আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ত্রিমাত্রিক মগজে চতুর্থমাত্রার চিন্তাভাবনা



শুরুতেই কিছু কথা বলে নেই। কারো কোন লেখা পড়ার আগে লেখক কোন মানসিকতা নিয়ে লিখছেন সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন বলেই আমি মনে করি। আমি একজন নগণ্য ছাত্র মানুষ। আমার জ্ঞানের দৌড়ও খুবই সামান্য। আমি যখনই যা চিন্তা করি বা যখনই নতুন কিছু জানি,তা নিজের জ্ঞানের স্বল্প পরিধির মধ্যে নিজের মত বুঝে নিজের মত সাজিয়ে নিতে পছন্দ করি।

আমার জ্ঞানের পরিধিটা অনেক ছোট বলেই আমি কঠিন গাণিতিক সমীকরনও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। আমার এই সীমাবদ্ধতাটাকে আমার অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করীর দৃষ্টিতে না দেখে আমার নিজস্ব উর্বর মস্তিষ্কপ্রসূত কিছু কথা বলেই আপনারা ধরে নিবেন- এই কথাটা আগেই বলে নিলাম। এবং আমি এখানে যা লিখছি, তা কিন্তু পাত্তা পাওয়ার জন্য লিখছি, নিজেকে জ্ঞানী প্রমাণ করার জন্য লিখছি বা নিজেকে জাহির করার জন্য লিখছি এটা মনে করার একেবারেই কোন কারণ নেই। কারণ এই লেখাটুকুর মূল উদ্দেশ্যই হল আমাদের প্রচলিত কিছু বৈজ্ঞানিক সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়ে একটু স্বাধীন মনের উড়াউড়ি(ব্যাপারটা যৌক্তিক না অযৌক্তিক বিচার করার দায়িত্ব পুরোটাই পাঠকের)। এখানে মনে হতে পারে আমি কিছু প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক মতবাদ কে পাশ কাটিয়ে আমার নিজস্ব মতবাদ দাঁড়া করাচ্ছি।

তবে তা অবশ্যই কাউকে ছোট করে নয়। তাই এই অধমের এই ক্ষুদ্র কল্পনাবিলাসী লেখালেখিটা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে আপনাদের সুচিন্তিত মতামত দিবেন, এই অপেক্ষায় থাকলাম। আর হ্যাঁ, আরেকটা ব্যাপার,বিজ্ঞানী আর দার্শনিকের তফাৎ টা বুঝেন তো?দার্শনিকের চিন্তা স্বাধীন,সেখানে যুক্তি তর্ক মানে না,সত্য মিথ্যার বিচারও দার্শনিক করেন না,তার তত্ত্ব টা প্রমাণ করার দায়টুকুও তার নেই,তিনি শুধু তার ভাবনা টুকু বলে যান,সত্য-মিথ্যা যাচাই এর কঠিন কাজটুকু বিজ্ঞানীর ঘাড়েই পড়ে সবসময়। আমি কিন্তু নিজেকে দার্শনিক ভাবতেই পছন্দ করি। এরপর আরো কিছু কথা না বললেই নয়।

এই লেখাটি অনেকের কাছেই অতিরিক্ত দীর্ঘ্য এবং বিরক্তিকর মনে হতে পারে,মনে হতে পারে এই কথাগুলো তো আমাদের জানাই,শুধু শুধু এত উদাহরন না দিয়ে লেখাটিকে আরো আকর্ষনীয় এবং প্রাঞ্জল করা যেত। কিন্তু আমি তা করিনাই। এর বড় কারন হল, আমার লেখাটা শুধুমাত্র science পড়ে আসা মানুষদের জন্য না,আমি চাই আপনার ক্লাস 5-6 এ পড়া ভাইটাও যেন আমার লেখাটা পড়ে বুঝতে পারে। এজন্যই লেখাটা যতটুকু সম্ভব বিষদ করতে বাধ্য হয়েছি। এই লেখাটার সূচনা আজ থেকে কয়দিন আগে,আমাদের কিছু অতিজ্ঞানী পোলাপাইনের আজাইরা টাইম পাস আলোচনা থেকে।

আমি আর আমার এক বন্ধুর অনেকদিনের তর্ক বিতর্কের ফল এই লেখাটা। আমাদের দুইজনের কেউই ফিজিক্সের ছাত্র না। কিন্তু আমাদের পছন্দের আলোচনার বিষয় ফিজিক্স বলা যায়। সেইদিন সে আমাকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করল time travel সম্ভব কিনা? খুবই common আর boring একটা টপিক,কোনই সন্দেহ নাই। আমি ওইটা নিয়ে প্যাচাল পাইরা পেইন দিতে চাইনা কাউকে,কিন্তু আমার টপিক টা বুঝানোর জন্য এইটা খুবই জরুরী একটা বিষয়।

এখানে time travel আমার আলোচনার বিষয় না, বিষয় এর সীমাবদ্ধতাটুকু নিয়ে। এবং এক্ষেত্রে আমার অঙ্কের মেধা খুবই সামান্য বলে আমি গানিতিক তর্ক টা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। আমার জবাব ছিল,”সম্ভব”। এখন আমার সাথে অনেকেই দ্বিমত পোষন করবেন যে,”আলোর চেয়ে দ্রুতবেগে যেতে পারলেই time travel সম্ভব। কিন্তু আলো হচ্ছে সেই জিনিস যার চেয়ে দ্রুত আর কিছু যাওয়া সম্ভব না (আলবার্ট আইনস্টাইন যা গাণিতিক ও তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করে গিয়েছেন)।

আর যেহেতু আলোর চেয়ে দ্রুতবেগে কোনকিছু এখনো যেতে পারেনাই,তাই time travel অসম্ভব বলেই আমরা ধরে নিতে পারি”। ঠিক এই কথাটাই আমার বন্ধু আমাকে বলল। কিন্তু এই কথাটতেই আমার আপত্তি। আমার যত মাতুব্বরি বলেন আর যাই বলেন,সবই এই সীমাবদ্ধতাটুকু নিয়েই। এইখানে স্পষ্ট করে point-out করে দেওয়া ভাল।

১। আলোর চেয়ে দ্রুতবেগে যাওয়া কেন সম্ভব না? ২। আমরা কেন ধরে নেই যে আলোর চেয়ে দ্রুত কোনকিছু এখনো যেতে পারেনাই? বিশ্লেষন ১ঃ আলোর চেয়ে দ্রুতবেগে যাওয়া কেন সম্ভব না? আমার মতে অবশ্যই সম্ভব ব্যাপারটা একটু কঠিন করে না বলে আমি বরং সহজ করে বলার চেষ্টা করি। নিজেকে একবার প্রশ্ন করে দেখুন তো,আপনি কি কখনো একটা জ্যামিতী বক্স এর ছোট্ট ১ইঞ্চি স্কেল দিয়ে ঢাকা-চিটাগং হাইওয়ের দুরত্ব মাপার চেষ্টা করেছেন? বা কখনো চিন্তা করে দেখেছেন যে একটা সাধারণ মুদি দোকানের দাড়িপাল্লা দিয়ে মহাখালী ফ্লাইওভারের ভর মাপা যায় কিনা?আপনাদের জবাব কি নিশ্চয়ই আমাকে বলে দিতে হবেনা? আমার যুক্তিটা এখানেই। আমরা যখনই যাই পরিমাপ করি,একটা নির্দিষ্ট সুবিধাজনক একক অথবা মানদন্ড ধরে পরিমাপ করি,বড় পরিমাপের জন্য বড় একক,ছোট পরিমাপের জন্য ছোট।

এখন আমরা যখন কোন বড় অঙ্কের বেগ বা দ্রুতি পরিমাপ করব,তখন নিশ্চয়ই আমাদের এককটাও বড় হতে হবে,না?আর এক্ষেত্রে আমাদের দ্রুতি যেহেতু আলোর দ্রুতির (3x108 m/s) চেয়েও দ্রুত কোন বস্তুর(ধরে নেই 4x108 m/s কিংবা আরো বেশি), আমাদের সুবিধাজনক এককটাও হবে এক্ষেত্রে আলোর দ্রুতি,এটাই স্বাভাবিক। আমরা ধরিও তাই। এই দিকটা আমাদের সর্বপ্রথম দেখিয়ে গেছেন মহামতি আলবার্ট আইনস্টাইন। তারই theory of relativity এর হাত ধরে মানবজাতি প্রথম এরকম বিশাল মাপের গবেষনার পথ দেখেছিল,ওনার প্রতি আমার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা। কিন্তু আমি যদি বলি, ওনার এই থিওরী শুধু আমাদেরকে পথই দেখায় নাই,সাথে সাথে একটি ক্ষুদ্র গন্ডির মধ্যেও আবদ্ধ করে রেখেছে,আপনি কি আমার সাথে একমত হবেন?উনি নিজেই বুঝতে পেরেছিলেন যে মহাবিশ্বের এই বিশাল রহস্যময়তার মধ্যে ওনার একজনের জ্ঞান এর পরিধি খুবই নগণ্য,তিনি যতই মেধাবী হোন না কেন।

তাই তো একবার তার মুখে শোনা গিয়েছিল এক মহান উক্তি, “জ্ঞানের এই মহাসমুদ্রে আমি তো ক্ষুদ্র এক বালুকনা মাত্র”। তাঁর এই স্বগতোক্তির মধ্যেই পরিষ্কার ছিল ওনার আহবান। আমরা যেন কোন গন্ডিতে বদ্ধ না থেকে ওনার মতই out of the box চিন্তা করি,নাহলে কখনোই আমাদের পক্ষে নতুন কিছু আবিষ্কার সম্ভব হবে না। তো যা বলছিলাম,আমাদের এখন পর্যন্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে দৌড়,আমাদের কল্পনার যে সীমা,আমাদের মতে যেকোন পরিমাপের বা কোনকিছুর বিশালত্বের আন্দাজ আমরা আলোর সাথেই একমাত্র তুলনা করতে পারি। এর চেয়ে দ্রুতগতির কোন বস্তু যেহেতু আমরা এখন জানিনা বা আবিষ্কার হয়নাই,সেহেতু আলোই এখন পর্যন্ত আমাদের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক একক এরকম বড় মাপের কিছু হিসাব করার জন্য।

এই বিষয়ক যত সমীকরন আমরা ব্যবহার করি, যেমন লরেন্টজ রূপান্তর, কাল দীর্ঘায়ন, দৈর্ঘ্য সঙ্কোচন, ভরের আপেক্ষিকতা (Lorentz transformation, time dilation, length contraction, relativity of mass)- এই সব সমীকরনেই আমরা বিভিন্ন চলকের সাথে ধ্রুবক হিসাবে একটাই রাশি ব্যবহার করতে পারি,সেটা হচ্ছে আলোর বেগ (c). আমার মতে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা। এর বাইরে আমরা কখনোই কোন কিছু চিন্তা করতে পারিনা,ভাবতে পারিনা, এরকম কিছুর অস্তিত্ত্ব মেনে নেওয়াও আমাদের জন্য বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। এটাই আমার প্রথম অবজেকশন। ভাল করে চিন্তা করে দেখুন একটা ব্যাপার। একটা জিনিস যদি আপনি দেখতে না পারেন, শুনতে না পারেন, এমন কি অনুভবও করতে না পারেন,তাহলেই কি জিনিসটার অস্তিত্ত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে? অবশ্যই না।

এখানে একটা খুবই কমন কৌতুক বলার লোভ সামলাতে পারছিনা,বলেই ফেলি। “শিক্ষকঃ জোসেফ প্রিসলী ১৭৭৪ সালে অক্সিজেন আবিষ্কার করেন। ছাত্রঃ তাহলে স্যার এর আগে মানুষ কিভাবে শ্বাস নিত?” আমরা যদি কোনকিছুর অস্তিত্ত্ব আমাদের সীমিত ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করতে না পারি,তবে সেটা একান্তই আমাদের সীমাবদ্ধতা। আমরা সাধারনত একটা জিনিস কে হয় দেখে,শুনে,ঘ্রান নিয়ে, স্পর্শের মাধ্যমে অনুভব করেই তার অস্তিত্ত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারি। আমাদের দর্শনেন্দ্রিয়,শ্রবনেন্দ্রিয় ইত্যাদির সীমাবদ্ধতাও আমরা অনেকটাই দূর করতে পারি আমাদের আবিষ্কৃত বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে।

বিভিন্ন আনুবীক্ষনিক জীবানু বা পদার্থের অনু-পরমানু আমাদের দেখার কথা না,কিন্তু আমাদের সুবিধা মত আমরা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বানিয়ে নিয়েছি এসব দেখার জন্য। ultrasonic sound আমরা কানে শুনিনা,কিন্তু ultrasonic sound শুনা তো দূরের কথা আমরা এখন এগুলকে পোষ মানিয়ে নিজেদের সুবিধামত ব্যবহার ও করতে শিখে গেছি(radio, cellular network ইত্যাদি)। কিন্তু ভাইরে,আমরাও তো মানুষ,সীমাবদ্ধতা তো আমাদেরও আছে,নাকি?আল্লাহ তো আর আমাদের কে সবকিছুতে স্বয়ংসম্পূর্ন করে দুনিয়াতে পাঠান নাই,না?আমাদের ইন্দ্রিয়ের সীমাবদ্ধতা থাকাটা তো খুবই স্বাভাবিক,কি বলেন?তাই বলে আমাদের সীমাবদ্ধতার জন্য আমরা যদি একটা বস্তুর অস্তিত্ত্ব অস্বিকার করি,তাহলে কি সেটা খুব অবিচার হয়ে যায় না? এমনকি আমাদের যেসব যন্ত্রপাতি আছে সবই তো আমাদের ইন্দ্রিয়েরই একটু modification ছাড়া আর কিছু না। তো যেই জিনিস আমরা আমাদের ইন্দ্রিয়ের বাইরে কল্পনাই করতে পারিনা,সেটা কে বুঝা কিংবা যন্ত্রের সাহায্যে বুঝার চেষ্টা করাটা কি বড় বোকামি হয়ে যায় না? আমাদের এসব ইন্দ্রিয়ের মধ্যে আমরা সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল আমাদের দর্শনেন্দ্রিয়ের উপর(আলচনা কিন্তু ঘুরেফিরে আবার সেই আলোতেই চলে আসে)। আমাদের পিছনে একটা গ্লাস টেবিল থেকে পড়ে ভেঙ্গে গেলেও আমরা খুব বেশি হলে আন্দাজ করতে পারি যে গ্লাস টা আমদের চেয়ে কতদুরে ভাংলো,কিন্তু পরিষ্কারভাবে ভাঙ্গা গ্লাসটার অবস্থান বুঝতে গেলে কিন্তু আমাদের ঘাড় ঘুরিয়েই দেখতে হবে যে গ্লাস টা ঠিক কোথায় পড়ে আছে।

আমাদের পিছনে একটা গাড়ি হর্ন দিলে আমরা তার অস্তিত্ত্ব টের পাব,কিন্তু গাড়িটা কতদুরে আছে,জানতে হলে কিন্তু আপনাকে গাড়িটার দিকে একবার তাকাতেই হবে যদি না আপনার গাড়ির নিচে পড়ে মরার ইচ্ছা না থাকে। প্রতিটা মানুষের গায়েই কিন্তু আলাদা নিজস্ব একটা গন্ধ আছে,আপনি কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আপনি চোখ বন্ধ করেই আপনার মা ছাড়া অন্য কারো গায়ের গন্ধ শুঁকেই বলে দিতে পারবেন মানুষটি কে?আপনাকে চোখ খুলে দেখতেই হবে। স্পর্শের কথাই ধরি,একজন জন্মান্ধ মানুষ ছোটবেলা থেকেই শুধুমাত্র স্পর্শের উপর নির্ভর করেই পৃথিবীটা অনুভব করে আসছেন,কিন্তু তিনি কি আসলেই এই সুন্দর পৃথিবীটার পুরো রুপ অনুভব করতে পারছেন?কখনোই না। আলো ছাড়া আমরা অচল। এই আলোটা কি?একটা electromagnetic wave ছাড়া তো আর কিছু না।

electromagnetic wave এর বিশাল রেঞ্জের মধ্যে আমরা একমাত্র আলো এবং বিকীর্ন তাপের খুব অল্প পরিমানই কোন যন্ত্র ছাড়া অনুভব করতে পারি। electromagnetic wave এর আরো অনেক রুপ আছে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে। আমরা যে tv/radio signal ব্যবহার করি,তা কিন্তু electromagnetic wave। আপনার ঘরের খাবার গরম করার জন্য যে microwave oven, সেটাও কিন্তু electromagnetic wave’ই ব্যবহার করে। এমনকি অতিবেগুনি রশ্মি, x-ray, পারমানবিক বিস্ফোরনে বিকিরিত আলফা,বিটা,গামা রে-এসবই কিন্তু electromagnetic wave এরই প্রকারভেদ।

আলো ছাড়া যেমন একজন সাধারন মানুষ অচল,তেমনি electromagnetic wave ছাড়া আধুনিক বিজ্ঞানও অচল বলা যায়। বিজ্ঞানী গ্যালিলিও কিংবা নিউটনের আমলে হয়তো দুরবীন দিয়ে আকাশ দেখে গ্রহ-নক্ষত্র আবিষ্কার করা সম্ভব ছিল। কিন্তু সেই সেকেলে প্রযুক্তি আজ আর নাই। শুধুমাত্র আলোর উপর নির্ভর করে এখন কোন কিছুই করা হয়না আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে। শুধুমাত্র আলোর উপর নির্ভর করে থাকলে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান অনেক কিছুই আবিষ্কার করা থেকে বঞ্চিত হত।

এই যেমন ধরেন,blackhole এর কথাই বলি। যেই জিনিস আলো পর্যন্ত শোষন করে নেয়,সেই জিনিসও মানুষের পক্ষে শুধু অস্তিত্ত্ব অনুধাবন করা সম্ভব হয়েছে একটি blackhole এর আশপাশ থেকে electromagnetic wave কি পরিমানে শোষন হচ্ছে তা বিশ্লেষন এর মাধ্যমে। এই আলো কিংবা electromagnetic waveই আমাদের এখন পর্যন্ত omega point বলা চলে জ্ঞান-বিজ্ঞান সাধনার ক্ষেত্রে। আর এই electromagnetic waveই যেখানে আমাদের আদার ব্যাবসা,সেখানে জাহাজের খবর নেওয়াটা কতটুকু যৌক্তিক,ব্যাপারটা কি আমি আপনাদের বুঝাতে পেরেছি? এ কারনেই আমার মতে আমরা যেসব সমীকরন দিয়ে এখন পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, যেসব সমীকরন দিয়ে এই বিশাল মহাবিশ্ব কে বুঝার চেষ্টা করে যাচ্ছি, সেগুলোর সীমাবদ্ধতা নিয়ে কি আমার প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক না?পুরো ব্যাপারটাই তো হয়ে যাচ্ছে কুয়োর ব্যাঙ হয়ে কুয়োর বাইরের পৃথিবীটাকে বুঝার চেষ্টা করা,না?যতদিন না আমরা এই সমীকরনগুলোর সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে না পারব,এগুলোর সত্যিকারের গিঁটগুলো বুঝে উঠতে না পারব,ততদিন মনেহয় আমাদের আর জটিল প্রশ্নগুলো নিয়ে মাথা না ঘামানোই উচিত। কারন আমরা হয়তো প্রযুক্তিগতভাবে অনেকদুর এগিয়ে যাচ্ছি দিনদিন,কিন্তু আমরা কেউ একটা জিনিস খেয়াল করেছি কি? বেশ কিছু দশক পার হয়ে গেল আমরা পদার্থবিজ্ঞানে যুগান্তকারী কোন নতুন আবিষ্কার করতে পারছিনা।

তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে ইদানিং যাই চর্চা হচ্ছে,যা গবেষনা হচ্ছে তার সিংহভাগই কিন্তু পুরনো থিওরিগুলোরই মডিফিকেশন, যেগুলোর ব্যাবহারিক মুল্য কাগজে কলমেই, যেগুলো আমাদের সেভাবে নতুন আশার আলো দেখাতে পারছেনা, ওগুলো নিয়েই বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন বেশি,কিংবা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আংশিক সমাধান করেই আর কোন কুলকিনারা না পেয়ে ঝুঁকে পরছেন nanotechnology এর মত পদার্থবিজ্ঞানের নতুন শাখাগুলোতে। কিছু অধ্যবসায়ী মানুষ যে এখনো আঠার মত লেগে নেই,বললে ভুল বলা হবে। তবে ওই যে সেই পুরনো ধারনাগুলো হাতড়ে বেড়ানো বন্ধ না হলে একই বৃত্তে ঘুরপাক খেয়ে যেতে হবে। আবার একজন আইনস্টাইন আসার আগে এই বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসার সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে। এজন্যই এই বিশ্লেষন থেকে আমার শেষ কথা,আলোর চেয়ে দ্রুতগামী বস্তু থাকা অবশ্যই সম্ভব,কিন্তু আমাদের মানবিক ও আমাদের মানবজাতির প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারনেই আমাদের পক্ষে তা অনুধাবন করা এই মুহুর্তে অসম্ভব বললেই চলে।

আর সমীকরনের যেসব সীমাবদ্ধতা আছে,সেগুলোকে আমি দোষ দিচ্ছিনা, কিংবা বলছিনা যে সমীকরনে ভুল আছে। মানবিক ভুল-ভ্রান্তি আর সীমাবদ্ধতা আছে বলেই মানুষ দিনরাত খেটে যাচ্ছে এগুলো দূর করার জন্য। বিজ্ঞান প্রতিদিনই হালনাগাদ হচ্ছে,নতুন থিওরীর আধুনিকতায় পুরনো থিওরীর জীর্নতা ও সীমাবদ্ধতা দূর হয়ে যাচ্ছে। আমার কথা এটাই,এসব সমীকরনে কিছু ক্ষেত্রে ‘অসংজ্ঞায়িত’ কিছু ব্যাপার আছে। এই ‘অসংজ্ঞায়িত’ এর মধ্যেই ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে বেশ কিছু বড়সড় রহস্যের উত্তর।

এই ‘অসংজ্ঞায়িত’ ব্যাপারগুলো নিয়ে আমার মতামত পরে দেওয়াই ভাল। নাহলে বিষয়টা বেশ জটিল হয়ে পড়বে। আমার ২য় বিশ্লেষনটাই আমার এই লেখাটুকুর প্রধান অংশ। আমার যাবতীয় গানিতিক বিশ্লেষন এবং vital discussion গুলো পরের পার্টেই। তবে ২য় পার্টটা প্রকাশ করার আগে আপনাদের মতামত জানাটা প্রয়োজন।

আর ২য় অংশটুকু প্রকাশ করার আগে আমারও কিছু বিষয় নিজের মধ্যে ক্লিয়ার হওয়া দরকার। এজন্য আপনাদের কাছে কিছু প্রশ্ন রাখছি, জবাবগুলো আমার জানার জন্য এবং কিছু ভুল ধারনা থেকে বের হয়ে আসার জন্য খুবই জরুরী। প্রশ্নগুলো হলঃ আলোর চেয়ে দ্রুতবেগে গেলে কি কোনভাবে ত্রিমাত্রিক জগত থেকে চতুর্মাত্রিক জগতে প্রবেশ সম্ভব? আর চতুর্মাত্রিক জগত সম্পর্কে আপনার ধারনা কি? চতুর্মাত্রিক জগতের অস্তিত্ত্ব যদি বাস্তব হয়,তবে আমাদের ত্রিমাত্রিক জগতে তার কি কি প্রভাব দৃশ্যমান হবে বলে আপনার মনে হয়? আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় থাকলাম,ভাল থাকবেন। joos

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.