আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বক্ষীণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হিসেবে আমার ভাবনা: যার ঘরে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে সে বুঝে প্রতিবন্ধিতার ব্যথা-বেদনা...........................।



আমি যদিও মৃদু বা ক্ষীণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তারপরেও নানা সমস্যায় পড়ি রাস্তা-ঘাটে । তখন বুঝি প্রতিবন্ধিতা কি? একদিন রাতে খামার বাড়িতে ম্যানহলের মধ্যে পড়ে যাচ্ছিলাম। একদিন রাতে ফার্মগেটে বন্ধু এবং আমি হাটছিলাম। অন্ধকারে বন্ধু ভেবে এক মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছিলাম। মেয়ে ফাজিল বেটা বলে গালি দিয়ে তেড়ে এসেছিল।

যখন দেখলো যে, আমি ক্ষীণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তখন সে অনুতপ্ত হলো। আরেকদিন এক তরুণীর সাথে ধাক্কা লাগে। তরুণী রাগান্বিত হয়ে বলল, বেটা চোখে দেখুস না। আমি বিনয়ের সাথে বললাম, আপা আমি আসলে রাতে চোখে ভাল দেখি না। আপনি কি দেখেন? সে লজ্জিত হলো।

বেশ কিছু দিন আগে নোয়াখালী থেকে এক কৃষক এসেছে ঢাকায়। তার ৯ মাসের এক কন্যা শিশু কথাও বলতে পারে না, বসতেও পারে না। তার চিকিৎসা দরকার। এক এনজিওতে ফ্রি থেরাপী নিচ্ছে। আমি বললাম ভাই।

আপনি সিআরপি নিয়ে যান। সে বলল, ভাই সিআরপিতো চিনি না। আপনি আমাদের সাথে চলেন। খুব উপকৃত হবো। আমি পরের দিন গেলাম।

চিকিৎসক বলল, ব্রেইন পরীক্ষা করাতে হবে। টাকা লাগবে ৫ হাজার টাকা। তারা আমার বাসার পাশে আত্মীয়র বাসায় থাকে। রাতে দেখি ওই বহুমুখী প্রতিবন্ধী শিশুটির বাবা শিশুটিকে আদর করছে। যখন শুনলাম প্রীতি আম্মু কইরে।

আমার হৃদয় যেন কেঁদে ওঠলো। আমি ভাবলাম সব আল্লাহর সৃষ্টি। এ শিশুটি তো আর অন্য দশজন শিশুর মতো বাবা বলে ডাকতে পারতো। কিন্তু কেন পারে না। তার প্রতিবন্ধতা রয়েছে।

আরেকটি ঘটনা বলি। আমি যেখানে কাজ করি সেখানে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী তথা মুগুর পা ওয়ালা মহিলা সহ সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে। সে একদিন বলল, আজমাল ভাই! স্বামী এডিসি এবং স্ত্রী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এমন পরিবারে একটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলে রয়েছে। ছেলেটার বয়স ২২ বছর। একদিন আমার দুলাভাইয়ের সাথে ওদের বাসায় যায়।

ওই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলেটা ওর মাকে বলে, আম্মু আমি ওই সুন্দরী আপাকে বিয়ে করবো। আপা খুব সেজেছে। ওই মুগুর পা ওয়ালা প্রতিবন্ধী মহিলা বলল, ঠিক আছে। তখন দেখলো যে, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলেটা শান্ত হলো। পরে এডিসি এবং ইউএনও বলল, আপা রাগ বা মাইন্ড করিয়েন না।

ওই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলেকে ছাড়া আমি কোন অনুষ্ঠানে যায় না। আপনাকে যে ভাষায় কথা বলল, সে রকম করে কথা বলে অনেক মহিলাকে। তবে অনেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতিবন্ধী শিশু বা ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তারপরেও তারা গোপন রাখে। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী মানুষটি নিয়ে যেতে কুণ্ঠাবোধ করে।

যাক ওসব কথা। পরিশেষে একটাই কথা যে, প্রতিবন্ধিতা বিধাতার অভিশাপ নয়। যার ঘরে প্রতিবন্ধী রয়েছে সে বুঝে ব্যথা-বেদনা। তবে অন্য মানুষ বিরক্ত হলেও মা কোন দিনও বিরক্ত বোধ করে না। আসুন আমরা প্রতিবন্ধী বান্ধব সমাজ গড়ার জন্য এগিয়ে আসি।

এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। মনে করতে হবে, ওরাও মানুষ। ওদের রয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার। আজ এ পর্যন্তই......................।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।