আমি একজন সাধারণ মানুষ
(এই গল্পের কোন চরিত্র বা ঘটনা কারো সাথে কাকতালীয়ভাবে মিল থাকলে লেখক দায়ী নয়। )
মেয়েটির দিকে তাকানোর পড় কোনভাবেই নিজের চোখঁ ফিরাতে পরলনা ইফতি । ইফতির তাকানো লক্ষ করা মাত্রই কেমন যেন বিরক্ত অনুভূত হল মেয়েটির । মেয়েটি নিজেকে অসহায় মনে করতে লাগল। বিষয়টি টিজিং এর পর্যায় পরছে বুঝতে পারলেও নিজের চোঁখ কোনভাবেই সরাতে পারল না ইফতি ।
সে জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছে কিন্তু এই মেয়েটি কেন যেন তার কাছে ভিন্ন মনে হচ্ছে।
অসস্থির মাত্রা এতই তিব্র হল যে, মেয়েটি ইফতির দিক হতে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে বসল। একটি ছেলের ব্যপারে যত রকমের খারাপ ধারণা থাকতে পারে এই দেশে, তার সবদোষেই ইফতিকে দুষি করল মনে মনে মেয়েটি। অতিভদ্রবলে সে তাকে সরাসরি কিছু বললনা।
এতণে ইফতি তার অপ্রত্যাশিত ভুল বুঝতে পেরে মেয়েটির প্রতি তার (ভাললাগার) দৃষ্টি সরিয়ে ফেলেছে যা মেয়েটি খেয়াল করেনি।
মেয়েটি নিজের মনে ইফতিকে একটি অসভ্য, ইতর টাইপের ছেলে ভাবতে লাগল। সে ভাবল ছেলেরা এত খারাপ হয় কেন। ওদেরকি মা-বোন নেই!
তখন সন্ধ্যা ৭ (সাত) টা হবে। দুইজনই উত্তরা হতে বাসে উঠেছে। মেয়েটি সায়দাবাদ যাবে, আর ইফতি যাবে শনিড় আখরা।
হঠাৎ বাসের হেলপার বলতে লাগল এই চাচি মহিলা সিট নাই্, মহিলা সিট নাই। (অনেক বার বলল) তার সাথে সাথে কিছু পুরুষ যাত্রীও বলে উঠল চাচি সিট নাই সিট নাই, বাসে উইঠেন না।
ভদ্রমহিলার বয়স ৪৫+ হবে । নিতান্ত বাধ্য হয়েই প্রতিদিন তাকে যাত্রাপথে নানা ভোগান্তির মধ্যেও বাহিরে বের হতে হয়। তাই হেলপার ও অতিভদ্র বলে দাবিদার পুরুষ যাত্রীগণের বাধা তাকে থামাতে পরল না।
সে বলল বাবা বাড়ীতেতো যেতে হবে, কোন বাসেই যদি উঠতে না দেয় তাহলে বাড়িতে যাব কিভাবে? দাড়িয়েই যাব বলে উঠে পরল সে।
এই শীতের মধ্যেও ভদ্রমহিলা ঘামছে। তার মধ্যে বাসের হঠাৎ হঠাৎ ব্রেকে মহিলা নিজেকে সামলাতে খুবই হিমশিম খাচ্ছে। কিছু যাত্রী হেলপারকে গালিগালাজ করতে লাগল , বেটা আগেই বললাম সিট নাই, মহিলা উঠাসনে। শুনলিনা আমাদের কথা ।
সালার বাসের হেলপার-ড্রাইভারের জাতটাই খারাপ। (নিজেদের খুব উচ্চমানের ভাবছে, যদিও মনের দিক দিয়ে খুবই ছোট আমরা) এখন এই মহিলা দাড়িয়ে এতদুর কিভাবে যাবে?
মহিলাদের সিটে ঐ মেয়েটি ছাড়া বাকি সবাই পুরষ, এবং পুরষ যাত্রীগুলির ভাব এমন যেন, তারা ভদ্রমহিলাকে দেখেইনি। মেয়েটি ইফতির প্রতি যে রাগ হয়েছিল তার চেয়ে চার (৪) হাজার গুন বেশী বিরক্ত হচ্ছে তার পাশে বসে থাকা অতিভদ্র নির্লজ্য পুরুষগুলির প্রতি।
ধুরঃ অসহনীয় যানযট! একেবারে ঘেমে গেলাম এই শীতের দিনেও। ৩০ মিনিটের রাস্তা যেতে ২ ঘন্টার বেশী সময় লাগে।
বাসটি ২০ মিনিট যাবৎ ফার্মগেট সিগন্যালে দাড়িয়ে আছে। এতণ সিগন্যাল দিয়ে রাখে? ( ট্রাফিকদের গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগল কিছু যাত্রী, ) এর মধ্যে একজন বলল প্রধানমন্ত্রী আসবে এই পথে। তাই ওনার যাত্রাপথ সুগম করার জন্য আরো কতণ থাকবে কেহই বলতে পারছে না। আর সাথে সাথে হাছিনা ও হাছিনার বাবাকে নিয়া নানা কথা বলাবলি শুরু হয়ে গেল। একজন বলল ভাই এই দেশে এই দুইজন নারী না থাকলে দেশটি অনেক উন্নতি করতে পারত।
তারা দেশের চাইতে নিজের স্বামী ও বাবাকে নিয়া বেশী ভাবে। সাথে সাথে প্রায় সকলে সম্মতি প্রকাশ করল লোকটির কথায়।
ঃ ইফতির দাড়িয়ে থাকতে খুব কষ্ট হয় (হয়তো পায়ে কোন ভাবে ব্যাথা পেয়েছিল ) । এজন্য সে খুব প্রয়োজন না হলে দুরে কোথাও বের হয়না। ভদ্রমহিলা দাড়িয়ে রয়েছে দেখে ইফতির নিজের খুবই খারাপ লাগছে।
সে নানা কথা নিজের মনে ভাবতে থাকে। আজ যদি তার মায়ের এমন অবস্থা হত! এমন নানাবিধ ভাবনা তাকে জড়িয়ে নিল। সে ভাবছে একটি লোকও মহিলাটিকে বসতে দিচ্ছে না!
গাড়িতে দাড়িয়ে গেলে ইফতির যে শারীরিক কষ্ট হবে , চোঁখের সামনে মায়ের বয়সি একজন মহিলার দাড়িয়ে থাকা তার চেয়ে হাজারগুন বেশী মনকষ্ট দিচ্ছে তাকে।
শারীরিক কষ্টের চেয়ে মনের কষ্ট যে, অনেক বেশী তা মানুষ বোঝেনা বলেই পৃথীবিতে আজ এত সমস্যা। মনের কষ্ট শরীরের কষ্টকে হারমানাল অবশেষে ইফতির।
চাচী আপনি কোথায় যাবেন- বলল ইফতি। ভদ্রমিহলার উত্তর শুনাগেল- শানিড়-আখড়া যাব। মহিলা দাড়াতে পারছেনা। সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে সামলিয়ে নিতে ব্যস্ত সে।
বাসাটি তখন সবে মাত্র বাংলামোটর।
যাত্রাবাড়ীর দুরত্ব গতির অংকে খুব কম হলেও ঢাকার শহরের বিগত কয়েক দশক যাবত সন্ধ্যার বাস্তবতা শুধু ভুক্ত ভুগিরাই বোঝে। রাস্তা ফাঁকা করে (সাধারণ যাত্রীদের থামিয়ে রেখে) সাই সাই করে চলে যাওয়া আমাদের সংসদ সদস্যরা কখনই তা বোঝে না।
চাচী আপনি এই সিটে বসেন- বলে নিজের বসার সিটে বসিয়ে দিল ভদ্রমহিলাকে।
সেই থেকে ইফতির সাথে নাবিলার পরিচয়। এবং নাবিলার দেখা ভাল মানুষগুরির মধ্যে একজন হচ্ছে ইফতি।
যাকে কিনা সে প্রথমে পৃথিবীর সবচাইতে খারাপ ভেবেছিল.....................
-ম.শরীফ
১৪-০২-১১
সময় রাত ২ টা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।