আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যন্ত্রমানবের ভালোবাসা

লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ। যন্ত্রমানবের ভালোবাসা মোহাম্মদ ইসহাক খান রিটার খুব একা একা লাগছে। একা লাগাটাই স্বাভাবিক।

এই সমস্যা তার একার নয়। এই সমস্যা সবার। এই অতি আধুনিক যুগে, যখন সবকিছু আবিষ্কার হয়ে গেছে, প্রযুক্তি আর কত উন্নতি করবে, আদৌ করবে কীনা, নাকি উন্নতির সিঁড়ি বেয়ে ওঠা থামিয়ে দেয়া হবে, এই চিন্তাভাবনা যখন শুরু হয়ে গেছে, তখন সবাই পড়ে গেছে আরেক নতুন চিন্তায়। চিন্তাটি কম বয়সী, তরুণ বয়সী বিশাল মানবগোষ্ঠীকে নিয়ে। এই তরুণতরুণীরা অত্যন্ত গুরুতর সমস্যায় আক্রান্ত।

তারা আর আগের মতো স্বাভাবিক এবং সহজ সম্পর্ক গড়তে এবং টিকিয়ে রাখতে পারছে না। তারা একে অপরের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না। ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। সবাই খুব কম বয়সেই হয়ে পড়ছে একা, একদম একা। তারা হঠাৎ আবিষ্কার করছে যে তাদের পাশে দাঁড়াবার মতো, সঙ্গ দেয়ার মতো একটি মানুষও নেই।

ফলে তাদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে প্রচণ্ড হতাশা। আত্মহত্যার মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। এই প্রজন্মকে তাই ডাকা হচ্ছে একাকীত্ব, হতাশা, অবিশ্বাস এবং অন্ধকারের প্রজন্ম বলে। এই সমস্যার মূল বহু বছর আগের, শতাব্দীকাল আগের। তখন প্রযুক্তি সবেমাত্র তার উচ্ছল জোয়ারে তরুণ প্রজন্মকে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া শুরু করেছে।

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ভার্চুয়াল বন্ধুবান্ধবের জগত খুলে দিতে শুরু করেছে। আর তাতে বুঝে কিংবা না বুঝে গা ভাসিয়েছে সকল মানুষ, বিশেষ করে কমবয়সী তরুণ-তরুণীরা। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। একটি অলীক জগতের মোহে পড়ে তারা আসল জগত থেকে ক্রমেই দূরে সরে গেছে। ভুলে গেছে কী করে একে, এই জগতকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।

কী করে অনুভূতি লালন করতে হয়। যখন তারা পেছনে ফিরে তাকিয়েছে, তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। ততদিনে তাদের মধ্যকার হতাশার বীজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। তারা এখন বাস্তব কিংবা ভার্চুয়াল, কোন বিনোদনের মাধ্যমেই আনন্দ পাচ্ছে না। তাদের সব আছে, কিন্তু কিছুই যেন নেই।

তারা পরিণত হয়েছে জীবন্মৃতে। তারা এখন শুধু জীবনের সমাপ্তির আশা করে কালক্ষেপণ করে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে সবখানে দেখা যায় বিষণ্ণ তরুণ-তরুণীর সারি। তারা জীবনের অর্থ খুঁজে পাচ্ছে না। অনেকেই আত্মহননের রাস্তা বেছে নিচ্ছে।

একজন মানুষের সার্থকতা "সম্পর্কে", অন্য কিছুতেই নয়। সফলতায় নয়, যশে নয়, বিত্তে নয়, সম্পর্কে। সেই সম্পর্ক একজন মানুষের সাথে আরেকজন মানুষের সম্পর্ক। খাঁটি সম্পর্ক। স্নেহ-মায়া-মমতার সম্পর্ক।

সেটা এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে বহু আগেই। রিটাও ঠিক তেমনি একজন মেয়ে। সে স্বাবলম্বী, নিজের চাকরি আছে। সারাদিন কাজের মধ্যে কোনমতে কেটে যায় তার, কিন্তু তারপরের সময়টি কাটানো অসহ্য হয়ে পড়ে। একা একা থাকার জন্য মানুষ তৈরি হয় নি।

তার প্রয়োজন সঙ্গিসাথির। কিন্তু এই আধুনিক পৃথিবীতে সে সুযোগ নেই। তার বয়স এখন পঁচিশ, কিন্তু তার কোন সঙ্গী নেই। কেউ বিশ্বাসযোগ্য নয়। কাউকেই ভরসা করা যায় না।

কাজেই কেউ একজন এসে পাশে বসবে, আদর করে নরম সুরে দুটো কথা বলবে, সে সুযোগ তার নেই। বুকটা খাঁ খাঁ করে তার। এমন সমস্যা অন্যদেরও। কয়েকজন ছেলের সাথে সে সম্পর্ক করেছিল সে, সবগুলো সম্পর্কই খুব দ্রুত চুকে গেছে। না সে সুখ পেয়েছে, না সেই ছেলেগুলো।

কেউ কারো সাথে মানিয়ে চলতে পারে নি। বড়জোর আটচল্লিশ ঘণ্টা তারা এক সাথে কাটিয়েছিল। অথচ প্রথমে মনে হয়েছিলো, একজন আরেকজনের সাথে হয়তো সারাজীবন হাত ধরাধরি করে কাটিয়ে দিতে পারবে। দুটো সূর্যাস্তের আগেই মোহভঙ্গ হয়েছে। শুরু হয়েছে ব্যক্তিত্বের সংঘাত।

আগেকার যুগে তিক্ততা নিয়েই অনেকে সংসার চালিয়ে যেত, ঝুলন্ত অবস্থায় জীবন কাটিয়ে দিত, এই যুগে আর কেউ তা করে না, সমঝোতার ভিত্তিতেই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তারপর আবার একাকীত্ব। নিঃসীম একাকীত্ব বুকে জ্বালা ধরায়, কাউকে বলাও যায় না। কাকে বলবে সে? সবারই তো একই সমস্যা। অনেকে জীবন শেষ করে দিচ্ছে, কিন্তু অনেকের সে সাহসও নেই বলে কয়েদখানায় আটক থাকার মতো বেঁচে আছে।

সবার অবস্থা ঠিক সোনার খাঁচায় বন্দী পাখির মতো, দানাপানি সব আছে, কিন্তু যে বস্তুটির সবচেয়ে আগে প্রয়োজন, অর্থাৎ মুক্তি, সেটিই নেই। এই যখন অবস্থা, আমাদের রিটা যখন দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে দিনগুলো পার করছিলো, তখন বাজারে শোরগোল উঠলো, সত্যিকারের বন্ধু এবার কিনতে পাওয়া যাবে। সত্যিই তাই। বাজারে এলো যন্ত্রমানব বন্ধু। দেখতে মানুষের মতো, সকল অনুভূতি মানুষের মতো।

মানুষকে যখন মানুষ আর সঙ্গ দিতে পারছে না, তখন তারা অগত্যা হাত বাড়িয়েছে আর্টিফিসিয়াল জিনিসের দিকে। এই যন্ত্রমানব বন্ধু অর্থাৎ রোবট হাসিকান্না, সুখদুঃখ, আনন্দ-বেদনা-সবকিছুর সঙ্গী হবে, একেবারে সবকিছুর। যেসব কোম্পানি বাজারে ছাড়ছিল এই অত্যাধুনিক পুতুলগুলো, তারা হলপ করে বলল যে এইবার মানুষের সব কষ্ট আর হতাশার দিন বুঝি ফুরুলো। আশায় বুক বাঁধল সবাই। দামে একটু বেশি হলেও সঞ্চয়ের সবটুকু অর্থ নিয়ে দোকানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়লো।

শীঘ্রই খবর রটে গেল, এই যন্ত্রবন্ধু খুব কাজের, "খদ্দেররা" খুব সন্তুষ্ট নতুন বন্ধু পেয়ে। বাদ গেল না রিটাও। একা এই দুঃসহ জীবনের ইতি যদি টানতে পারে একটি রোবট, একটি যন্ত্রমানব, ক্ষতি কী? এক শুভ দিন দেখে সে দোকানে হাজির হল, বন্ধু কিনতে। সেলসম্যান ছোকরা রোবট নয়, সে রিটার মতোই একজন মানুষ। ফিটফাট পোশাক পরা।

স্মিত হাসি হেসে ভারী খাতির করে তাকে ভেতরে নিয়ে গেল সে। আসুন ম্যাডাম, আসুন। আমাদের এখানে পাবেন সবচেয়ে সেরা বন্ধুকে। আপনার একাকীত্ব ঘোচানোর জন্যই আছে বন্ধুরা। সেরা বন্ধু? কথাটা বেশ আশ্চর্য ঠেকল রিটার কাছে।

কিন্তু কিছু বলল না, সুসজ্জিত আর আলোয় চোখ ধাঁধানো দোকানের ভেতরে ঢুকে পড়লো সে। ভেতরে লাইন করে দাঁড় করানো আছে "বন্ধুদের", অর্থাৎ মানুষকে সঙ্গ দেয়ার জন্য তৈরি যন্ত্রমানবগুলোকে। সেলসম্যান বলল, আপনি স্পেসিফিকেশন বলুন ম্যাডাম, আমাদের কাছে সবরকমই আছে। শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ, পীতবর্ণ, মিশ্র, খাটো, লম্বা, আপনি যেমন চাইবেন তেমন দিতে পারবো। রিটা অনেকটা দ্বিধায় পড়ে আছে, চারদিক থেকে তার দিকে পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে অনেকগুলো রোবট।

দেখতে অবিকল মানুষের মতো, তবু বলে দেয়া যায় ওগুলো মানুষ নয়, কারণ একেবারে নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে ওগুলো, চোখের পাতায় কোন আলো নেই। সে আস্তে আস্তে বলল, আমি একটা রোবট, থুড়ি, যন্ত্রবন্ধু পরীক্ষা করে দেখতে চাই। সেলসম্যান ছোকরা বিনয়ে গলে গিয়ে বলল, অবশ্যই, অবশ্যই, ম্যাডাম। পরীক্ষা না করে কোন জিনিসই বিক্রয় করা হবে না। কাস্টমারের সন্তুষ্টিই আমাদের একমাত্র লক্ষ।

কাস্টমার? রিটার কানে লাগলো কথাটা। বন্ধুকে "কিনে" নিচ্ছে সে, সে একজন খরিদ্দার আর তার বন্ধু একটা পণ্য মাত্র, কেমন বেখাপ্পা শোনায় যেন। তবুও কৌতূহল মেটাবার জন্য সে দাঁড়িয়ে রইলো, এত সুনাম যখন শুনেছে তখন কিছু ভাল দিক তো আছেই। সেলসম্যান একটি স্বচ্ছ কাঁচের দরজা খুলে বের করলো একটি রোবট। আকারে ছোকরার মতোই লম্বা, তবে হালকা, বোঝাই যাচ্ছে।

সেলসম্যান নিজেই বলল, ব্যবহার করে আরাম পাবেন ম্যাডাম, মাত্র ত্রিশ কেজি। বহন করতে সুবিধে। আর এদিকে দেখুন, এটা হল এর সুইচ, পেছনে বলে দেখা যায় না। সুইচ টিপে দিলেই চালু হয়ে যাবে আপনার বন্ধু, তারপর আপনাকে আর কিছুই করতে হবে না। আপনি যা বলবেন সে তাই করে দেবে।

আপনার সবসময়কার সহচর হয়ে থাকবে। মানুষের সাথে এর কোন পার্থক্যই করতে পারবেন না। আর একে চার্জ দেয়ার দরকার হবে না, পরিবেশ থেকে নিজেই শক্তি সংগ্রহ করে নেবে। খাবার-পানি ইত্যাদি গ্রহণ করবে না বলে বর্জ্যপদার্থ নিষ্কাশনেরও কোন ঝক্কি নেই। দারুণ জিনিস, তাই না ম্যাডাম? রিটা ভাবল, বাইরে থেকে দেখে কোন পার্থক্য করা যাবে না, সে কথা সত্য।

কিন্তু এই জিনিসটির সাথে মানুষের তো বিশাল তফাৎ। মানুষকে কেউ কখনো সুইচ টিপে চালু করেছে? একে বরং পোষা কুকুর কিংবা কোন দামী খেলনার সাথে তুলনা করা যায়। তবে জিনিসটি অভিনব, সন্দেহ নেই। এর আগে বহু রোবট তৈরি হয়েছে, কিন্তু সবই ফরমায়েশি কাজের জন্য, সোজা বাংলায় যাকে বলে, কামলা খাটার জন্য। মানুষের একাকীত্ব দূর করার জন্য এর দরকার হবে, তা বোধহয় কেউ কোনদিন ভাবেনি।

সেলসম্যান ছোকরা সুইচটা টিপে দিলো। মৃদু গুঞ্জন উঠলো একটা, তারপরই যন্ত্রমানব চালু হয়ে গেল। কালো চোখের তারায় আলো দেখা দিলো, কুঞ্চন তৈরি হল চোখের পাতায়। ম্যানুফাকচারাররা ডিটেইলসের কাজ খুব ভাল করেছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। রিটাকে আপাদমস্তক দেখল রোবটটি, মনে হল যেন স্ক্যান করছে, অর্থাৎ রোবটের চোখ দিয়ে নিরীক্ষণ করছে।

খানিকক্ষণ পরে জিনিসটা ঠিক একজন মানুষের গলায় বলে উঠলো, আপনি কে, অচেনা নারী? রিটা ভাবছে, এটা কোন প্রশ্ন হল? হুবহু মানুষের মতো বানিয়েছে ঠিকই, কিন্তু মানুষের মতো প্রশ্ন করা শেখাতে অনেক সময় লাগবে বোঝাই যাচ্ছে। মানুষ হলে এমন নিখুঁত একটা প্রশ্ন করতো না, বরং একজন অচেনা তরুণীকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতো। তারপর খানিকক্ষণ দ্বিধা করে বলতো, আপনাকে তো ঠিক ... ... রিটা কিছু বলল না, সে তাকিয়ে আছে তার হবু বন্ধুর দিকে। ঠিক করে উঠতে পারছে না, এই জিনিসের সাথে জীবন কাটানো সমীচীন হবে কীনা। সেলসম্যান ভাবল, রিটা বুঝি লজ্জা পাচ্ছে।

তাই বলল, আপনি নিঃসঙ্কোচে যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন, ম্যাডাম, সে কিছু মনে করবে না। ব্যক্তিগত হোক, গোপনীয় হোক, কোন সমস্যা নেই। বলে সে দুই "বন্ধুকে" কথা বলার সুযোগ করে দিতে দূরে সরে গিয়ে দাঁড়ালো। রিটা খানিকক্ষণ ভাবল, কী জিজ্ঞাসা করা যায়। তাকে চমকে দিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলো রোবটটি, আপনি জবাব দিচ্ছেন না কেন, অচেনা নারী? আপনার কি কোন সমস্যা হচ্ছে? আমি কি কোন উপকারে আসতে পারি? রিটা তবুও কিছু বলল না।

রোবটটির যন্ত্রসুলভ প্রশ্ন তাকে অপ্রতিভ করছে। সব প্রশ্ন যেন আগে থেকে ঠিক করে রাখা, একটা অস্বস্তি বোধ হয়। জবাব না পেয়ে রোবটটি চুপ করে গেল। বোধহয় তাকে এভাবেই প্রোগ্রাম করে রাখা আছে, পরপর কয়েকটি প্রশ্নের জবাব না পেলে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতে হবে, তারপর আবার কিছু একটা বলতে হবে। রোবটটি তাকিয়ে আছে রিটার দিকে।

রিটাও তাকিয়ে আছে যন্ত্রমানবটির দিকে। তারপর বলবে না বলবে না বলেও বলে ফেললো, বলতে পারো, ভালোবাসা কী? বলেই জিভ কাটল সে, একটা অচেনা যন্ত্রের কাছে সে এ কী জিজ্ঞেস করছে? ছি ছি, আশেপাশে কেউ শুনে ফেলে নি তো? চারদিকে সন্তর্পণে তাকায় রিটা। না, কেউ শুনে ফেলে নি। সেলসম্যান ছোকরা অবশ্য কাছেই দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। শুনে ফেললে মনে মনে হাসবে।

রোবটটির অবশ্য কোন সংকোচ আছে বলে মনে হল না, বরং তার চোখের ঔজ্জ্বল্য খানিকটা বেড়ে গেল, বোধহয় উৎসাহ বোধ করলো সে। তারপর কোনরকম জড়তা ছাড়াই বলে উঠলো, ভালোবাসা বলতে ছয়টি জিনিস বোঝায়। বিপরীত লিঙ্গের কারো প্রতি অর্থহীন টান অনুভব করা; হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, যা অন্যান্য উত্তেজনার কারণেও হয়ে থাকে; বিভিন্ন উপহার আদানপ্রদান করা; রেস্টুরেন্টে একসাথে খাওয়াদাওয়া করা; বিয়ে নামক একটি কাগুজে সম্পর্ক তৈরি করা; এবং শারীরিক তাড়না মেটাতে একসাথে শোওয়া। এর মধ্যে ষষ্ঠ কারণটি সর্বপ্রধান এবং মুখ্য। বলেই আবার চুপ করে গেল যন্ত্রমানব।

রিটা দীর্ঘক্ষণ রোবটটির দিকে তাকিয়ে রইলো। কি ভয়ংকর কথাগুলো না থেমে বলে দিলো এই যন্ত্রটি, একটুও আটকাল না! রিটা খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ঝড়ের বেগে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়, সেলসম্যানকে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করে না। বেরিয়ে যাবার আগে কাঁচের দরজায় যন্ত্রবন্ধুটির প্রতিফলন দেখতে পায় সে, সেটির চেহারায় কোন দুঃখবোধ দেখতে পায় না। ***** রাস্তার ধার দিয়ে হাঁটছে রিটা। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে তার।

কয়েকটা সিলিকন চিপ, তার, টিউব আর খানিকটা প্লাস্টিক দিয়ে বানানো ঐ যন্ত্রমানব এক নিঃশ্বাসে ভালোবাসার সুবিন্যস্ত সংজ্ঞা দিয়ে দিতে পারে। মানুষ হলে সেটা পারতো না। ভালোবাসা মানে ঐ যন্ত্রের কাছে কয়েকটি ছকে বাঁধা কাজের নাম, যেগুলো একের পর এক করতে হয়, যা করতে গিয়েই এই যুগের মানুষগুলো ভালোলাগা আর ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছে। ঐ যন্ত্রমানব জানে না যে ভালোবাসা একটা অনুভূতির নাম। ভালোবাসাকে সংজ্ঞায়িত করা যায় না।

কোনদিন যাবেও না। রিটা এমন বন্ধু চায়নি। সে ভাবতেও পারেনি যে সে এভাবে হতাশ হয়ে ফিরবে। বড় আশা নিয়ে গিয়েছিলো সে, সত্যিকারের বন্ধু পাবার আশায়, এক মুঠো ভালোবাসার আশায়। খদ্দের হয়ে নয়, কাঙালের মতো, ভিখিরির মতো।

বন্ধু চেয়ে, ভালোবাসা চেয়ে খালি হাতে ফিরে আসার মতো যন্ত্রণা আর কীসে আছে? রিটার গাল বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু পড়ছে, রাস্তার ধুলোয় রেখে যাচ্ছে চোখের জলের দাগ। (২৬-২৭ জানুয়ারী, ২০১৩) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।