আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের সাংবিধানিক পঙ্গুত্বপ্রাপ্তি

জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস নয়, জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক।

বাংলাদেশের সংবিধান দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইনী দলিল। এই দলিল গণমানুষের চূড়ান্ত ইচ্ছার প্রতিফলন যাতে জণগণ তাঁর আকাঙ্ক্ষা, লক্ষ্য প্রকাশ করেছে। সংবিধান নিশ্চয়তা দিয়েছে আমাদের মৌলিক অধিকারগুলোকে। সরকারের বিভিন্ন প্রধান সংস্থাগুলোর গঠনকাঠামো ও কাজকর্ম লিপিবদ্ধ করেছে।

আমাদের সংবিধান আধুনিক বিশ্বের একটি আধুনিকতর সংবিধান। বাংলাদেশের সংবিধানের প্রকৃতি বুঝতে হলে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, তার চেতনা, ওই সময়ের গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা, চিন্তার দিকে তাকানো জরুরী, যার প্রেক্ষিতে বা ভিত্তিতে সংবিধানটি রচিত হয়েছে। বাংলাদেশের জন্ম-ইতিহাস নিয়ে আমরা আজও সন্তোষজনক নিরপেক্ষ ও সঠিক বর্ণনা পাইনা, যা অতি দুঃখজনক। তবে মোটাদাগে মুক্তিযুদ্ধের কয়েকটি দিক রয়েছে প্রতীয়মাণ হয়। ১।

১৯৪৭-এ মূলতঃ ধর্মের ভিত্তিতে স্বাধীন হওয়া দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আমরা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হই। কিন্তু আমাদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। রয়েছে বৈচিত্রময় ধর্মের জাতি ও মানুষ। ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানের সাথে বাংলা ও বাঙ্গালী যায়না, যা অবভিয়াসলি আমাদের ঠেলে নিয়ে যায় স্বাধীনতায়।

২। অর্থনৈতিক বৈষম্য, চরম বেকারত্ব, শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় অবহেলা জাতি মেনে নিতে পারেনা। কাজেই গন্তব্য স্বায়ত্বশাসন হতে চূড়ান্ত স্বাধীনতা। ৩। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ভৌগলিক দূরত্ব জাতিগত ঐক্যের রশি আল্টিমেটলী ছিঁড়ে ফেলে।

মুক্তিযুদ্ধে মূলতঃ যারা প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয় জানা যায়, ১। ছাত্র ও শিক্ষক সমাজ যারা মূলতঃ বাম ঘরানার, চীনপন্থী, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী। ২। বৈষম্য ও দারিদ্রের শিকার কৃষক ও শ্রমিকশ্রেণী। ৩।

বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবী। কাজেই বাহাত্তরের সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হয়ঃ ১। গণতন্ত্র, ২। সমাজতন্ত্র, ৩। ধর্মনিরপেক্ষতা, ৪।

জাতীয়তাবাদ জাতিগত আকাঙ্ক্ষার এই যে রূপ বা পরিণতি তা আমাদের সংবিধানে কাটাছেঁড়া হতে থাকে সংশোধনীগুলোতে। ১। স্বৈরাচার রাষ্ট্রপতি এরশাদ সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম প্রবর্তন করেন মানুষের ভোটের লোভে। ২। সমাজতন্ত্র-এর মিনিং পরিবর্তন করা হয় এভাবেঃ “অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার- এই অর্থে সমাজতন্ত্র”।

ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল করে প্রতিস্থাপিত হয় “এক আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস”। সেনাবাহিনী ক্ষমতা আঁকরে থাকে বহু বছর, বেআইনীভাবে, সংবিধান স্থগিত করে। সুতরাং যে চেতনার ভিত্তিতে আমাদের স্বাধীনতা, যার ভিত্তিতে আমরা পাই সেরা উপহার, একটি সংবিধান, তাকে বিকৃত ও পঙ্গু করা হয় রাজনৈতিক স্বার্থে। একটি জাতির লক্ষ্য, কার্যপদ্ধতি, উন্নয়ন সবকিছু নির্ভর করে সেই জাতির মূলনীতির উপর। যখন আমরা আমাদের সেই মূলনীতিগুলো এখনো ঠিক করতে পারিনি, তখন আমাদের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক উন্নতি মুখ থুবরে পড়তে বাধ্য হয়, আমাদের প্রজন্ম বিভ্রান্ত হয়, আমরা আত্মপরিচয় সংকটে ভুগি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.