আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অতীতের পাতা থেকে



দুয়ারে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপ। এখন কেবলই অপেক্ষা শুভারম্ভের, চার বৎসর পর পর বিশ্বকাপ আসে এই মর্ত্যধামে। রাঙিয়ে দিয়ে যাবার মতো একটা উপলক্ষ বটে বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপ এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঘরের মাঠে। অতএব আমাদের সমস্ত মনপ্রাণ জুড়ে কেবলই ক্রিকেট।

আজ সে ক্রিকেটানন্দে জাগিবার দিন। ১০ম আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপে অংশ নিচ্ছে মাত্র ১৪টি দেশ। ফুটবলের মতো ক্রিকেটের বিশ্বায়নটা হলো কই? হাতে গোনা কটি দেশের মধ্যে ক্রিকেট সীমাবদ্ধ। আইসিসি ও এসিসি অবশ্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের মধ্যে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেবার। এরই ধারাবাহিকতায় উঠে আসছে আফগানিস্তান ও নেপাল।

এবারের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করছে যথারীতি দশটি টেস্ট প্লেয়িং কান্ট্রি। সঙ্গে আছে কেনিয়া, কানাডা, হল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড। সুপ্রিয় পাঠক, এবার চোখ বুলানো যাক বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী চোদ্দটি দেশের অতীত রেকর্ডের দিকে। স্মৃতির ভান্ডার হাতড়ে তুলে আনা যাক মণিমুক্তো। হৃদয়ের গহিনে সযত্নে সাজিয়ে রাখা এসব তথ্যের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে অনেক আনন্দ-বেদনার মহাকাব্য।

নিরেট এসব তথ্য আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে অতীতে। আপনি পান করবেন ক্রিকেট অমৃত। বিশ্বকাপ যে দেশটিকে দুহাত ভরে দিয়েছে সেটি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ চারবারের বিজয়ী দেশ তারা। কিন্তু প্রথম বিশ্বকাপ জিততে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে চতুর্থ আসর পর্যন্ত।

১৯৮৭ সালে এই উপমহাদেশের মাটিতে শিরোপা জিতেছিলো তারা। অবশ্য ভাগ্যদেবী সহায় থাকলে প্রথমবারেই শিরোপার স্বাদ পেতে পারতো তারা। কিন্তু মাত্র ১৭ রানে তাদের হারায় অদম্য ক্যালিপসোরা। সেই অস্ট্রেলিয়া উপমহাদেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জিতলো ইংল্যান্ডকে মাত্র ৭ রানে হারিয়ে এলান বোর্ডারের সুযোগ্য নেতৃত্ব। স্টিভ ওয়াহর অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স।

ডেভিড বুনের চওড়া ব্যাট অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ জিততে সাহায্য করেছিলো। ৯২’র ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রেখে ৯৬’তেও তারা উঠে যায় ফাইনালে কিন্তু অরবিন্দ ডি সিলভার প্রথমে বল হাতে ৩ উইকেট ও পরে ব্যাট হাতে অপঃ ১০৭ রান অস্ট্রেলিয়াকে হার মানতে বাধ্য করে। মার্ক টেলরকে বেনজির ভুট্টোর হাত থেকে পুরস্কার নেয়ার সময় বড়ো বেশি বিষণ্ন দেখাচ্ছিলো। ৯৬ তে না পারলেও ৯৯ তে এসে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ জয় করে অস্ট্রেলিয়া। অথচ সুপার সিক্স থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছিলো তারা।

দ. আফ্রিকার বিপক্ষে গিবসের স্টিভ ওয়াহর ক্যাচ মিস (৫৬ রানে) তা হতে দেয়নি। ১১০ বলে অপরাজিত ১২০ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন স্টিভ। এই জয়টি তাদের জন্য সেমিফাইনালের দরজা খুলে দেয়। আর সেখানে অপেক্ষা করছিলো রুদ্ধশ্বাস এক লড়াই। মাত্র ২১৩ রান করেও ম্যাচ জেতে অস্ট্রেলিয়া (প্রকৃতপক্ষে টাই)।

সুপ্রিয় পাঠক ক্রিকেট ইতিহাসের মনোযোগী ছাত্র হলে আপনার নিশ্চয়ই ম্যাচটি ভুলে যাবার কথা নয়। একজন ল্যান্স ক্লুসনারের পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে দানব হয়ে উঠাটা অব্যাহত ছিলো এই ম্যাচেও। শেষ পর্যন্ত ট্র্যাজিক হিরো হিসেবেই বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে বিদায় নিলেন তিনি। তিন বলে মাত্র ১ রান (প্রথমে ছিল চার বলে ১ রান)। অতি সম্ভব এই সমীকরণটি মেলাতে পারলেন না তিনি।

ফ্লেমিং এর বলে লেহম্যানের ছুঁড়ে দেয়া থ্রো থেকে গিলক্রিস্ট উইকেট ভেঙে দিলে রান সম্পন্ন করতে পারেননি অপর প্রান্তের শেষ ব্যাটসম্যান ডোনাল্ড। ম্যাচ টাই হলেও সুপার এইটের হেড টু হেডে জয়ী হবার কারণে বিজয়মাল্য অসিদের গলায় শোভা পায়। জগতের সমস্ত অনিশ্চয়তা যেনো সেদিন দেখা দিয়েছিলো ম্যাচটিতে। সেমিফাইনালেও দলকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছিলেন (১৬ বলে ৩১ রান)। কিন্তু এক লহমার ভুলে দ. আফ্রিকার বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন কর্পূরের মতো উবে যায়।

ফাইনালে পাকিস্তানকে ১৩২ রানে গুটিয়ে দিয়ে গিলক্রিস্ট তাণ্ডবে ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে ২য় বারের মতো বিশ্বকাপ জেতে অসিরা। ৯৯’র ধারাবাহিকতা অসিরা অব্যাহত রাখে ২০০৩ বিশ্বকাপেও। হেডেন, গিলক্রিস্ট, পন্টিং, মার্টিন, ম্যাকগ্রা, ওয়ার্নরা দ. আফ্রিকার মাটিতে অপরাজেয় ছিলো। ২৩ মার্চ ফাইনালে জোহান্সবার্গে বড়ো আশা নিয়ে টস করতে নেমেছিলো সৌরভ গাঙ্গুলী। টস জিতেও পন্টিং এর হাতে ব্যাট তুলে দেন তিনি।

ভুলটা সম্ভবত সেখানেই করলেন বাঙালি বাবু। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ছন্দে থাকা শ্রীনাথ, জহির আর নেহেরারা সেদিন যেনো বল ফেলার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পন্টিং এর অপঃ ১৪০ ও মার্টিন এর অপঃ ৮৮ রানের ঝকঝকে ইনিংসের বদৌলতে অসিরা সংগ্রহ করে ২ উইকেটে ৩৫৯ রান। ভারত ম্যাচ হারে ১২৫ রানে। ২০০৭ বিশ্বকাপে ও বিশ্ব চেয়ে চেয়ে দেখেছে অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্য।

ও. ইন্ডিজের নীল সাগর ও মন চঞ্চল করে দেয়া বিচ মোহিত করে ক্রিকেটামোদীদের। এবারও সৌভাগ্যের বরপুত্র রিকি পন্টিং, লয়েডের পর ২য় অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জিতলেন শ্রীলংকাকে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ফাইনালে হারিয়ে। গিলক্রিস্টের ব্যাটিং তাণ্ডবের (১৪০ রান) সামনে দাঁড়ানোর সাহসই ছিলো না লংকানদের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ বিজয়ী ও. ইন্ডিজ। সে এক আশ্চর্য সময় এসেছিলো ক্যালিপসোদের জীবনে।

মার্শাল, হোল্ডিং, রবার্টস, গার্নার এই চার পেস কোয়াট্রেট এর সঙ্গে গ্রিনিজ, হেইন্স, কালীচরন, কানহাই, ফ্রেডেরিকস, রিচার্ডস, ডুজনের ব্যাটিং বিগ ক্যাট লয়েডের দুর্দান্ত অধিনায়কত্ব। শ্রেষ্ঠত্বের জন্য আর কী চাই তাদের। প্রথম দুই বিশ্বকাপে তাই পাত্তাই পায়নি কোন দল। ৭৫ ও ৭৯ বিশ্বকাপ তারা জিতেছিলো কোন ম্যাচ না হেরে। প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেও জিততে পারেনি।

১ম বিশ্বকাপ জিতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব আরো সুদৃঢ় করে তারা। ক্যালিপসোদের মন পাগল করা সঙ্গীত মুর্ছনার সঙ্গে গতি দানবদের ঝড় তোলা তাদের শ্রেষ্ঠত্বকে আরো সুসংহত করে। ক্লাইভ লয়েডের ১০২ রান, কানহাইয়ের ৫৫ রান তাদেরকে পৌঁছে দেয় ২৯১ রানে। এলান টার্নার (৪০) ও ইয়ান চ্যাপেল (৬২) ভালোই জবাব দিচ্ছিলেন কিন্তু রিচার্ডসের দুর্দান্ত ফিল্ডিং ২৭৪ রানে আটকে দেয় তাদের। পাঁচ পাঁচটি রান আউট ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় অস্ট্রেলিয়াকে।

প্রথম বিশ্বকাপের অর্জনকে তারা টেনে নিয়ে যায় ২য় বিশ্বকাপ পর্যন্ত। সেবারো লর্ডসে বিজয় কেতন উড়েছে তাদের। ফাইনালে বিন্দুমাত্র পাত্তা পায়নি ইংল্যান্ড। ৯২ রানে হার মানে ইংলিশরা। দোর্দন্ড প্রতাপশালী ও. ইন্ডিজের জয়রথ অব্যাহত ছিলো তৃতীয় বিশ্বকাপেও।

কিন্তু সেবার মিরাকল ঘটিয়ে দেয় কপিল দেব রামলাল নিঘাঞ্জের ভারত, লর্ডসের ফাইনালে মাত্র ১৮৪ রানের টার্গেটে পৌঁছুতে পারেনি ও. ইন্ডিজ। ১৪০ রান তুলতেই প্রাণবায়ু নিংড়ে যায় বিশ্বসেরা সেনানীদের, ও. ইন্ডিজ ম্যাচ হারে ৪৩ রানে। ও. ইন্ডিজের পতনধ্বনি যেনো সেদিন শোনা গিয়েছিলো। পরবর্তী ৬টি আসরে তারা মাত্র একবার সেমিফাইনালে পৌঁছতে সক্ষম হয়। ৯৬ সালে সেবার অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার মানে ৫ রানে।

২০৭ রান করেও ম্যাচ যেতে অস্ট্রেলিয়া। দলপতি রিচার্ডসন শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু লেগি ওয়ার্ন (৩৬/৪) তা হতে দেবেন কেন? এরপর সাফল্য যেনো তাদের কাছে সোনার হরিণই হয়ে যায়। কোথায় হারালো সেই সুবর্ণ দিন? বিশ্বকাপে বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে ভারত। কিন্তু সাফল্য তাদের বাহুডোরে ধরা দেয় না।

সেই কবে ১৯৮৩ সালে একজন কপিল দেবের যোগ্য নেতৃত্ব, মহিন্দর অমরনাথের সব্যসাচীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া। মদন লালের ো মিডিয়াম অথচ ভীষণ কার্যকর বোলিং ভারতকে পাইয়ে দেয় অপ্রত্যাশিত বিশ্বকাপ। তারপর কর গুণে ছয়টি বিশ্বকাপ আর ২৮টি বছর চলে গেলো। ভারতের ২য় বারের মতো বিশ্বকাপ জেতা হলো না। অবশ্য জেতার মতো অবস্থানে তারা পৌঁছেছিলো ২০০৩ সালে।

জোহান্সবার্গে সেদিন (২৩ মার্চ) কী টস জিতে বল হাতে নিয়ে ভুল করেছিলেন গাঙ্গুলী? সিদ্ধান্তটি হয়তো তাকে আমৃত্যু পোড়াবে, এত কাছে তবু কত দূরে? পন্টিং (অপঃ ১৪০) ও মার্টিনের (অপঃ ৮৮) তাণ্ডবলীলার কাছে সেদিন তার প্রধান তিন অস্ত্র ভোতা হয়ে গিয়েছিলো অথচ বিশ্বকাপে শ্রীনাথ, জহির, নেহেরার সমন্বয়ে দুর্দান্ত বোলিং অ্যাটাকে পরিণত হয়েছিলো ভারত। ৫০ ওভারের ঝড়ের পর অস্ট্রেলিয়ার রান যেখানে গিয়ে থেমেছিলো (৩৫৯/২) সেখান থেকে বিশ্বকাপ জেতার আশা দুরাশাই, পারলো না শচীন। অনন্ত চাপ মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারলেন না। সংগ্রহ চার রান। ম্যাকগ্রার তোপের মুখে তবু শেষ চেষ্টা করেছিলেন শেবাগ (৮১ রান)।

কিন্তু রান আউটের বলি হলে ভারত থেমে যায় ২৩৪ রানে। আরও দুবার সেমিতে ভারতের কপাল পুড়েছিলো, ৯৬তে ইডেন গার্ডেনে শ্রীলংকার কাছে হার মানে ভারত। ২৫২ রানের জবাবে ১২০/৮ রান তোলার পর দর্শকদের উম্মত্ত আচরণের জন্য ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। জয়সুরিয়া ও কালুভিতারানা জুটির ব্যর্থতার পরও ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে যান ডি সিলভা (৬৬) ও মহানামা (৫৮), শচীনের ৬৫ রানের পরও ১২০ রানে ৮ উইকেট হারায় ভারত, স্বদেশী খেলোয়াড়দের এমন পারফরম্যান্স ব্যথিত করে ইডেনের দর্শকদের। অতৃপ্তির জ্বালা জুড়াতে মাঠে তারা ছুঁড়তে থাকে বিয়ার ক্যান ও হাতে থাকা ব্যবহার্য জিনিসপত্র, ম্যাচ বন্ধ করে দেয়া ছাড়া পথ খোলা ছিল না ম্যাচ রেফারির, আরো আগে ৮৭ তে আশায় বুক বেঁধেছিলো ভারত।

সেবার মুম্বাইয়ে সেমিতে ইংল্যান্ডের কাছে ৩০ রানে হার মানে গাভাস্কাররা। ৯৯ তে সুপার সিক্স থেকে বিদায় ও গতবার তো বাংলাদেশের কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয় দ্রাবিড় এন্ড কোং। আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান ৯২ সালে বিশ্বকাপ জেতে ইমরান খানের ‘গোপন অস্ত্র’ ইনজামামুল হকের ব্যাটিং তাণ্ডবে, গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৪ রানে আউট হলেও বৃষ্টির সৌজন্যে ১ পয়েন্ট পায় পাকরা, আর সেই এক পয়েন্টই তাদের সামনে খুলে দেয় সেমির দ্বার, সেখানে অপেক্ষা করছিলো পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত খেলা মার্টিন ক্রোর নিউজিল্যান্ড, সেমিতে ক্রোর ৯১ ও রাদার ফোর্দের ৫০ রানের সুবাদে ম্যাচ জেতার মতো ২৬২ রানের সংগ্রহ পায় নিউনিজল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে সারাটা সময় রান রেটে পিছিয়ে থাকা পাকিস্তান শেষ দিকে ইনজামামের ৩৭ বলে ৬০ রানের একটি ইনিংসের সৌজন্যে ম্যাচ জিতে পাকিস্তান, ফাইনালে ইংল্যান্ডেকে ২২ রানে হারিয়ে ইমরানের সারা জীবনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয় পাকবাহিনী, মিয়াদাদের ৫৮, ইমরানের ৭২, ইনজামামের ৪২ ও ওয়াসিম আকরামের ঝড়ো ৩৩ রানের সুবাদে ২৪৯ রানের সংগ্রহ গড়ে পাকরা। ফেয়ার ব্রাদারের লড়াকু ইনিংস (৬২ রান) ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিলো ইংলিশদের।

কিন্তু আকরাম পরপর দু’বলে (দুর্দান্ত ইয়র্কার) ল্যাম্ব ও লুইসকে বোল্ড আউট করে ম্যাচের গতি পাকিস্তানের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। বিশ্বকাপ জেতার সঙ্গে ইমরানের ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ার স্বপ্ন পূরণের পথ অনেকখানি পরিষ্কার হয়। পাকরা ৭৯, ৮৩ ও ৮৭ সালে সেমিতে খেললেও ফাইনালের টিকিট পায়নি। এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতে শ্রীলংকা ১৯৯৬ সালে, স্যার রিচার্ডস হ্যাডলির ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্য প্রমাণিত করে লাহোরে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারায় ‘আইয়া’ খ্যাত অর্জুনা রানাতুঙ্গার দল। মূলত অরবিন্দ ডি সিলভার অসাধারণ নৈপুন্য সেমিতে ৬৬ ও ফাইনালে অপ: ১০৭ রান) বিশ্বকাপ জেতে শ্রীলংকা।

তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন স্বয়ং দলপতি রানাতুঙ্গা, মহানামা, গুরুসিঙ্গে ও জয়সুরিয়া। ২০০৭ সালে ফাইনালে উঠেও হার মানে শ্রীলংকা। ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ড তিনবার ফাইনালে উঠেও কাপ জিততে পারেনি। প্রথমবার ১৯৭৯ সালে ও: ইন্ডিজের কাছে। ২য় বার ১৯৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ও তৃতীয়বার ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের কাছে, ৯৬তে কোয়ার্টারে জয়সুরিয়া ঝরে (৪৩ বলে ৮২ রান) উড়ে গিয়েছিলো ইংলিশরা।

১৯৭৫ সালে ও ১৯৮৩ সালে সেমিতে হেরেছিলো তারা। বিশ্বকাপটা তাই তাদের জন্য অনন্ত আক্ষেপের এক গল্প। ‘চোকার’ খ্যাত দ. আফ্রিকার সঙ্গে ভাগ্য বড়ো প্রবঞ্চনা করেছিলো ১৯৯২ সালে, ১ম বার অংশ নিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছেছিলো কেপলার ওয়েলস এর দল। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অদ্ভুত বৃষ্টি আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে (১ বলে ২২ রান, প্রয়োজন ছিল ১৩ বলে ২২ রান) ফাইনালে উঠা হয়নি তাদের। ৯৬ তে কোয়ার্টার ফাইনালে লারার ১৬৯ রানের কাছে হারতে হয় তাদের।

বিশ্ব সেরা ফিল্ডার জন্টি রোডসের হাত ফসকে লারার ক্যাচ মাটিতে পড়াটা বড়ো বেশি দুর্ভাগ্য বয়ে এনেছিলো তাদের জন্য। ৯৯ তে ক্লুসনারের সেই ঐতিহাসিক দৌড় জিততে দেয়নি তাদের। এত কাছে তবু কত দূরে বিশ্বকাপ। ২০০৩ সালে তো হিসাবে গড় মিল করে (শ্রীলংকার সঙ্গে টাই করেও) ১ম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয় তারা। কিউই প্যামির দেশ নিউজিল্যান্ড ফাইনালে না খেললেও বিশ্বকাপের সেমিতে খেলে ৭৫, ৭৯, ৯২, ৯৯ ও ২০০৭ সালে।

৯৯ সালে ইনজামামুল হকের অতিমানবীয় ইনিংস তাদের স্বপ্নসৌধ ধুলোয় লুটিয়ে দেয়। টেস্ট প্লেয়িং অন্য দুই দেশ জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশের গণ্ডি প্রথম রাউন্ড পর্যন্ত। তবে গতবার (০৭) বাংলাদেশ সুপার এইটে উঠে চমক সৃষ্টি করে। কেনিয়া ২০০৩ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড়ো চমক দেখায় সেমি ফাইনালে উঠে। কিন্তু সৌরভের সেঞ্চুরি তাদের ফাইনালে উঠতে দেয়নি।

অন্য তিনটি দল আয়ারল্যান্ড, হল্যান্ড ও কানাডার পারফরম্যান্স উল্লেখ করার মতো নয়, তবে ২০০৩ সালে কানাডা বাংলাদেশকে হারিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করে। সুপ্রিয় পাঠক, ভুলে যান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা। শেয়ার বাজারে দরপতন, তাওতো বিশ্বকাপের কাছে নস্যি, জাগতিক সমস্ত দুঃখকে ভুলিয়ে দিতে পারে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের মহিমা এখানেই।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।