়ের একটা হাত আমার কোমরের উপরে রাখা।

ও তাহলে সোফাতে না শুয়ে আমার পাশে এসেই শুয়েছে..!! অথচ আমি সোফাতে শোবে বলে বালিশ,চাদর সবকিছুই ওকে দেখিয়ে দিয়েছিলাম। আমি হাতটা না সরিয়েই পাশ ফিরে আবারও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। চলবে...

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।