আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জুজুর ভয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বিদ্বেষ

নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বার বার নাকচ করে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বেশ কিছু দিন ধরে এর বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নানা ধরনের ভয় দেখিয়ে চলেছেন। স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তীকালে জেল খাটার কথা, দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের নিগ্রহের কথা। ভাবখানা এমন, তিনি যেন জেল না খেটে রাজরানীর মতো ছিলেন। তিনি কখনো বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে বেগম খালেদা জিয়াকে আবারও জেলের ভাত খেতে হবে।

কখনো কখনো আবার বলছেন, এবার এলে অাঁটঘাট বেঁধে আসবে। সম্প্রতি বলেছেন, এবার এলে ১০ বছরেও ক্ষমতা ছাড়বে না। ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী যখন এসব কথাবার্তা বলেন, নিশ্চয়ই দায়িত্ব নিয়েই বলেন। তাই একে গুরুত্বহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু এটা বুঝি না, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সরকারের সম্পর্ক কী? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর পেছনে প্রধানমন্ত্রীর দুটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

(এক) নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে তিনি জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছেন এবং এ ব্যাপারে তার ও তার দলের সিদ্ধান্ত চালিয়ে দিতে চাইছেন; (দুই) তার এ বক্তব্য বেগম খালেদা জিয়া বা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নয়, সিভিল সোসাইটির বিরুদ্ধেও নয়। তাহলে কার বিরুদ্ধে? দেশের রাজনৈতিক সচেতন মানুষ এত মূর্খ নয় যে, তিনি কার প্রতি ইঙ্গিত করে ভয়ানক আশঙ্কার কথা অবলীলায় বলে যাচ্ছেন, তা বুঝছেন না। শিক্ষিত-শিক্ষাবঞ্চিত নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষই বুঝছেন, প্রধানমন্ত্রী কাদের প্রতি তার রাজনৈতিক সন্দেহের বাণ হানছেন, দেশ-বিদেশে কাদের তিনি 'ডিফেইম' করছেন। মাত্র কিছু দিন আগে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৭ দিন পর রেশমা নামের এক মহিলা গার্মেন্ট কর্মীকে উদ্ধারের পর তাকে সাজানো নাটক বলে অভিহিত করেছেন কেউ কেউ। উদ্ধার কর্মটি পরিচালনা করেছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

প্রধানমন্ত্রীসহ বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং অনেক লীগ মন্ত্রী ও লীগ নেতা তাকে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার চক্রান্ত হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। সরকার ও সরকারি দলের ওই ভূমিকার প্রশংসা করেছে মানুষ। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার শেষ ভরসাস্থলকে যদি কেউ বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, দেশপ্রেমিক জনগণ তা কখনো ভালোভাবে গ্রহণ করে না। যারা এ ধরনের বিতর্ক ও প্রশ্ন তৈরি করে, তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কেই বরং জনমনে নানা সন্দেহ-সংশয় দেখা দেয়।

বারবার ওয়ান-ইলেভেনের কথা বলে ফখরুদ্দীন সরকারকেই প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মডেল হিসেবে তুলে ধরছেন।

কিন্তু তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় সে সময় দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত রাজনৈতিক নেতৃত্বের ও দলগুলোর ভয় ও দুর্বলতার সুযোগে দুই বছর ক্ষমতায় থাকা ফখরুদ্দীন সরকার কোনো অবস্থাতেই সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না। কাজেই ওই সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে তাদের খারাপ কর্মকাণ্ডের দায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর চাপালে চলবে না। এটা ইতিহাসের বিকৃতি। ওই সরকার সম্পর্কে তৎকালীন একজন প্রাজ্ঞ উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের ব্যাখ্যাটাই আমার কাছে যথার্থ মনে হয়। তিনি বলেছেন, ফখরুদ্দীন সরকার জরুরিকালীন জরুরি সরকার।

আমাদের সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংযোজনের পর দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছে দুবার। প্রথমবার বিচারপতি মো. হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও দ্বিতীয়টি বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার। ওই দুই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটিও সংবিধান নির্দেশিত নব্বই (৯০) দিন সময়সীমা অতিক্রম করে অতিরিক্ত একদিনও ক্ষমতায় থাকেনি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্বাচন করে তারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন শাসনতান্ত্রিক বিধান অনুযায়ী। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী-মিনিস্টার ও লীগ নেতারা যে অপপ্রচার চালাচ্ছেন তা ইতিহাস বিকৃতি এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এটা ভুললে চলবে না যে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কনসেপ্ট আওয়ামী লীগেরই 'ব্রেইন চাইল্ড'। ১৯৯৩ সালের অক্টোবর মাসেই তারা এ সম্পর্কে একটি বিল সংসদে জমা দিয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী (তখন আওয়ামী লীগের সহযোদ্ধা) ও জাতীয় পার্টিও একই মর্মে পৃথক দুটি বিল জমা দিয়েছিল সংসদে। তখন ক্ষমতাসীন বিএনপি ছিল এর ঘোর বিরোধী। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, 'শিশু আর পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়'।

জবাবে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, 'ঝাঁকুনি দিয়ে বুঝিয়ে দেব নিরপেক্ষ সরকার কাকে বলে। ' ১৯৯৪ সালের ২০ মার্চ মাগুরা-২ উপ-নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগে আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে প্রায় আড়াই বছর যে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন করে, তার কাছে নতিস্বীকার করেন বেগম খালেদা জিয়া। স্বল্পকালীন ষষ্ঠ সংসদে পাস হয় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল এবং তা সংযোজিত হয় সংবিধানের ৫৮ ধারায়। সাংবিধানিক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের রাজনৈতিক-সংস্কৃতি অনুযায়ী পরাজিত দল মৃদু কণ্ঠে কারচুপির অভিযোগ উত্থাপন করা ছাড়া সেই সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর কোনো অভিযোগ কেউ উত্থাপন করেনি। নির্বাচনী ফলাফল সবাই মেনে নিয়েছিল এবং দেশে-বিদেশে ওই দুই নির্বাচন বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছিল।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তো প্রবর্তিত হয়েছিল আমাদের রাজনীতিবিদের কারণেই। তারা একে-অপরকে বিশ্বাস করেননি। আস্থায় নেননি। সেই অবিশ্বাস, সেই অনাস্থা এখন তো আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে এবং সংসদ বহাল রেখে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা যায় কী করে? সেই জন্য সুশীল সমাজসহ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না।

প্রধানমন্ত্রী এবং তার দল এই জনমতকে উপেক্ষা করছেন। জনমতের বিরুদ্ধে তাদের এ অবস্থানটা বড়ই দুর্বল। নৌকার পালে হাওয়া লাগানোর উদ্দেশ্যেই প্রধানমন্ত্রী বিভ্রান্তির ধূম্রজাল ছড়াচ্ছেন বলে বিরোধী দলের অভিযোগকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গ্লানিকর পরাজয় শাসক লীগকে আরও অস্থির করে তুলেছে বলেই মনে হয়। কথাবার্তাও তাই হয়ে যাচ্ছে অনেকটা লাগামছাড়া।

লাগামছাড়া কথাবার্তায় নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী তনয় সজীব ওয়াজেদ জয়। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, 'তার কাছে তথ্য আছে, আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগই জিতবে। ' পাঁচ সিটি নির্বাচনের ফল এবং বিভিন্ন মিডিয়া জরিপ কিন্তু তা বলে না। বোঝাই যায় যে, ক্ষমতাসীন দলের পায়ের তলা থেকে মাটি অনেক সরে গেছে। তাই শাসক দলের সর্বত্র হতাশা।

নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য দলের শেষ কার্ডটিও খেলে ফেললেন শেখ হাসিনা। পুত্র জয়কে রাজনীতিতে নামিয়ে চমক সৃষ্টি করতে চেয়েছেন তিনি। অর্থাৎ তিনি আর পারছেন না, তাকে দিয়ে আর হচ্ছে না, তাই জয়কে মাঠে নামানো। জয়কে জনগণ কীভাবে নেবে, পরিবারতন্ত্রের ধারা দলের প্রধান ও ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদরা কীভাবে নিচ্ছেন বা নেবেন তা জানতে বুঝতে আরও কিছু সময় লাগবে। তবে এটা ঠিক, শাসক দল ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপলব্ধি করছেন যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তার দলের ভরাডুবি হবে।

বিশেষ করে তাদের দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ খ্যাত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর এটা তারা নিশ্চিত হয়েছেন, জিততে হলে দলীয় সরকারের অধীনে অর্থাৎ শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল রেখেই নির্বাচন করতে হবে। প্রশাসন সেভাবেই সাজানো হয়েছে, নির্বাচন কমিশনও সরকারি ইচ্ছা পূরণে কাজ করছে বলে বিরোধী দলের বক্তব্য সত্য বলে মনে হচ্ছে। সবাই যেখানে নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী, আরও ক্ষমতাবান করার পরামর্শ দিচ্ছেন, সেখানে অর্জন করা ক্ষমতা বর্জন করার প্রস্তাব করেছে জোহুজুর মার্কা নির্বাচন কমিশন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা, কমিশন স্বেচ্ছায় ফেরত দিয়ে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয় ছিনিয়ে নিলেও নির্বাচন কমিশনের যেন কিছু করার না থাকে সে জন্যই ইসি আরপিও সংশোধনীতে এই প্রস্তাব করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর ২০ জনের বহর নিয়ে নির্বাচনী সফর ও তার খরচ প্রায় সীমাহীন রাখার প্রস্তাব শাসক দলের সুবিধার জন্য করা হয়েছে। এ জন্যই নির্বাচন কমিশনকে দলানুগত মোসাহেবদের নিয়ে গঠিত কমিশন বলে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল যে অভিযোগ করছে, জনগণ তা বিশ্বাস করছে। নির্বাচনকালীন আইন-কানুন সংশোধন প্রস্তাব ও এর বিরোধিতা (বিএনপি নেতা এম কে আনোয়ার বলেছেন, তারা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করবেন)। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দলসমূহের ব্যাপার। এর সঙ্গে স্পর্শকাতর রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে আকারে-ইঙ্গিতে জড়িত করা কোনো দেশপ্রেমিকের কাজ নয়।

বলা হচ্ছে সময়মতো নির্বাচন না হলে 'অপশক্তি' ক্ষমতা দখল করবে। কাকে বা কাদেরকে এই 'অপশক্তি' বলে কোনো কোনো রাজনৈতিক মহল জনমনে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন? যদি এই 'অপশক্তি' বলতে আমাদের কোনো বিশেষ রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে বোঝানো হয়ে থাকে তাহলে ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে দেখতে হবে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের কখনো প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ হস্তক্ষেপ হয়ে থাকলে তা হয়েছে রাজনীতিবিদদের কারণেই। নিজেরা কখনো মারামারি, হানাহানি, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে দেশে গৃহযুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করে দেশ ও জনস্বার্থে তাদের হস্তক্ষেপ অনিবার্য করেছেন অথবা হস্তক্ষেপ করতে উৎসাহ জুগিয়েছেন। যেমন_ জিয়াউর রহমানের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বৈরাচার এরশাদের ক্ষমতা দখলের পর আজকের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, 'আমি অখুশি নই। ' গৃহযুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করে ওয়ান-ইলেভেনের সরকার গঠন অপরিহার্য করে সেই সরকার প্রধান ড. ফখরুদ্দীন আহমদের শপথ গ্রহণের পর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, 'এই সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল।

' কিছু দিন আগে দুই প্রধান দলের রাজনৈতিক 'কুস্তাকুস্তি'র এক পর্যায়ে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, 'প্রয়োজনে সেনাবাহিনী তার দায়িত্ব পালন করবে। ' এর পর প্রধানমন্ত্রীসহ লীগ সরকারের মন্ত্রী-মিনিস্টার ও লীগ নেতারা অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখলের অভিযোগে দেশ-বিদেশে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কলেরগান বাজিয়েছেন। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, শাসক দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তারা অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখলের সব পথ কষে বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা এমন ভাব দেখিয়েছেন, যেন দেশের ষোল কোটি মানুষের কাছে ষোল কোটি সরষের তেলের শিশি পাঠিয়ে দিয়ে বলছেন, আপনারা এখন নাকে তেল দিয়ে ঘুমান। কিন্তু এখন কেউ কোনো ভয় দেখালে, এমনকি গাছ থেকে শুকনো পাতা ঝরার আওয়াজ হলেও তাদের হাটু কাঁপছে কেন?

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আমাদের দায়ত্বশীল নেতা-নেত্রীদের অসংযত কথাবার্তা জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।

ইদানীং প্রায়শ তারা 'উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে' চাপাচ্ছেন। প্রধান প্রধান দলের নেতা-নেত্রীরা ক্ষমতার কাঙ্গাল। তারা যা করছেন স্রেফ ক্ষমতায় থাকার জন্য বা ক্ষমতা দখল করার জন্য। দেশ ও জনগণের স্বার্থের সঙ্গে তাদের ক্ষমতার স্বার্থ সাংঘর্ষিক। তারা ক্ষমতা চান নিজের জন্য, ছেলেমেয়ে, পরিবারের জন্য, দল ও গোষ্ঠী বিশেষের জন্য।

ওয়ান-ইলেভেনের পর এর প্রমাণ মিলেছে। এখনো প্রমাণ দিয়েই চলেছেন। বাংলাদেশের জনগণ এখন এত বোকা নেই যে, নেতা-নেত্রীদের 'ঐশীবাণী'তে বিশ্বাস করে বসে থাকবেন। তারা নিজেদের স্বার্থে সময়ে সময়ে যাদের বিরুদ্ধে প্রচ্ছন্নে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন, জনগণ এখন তা আর একবাক্যে সমর্থন করেন না। দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র, গণতন্ত্র, অধিকার ইত্যাদি নিয়ে জনগণ এখন নেতা-নেত্রীদের চেয়ে একটু বেশিই ভাবছেন বলে মনে হয়।

তাই কোনো কোনো মহল থেকে ক্ষমতা দখলের কল্পিত অভিযোগ এনে যাদের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, জনগণ তা ভালোভাবে গ্রহণ করছে না। কারণ, এরা তো এ মাটিরই সন্তান, আমাদের স্বজন, আছে নাড়ির বন্ধন। তাদের চোখের তারায়ও ভাসে সমগ্র জাতির স্বপ্ন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে, জাতীয় সব দুর্যোগ-দুর্বিপাকে তারা সদা সর্বদাই থাকে, আছে আমাদের সঙ্গে, আমাদের পাশে। দেশ ও জাতির সব প্রয়োজনেই তারা সাড়া দেয় সর্বাগ্রে।

বিদেশেও তারা সুনাম অর্জন করছে। জাতির অহংকারের ধনকে কেন ছোট করা? জনগণ না চাইলে, জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখন তারা কী করেছে? সীমাহীন দুর্নীতি, হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি ও নোংরা পরিবারবাজি-দলবাজির ওপর মানুষ ত্যক্ত-বিরক্ত। জনগণ এসবের হাত থেকে তথা দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি ও তথাকথিত রাজনৈতিক বৃত্তের হাত থেকে নিষ্কৃতি চায়। বাংলাদেশে কিন্তু আরব বসন্তের মতো বাংলাদেশ বসন্তের ক্ষেত্র প্রায় প্রস্তুত। ঈদের পরে সরকার ও বিরোধী দল আন্দোলনের নামে সংঘাতের যে পথে হাঁটার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল আশঙ্কা ব্যক্ত করছে, তা থেকে সরে আসা উচিত নেতা-নেত্রীদের, রাজনৈতিক দলসমূহকে।

কারণ, শান্তিপ্রিয় জনগণ তা চায় না। প্রধান দুদলের কর্মকাণ্ডেই তারা বিরক্ত। দুই দল মুদ্রার এপীঠ-ওপীঠ জেনেও একবার এর দিকে ঝোঁকে, নিরুপায় হয়ে আরেকবার 'ওর' দিকে ঝোঁকে। বিকল্প পেলেই গুডবাই জানাবে দুই দলকে। শুধু গদির লোভে যদি ক্ষমতার কাঙ্গালরা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতি ফের সৃষ্টি করেই ফেলেন, তা থেকে পরিত্রাণের জন্য নতুন আশ্রয়স্থল জনগণ চাইতেই পারে_ জনগণের এ চাওয়া কী অপরাধ হবে?

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল : kazi.shiraz@yahoo.com

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।