আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিরশান্তিতে ঘুমাও সংযম, হাসতে শেখা ভালবাসতে শেখা

আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল

ঢিলা-কুলুপের সঠিক ব্যবহার, মেসোয়াক করার নিয়ম, রোজাদারের মুখের গন্ধের ফজিলত, ইত্যাদি বিষয়ে বিষদ ব্যাখ্যা না দিয়ে যদি শুক্রবারের জুমায় হাজার হাজার মুসল্লির সমাবেশে হুজুরেরা রোজায় সঠিক উপায়ে সংযম করার নিয়ম বর্ণনা করে নিবিড় আলোচনা করতেন, তবে এই রমজানের পবিত্রতা-নষ্টকারী, লুটপাটের চর্চা বন্ধ হওয়ার অন্তত একটা সম্ভাবনা তৈরি হত। সমস্যা হচ্ছে, আমরা নিজেদের মত করে সব নিয়মকানুন, বিধিনিষেধের তর্জমা করি। যেটা সহজ লাগে সেটা পালনে তৎপর; যেটা সুবিধা অর্জনে বাধা দেয়, সেটা পালনে অনুষ্ণ। অত্যন্ত ধার্মিক ব্যক্তি; যার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় থেকে শুরু করে সকল প্রকার বিধিনিষেধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়, আয়কর ফাঁকিতে তিনিও ওস্তাদ। আয়কর ফাঁকিতে গুনাহ নাই।

কারণ সরকার দুর্নীতি গ্রস্ত। পুনরায় বিদেশে রপ্তানি করা হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি কোটি টাকার শুল্ক মৌকুফ পাওয়া কাঁচামাল আমদানি করে, দেশের ইসলামপুরে সেগুলো পরবর্তিতে গোপনে বিক্রি করে দিলেও পাপ নাই। কারণ কাস্টমস কর্মকর্তারা ঘুষ খায়। এছাড়া, এমন আধুনিক চুরির কথা কোথায় আছে লেখা? আমাদের নিয়মে ঘুষ নিলেই যে অপরাধ হয় তা কিন্তু না। ঘুষের প্রকারভেদ আছে।

বিশেষ করে ঘুষ গ্রহীতা যদি প্রিয় তারকা হয়, তবেতো কথাই নেই। তাঁর ক্ষমা দাবী করে মিছিল হয় এই দেশে। খাওয়ায় সংযম, দেখায় সংযম, এমনকি দাঁত ব্রাশ করায় পর্যন্ত সংযম আছে, কিন্তু লোভ সংবরণ করতে না পেরে দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতার গলায় ছুড়ি চালালেও রোজাদার-বিক্রেতার পবিত্রতার সম্ভ্রম থাকে অক্ষুণ্ণ। মার্কেটগুলোয় ঈদ কেনাকাটায় উন্মাদ প্রায় ক্রেতারা যখন খুশি পালনের কেনাকাটার সাধের কাছে বন্দি, তখন অদ্ভুত সব লাইট জ্বলে উজ্জ্বল, নানান রঙের মালামালে ঠাসা দোকানগুলোয় বসে রাতদিন ফন্দি করে জ্বলজ্বলে চোখের দোকানদারেরা, কারে কতটুকু বোকা বানান যায়। তাদের হাতিয়ার ‘মিষ্টি কথা’, ‘পরিশ্রম’ (যার জন্য তাদের কৃতিত্ব দিতেই হয়) এবং ‘আরোপিত উন্নাসিকতা’।

যখন মিষ্টি কথায় কাজ হয় না, তখন বিভ্রান্ত ক্রেতাদের তারা কাবু করে মধ্য বাতাসে উন্নাসিক মন্তব্য ছুড়ে। এক দামের দোকানেও অনেককেই আবার আড়ালে দামাদামি করতে দেওয়া হয় যদি সেই ক্রেতার তেলা-মাথা হয়। শুকনা মাথার জন্য *ফিক্সড প্রাইজ” সাইনবোর্ড। যেহেতু এই দেশে ভোক্তা অধিকার আইন নামক কিছুর অস্তিত্ব নাই, সুতরাং লোক ঠকালেও পাপ হতে পারে, তৈলাক্ততা বিবেচনায় ভোক্তা ঠকালে হয় কাঁচা পয়সা। আর এহেন লুটপাটের মাসে, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী-গণ সাবধান! যেমন গলা তেমন ছুড়ি; উদ্যোক্তা নয় এমন গরীবের জন্য হল ক্ষুদ্রঋণ আর ঈদ আমেজে অসংযমী দিগ্বিদিক-জ্ঞানশূন্য সচ্ছল ক্রেতার জন্য হল ক্রেডিট কার্ড।

অশান্তি নিশ্চিত। এক পৌষ মাসের দায় সর্বনাশ করবে আসন্ন সাধারণ বেঁচে থাকার মাসগুলোর। মার্কেটের নারী-পোশাকের দোকানগুলো যেন আধুনিক লুডু মনোপোলির জগত, যেখানে আসল টাকা, নকল টাকার মত চলে। সেখানে সব কিছুর দাম আছে, টাকার দাম নাই। মুদ্রাস্ফীতিতে এই দোকানগুলো কেমন বিপদজনক ভূমিকা রাখে, অর্থনীতির রাখালদের কাছে কি এই তথ্য আছে? এত কিছু স্বত্বেও, তবু যদি ঈদ কেনাকাটায় সত্যিকার অর্থে কোনও খুশির বিচ্ছুরণ থাকতো, না হয় একটা কথা ছিল।

হতাশাজনক! তা নেই। মানুষের কেনাকাটা, ধস্তাধস্তির বহর দেখলে মনে হয় এ যেন গুরুতর কোনও কাজ। আজ, এখনই, ওটাই না কিনলেই নয়। এই ক্রয়ের মদোন্মত্ততা বজায় রাখতে মার্কেটের মাইকগুলোতেও সারাদিন ঘোষণা হয়, “মার্কেটে অযথা ঘুরে ভিড় বাড়াবেন না”। সাদা পোষাকে নাকি পুলিশ ভিড়ে গাঢাকা দিয়ে আছে।

না কিনে অযথা ঘুরাঘুরি করছে এমন কাউকে পেলেই নাকি তাকে গ্রেফতার করা হবে। সুতরাং ক্রয় জারি রাখুন। অদ্ভুত! তা, ঈদ হাসতে শেখাক, আর নাই শেখাক, ত্যাগের মহিমা কিন্তু ঠিকই শেখায়। সমস্যা হল, সংযমের দিকে না গিয়ে রোজা-রমজান মাসও ত্যাগের মহিমা খচিত ঈদের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে। চিরশান্তিতে ঘুমাও সংযম, চিরশান্তিতে ঘুমাও হাসতে শেখা এবং ভালবাসতে শেখা।

http://www.notun-din.com/?p=5692


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।