আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলালায়ন নিয়ে বিস্তারিত

তর্ক নয় বিতর্ক

দিন কয়েক আগে ব্লগার ঊষা১২৩ এর এই পোস্টটা পড়ে বেশ ভাল লাগল। নিজে ঠকলেও অনেক মানুষকে উনি সচেতন করেছেন। আমি নিজে যেহেতু বাংলালায়ন ইউজার তাই আমার মনে হল আমিও বাংলালায়ন সম্পর্কে বিস্তারিত লিখলে অনেক গ্রাহক যারা ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চাচ্ছেন তাদের উপকার হবে। মূলতঃ সে উদ্দেশ্যেই এই লেখা। বাংলালায়ন কমিউনিকেশন্স লিমিটেড ১৮ নভেম্বর ২০০৮ বি.টি.আর.সি-র কাছ থেকে ৩১ মিলিয়ন ইউ.এস ডলারের বিনিময়ে লাইন্সেস পায়।

তাদের ওয়াইম্যাক্স টেকনোলজির IEEE (Institute of Electrical & Electronic Engineering) স্ট্যান্ডার্ড হল 802.16e. সূত্রঃ এখানে। বি.টি.আর.সি-র কাছ থেকে বাংলালায়ন সহ সবগুলো কোম্পানি প্রতি মেগাবাইট ব্যান্ডউইডথ ক্রয় করে ১৮০০০ টাকা করে। (সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, তারিখ: ০৩-০৪-২০১০) অর্থাৎ বাংলালায়নের ১০০০ টাকায় ২৫৬ kbps(kilo bit per second) আনলিমিটেড কানেকশনের জন্য বাংলালায়নকে বি.টি.আর.সিকে দিতে হয় ৫৬২.৫০ টাকা দিতে হয়। আমি বাংলালায়নের প্রিপেইড ৫১২ kbps (৬৪ কিলোবাইট) এর কানেকশন ব্যবহার করি। মাসে ৬০০ টাকার বিনিময়ে আমি ১.৮ গিগা বাইট ব্যবহার করতে পারি।

আমি যখন কোন ফাইল ডাউনলোড করি তখন মোটামুটি ৬৪ কিলোবাইট স্পীড পাওয়া যায়। কিন্তু ফাইল আপলোড করতে গিয়ে দেখি স্পীড অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টা না বুঝতে পেরে আমি কল সেন্টারে কল দেই। তারা বলে আপনি আপলোড করতে গেলে ডাউনলোডের ৪ ভাগের একভাগ স্পীড পাবেন। মানে আপনার কানেকশনের আপলোড স্পীড হবে ১৬ কিলোবাইট!! আমি তো অবাক।

কোন লিফলেট বা বিজ্ঞাপণেই তারা লিখে না যে আপলোড স্পীড ডাউনলোডের চার ভাগের এক ভাগ। এরপর আসি ইউজেসের ব্যাপারটায়। আমি টাকা দিয়ে ১.৮ গিগা বাইট ডাটা ইউজ করার জন্য কিনলাম। ধরুন আমার ১ মাস পর এ থেকে ১০০ মেগা অব্যবহৃত রয়ে গেল। আপনি কিন্তু আর সেটা ব্যবহার করতে পারবেন না।

মোবাইলে কিন্তু মেয়াদ শেষ হবার ৭ দিন পরও রিচার্জ করলে আপনি আগের ব্যালেন্স ইউজ করতে পারেন। এইখানে পারবেন না। শুধুমাত্র মেয়াদ শেষ হবার আগেই যদি আপনি আবারও রিচার্জ করেন তাহলেই আগের ডাটাটুকু ইউজ করতে পারবেন না। শুধু তাই নয় মোবাইলে ব্যালেন্স জানতে কোন টাকা লাগে না। এখানে আপানার ডাটা ইউজেজ জানতেও ওয়েব পেইজটি লোডের জন্য কিছুটা ডাটা ব্যয় হবে আপনার।

আবার মোবাইলে কোন টাকা না থাকলেও রিচার্জ করা যায়। কিন্তু আমাদের অত্যাধুনিক ওয়াইম্যাক্স বাংলালায়নে ডাটা ইউজেজ শেষ হয়ে গেলে আপনি আর রিচার্জ করার জন্যও কানেক্ট করতে পারবেন না। বাংলালায়নের কোন সেলস পয়েন্ট কিংবা সাইবার ক্যাফেতে যেতে হবে রিচার্জ করতে। আমি তো প্রথম মাসে বেশ ঝামেলায় পরে গিয়েছিলাম। আমি বুঝি না মানুষের ইউজেস শেষ হলেই তো রিচার্জ করার দরকার হয়।

নাকি রিচার্জ করার জন্য বাসায় আর একটা ইন্টারনেট কানেকশন লাগাতে হবে? আপনারা অনেকেই হয়ত বাংলালায়ন মডেমের দাম বিভিন্ন বিজ্ঞাপণে দেখে থাকবেন। গত মাসে এই মডেমের দাম ছিল ১১০০ টাকা। এই মাসে এটা ২১২১ টাকা। তবে এর বাইরেও আরও কিছু ব্যাপার আছে। অনেক এলাকায়ই ফুল নেটওয়ার্ক না থাকায় ইউ.এস.বি কেবল কিনতে হচ্ছে।

সেজন্য অতিরিক্ত ১০০-২০০ টাকা খরচ করা লাগতে পারে। সেটা তেমন কোন বিষয় না। কিন্তু অনেক এলেকায় নেটওয়ার্ক এতই দূর্বল যে ইউ.এস.বি মডেমে কানেকশন পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে আপনাকে ২৯৫০ টাকায় ওয়াই ফাই মডেম কিনতে হবে। তাই আপনি কানেকশন লাগানোর আগে অবশ্যই কল সেন্টার অথবা সেলস সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জেনে নিবেন আপনার এলাকায় ইউ.এস.বি মডেম দিয়ে কানেকশন পাবার মত নেটওয়ার্ক আছে কিনা।

আমি যেমন কিনবার আগে দোকানে এসে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলাম আমার বাসায় এসে যদি দেখেন ইউ.এস.বি মডেম দিয়ে কানেকশন নেয়া যাচ্ছে না তাহলে আমাকে ২৯৫০ টাকার মডেম কিনতে বলতে পারবেন না। আমি ইউ.এস.বি তে কানেক্ট হলে আপনাদের কানেকশন ব্যবহার করব নাহলে নয়। বাংলালায়নের সব চেয়ে বিরক্তিকর দিক হল আপনি একবার একটা প্যাকেজ কিনলে পর আর কোনদিনই সেটা থেকে অন্য কোন প্যাকেজে মাইগ্রেট করতে পারবেন না। আমি যেমন প্রিপেইড থেকে কোনদিনই পোষ্টপেইডে মাইগ্রেট করতে পারব না তেমনি যিনি পোষ্টপেইড কানেকশন ব্যবহার করেন তিনিও প্রিপেইডে মাইগ্রেট করতে পারবেন না। করতে হলে আপনাকে ২১২১ টাকা দিয়ে আর একটা মডেম কেনা লাগবে।

এই বিষয়টা এক ধরণের জোচ্চুরি মনে হয় আমার কাছে। জিপিসহ প্রায় সব মোবাইল অপারেটররাই আর যাই করুক মাইগ্রেশনের সুবিধা কিন্তু দিচ্ছে। ঊষার পোষ্টেও দেখলাম উনি একমাসের জন্য P6 হতে P2তে মাইগ্রেট করেছিলেন। আমি কানেকশন কেনার আগে একজন সেলস অফিসারের সাথে কথা বলেছিলাম। তখন আনলিমিটেড কানেকশনটা বিক্রি বন্ধ ছিল।

ওই ভদ্রমহিলা বলেছিলেন আবার অনলিমিটেড চালু হলে আপনি সেটাতে মাইগ্রেট করতে পারবেন। কিন্তু এখন আনলিমিটেড কানেকশন আবার চালু হবার পর তিনি বলতেছেন না মাইগ্রেট করা যাবে না। মজার (নাকি দুঃখের?) ব্যাপার হল অপর ওয়াইম্যাক্স সার্ভিস প্রোভাইডার কিউবিও IEEE স্ট্যান্ডার্ড 802.16e টেকনোলজিও ব্যবহার করলেও দুইটা কোম্পানির মডেম কিন্তু আলাদা। মানে এদের কোন সিম কিংবা রিম কার্ড নেই। আপনি একবার বাংলালায়ন ব্যবহার শুরু করলে এরপর আপনার কিউবি ইউজের ইচ্ছা হলে আপনাকে আবার কিউবির মডেম কিনতে হবে।

আমি দুইটা কোম্পানির কল সেন্টারকেই জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন আপনারা একটা কমন ইউ.এস.বি মডেম তৈরি করছেন না। কিন্তু দুইটা কোম্পানিই বিষয়টার কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। মোবাইলের মত একটা কমন ডিভাইস থাকলে আমাদের মত সাধারণ ইউজারদের অনেক সুবিধা হত। আমার মনে হয় ব্লগারদের মধ্যে যারা কিউবি ইউজার কিংবা জুম আলট্রা ইউজার তারাও তাদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে পোষ্ট দিতে পারেন। তাহলে অন্ত্যত সবাই কানেকশন কেনার অগে ভালমন্দ বুঝতে পারবেন।

যদিও এইসব বিষয় সরকারের দেখা উচিত কিন্তু সরকার যখন কানা হয়ে আছে তখন আমাদের নিজেদের স্বার্থেই বিষয়গুলো জানা দরকার। সবশেষে বলি বাংলায়নের সাথে কিন্তু আমার কোন শত্রুতা নেই। আমি কিন্তু বাংলালায়নকে ডাউনলোড স্পিড ঠিকমত দেয়ার জন্য আর স্থানীয় ব্রডব্যান্ড কানেকশনগুলোর মত যখন তখন ডিসকানেক্ট হয়ে না যাবার জন্য সাধুবাদ জানাই। এটা স্বীকার করতেও দ্বিধা নেই টাকা একটু বেশি খরচ হলেও আগের চেয়ে অনেক ভাল সার্ভিস আমি পাচ্ছি বাংলালায়নের কাছ থেকে। কিন্তু যে সমস্যাগুলোর কথা বললাম সেগুলোও কিন্তু একেবারে ফেলনা নয়।

ব্লগে বাংলালায়নের সংশ্লিষ্ট কেউ থাকলে এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য পোষ্টের কমেন্টে বলতে পারেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.