আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'চন্দ্রে সাঈদী, আমি অবাক বিষ্ময়ে দেখি.................'

অনেক কথা বলবার আছে আমার...............সময়ের অপেক্ষায় কর্মস্থলে পৌঁছেই অদ্ভুত এক খবর শুনলাম আজকে। চাঁদে নাকি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী'র মুখচ্ছবি ভেসে উঠেছে! .......................জানি সাঈদী কেন্দ্রীক এই প্রসঙ্গ অনেক পাঠকের কাছেই তেতো ঠেকবে। কারণ সারা দিন ধরে এই একটা বিষয় নিয়ে এতো আলোচনা হয়েছে, সবাই ভীষণ বিরক্ত। মজার ব্যাপার হলো, এই অহেতুক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটা টক শো'ও হয়ে গেল এই মাত্র। রাত ৮'টার বাংলা সংবাদে বিশিষ্ট জনেরা এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দিলেন পর্যন্ত।

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া'র খতিব ছাহেব বললেন, বললেন প্রযু্ক্তি বিশেষঞ্জ মোস্তফা জব্বার। প্রত্যেকে নিজের দখলের জায়গা থেকে ব্যাখ্যা করলেন, ধর্ম তাত্ত্বিক আর প্রাযুক্তিক ব্যাখ্যা। আর টক শো'তে হাজির ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের 'মহাপরিচালক'। আরো একজন ছিলেন, ভুলে গেছি। আমার এখানে বিটিভি বাদে অন্য কোনো চ্যানেল দেখার ব্যবস্থা নেই।

তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় বিটিভির মতো অন্যান্য চ্যানেলও কম যায় না। বিটিভির উপস্থাপনার ঢং হয়তো একটু 'সেকেলে'; আর অন্যান্য চ্যানেল একই বিষয়ে দিবে 'আধুনিক উপস্থাপনা'। এই গুজবকে একেবারে যাচ্ছেতাই ভাবে এড়িয়ে যাবার সাহস, আমার বিশ্বাস, এখনো আমাদের মিডিয়াগুলোর হয় নি। এই সীমাবদ্ধতাকে আমিও কাটিয়ে উঠতে পারি নি। বিভিন্ন ব্লগ, ফেসবুক, অনলাইন নিউজ সাইটে সারা দিনে অসংখ্যবার এই নিউজ পড়েছি।

মানুষের মুখে শুনেছি। বিন্দু বিসর্গ বিশ্বাস করি না। তার পরও শোনার ভীষণ আগ্রহ। কে, কীভাবে গুজবের ব্যাখ্যা দিচ্ছে; 'ঘটনাকে' বিশ্বাস করে কারা ব্যাখ্যা দিচ্ছে, কীভাবে দিচ্ছে........ইত্যাদি ইত্যাদি। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে মানুষ কতো বোকা, গাধা; এতো এগিয়ে যাওয়া সময়েও মানুষ এমন অদ্ভুত গুজবে বিশ্বাস করে।

দিন শেষে একটা হিসাব করলাম। আমিও তো মানুষ্য গোত্রের বাইরের কেউ নই। তাহলে আমিও ভীষণ বোকা, গাধা। কারণ অবিশ্বাস করেও এমন 'মগজ রোচক' বিষয় নিয়ে ব্যয় করেছি আজকে দিনের অনেক মূল্যবান সময়। যারা এই লেখাটা পড়ছেন.............একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো, আজকে দিনের কতোটুকু সময় খরচ হয়ে গেছে এই ঘটনা বাবদ; ফেসবুকে বন্ধুদের স্ট্যাটাস দেখে, শেয়ার দেখে, অনলাইন নিউজ পড়ে, বিভিন্ন চ্যানেল শুনে দেখে, বন্ধু পরিজনের সাথে সরাসরি বা ফোনে আড্ডায়-তর্কে।

এবং আমার এই লেখাটা এখনো পর্যন্ত পড়ে। কি, হিসেব হয়েছে? তাহলে এগিয়ে যান............ মাসুদ রানা পড়েছেন?.......না পড়ে থাকলেও সমস্যা নেই। কারণ যে বইয়ের ঘটনা উল্লেখ করবো সে বইয়ের নাম আমার নিজেরও মনে নেই। দুর্ধর্ষ এক বাঙালী বিজ্ঞানী চরিত্র মাসুদ রানা সিরিজের অনেক বইয়ে আছে, কবীর চৌধুরী। একবার একটা বই পড়েছিলাম.......কাহিনীটা এমন, একই বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন কবীর চৌধুরী এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা।

যিনি আগে সফলভাবে গবেষণা শেষ করতে পারবেন, তার নামে প্রযুক্তিটি পেটেন্ট করিয়ে নিতে পারবেন। পাঠক, বিভ্রান্ত হবেন না। ধান বানতে শিবের গীত গাইছি না মোটেও। চালিয়ে যান........ তো কবীর চৌধুরী এমন এক জটিল যন্ত্র তৈরি করলেন, যার একেকটা কপি পাঠিয়ে দিলেন ঐসব বিজ্ঞানীদের কাছে, যারা একই বিষয় নিয়ে কবীর চৌধুরীর প্রতিযোগী গবেষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। আসলে এই যন্ত্রের না ছিল মাথা, না ছিল মুন্ডু।

কিন্তু দেখতে যন্ত্র ভীষণ একটা কিছু। তো, ঐসব গবেষকেরা নিজেদের গবেষণা কর্ম ছেড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কবীর চৌধুরীর বানানো এই অহেতুক যন্ত্র নিয়ে। আর ঠিক এই সময়ে অন্যদের মনোযোগ ভিন্ন দিকে সরিয়ে দিয়ে নিজের গবেষণা নিয়ে অনেক দূর সামনে এগিয়ে যান কবীর চৌধুরী............... পাঠক, বোধ হয় এখন কিছুটা আঁচ করতে পারছেন, এই নাতিদীর্ঘ গল্পের অবতারণা কেন করলাম। সকল বর্গ নির্বিশেষে দিনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় জুড়ে মেতেছিলাম এই ফালতু বিষয় নিয়ে। হয়তো এখনো আলোচনা চলছে, জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ চলছে বিভিন্ন মাধ্যমে।

কোটি কোটি টাকা, বিপুল সময়, আর কোটি মস্তক খরচ হয়ে গেল, হচ্ছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন...........কারা আমাদের মনোযোগকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দিকে সরিয়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাচ্ছে, কারা এই 'কবীর চৌধুরী'? কী প্রচন্ড শক্তি গুজবের। কী তার গতি‍! শেষ রাতে জাগিয়ে তুললো এক কথায় সারা বাংলাদেশ! প্রিয় পাঠক, সরল বিশ্বাসে দুই'এ দুই'এ চার মিলিয়ে নেবার সরল অঙ্কের সময়ে আমরা আর নেই। আমাদের বিশ্বাস/অবিশ্বাস নিয়ে খেলা, আমাদের মূল্যবান সময়গুলোকে কিনে নেওয়া কতো সহজ ভেবে দেখেছেন? অবাক হবেন না, যদি 'নতুন বোতলে পুরনো মদ' বার বার পরিবেশিত হতে থাকে। খেলা চলছে 'দুষ্ট বিজ্ঞানীদের'।

আর স্পেসিমেন হিসেবে নিষ্ঠুর বলী হচ্ছে মানুষ। প্রিয় পাঠক, প্রিয় বন্ধু সজাগ থাকুন............ 'সর্ব সাধন সিধ্য হয় তার ভবে মানুষ গুরু দীক্ষা যার.......' এই জ্ঞানে নিজের ভূমিকা নির্ধারণ করুন, কারো কথায়, কোনো চিন্তায় প্ররোচিত না হয়ে। 'জয়, মানবতার জয়............' ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।