আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য মহাস্থানগড় রক্ষার্থে একত্রিত হতে হবে সবাইকে।.

aurnabarc.wordpress.com

এদদিন যাবত আমরা শুনে আসছি প্রত্নস্থান ধ্বংস করে থাকে অজ্ঞাত থাকা আর অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মানুষ। কিন্তু আমাদের সরকারি কয়েকজন আমলা আর তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণীর ব্যক্তিরা যা দেখালেন তাদে খোদ গণ্ডমূর্খ ও লজ্জায় মাথা কাটা যাবে। আসলে ষণ্ডাতন্ত্র ঐহিহ্য দূরে থাক নিজ পিতৃত্ত্বের ধার ধারে না। কালের কন্ঠের খবরে প্রকাশ-কয়েক দফায় আদালত নিষেধাজ্ঞা দিলেও বগুড়ার মহাস্থানগড়ে খননকাজ বন্ধ হয়নি। পুরাকীর্তি ধ্বংসও চলছে অবিরত।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিতে এখন রাতের আঁধারে সেখানে কাজ চলছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে মহাস্থানগড়ের মূল মাজার এলাকায় উঁচু স্থানের ওপর ১৪০০ থেকে ১৫০০ শতাব্দীর পুরনো পুণ্ড্র গেট 'পুণ্ড্র নগরীর প্রবেশদ্বার' এলাকায় ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। রাতে শ্রমিক লাগিয়ে মাজার উন্নয়ন কমিটির পক্ষে এই খননকাজ চালানো হয়। খননের সময় সেখানে অমূল্য ব্ল্যাক স্টোন, প্রাচীন ইট, টেরাকোটা, মূর্তির ভাঙা অংশ বেরিয়ে এলে সেগুলো পাশেই একটি স্থানে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়। গতকাল বুধবার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তারা মাটি খুঁড়ে নিদর্শনগুলো উদ্ধার করেন।

তাঁরা জানান, রাত ১২টার পর শ্রমিক লাগিয়ে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। গভীর রাতে শ্রমিকরা কাজ করে। কারণ সকালে এসে তিনি পুণ্ড্র গেটসংলগ্ন স্থানে বালি বিছানো দেখতে পান। পরে আশপাশের লোকজনকে (যাঁরা রাতে অবস্থান করেন) জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন, সেখানে রাতে শ্রমিকরা খনন কাজ করেছে। মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টডিয়ান (জিম্মাদার) নাহিদ সুলতানা কালের কণ্ঠকে জানান, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, যারা খনন কাজ করেছে তারা প্রথমে চিন্তা করেনি সেখানে প্রাচীন পুরাকীর্তি থাকতে পারে।

পুরনো নিদর্শন বের হয়ে আসতেই সেগুলো রাতেই সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়। আগে খনন করা একটি গর্তের মধ্যে নিদর্শনগুলো মাটি চাপা দেয় তারা। গতকাল সকালে নতুন মাটি দেখে সন্দেহ হলে তারা মাটি সরিয়ে ব্ল্যাক স্টোন, প্রাচীন ইট, টেরাকোটা ও মূর্তির ভাঙা অংশ উদ্ধার করেন। এ ঘটনার পর থেকে মহাস্থান মাজার উন্নয়ন কমিটির নেতারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া ঘটনাটি প্রকাশ না করতে তাঁদের মাঠকর্মীদেরও বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, বারবার খননের জন্য টার্গেট করা স্থানটির নিচেই লুকিয়ে আছে পুণ্ড্র নগরীর গুরুত্বপূর্ণ কোনো ভবন। কারণ মূল মাজার ও মসজিদসংলগ্ন টিলার মতো উঁচু জমিটি মূল পুণ্ড্র নগরীর অংশ। এখানেই থাকতেন রাজা এবং তাঁর লোকজন। ফলে রাজপ্রাসাদ ও প্রশাসনিক ভবন এখানেই থাকার কথা। তবে জমিটি মাজার কমিটির হলেও এর প্রত্নতাত্তি্বক গুরুত্ব নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগের।

এখানে ইচ্ছে করলেই কেউ খোঁড়াখুঁড়ি কিংবা অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারবে না। কিন্তু তাঁদের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে রাতের আঁধারে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চালানো হচ্ছে। নাহিদ সুলতানা জানান, তিনি ঘটনাটি দেখার পর এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তাদেরও বিষয়টি জানানো হয়েছে। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুণ্ড্র নগরীর একেবারে হার্ডপয়েন্টে হজরত শাহ সুলতান বলখি (রা.)-এর মাজারের পশ্চিম পাশে ২০ ফুট বাই ১০ ফুট এলাকায় খনন কাজ করা হয়।

রাতে খনন কাজ প্রত্যক্ষ করেছেন সোলেমান আলী। তাঁর বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। তিনি জানান, রাতে শ্রমিকরা যখন কাজ করে তখন তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তখন জেনেছেন, উলি্লখিত স্থানে নামাজের জায়গা করার জন্য টাইলস বসানো হবে। এরপর বেশ কিছু পাথর ও ভাঙা ইটের অংশ সেখান থেকে সরিয়ে ফেলতেও তিনি দেখেছেন।

স্থানীয় ভিক্ষুক মোকারম বলেন, 'শুনিচনু এটি বলে আর কাম হবি না। কিন্তুক আত্রে ক্যামা কাম করিচ্ছে। তালে ব্যান কিছু একটা করবি। হামাকেরে একটা থ্যাকার জ্যাগা লাগবি। সেডা করলে ভালোই হলোনি।

' গর্ত খোঁড়ার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের একজনের সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সে জানায়, রাতে সেসহ ১০ শ্রমিক কাজ করে। মজুরি নিয়েছে ২০০ টাকা করে। সে আরো জানায়, তাদের কাছে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা আড়াই হাজার বছর আগের নিদর্শনের কোনো দাম নেই। এ কারণে তারা ভেঙে ফেলছে অবলীলায়।

মহাস্থান মাজার উন্নয়ন কমিটির সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ জানান, তাঁরা আদালতের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন। কাজেই সেখানে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চালানোর প্রশ্নই ওঠে না। বাইরের কেউ এই কাজ করতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জিন্নাহ জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তাঁর জানা নেই। কাজেই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছেন না। তবে উলি্লখিত স্থানটিতে তাঁরা বালি ফেলে রেখেছিলেন মসজিদের ভেতরে কাজ করার জন্য বলে তিনি স্বীকার করেন।

মহাস্থান মাজার কমিটির সভাপতি বগুড়ার জেলা প্রশাসক ইফতেখারুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি বিষয়টি জানেন না। কারা খুঁড়ল, এটা খুঁজে বের করতে শিবগঞ্জ থানার ওসিকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান। উল্লেখ্য, এর আগেও কয়েক দফা মহাস্থানগড় এলাকায় খনন করে পুরাকীর্তি ধ্বংস করার কয়েকটি প্রতিবেদন কালের কণ্ঠে প্রকাশ করা হয়। এরপর হাইকোর্টের রায়ে ঐতিহাসিক এই স্থানে নির্মাণ কাজ বন্ধ করাসহ মহাস্থানগড় সংরক্ষণ কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এর পরও ধ্বংসযজ্ঞ থামেনি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তথ্য মতে, অতি প্রাচীনকালে বগুড়ার মহাস্থানগড় একটি গুরুত্বপূর্ণ শাসনকেন্দ্র ছিল। এই স্থানটি ধর্ম, শিল্প, সংস্কৃতি ছাড়াও আন্তপ্রাদেশিক বাণিজ্যের একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় ১৫ শতক পর্যন্ত এই সমৃদ্ধ নগরী একটি সমৃদ্ধ জনপথ সৃষ্টি করেছিল। বেশ কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত স্থানটি বিখ্যাত মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন এবং অন্যান্য হিন্দু সামন্ত রাজারা প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।

করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে গড়ে ওঠা এই প্রাচীন নগরের ধ্বংসাবশেষই এখন বগুড়া জেলা তথা আমাদের বাংলাদেশের একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের স্মারক । আড়াই হাজার বছর আগের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে গড়ে উঠেছিল বগুড়ার মহাস্থানগড়। বগুড়া শহর থেকে উত্তরে ১৩ কিলোমিটার দূরে প্রাচীনকালে মহাস্থানগড় ছিল বাংলার রাজধানী; যার নাম ছিল পুণ্ড্রনগর, ইতিহাসে যা পুণ্ড্রবর্ধন নামে পরিচিত। বগুড়ার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া উত্তরাঞ্চলের এককালের বিশাল করতোয়া নদীবিধৌত মহাস্থানগড়ের ইতিহাস অত্যন্ত চমকপ্রদ। বগুড়া জেলার এক গৌরবোজ্জ্বল কীর্তি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে পঞ্চাশ শতাব্দীর মধ্যে একটি সমৃদ্ধিশালী জনপদ হিসেবে গড়ে ওঠে।

এখানে মৌর্য, গুপ্ত ও পাল রাজাদের প্রাদেশিক রাজধানী ছিল। কিন্তু এখন সেই রাজধানী নেই, রয়েছে ইতিহাসের পাতায় বাংলাদেশের সব প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ ও প্রত্নতাত্ত্বিক বহু নিদর্শন। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হিসেবে মহাস্থানগড়ের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। হিন্দু রাজা পরশুরামকে যুদ্ধে পরাজিত করেন হজরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী মাহীসওয়ার (রহ.)। তার ধীরে ধীরে মহাস্থানগড় হয়ে ওঠে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে।

সেই থেকে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান মহাস্থানগড়ে আসতে থাকেন। এভাবেই মহাস্থানগড় হয়ে ওঠে পর্যটকদের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মহাস্থানগড়ের বিশাল ঐতিহাসিক পটভূমি থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশের বাইরের বহু নারী-পুরুষ প্রতিদিন এখানে আসে। ধীরে ধীরে মহাস্থানগড় হয়ে ওঠে অন্যতম বিনোদন এলাকা। একটুখানি বিনোদন পাওয়ার আশায় প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে শত শত নারী-পুরুষ আসে।

বিশেষ করে, মুসলমান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করার মতো। বগুড়া ও এর পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ আসে মহাস্থানগড়ে একটু আনন্দ উপভোগ করার জন্য। মহাস্থানগড়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করে ১৯৬৭ সালে করতোয়া নদীর কিনারা ও মহাস্থানগড়ের টিলা সংলগ্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রত্নতাত্ত্বিক এই জাদুঘর। পরে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সেটি দেখাশোনা করে। উত্তরাঞ্চলের ঐতিহাসিক স্থানগুলো মহাস্থানগড়, দিনাজপুর, পাহাড়পুর, শেরপুর, রানী ভবানীপুর এলাকা থেকে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার করা প্রাচীন সামগ্রী ধীরে ধীরে জাদুঘরে শোভা পেতে থাকে।

হাজার হাজার বছর আগের সোনা, রুপা, লোহা, ব্রোঞ্জ, পাথর, কাঁসাসহ বিভিন্ন মূল্যবান ধাতব পদার্থ ও পোড়ামাটির তৈরি মূর্তি, আত্মরক্ষার জন্য ধারালো অস্ত্র, নিত্যপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র ইত্যাদি সামগ্রী শোভাবর্ধন করে মহাস্থানগড় জাদুঘরের। প্রায় সাড়ে তিন হাজার মিটার দৈর্ঘ্য, আড়াই হাজার মিটার প্রশস্ত ও উঁচু টিলাবেষ্টিত বগুড়ার মহাস্থানগড়ের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভিড় জমায় এখানে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরের জন্য বেছে নেন মহাস্থানগড়ের মতো ঐতিহাসিক এ জায়গাকে। আড়াই হাজার বছর আগের মানুষের তৈরি ইমারতগুলো এখানে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে। বছরের সব সময় দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এখানে আসেন।

মহাস্থানগড়ের সুউচ্চ টিলার ওপর হজরত শাহ সুলতান বলখীর (রহ.) মাজারে কেউ আসেন জিয়ারত করতে, কেউ আসেন মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের নানা তথ্য ও ইতিহাস জানতে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, গবেষক, বিশেষজ্ঞরা শিক্ষা সফরের সুন্দর স্থান হিসেবে বেছে নিয়ে এখানে এসে থাকেন। এছাড়া লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ভ্রমণের স্থান হিসেবে মহাস্থানগড়ে আসেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র, ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে অনেক শিল্পী, অভিনেতা ও অভিনেত্রী শুটিংয়ের জন্য সুন্দর জায়গা হিসেবে এখানে আসেন। ক্যামেরায় বন্দি করে নেন ঐতিহাসিক নানা নিদর্শন।

মহাস্থানগড় জাদুঘর ফিল্ডে সৃষ্টি করা হয়েছে রঙ-বেরঙের ফুলবাগান। জাদুঘরের চারপাশে নানা জাতের গাছ লাগিয়ে এর আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আগতদের জন্য মহাস্থানগড়ের টিলাসংলগ্ন আমবাগানে গড়ে তোলা হয়েছে পিকনিক স্পট। দেশ-বিদেশের ভিআইপিদের জন্য করতোয়া নদীর ওপর অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে আধুনিক ইমারত। জাদুঘর কাস্টোডিয়ানের (জিম্মাদর) অনুমতি নিয়ে সেখানে অতিথিরা থাকতে পারেন।

মহাস্থানগড় ও এর আশপাশের যেসব ঐতিহাসিক নিদর্শন আজও তার ঐতিহ্য নিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে, পাঠকদের জ্ঞাতার্থে সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিদর্শনের নাম এখানে উল্লেখ করা হলো : ১. খোদার পাথর ভিটা, ২. মানখালীর কুণ্ড, ৩. জীবিত কূপ বা জিয়ত কুণ্ড বা জিয়ন কূপ, ৪. বৈরাগীর ভিটা, ৫. বন্দুকধরা, ৬. হাতিবান্ধা, ৭. হাতিডোবা পুকুর, ৮. ধোপাপুকুর বা ধোপা পক্রা, ৯. মনিরঘোন, ১০. শিলাদেবীর ঘাট, ১১. গোবিন্দভিটা, ১২. কালিদহ সাগর, বিষপত্তন ও পদ্মার বাড়ী, ১৩. গোকুলের বেহুলা লক্ষীন্দরের মেধ বা মেড়, ১৪. মথুরা, ১৫. চিঙ্গাশপুর, ১৬. ভীমের জাঙ্গাল, ১৭. কাঞ্জিরহাঁড়ি এবং ছেলীরধাপ, ১৮. ভাসু বিহার, ১৯. সম্রাট ফারুক শিয়ারের আমলের মসজিদ, ২০. গোদার ধাপ, ২১. কানাইয়ের ধাপসহ আরও শতাধিক উল্লেখযোগ্য প্রাচীন ঐতিহ্য। অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে বিশ্বঐতিহ্যের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) সদস্য হয়েছে বাংলাদেশের তিনটি ঐতিহাসিক স্থান। সেগুলো হলো, খুলনার বাগেরহাট ষাটগম্বুজ মসজিদ, নওগাঁ জেলার পাহাড়পুর ও সুন্দরবন। বগুড়ার মহাস্থানগড় আড়াই হাজার বছর আগের মৌর্য যুগ, পাল আমল, গুপ্ত আমলের ইতিহাস বহন করে এলেও এখন পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সদস্য হতে পারেনি মহাস্থানগড়। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা পেলে বগুড়ার মহাস্থানগড় সহজেই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সদস্য হতে পারে।

সরকার ইচ্ছা করলেই বগুড়ার মহাস্থানগড়ের অতীত ঐতিহ্য কাজে লাগিয়ে একে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে দেশের শ্রেষ্ঠতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে। এখন যেভাবে নারী-পুরুষরা মহাস্থানগড়ে এসে আনন্দ উপভোগ করেন, সরকারিভাবে আরও সুন্দর সুন্দর বিনোদনের ব্যবস্থা করা হলে এখানে গড়ে উঠতে পারে কক্সবাজার, সুন্দরবন, পাহাড়পুর, ময়নামতি ও কুয়াকাটার মতো শ্রেষ্ঠ বিনোদন কেন্দ্র। এতে করে সরকারের যেমন রাজস্ব বাড়বে, তেমনি মহাস্থানগড় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার শত শত বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। এই প্রত্নস্থানটি সংরক্ষনে সবার এগিয়ে আসাটা এখন সময়ের দাবি। মোঃ আদনান আরিফ সালিম অর্ণব স্নাতক সম্মান অধ্যয়নকারী প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জাবি।

http://www.aurnabarc.blogspot.com/ তথ্যসুত্র: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন প্রতিবেদন লেখকের ভ্রমন অভিজ্ঞতা কালের কণ্ঠ ও আমার দেশ । । । ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.